প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবে এ কথা উল্লেখ আছে যে, “তাবলীগ তথা দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার কারণেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, অন্য কোন কারণে নয়।” দলীল স্বরূও তারা সূরা আল ইমরান-এর ১১০তম আয়াত শরীফ পেশ করে থাকে।
(দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন?, লেখক- মুহম্মদ ওবায়দুল হক, পৃষ্ঠা-১১৬; পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ, পৃষ্ঠা-৯, লেখক- মাওঃ এহ্তেশামুল হাসান কান্দলভী, অনুবাদক- ছাখাওয়াত উল্লাহ, পৃষ্ঠা-৯; তাবলীগী নেছাব, পৃষ্ঠা-১১; ফাজায়েলে তাবলীগ, লেখক- হযরত মাওলানা জাকারিয়া, অনুবাদক- আম্বর আলী, পৃষ্ঠা-৯; তাবলীগে ইসলাম, পৃষ্ঠা-৯, আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী; আমি কেন তাবলীগ করি, পৃষ্ঠা-১৫, লেখক- মাওলানা শাহ মনিরুজ্জামান)
------------------------------------------------------------------------------------
সূরা আল ইমরান-এর ১১০তম আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের এই বক্তব্যটি সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর এবং কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের ভূল ও মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যার শমিল, যাকে “তাফসীর বিররায়” বলে। শরীয়তের দৃষ্টিতে “তাফসীর বিররায়” বা মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা করা স্পষ্ট কুফরী। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া তাফসীর করলো, সে কুফরী করলো।”
হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া তাফসীর করে, সে যেন তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।”
অন্য রেওয়াতে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি বিনা ইল্মে বা না জেনে কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা করে, সেও যেন তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, উরফুশ্শজী, তালীক)
মূলতঃ সূরা আল ইমরান-এর ১১০তম আয়াত শরীফ- “তোমরা মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে এবং আল্লাহ পাকের প্রতি ঈমান আনবে।” দ্বারা কখনোই প্রমাণিত হয়না যে, তাবলীগ তথা দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার কারণে উম্মতে মুহম্মদী শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে। বস্তুত উক্ত আয়াত শরীফের সঠিক তাফসীর বা ব্যাখ্যা না জানার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিমূলক কথা বলা হয়েছে।
উপরোক্ত আয়াত শরীফের সঠিক তাফসীর নিম্নে বর্ণিত হলো-
এ আয়াত শরীফের সঠিক তাফসীরে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “আল্লাহ তায়ালা যদি انتم (জমির বা সর্বনাম) বলতেন, তাহলে সমস্ত উম্মতকে বুঝানো হতো। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা كنتم (ফে’ল) ব্যবহার করেছেন, সেহেতু খাছ করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে বুঝানো হয়েছে।” (হায়াতুস সাহাবা)
অর্থাৎ যদিও এ আয়াত শরীফখানা হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের শানে নাযিল হয়েছে, তথাপিও যাঁরা তাঁদের ওয়ারিছ বা নায়েব হবেন, তাঁদের উপরও এ আয়াত শরীফের হুকুম বর্তাবে। যেমন আল্লাহ পাক বলেন, “(ঈমান ও আমলে) সর্বপ্রথম প্রথম স্থান অধিকারী আনছার ও মুহাজির অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং ইখলাছের সাথে উক্ত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসরণকারী সকলের প্রতিই আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট, তাঁরাও আল্লাহ পাকের প্রতি সন্তুষ্ট। হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ও তাঁদের অনুসারীদের জন্য এরূপ বেহেশত নির্ধারিত করে রেখেছেন, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবে, তাঁরা চিরদিন সে বেহেশতে অবস্থান করবেন, যা তাঁদের বিরাট সফলতা।” (সূরা তওবা ১০০)
এ আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, যাঁরা হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসরণ করবে, তাঁরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে পরিগণিত হবে এবং আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি হাছিল করবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের ন্যায় আরো অনেকেই সূরা আল ইমরান-এর এই আয়াত শরীফ উল্লেখ করে বলে থাকে যে, আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে, কারণ সৎ কাজের আদেশ করি ও অসৎ কাজের নিষেধ করি। মূলতঃ তাদের কৃত এ অর্থ ও ব্যাখ্যা কোনটাই সঠিক নয়। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়াটাই হলো আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠত্ব। আর এছাড়া আমাদের যতগুলো গুণ দেয়া হয়েছে, তাও একমাত্র হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কারণেই। তাবলীগ তথা দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার কারণেই শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়নি। শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, একমাত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার কারণেই।
হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে, “সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার জন্য আল্লাহ পাক-এর নিকট আরজু করেছেন।” (তাফসীর সমূহ)
সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের দু’য়াই আল্লাহ পাক কবুল করেছেন, তবে সরাসরি কবুল করেছেন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর দু’য়া। অনেকে মনে করে থাকে, একমাত্র ঈসা আলাইহিস সালাম ব্যতীত আর কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের দু’য়াই আল্লাহ পাক কবুল করেননি, এই কথা সঠিক নয়। কেননা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, দু’য়া কবুল হয় ৩ প্রকারে-
(১) বান্দা যা চায়, আল্লাহ পাক তা সরাসরি দিয়ে দেন। (২) বান্দা যা চায়, তার চেয়ে যা বেশী জরুরী, তাই আল্লাহ পাক দিয়ে থাকেন, যে জরুরত সম্বন্ধে বান্দা নিজেই জানে না। (৩) বান্দা যা চায়, আল্লাহ পাক তাকে তা দিয়ে তার দু’য়া কবুল করে তার সাওয়াবটুকু পরকালের জন্য জমা করে রাখেন। কিছু বান্দারা যখন হাশরের ময়দানে উপস্থিত হয়ে তাদের নেকী কম দেখবে, তখন তারা অস্থির হয়ে যাবে এই জন্য যে, তাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে যায় কিনা। তখন আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে ডেকে বলবেন, “হে বান্দারা! তোমরা অস্থির হয়োনা, তোমাদের জন্য অমুক স্থানে নেকী রাখা হয়েছে।” তখন সেই বান্দারা গিয়ে দেখবে যে, তাদের জন্য পাহাড় পাহাড় নেকী রাখা হয়েছে। তারা বলবে, আল্লাহ পাক! আমরা তো এত নেক আজ করিনি, আমাদের এত পরিমাণ নেকী আসলো কোথা থেকে? তখন আল্লাহ পাক বলবেন, “তোমরা দুনিয়াতে যে সকল দু’য়া করেছিলে, যার বদলা দুনিয়াতে দেয়া হয়নি। তোমরা বুঝতে পারনি, দু’য়া কবুল হলো কি হলোনা, অথচ আমি তা কবুল করেছিলাম এবং সেগুলিই পাহাড় পাহাড় পরিমাণ নেকী আকারে জমা হয়েছে।” তখন বান্দারা বলবে, আল্লাহ পাক! দুনিয়াতে আমাদের সমস্ত দু’য়াগুলিরই বদলা না দিয়ে যদি পরকালের জন্য জমা রাখা হতো, তাহলে তা আমাদের জন্য আরো ফায়দার কারণ হতো। (বুখারী শরীফ, ফত্হুল বারী, ওমাদাতুল বারী, এরশাদুস্ সারী)
উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র দাওয়াতের কারণেই যদি উম্মতে মুহম্মদীর শ্রেষ্ঠত্ব হতো, তাহলে অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ দাওয়াতের দায়িত্ব পাওয়া সত্ত্বেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার জন্য আল্লাহ পাক-এর নিকট দু’য়া করতেন না। বরং উম্মতে মুহম্মদীর শ্রেষ্ঠত্ব, দাওয়াতের কারণে নয় বরং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার কারণেই।
কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক আরো উল্লেখ করেন, “এরূপেই আমি তোমাদেরকে উম্মতে ওয়াসাত (শ্রেষ্ঠ উম্মত) করেছি। যেন তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও সমস্ত মানুষের জন্য এবং যাতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য।” (সূরা বাক্বারা ১৪৩)
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়, হাশরের ময়দানে যখন সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের গুণাহ্গার উম্মতদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, “তোমরা কেন নেক কাজ করোনি।” তখন তারা বলবে, দুনিয়াতে আমাদের কাছে কোন আসমানী কিতাবও আসেনি এবং কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামও আগমন করেননি। তখন আল্লাহ পাক নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণকে জিজ্ঞেস করবেন, “আপনারা কি তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছাননি?” তাঁরা বলবেন, “হ্যাঁ, পৌঁছিয়েছি।” তখন অন্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের উম্মতগণ তা অস্বীকার করবে। তখন আল্লাহ পাক বলবেন, “হে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ! আপনাদের সাক্ষী কোথায়?” তখন তাঁরা বলবেন, “উম্মতে মুহম্মদীগণই আমাদের সাক্ষী।” তখন উম্মতে মুহম্মদীগণকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা বলবেন, “হ্যাঁ, সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণই তাঁদের দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন এবং দায়িত্ব পালন করেছেন।” একথা শুনে অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের উম্মতগণ বলবে, উম্মতে মুহম্মদী তো আমাদের থেকে অনেক পরে এসেছেন, তাঁরা কিভাবে আমাদে সাক্ষী হয়? তখন আল্লাহ পাক উম্মতে মুহম্মদীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলবেন, “হ্যাঁ, আমরা তাদের থেকে অনেক পরে এসেছি, তবে আমাদের নিকট এসেছিলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তিনি আমাদেরকে এ বিষয়ে জানিয়াছেন। আমরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁকে সত্য বলে জেনেছি, তাই আমাদের সাক্ষ্য সত্য।” অতঃপর আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন এবং তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মতে মুহম্মদীকে সমর্থন করে সাক্ষী দিবেন, “হ্যাঁ, তারা যা বলেছে, সবই সত্য এবং আমিই তাদেরকে এ তথ্য জানিয়েছি, যা আমি আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে জেনেছি।” (সিহাহ সিত্তাহ ও সমূহ তাফসীর)
সুতরাং সূরা আল ইমরান-এর উক্ত আয়াত শরীফে আমাদেরকে যে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে, তা দাওয়াতী কাজ করার জন্য নয় বরং তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রকৃত উম্মত হওয়ার কারণে। (তাফসীরে রুহুল মায়ানী, রুহুল বয়ান, মায্হারী, কুরতুবী, খাযিন, বাগবী, কবীর, ইবনে আব্বাস, আবী সউদ, দুররে মনসুর ইত্যাদি)
এখানে স্মরণীয় যে, কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ এবং সহীহ্ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, পূর্বেকার উম্মতগণের উপরও দাওয়াতের দায়িত্ব ছিল। যেমন আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের সূরা ইয়াসীন-এ উল্লেখ করেন, “কোন একজন জনপদে রসূল আলাইহিমুস সালামগণ আগমন করলে সেখানকার অধিবাসীরা তাঁদের (নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের) রিসালাতকে অস্বীকার করে, হত্যা করার জন্য উদ্যত হলো। তখন শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি, যিনি ঈমান গ্রহণ করেছিলেন, তিনি দৌড়ে এলেন এবং তার সম্প্রদায়কে রসূল আলাইহিমুস সালামগণকে হত্যা করতে নিষেধ করলেন এবং তাঁদের অনুসরণ করার উপদেশ দিলেন।”
এছাড়া হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক হযরত জীব্রাঈল আলাইহিস সালাম-এর নিকট ওহী পাঠালেন, অমুক শহরের সমগ্র বাসিন্দাসহ উল্টিয়ে দাও।” তখন হযরত জীব্রাঈল আলাইহিস সালাম আরজ করলেন, “হে পরওয়ারদিগার! এ শহরে আপনার অমুক বান্দা রয়েছে, যে মুহূর্তকালও আপনার নাফরমানীতে লিপ্ত হয়নি।” তখন আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন, “শহরটিকে ঐ ব্যক্তি এবং সমগ্র বাসিন্দাসহ উল্টিয়ে দাও। কারণ আমার জন্য ঐ ব্যক্তির চেহারায় এক মুহূর্তের জন্য পরিবর্তন আসেনি, অর্থাৎ সে লোকদের নাফরমানী থেকে নিষেধ করা তো দূরের কথা, আফসোসও করেনি।” (বায়হাক্বী শরীফ)
বণী ইসরাঈল আমলের অনূরূপ আরো একটি ওয়াক্বিয়া (ঘটনা) তাফসীরে উল্লেখ করা হয়- আল্লাহ পাক হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস সালাম-এর উপর ওহী নাযিল করলেন, “হে আমার নবী আলাইহিস সালাম! আপনার উম্মতের মধ্যে ১ লক্ষ লোককে ধ্বংস করে দেয়া হবে, যার মধ্যে ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুনাহে লিপ্ত।” তখন হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস সালাম বললেন, “হে আল্লাহ পাক! ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুনাহে লিপ্ত, তাই তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে। কিন্তু বাকী ৪০ হাজার লোককে ধ্বংস করা হবে কেন?” তখন আল্লাহ পাক বললেন, “যেহেতু তারা তাদের সাথে মিলা-মিশা, ওঠা-বসা করে এবং সম্পর্ক রাখে। আর গুনাহের কাজে বাধা প্রদান করে না, তাই তাদেরকেসহ ধ্বংস করে দেয়া হবে।”
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপরও দাওয়াতের দায়িত্ব ছিল, কেননা দায়িত্ব থাকার কারণেই তা পালন না করায় ‘বণী ইসরাঈল’-এর উল্লিখিত ব্যক্তি ও সম্প্রদায়কে শাস্তি পেতে হয়েছে।
অতএব উপরোক্ত আয়াত শরীফ, হাদীস শরীফ এবং তার আনুষাঙ্গিক ঘটনার মাধ্যমে জানা যায় যে, পূর্ববর্তী উম্মতগণও দাওয়াতের কাজ করেছেন, যা তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে মায্হারী, তাফসীরে আমিনিয়া, তাফসীরে খাযিন, তাফসীরে মা’আরিফুল কুরআন ইত্যাদি তাফসীরের কিতাবসমূহ এবং বিশুদ্ধ হাদীস শরীফের কিতাব দ্বারাও প্রমাণিত।
এখানে উল্লেখ্য যে, অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার জন্য আরজু করেছেন, তাই বলে কেউ যেন একথা মনে না করে যে, উম্মতে মুহম্মদীর শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ হতে বেশী। বরং শুধুমাত্র হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কারণে যে উম্মতে মুহম্মদীর শ্রেষ্ঠত্ব, তা বুঝানোর জন্যই সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার জন্য আরজু করেছেন।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, উম্মতে মুহম্মদী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার কারণেই শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে, তাবলীগ তথা দাওয়াতের কারণে নয়। কাজেই যারা বলে তাবলীগ তথা দাওয়াতের কারণে উম্মতে মুহম্মদী শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে, তাদের কথা সম্পূর্ণই মনগড়া, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর এবং তাফসীর বিররায় হওয়ার কারণে স্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে এ ধরণের অবান্তর ও কুফরীমূলক কথাবার্তা বলা ও লিখা থেকে হিফাযত করুন। (আমিন!)
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের ভ্রান্ত আক্বীদা ও তার খন্ডন (৫)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ২:২৬