somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুনাফিক মওদুদী

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রবাদ রয়েছে-
“দো-দেল বান্দা কলেমা চোর,
না পায় শ্মশান, না পায় গোর।”


মুখে এক আর অন্তরে আরেক। ইসলামের পরিভাষায় এদের বলা হয় মুনাফিক। মুনাফিক যে কারণে দো-দেল বা দো-যবান হয় তার পিছনে মূল কাজ করে স্বার্থগত প্রবণতা তথা দুনিয়ার লিপ্সা। এ লিপ্সা হতে পারে প্রভাব প্রতিপত্তির, হতে পারে অর্থের, হতে পারে রাজনৈতিক ক্ষমতার। সারা জীবন গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলে, নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বলে, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া শিরক বলে আজ নিজামী-সাঈদী গং সেসব কাজই সমর্থন করছে। পাশাপাশি মদের দাম কমানোসহ মদের কারখানার অনুমতি দিলেও বা আমেরিকা-আফগানিস্তানসহ ইরাক আক্রমণ করলেও সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকা পালন করে গেছে, ইসলামের নাম ভাঙিয়ে আকাশ ফাটানো শ্লোগানধারী বর্ণচোরা ঐ মহলটি। তবে যে কথা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্ণচোরা ঐ মহলটি জন্মগতভাবেই পেয়েছে গিরগিটির ন্যায় ঘন ঘন রং বদলানোর প্রবণতা তথা মুনাফিকী খাছলত।
হাদীছ শরীফ-এ মুনাফিকদের চারটি খাছলত বর্ণনা করা হয়েছে। তন্মধ্যে দু’টি হলো- ১. কথা বললে মিথ্যা বলা, ২. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করা।
হাদীছ শরীফ-এর এ ভাষ্য অনুযায়ী তথাকথিত জামাতে ইসলামীর জন্মদাতা মওদুদী কোন্ পর্যায়ের মুনাফিকরূপে সাব্যস্ত হন তা বিচারের জন্য পাঠকের নিকট নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে মওদুদীর পরস্পর বিরোধী মন্তব্য ও বক্তব্য (প্রথম পর্যায়ে ইসলামী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার প্রচেষ্টায় নারী নেতৃত্বের বিপক্ষে এবং পরবর্তিতে তথাকথিত ইসলামী দলের ভিত্তিতে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পাবার লোভে নারী নেতৃত্ব সমর্থনের পক্ষে) যা চরম নির্লজ্জতার, বেহায়াপনার ও নগ্ন স্বার্থবাদিতার জ্বলন্ত প্রমাণ এখানে পেশ করা গেলো-

নারী ও আইন পরিষদঃ


মাওলানা মওদুদী মাসিক তরজুমানুল কোরআন ১৯৫২ সালে আগস্ট সংখ্যায় পাকিস্তানের জন্য কতিপয় সাংবিধানিক প্রস্তাব পেশ করে। উক্ত প্রস্তাবগুলোর বিরুদ্ধে কোন কোন মহল থেকে যে সব অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তার উত্তর সে তরজুমানুল কোরআনের সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রদান করে। তন্মধ্যে একটি অভিযোগ ছিল, ‘কোন নারীর আইন পরিষদ সদস্য হওয়া উচিত নয়’ তার এই প্রস্তাবের উপর। এর উত্তরে মাওলানা মওদুদী যা কিছু লিখেছে, তা মাসিক আল ফুরকানেও ১৯৫২ সালে লিপিবদ্ধ হয়। যার বিবরণ নিম্নরূপ:

প্রথম পর্যায় (যখন মাওঃ মওদুদীর ইসলামী দলের প্রতিষ্ঠা পাবার পথে প্রচেষ্ট)

একটি অভিযোগ আমার এই প্রস্তাবের উপর উত্থাপন করা হয় যে, “কোন নারীর আইন পরিষদ সদস্যা হওয়া উচিত নয়।” এ প্রসঙ্গে আমার নিকট প্রশ্ন করা হয় যে, সেটা কোন্ ইসলামী নীতি, যেটা নারীদেরকে সদস্যা হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে?
কুরআন-হাদীছের সেই নির্দেশ কোনটি, যেটা আইন পরিষদের সদস্যপদ পুরুষদের জন্যই রিজার্ভ বলে সাব্যস্ত করে? উক্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদানের আগে, এটা জরুরী মনে করি, যে আইন পরিষদের সদস্য পদের জন্য নারীদের নিয়ে আলোচনা চলছে, তার সঠিক ধরন ও স্বরূপ পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা।
উক্ত পরিষদসমূহের নাম ‘আইন পরিষদ’ রাখার কারণে এ ভুল ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে যে, উক্ত পরিষদসমূহের কাজ কেবল আইন তৈরি করা। এ ভুল ধারণা পোষণ করে মানুষ যখন দেখতে পায় যে, ছাহাবায়ে কেরামের যুগে মুসলিম নারীগণও আইন-বিষয়ক মাসয়ালার আলাপ-আলোচনা, গবেষণা, মত প্রকাশ সবকিছু করতেন এবং অনেক সময় স্বয়ং ‘খলীফা’ তাঁদের মতামত জেনে নিয়ে সে অনুসারে কাজও করতেন তখন তারা আশ্চর্যান্বিত হয় যে, বর্তমানে ইসলামী নীতিমালার নাম নিয়ে এ ধরনের ‘পরিষদে’ নারীদের অংশগ্রহণকে কিভাবে গলদ বলা যেতে পারে। কিন্তু, আসল ঘটনা হলো এই যে, বর্তমান যুগে যে সব পরিষদ উক্ত নামে আখ্যায়িত হয়, সেসবের কাজ কেবল আইন তৈরি করা নয়।
বরং বাস্তব ক্ষেত্রে উক্ত পরিষদই সমগ্র দেশের প্রশাসন ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে, মন্ত্রিপরিষদ গঠন করে, মন্ত্রী পরিষদ ভেঙে দেয়, আইন- শৃঙ্খলার যাবতীয় নীতি নির্ধারণ করে, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়াদি নির্ধারণ করে এবং যুদ্ধ, শান্তি ও চুক্তি সন্ধি সবকিছুর চাবিকাঠি তারই হাতে থাকে।
এ হিসেবে উক্ত পরিষদের স্থান কেবল একজন আইনজ্ঞ ও মুফতির স্থান বিশেষ নয়, বরং সমগ্র দেশের নেতৃত্বেরই বিশেষ স্থান। কোরআন মানুষের জীবনে এ বিশেষ স্থান ও দায়িত্ব কাকে দিয়ে থাকে এবং কাকে দেয়না, তা একবার পাঠ করে দেখুন।
মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা নিসা’-এর ৩৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বলেন,
“পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। এজন্য যে, আল্লাহ পাক একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেক্কার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ পাক যা রক্ষণীয় করেছেন, লোকচক্ষুর অন্তরালেও তার হিফাযত করে।”
মহান আল্লাহ পাক উক্ত আয়াতে পরিষ্কার ভাষায় ‘কওয়ামিয়্যাত’ বা ‘কর্তৃত্বের’ গুরু দায়িত্ব ও জিম্মাদারী পুরুষকেই প্রদান করেছেন এবং নেক্কার নারীদের দু’টি বৈশিষ্ট্যের বিষয় বর্ণনা করেছেন,
১. তারা যেন আনুগত্যপরায়ণা হয় এবং
২. পুরুষদের অনুপসি'তে সে সব বস্তুকে হিফাযত করে যেগুলোকে মহান আল্লাহ পাক হিফাযত করতে চান।
আপনি হয়তো বলবেন যে, এটা তো পারিবারিক জীবনের জন্য বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন প্রসঙ্গে তো বলা হয়নি। কিন্তু, এখানে জেনে রাখা দরকার যে,
প্রথমতঃ ‘পুরুষগণ নারীদের সরদার বা নেতা’ এটা সাধারণ ভাবে বলা হয়েছে। ‘ফিলবুয়ুত’ বা ‘গৃহভ্যন্তরে’ এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। তাই এ হুকুমকে কেবল পারিবারিক জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা যায়না।
দ্বিতীয়তঃ আপনার একথা যদি মেনেও নেয়া যায়, তবু আমি (মওদুদী) জিজ্ঞেস করছি, যাকে পরিবার বা গৃহে নেতৃত্বের স্থান বা জিম্মাদারী প্রদান করা হয়নি বরং অধীনস্থ (অনুগতা)-এর স্থানে রাখা হয়েছে, আপনি তাকে সমস্ত গৃহের একত্রিত রূপ অর্থাৎ সমগ্র রাষ্ট্রে অধীনস্থতার পর্যায় থেকে তুলে নিয়ে নেতৃত্বের স্থানে নিয়ে যেতে চান? গৃহের নেতৃত্বের চেয়ে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব তো অনেক বড় এবং উচ্চ পর্যায়ের জিম্মাদারী। এখন আল্লাহ পাক সম্পর্কে আপনার কি এই ধারণা যে, তিনি নারীকে তো একটি গৃহের নেতা বা সরদার করছেন না, কিন্তু লাখ লাখ ঘরের একত্রিত রূপ রাষ্ট্রের তাকে নেতা করবেন?
পবিত্র কোরআন পরিষ্কার ভাষায় নারীদের কর্মপরিধি নির্ধারিত করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন,
“তোমরা গৃহভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদের প্রদর্শন করবে না।” (সূরা আহযাব- ৪)

তারপর আপনি বলবেন যে, এ আদেশ তো নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানিত নারীদেরকেই দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু আমার (মওদুদী) প্রশ্ন হলো যে, আপনার পবিত্র ধারণায় নবী পরিবারের নারীদের মধ্যে কী কোন বিশেষ দোষত্রুটি ছিল, যার কারণে পরিবারের বাইরে কোন দায়িত্ব পালনে তাঁরা অযোগ্য ছিলেন? এদিক দিয়ে অন্যান্য নারীরা কি তাঁদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলো? কুরআনের এ পর্যায়ের যাবতীয় আয়াত যদি কেবল নবী পরিবারের জন্যই অবতীর্ণ হয়, তবে কি অন্যান্য মুসলিম নারীদের ‘তাবাররুজে জাহেলীয়্যাত’ বা জাহেলীয়্যাত যুগের সাজে বের হওয়ার অনুমতি রয়েছে? তাদের জন্য কি বেগানা পুরুষদের সাথে এমন ভাবে কথা বলার অনুমতি রয়েছে, যাতে তাদের অন্তরে লোভ লালসার সৃষ্টি হয়? মহান আল্লাহ পাক কী নবী পরিবার ব্যতীত অন্যান্য মুসলিম পরিবারকে ‘রিজস’ বা ‘অপবিত্রতা’ লিপ্তাবস্থায় দেখতে চান?
এবার আসুন হাদীছের দিকে।
নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“যখন তোমাদের ধনী শ্রেণী কৃপণ হবে, যখন তোমাদের যাবতীয় কাজে কর্তৃত্ব তোমাদের নারীদের হাতে চলে যাবে, তখন তোমাদের জন্য পৃথিবীর উপরিভাগের চেয়ে অভ্যন্তর ভাগ অধিক কল্যাণকর হবে।” (তিরমিযী)
"হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। যখন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলো যে, (ইরানী) পারস্যের জনগণ কিসরার কন্যাকে (মেয়ে) তাদের বাদশাহ মনোনীত করেছে, তখন তিনি বললেন, সে জাতি কখনো সাফল্য অর্জন করতে পারে না, যে জাতি স্বীয় কাজকর্মের কর্তৃত্ব ও দায়িত্বভার একজন নারীর হাতে সোপর্দ করে।” (বুখারী ও তিরমিযী)
উপরোক্ত হাদীছ দু’টি মহান আল্লাহ পাক-এর বাণী ‘পুরুষরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল’- এর প্রকৃত ব্যাখ্যা বর্ণনা করে। এর দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা নারী জাতির কর্ম পরিধির বহির্ভূত বিষয়। একটা প্রশ্ন অবশ্য থেকে যায়, তাহলো নারীদের কর্মপরিধি কি? এ প্রশ্নের উত্তরে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ হাদীছ শরীফটি পরিষ্কার ব্যক্ত করে যে,
“.... এবং নারী তার স্বামীর গৃহ এবং তার সন্তানদের হিফাযতকারিনী। তাদের সম্পর্কে সে জিজ্ঞাসিত হবে।” (আবূ দাউদ)
পবিত্র কুরআন শরীফ-এর বাণী ‘এবং তোমরা তোমাদের গৃহসমূহেই অবস্থান করবে’ এর সঠিক ব্যাখ্যা এটাই যা উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা গেলো। এর অতিরিক্ত ব্যাখ্যায় রয়েছে সে সব হাদীছ, যেগুলোতে নারীদেরকে রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের কাজ গৃহবহির্ভূত ফরয ও ওয়াজিব থেকেও নিষ্কৃতি দেয়া হয়েছে।
জুমুয়ার নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানদের অধিকার ও দায়িত্ব। কিন্তু, চার ব্যক্তি ব্যতীত: গোলাম, নারী, ছেলে-মেয়ে ও অসুস্থ ব্যক্তি।” (আবু দাউদ)
“হযরত উম্মে আতীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে জানাযার সাথে চলতে নিষেধ করা হয়েছে।” (বুখারী)
"যদিও আমাদের মত ও দৃষ্টিভঙ্গীর পক্ষে আমাদের নিকট শক্তিশালী যৌক্তিক প্রমাণাদিও রয়েছে এবং কেউ চ্যালেঞ্জ করলে সেগুলো পেশও করতে পারে, কিন্তু প্রথমতঃ এ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়নি। দ্বিতীয়তঃ আমরা কোন মুসলমানের এ হক বা অধিকার স্বীকারও করি না যে, সে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুস্পষ্ট আহকাম শুনার পর সেমতে আমল করার আগে এবং আমল করার জন্য শর্ত হিসেবে যুক্তি সংক্রান্ত প্রমাণাদির দাবি করবে।
কোন মুসলমান যদি সত্যিকার অর্থে সে মুসলমান হয়, তবে প্রথমে হুকুম মোতাবেক আমল করা তার দরকার এবং পরে স্বীয় মনমস্তিষ্ককে আশ্বস্ত করার জন্য যুক্তিপ্রমাণ তালাশ করতে পারে। কিন্তু সে যদি বলে, আমাকে আগে যুক্তি প্রমাণ দিয়ে মানসিকভাবে আশ্বস্ত করো, অন্যথায় আমি আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুকুম মানবো না, তা হলে আমি তাকে মুসলমান বলেও গণ্য করবো না। তাকে একটি ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য সংবিধান তৈরির অধিকারী হিসেবে গণ্য করা তো অনেক দূরের কথা। শরীয়তের হুকুম মতে আমল করার জন্য যে ব্যক্তি যুক্তি প্রমাণ তলব করে, তার স্থান ইসলামের গণ্ডিবহির্ভূত, অন্তর্ভুক্ত নয়।”

(সূত্রঃ মাওঃ মওদুদীর সাথে আমার সাহচর্যের ইতিবৃত্ত। লেখকঃ মনজুর নোমানী)
উল্লেখ্য মাওলানা মওদুদী এ প্রবন্ধে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত করেছে যে, ইসলাম এবং ইসলামী শরীয়তে কোন নারীর জন্য আইন-পরিষদের সদস্য হওয়ার অবকাশ নেই, আর এটা ইজতেহাদী (তথা অনুমানভিত্তিক) মাসয়ালাও নয়, বরং এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুস্পষ্ট বিধান ও নির্দেশাবলী রয়েছে এবং কোন মুসলমান (সত্যিকার) মুসলমান হওয়ার জন্য এটা শর্ত যে, এ হুকুমকে নির্দ্বিধায় মেনে নেয়া। কিন্তু এর মাত্র কয়েক বছর পর মওদুদী এক চিঠিতে যা লিখে,

মওদুদীর পরবর্তী বক্তব্য (তথাকথিত ইসলামী দলের ভিত্তিতে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পাবার লোভে নারী নেতৃত্ব সমর্থনের পক্ষে)

পত্র নং- ৮৯
শ্রদ্ধেয়,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনার পত্র পেয়েছি। আমাদের মত যুলুম ও স্বৈরাচারী নীতির প্রচলন থাকা মস্তবড় গুনাহ। এর পরিবর্তনের জন্য একজন মহিলার নেতৃত্ব গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন উপায় যদি না থাকে তবে তা হবে একটি বড় বিপদকে দূর করার জন্য ছোট বিপদের সাহায্য গ্রহণ করা, যার অনুমোদন শরীয়াতে আছে।
(নাঊযুবিল্লাহ)
খাকসার আবুল আলা
প্রাপক, আব্দুল হাই সাহেব, সুলতানপুর, আজমগড়, ইন্ডিয়া।
মন্তব্য: এ চিঠিতে সে বলেছে যে স্বৈরাচার পরিবর্তনের জন্য একজন মহিলার নেতৃত্ব গ্রহন ছাড়া আর কোন উপায় যদি না থাকে তবে নারী নেতৃত্ব গ্রহণের অনুমোদন শরীয়তে আছে। অথচ ১৯৫২ সালের ‘মাসিক তরজুমানুল কোরআন’ ও ‘মাসিক আল ফুরকান’ পত্রিকায় সেই লিখেছে নারী নেতৃত্ব কোন ইজতিহাদী মাসয়ালা নয়। অর্থাৎ কোন মাওলানা, কোন শাইখুল হাদীছ, কোন খতীব, কোন মুফাস্সিরে কুরআন, কোন মুফতির কিয়াস, পর্যালোচনা মতামত বা অভিমত খাটানো এখানে চলবে না। বড় খারাপ মোকাবিলায় ছোট খারাপ গ্রহণ এ জাতীয় কথা এখানে বলা চলবে না।
মওদুদীর ভাষায়: “শরীয়তের হুকুম মতে আমল করার জন্য যে ব্যক্তি যুক্তি প্রমাণ তলব করে তার স্থান ইসলাম গণ্ডীবহির্ভূত; অন্তর্ভুক্ত নয়।” অর্থাৎ মাওঃ মওদুদীর ফতওয়া অনুযায়ীই সে ইসলামের গণ্ডীবহির্ভূত। অন্তর্ভুক্ত বা মুসলমান সে নয়। বরং হাদীছ শরীফ-এর বিচারে স্পষ্ট মুনাফিকই তাকে বলা যায়।
এখানে উল্লেখ্য, ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত ‘দ্য মিত্রোথি আর্কাইভ’ নামক বইয়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “ধর্মীয় দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদী ছিলেন সি.আই.এ’র এজেন্ট।
ফিরআউনের কাহিনীও মওদুদীর প্রতি প্রযোজ্য হয়। একবার মানুষের ছুরতে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম এসে ফিরআউনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কোন মনিব যদি কোনো গোলামকে তার প্রয়োজনের চাইতে অনেক বেশি দেয় পরবর্তিতে সে গোলাম যদি উক্ত মনিবের বিরোধিতা করে তাহলে তার কি শাস্তি হওয়া উচিত? জবাবে ফিরআউন তখন দ্বিধাহীন চিত্তে বলেছিল তাকে লোহিত সাগরের পানিতে চুবিয়ে মারা উচিত। আল্লাহ পাক আপন কুদরতে ফিরআউনের মুখেই তার শাস্তির কথা উল্লেখ করিয়েছিলেন। তদ্রুপ তথাকথিত ইসলামী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর হাক্বীকত কী তা কুদরতময় আল্লাহ পাক তার হাত দিয়েই লিখিয়েছেন। এর প্রমাণ স্বরূপ নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে মওদুদীর আরো চিঠির উল্লেখ করা যায়। যেমন মওদুদী বলে:

পত্র- ৮৭, ২১শে নভেম্বর, ‘৬৪
শ্রদ্ধেয়,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনার চিঠি পেয়েছি। আল্লার যমীনে আল্লার আইন প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমাদের পথ থেকে বর্তমান একনায়কত্ব হটানো ছাড়া এ উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে না। এ সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহকে সহায়তা করা ছাড়া একনায়কত্ব হটানোর আর অন্য কোনা বাস্তব পন্থা নেই। এ সময়ে যদি তৃতীয় একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্টের জন্যে দাঁড় করানো হয় তবে এটা প্রকৃতপক্ষে আইয়ুব খানকে একনায়কত্বে প্রতিষ্ঠিত রাখারই প্রচেষ্টা হবে।
খাকসার আবুল আলা
প্রাপক কাযী নাসীর আহমদ সাহেব নারুওয়াল।
পত্র- ৮৮, ২১শে নভেম্বর- ‘৬৪
শ্রদ্ধেয়,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনার চিঠি পেয়েছি। আপনার পেশকৃত প্রস্তাব শরীয়াতের দৃষ্টিতে ঠিক নয়। আমরা অবৈধ পন্থায় জয়কে পরাজয় এবং বৈধ উপায়ের পরাজয়কে জয় মনে করে থাকি। জাল ভোট গ্রহণ করা অথবা টাকা দিয়ে ভোট কেনা এ দেশের জন্যে এমন ধ্বংসাত্মক যেমন ক্ষতিকর একনায়কত্ব। এ পন্থায় যারা নির্বাচনে জয়লাভ করবে তাদের দ্বারা কোনো সংস্কার ও কল্যাণধর্মী কাজ হতে পারে না।
খাকসার, আবুল আলা
প্রাপক, আবু নোমান, শিয়ালকোট।
(সূত্র: মওদুদীর পত্রাবলী: আধুনিক প্রকাশনী)
মন্তব্য: ৮৮ নং চিঠিতে মওদুদী মন্তব্য করেছে আমরা অবৈধ পন্থায় জয়কে পরাজয় এবং বৈধ উপায়ের পরাজয়কে জয় মনে করে থাকি। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে ৮৭ নং প্রশ্নে উল্লিখিত “এ সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহকে সহায়তা করা ছাড়া একনায়কত্ব হটানোর আর অন্য কোন বাস্তব পন্থা নেই।” এই বক্তব্যও পরাজয়েরই পথ।
কারণ মওদুদী নিজেই স্বীকার করেছে নারী নেতৃত্ব হারাম এটা কুরআন-সুন্নাহর দ্বারা সরাসরি ছাবেত। এর মধ্যে মানুষের ইজতিহাদ করার কিছু নেই। এটা স্পষ্ট হারাম। যে হালাল বলবে সে মুসলমানই থাকবে না। তাহলে সে হারাম পথে যদি বিজয় আসেও সে হারাম পথে আইয়ুব খান তথা একনায়কতন্ত্রকে যদি ঠেকানো যেতো তাহলেও মওদুদীর ভাষ্যানুযায়ী তা হত পরাজয়। কারণ তা হারাম পথে তথা অবৈধ পন্থায়।
আর মওদুদী নিজেও স্বীকার করেছে আমরা অবৈধ পন্থায় জয়কে পরাজয় এবং বৈধ উপায়ের পরাজয়কে জয় মনে করে থাকি। কিন্তু কার্যত মওদুদী সেই হারাম পথেই গিয়েছে এবং তার কথিত পরাজয়ের পথেই তার কবর রচিত হয়েছে এবং তার প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত জামাতে ইসলামী অদ্যাবধি সে পরাজয়ের পথে তথা হারাম পথেই রয়েছে। যা তাদের স্বীকারোক্তিতেও বিদ্যমান।
১৯৯৪ সালে প্রকাশিত এসোসিয়েশন অফ মাওলানা সাঈদী সাপোর্টাস- এর বিশেষ বুলেটিন ‘মূলধারার’ সাথে সাক্ষাৎকারে সাঈদী যা বলেছে,
প্রশ: আপনে সর্বদা নারী নেতৃত্ব বিরোধী বক্তব্য দিয়ে থাকেন? অথচ ৯১ এর নির্বাচনের পর নারী নেতৃত্বকে সমর্থন দিলেন কেন?
উত্তর: আমরা নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অতীতেও বক্তব্য রেখেছি। এখনো আমরা সে অবস্থান থেকে সরে যাইনি। জনগণকে সবসময়ই বুঝাচ্ছি ইসলামে নারী নেতৃত্ব স্বীকৃত নয়। নারী নেতৃত্বকে আমরা সমর্থন দেইনি।
কিন্তু পাঠক! ৯১-এ বি.এন.পির সাথে আঁতাত, ৯৬-এ আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত এবং বর্তমান জোট নেত্রীর সক্রিয় অনুসরণ-অনুকরণ তথা একাত্মতা দ্বারা সাঈদীর উপরোক্ত কথার সত্যতা কত চরম মিথ্যা তা উপলব্ধি করার ক্ষমতাও বোধ হয় সুস্থ মানুষের নেই। মূলত এহেন চশমখোর গোষ্ঠীর পক্ষেই সম্ভব ৭১-এর মত রাজাকারগিরি করা, নারী-ধর্ষণ হত্যা ও লুটতরাজের মহোৎসব করা। কারণ আসলে তো এরা ইসলাম করে না। করে ইসলামের লেবেল এঁটে স্বার্থের রাজনীতি। স্বার্থের জন্যই আজ নারী নেতৃত হারাম বলে কাল হালাল বলে।
আর এরূপ স্বার্থবাদী রাজনীতি করে বলেই দে. হো সাঈদী অতীতে আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক থেকে ‘৯০ সালে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক ঠিকানায়’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছে
প্রশ্ন: গোলাম আযমের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির পর আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে আপনি কি বলেন?
সাঈদী (মুচকি হেসে): রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু বা শেষ কথা বলে কিছু নেই। (অর্থাৎ ইসলামকে এরা রাজনীতি হিসেবে ব্যবহার করে ইসলাম হিসেবে মানে না এবং এরা অন্যান্য দুনিয়াবী রাজনীতিবিদদের মতই) বাস্তবেও তাই হয়েছে। এরা ঠিকই ৯৬-এ আওয়ীমী লীগের সাথে আঁতাত করেছে। আবার বেশি ক্ষমতা পাওয়ার জন্য ৯৯-এ বিএনপির সাথে আঁতাত করেছে। তাদের নিজামী বলেছে ইসলাম কায়েমের জন্য নয় বরং আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর জন্য তারা নির্বাচন করেছে। অথচ এ নির্বাচনকে তারা আখ্যা দিয়েছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। এর জন্য মাল, অর্থ-সময় সব কিছু দেয়াকে তারা জিহাদ বলে উল্লেখ করেছে।
কাজেই ধর্মের নামে এভাবে ধোঁকা প্রতারণা, মুনাফিকী আর কত দিন। হাদীছ শরীফ-এ এদেরকে যমীনের নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। এদের কাছে না যেতে এবং কাছে আসতে না দিতে বলা হয়েছে। তাহলে তারা আমাদের গুমরাহ করতে পারবে না তাও বলা হয়েছে।


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১৫
৩০টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×