প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেকেই বলে থাকে যে, প্রচলিত ৬ উছূলী তাবলীগে অংশগ্রহণ না করলে ও চিল্লা না দিলে ঈমান ও এক্বীন সহীহ্ হয়না। তাই সাধারণ লোক ইছলাহ্প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিন চিল্লার দরকার। এছাড়াও প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, মূর্খ লোক চিল্লা দিলে আলিমের চেয়ে বেশী ফযীলত প্রাপ্ত হয়, আর মূর্খ লোক ইছলাহ্প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিন চিল্লা দরকার এবং তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে মুযাম্মিলুল হক তার “তেরো দফা” নামক কিতাবে ৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছে, “মূর্খ লোক আমীর হওয়ার জন্য তিন চিল্লাহ্ যথেষ্ট, আর আলেমের জন্য প্রয়োজন সাত চিল্লার।"
--------------------------------------------------------------------------------------
তাদের এ বক্তব্য বা আক্বীদাটি কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের সম্পূর্ণ খিলাফ এবং সমাজে ফিৎনা সৃষ্টির কারণ।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শেষ যামানায় এমন অনেক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, যারা এমন সব হাদীসসমূহ বয়ান করবে (মতবাদ বা কথা ছড়াবে), যা তোমরা শুনোনি, তোমাদের বাপ-দাদা কেউ শুনেনি। তোমরা তাদের নিকট গমণ করোনা এবং তাদেরকে তোমাদের নিকট স্থান দিওনা, তাহলে তারা তোমাদেরকে ভ্রান্ত করতে ও ফিৎনায় ফেলতে পারবে না।” (মুসলিম, মিশকাত)
উল্লেখ্য, প্রচলিত তাবলীগ শুরু হয়েছে ১৩৪৫ হিজরীতে আর বর্তমানে ১৪৩০ হিজরী চলছে, অর্থাৎ প্রায় ৮৫ বছর ধরে এই প্রচলিত তাবলীগ চলে আসছে। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, এর পূর্বে যারা ছিলেন অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ থেকে শুরু করে তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদীন, আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যাঁরাই এসেছেন ১৩৪৫ হিজরীর পূর্ব পর্যন্ত, তাহলে কি তাদের ঈমান ও এক্বীন সহীহ্ বা শুদ্ধ ছিলনা? এরূপ আক্বীদা পোষণ করা কুফরী। যে ব্যক্তি এই আক্বীদা পোষণ করবে, সে ব্যক্তি ঈমান হারা হবে। কেননা এ সমস্ত কথাগুলো কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের কোথাও নেই। যা সম্পূর্ণই ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মনগড়া।
আরো উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার যামানা সর্বোত্তম, অতঃপর পরবর্তী যামানা, অতঃপর তৎপরবর্তী যামানা।” (বুখারী শরীফ)
অথচ উল্লিখিত তিন যামানায় বা খাইরুল কুরুনে প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত ও তাদের প্রবর্তিত চিল্লার কোন অস্তিত্বই ছিলনা। এমনকি প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা, ইলিয়াস সাহেবের পীর সাহেব রশীদ আহ্মদ গাঙ্গুহী সাহেবও চিল্লা দেয়নি, তাহলে কি তার ঈমান ও এক্বীন সহীহ্ বা শুদ্ধ ছিলনা?
অথচ ঈমান ও এক্বীন সহীহ্ ও পূর্ণ হওয়ার জন্য আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, “আপনার রবের কছম! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নিবে। অতঃপর আপনার ফায়সালা সম্পর্কে তাদের মনে কোন সংকীর্ণতা থাকবেনা এবং তারা সন্তুষ্টচিত্তে তা গ্রহণ করবে।” (সূরা আন্ নিসা ৬৫)
আর ঈমান পূর্ণ হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিনে কামিল হতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি, সকল মানুষ থেকে, অর্থাৎ সবকিছু থেকে আমাকে বেশী মুহব্বত না করবে।” (বুখারী, মুসলিম)
হাদীস শরীফে আরো রয়েছে, “যে আল্লাহ পাক-এর জন্য মুহব্বত করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে ও নিষেধ করে, সে ঈমানে পরিপূর্ণ।” (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ঈমান ও এক্বীন সহীহ্ বা পূর্ণ হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত ও তাঁর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত ও আনুগত্যতা শর্ত, অন্য কিছু নয়। কাজেই প্রচলিত ৬ উছূলী তাবলীগে অংশগ্রহণ না করলে ও চিল্লা না দিলে ঈমান ও এক্বীন সহীহ্ হবেনা, এটা সম্পূর্ণ ভূল কথা, যা কুফরীর পর্যায়ে পড়ে। বরং অতীতের মুহাক্কিক-মুদাক্কিক, ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তথা বুযূর্গানে দ্বীনের মতে আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত ও তাঁর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত ও আনুগত্যতা অর্জনের সর্বোত্তম ও অত্যাবশ্যকীয় উপায় হচ্ছে- তাছাউফ শিক্ষা করা। যার কারণে তাঁরা ফতওয়া দিয়েছেন, ইল্মে তাছাউফ শিক্ষা করা ফরজ।
মূর্খ লোক চিল্লা দিলে আলিমের চেয়ে মর্যাদা বেশী, একথা সম্পূর্ণ শরীয়তের খিলাফ, যা কুফরীর শামিল। কারণ আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ আছে, “আলিমগণকে এহানত (তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল্য বা অবজ্ঞা) করা কুফরী।”
আলিমগণের ফযীলত সম্পর্কে কুরআন শরীফে অনেক আয়াত শরীফ এবং অনেক হাদীস শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে। আলিমগণের ফযীলত সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন, “যারা জানে আর যারা জানে না, উভয়ে কি সমান হতে পারে?” (সূরা যুমার ৯)
আল্লাহ পাক আলিমগণের মর্যাদা ও ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, “যারা আলিম, তাদেরকে অনেক মর্যাদা দেয়া হয়েছে।” (সূরা মুজাদিলা ১১)
আর হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “আলিমগণ আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী।” (তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, দারিমী, আহমদ, মিশকাত, মা’য়ারিফুস্ সুনান, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, মুজাহিরে হক্ব, উরফুশ্ শাজী, বজলুল মাজহুদ ইত্যাদি)
আলিমগণের মর্যাদা ও ফযীলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “হযরত আবূ উমামাতুল বাহেলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দু’জন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম জন আবিদ, আর দ্বিতীয় জন আলিম। (একথা শুনে) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আলিমের মর্যাদা আবিদের উপর তদ্রুপ, যেমন তোমাদের মধ্যে সাধারণ ব্যক্তির উপর আমার ফযীলত। অতঃপর আরো বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ও তাঁর ফিরিস্তাগণ এবং আসমান ও যমীনবাসী, এমনকি গর্তের ভিতর পিপীলিকা ও মাছ পর্যন্ত আলিমের প্রতি ছলাত পাঠ করেন।” (তিরমিযী,দারিমী,মিশকাত, মা’য়ারিফুস্ সুনান, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, মুজাহিরে হক্ব, উরফুশ্ শাজী, তালীক)
আলিমগণের ফযীলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে, “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আলিমের জন্য আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, এমনকি পানির মাছ পর্যন্ত ইস্তেগফার (ক্ষমা) প্রার্থনা করে। আর নিশ্চয় আলিমের মর্যাদা আবিদের উপর এরূপ, যেরূপ পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা অন্যান্য তাকরারাজীর উপর।” (তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, দারিমী, আহমদ, মিশকাত, মা’য়ারিফুস্ সুনান, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, মুজাহিরে হক্ব, উরফুশ্ শাজী, বজলুল মাজহুদ)
আলিমগণের মর্যাদা সম্পর্কে হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, একজন ফক্বীহ্ (হক্কানী আলিম) শয়তানের নিকট এক হাজার আবিদের চেয়েও বেশী ভয়ংকর।” (তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, দারিমী, আহমদ, মিশকাত, মা’য়ারিফুস্ সুনান, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, মুজাহিরে হক্ব, উরফুশ্ শাজী)
অতএব, উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের পর আল্লাহ পাক-এর যমীনে শ্রেষ্ঠ মানুষ। যার কারণে তাঁদের নিদ্রাকে জাহিল বা মূর্খ ব্যক্তির ইবাদতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “আলিমের নিদ্রা মূর্খ লোকের ইবাদত হতে উত্তম।”
স্মরনীয় যে, উপরে আলিমদের যে মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে, তা শুধুমাত্র ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফ অর্জনকারী, ইল্ম অনুযায়ী আমলকারী অর্থাৎ উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণের জন্যই প্রযোজ্য।
অতএব, আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে আলিমদেরকে মূর্খ লোকদের উপর এত ফযীলত দিয়েছেন, সেখানে বিনা দলীল-আদীল্লায় একথা বলা কি করে জায়িয ও শরীয়তসম্মত হতে পারে যে, মূর্খ লোক চিল্লা দিলে আলিমের চেয়ে বেশী ফযীলতপ্রাপ্ত হবে। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে মাত্র মক্তবী শিক্ষা দেয়া হয়। যে মক্তবী শিক্ষার মাধ্যমে কখনো হাক্বীক্বী আলিন হওয়া সম্ভব নয়। আর যেখানে আলিম হওয়াই সম্ভব নয়, সেখানে চিল্লা দিলে কি করে আলিমের চেয়ে বেশী ফযীলতপ্রাপ্ত হবে?
আরো উল্লেখ্য যে, মূর্খ লোক ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিন চিল্লা দিতে হয়, কিন্তু আলিমের ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য সাত চিল্লা প্রয়োজন। তাদের এ কথাটাও জিহালতপূর্ণ ও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কারণ একথাও আলিম সম্প্রদায়কে এহানত করার শামিল।
তবে এখানে বিশেষভাবে স্মরনীয় যে, শুধু মাদ্রাসা হতে ফারিগ হলে অর্থাৎ দাওরা বা টাইটেল পাশ করলে মাওলানা হওয়া যায়, হাক্বীক্বী আলিম হওয়া যায় না। কারণ মাদ্রাসায় শুধুমাত্র ইল্মে ফিক্বাহ শিক্ষা দেয়া হয়, ইল্মে তাছাউফ শিক্ষা দেয়া হয় না। অথচ ইল্মে ফিক্বাহের সাথে ইল্মে তাছাউফ অর্জন করাও ফরজে আইন। অতএব, যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্বাহ ও ইল্মে তাছাউফ উভয়টি অর্জন করলো, সে ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলিম বা নায়িবে রসূল। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আলিমগণ আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী। আর নিশ্চয় আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণ কোন দীনার-দিরহাম রেখে যাননি। বরং ইল্ম রেখে গেছেন।” (তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, দারিমী, আহমদ, মিশকাত, মা’য়ারিফুস্ সুনান, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, মুজাহিরে হক্ব, উরফুশ্ শাজী, বজলুল মাজহুদ)
অর্থাৎ সে ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলিম বা নায়িবে রসূল। উপরোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা বুঝা গেল যে, আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের ওয়ারিছ স্বত্ত্ব হিসেবে শুধুমাত্র ইল্ম রেখে গেছেন। আর ইল্ম সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ইল্ম দু’প্রকার, একটি হচ্ছে- ক্বালবী ইল্ম (ইল্মে তাছাউফ), যা উপকারী ইল্ম। অপরটি হচ্ছে- জবানি ইল্ম (ইল্মে ফিক্বাহ), যা আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে বান্দার প্রতি দলীল স্বরূপ।” (দারেমী, বায়হাক্বী, দায়লামী, মিশকাত, মিরকাত, মুজাহিরে হক্ব, তারগীব ওয়াত্ব তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের ওয়ারিছ স্বত্ত্ব হিসেবে ইল্মে ফিক্বাহ ও ইল্মে তাছাউফ উভয়টি রেখে গেছেন। যে ব্যক্তি উভয়টাই শিক্ষা করলো, সেই মুহাক্কিক অর্থাৎ সেই আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের ওয়ারিছ বা হক্কানী আলিম।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যারা ইল্মে ফিক্বাহ অর্জন করে মাওলানা হয়েছে, তাদের উচিত হবে, পীরানে তরীক্বত বা আল্লাহ্ওয়ালাগণের সোহবত এখতিয়ার করে, ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে ইছলাহ্ প্রাপ্ত হয়ে হাক্বীক্বী আলিম বা নায়িবে রসূল হওয়া। তাই আল্লাহ আপাক কালামে পাক-এ ইরশদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ পাককে ভয় কর এবং সত্যবাদী বা আল্লাহ্ওয়ালাগণের সোহবত এখতিয়ার কর।” (সূরা তওবা ১১৯)
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, যারা ইল্মে তাছাউফ অর্জন করেনি, তারা হাক্বীক্বী আলিম নয়। কারণ তাদের অন্তর ইছলাহ্ প্রাপ্ত নয়। কাজেই তাদের তো ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য পীরানে তরীক্বত বা আল্লাহ্ওয়ালাগণের নিকট বাইয়াত হয়ে ইল্মে তাছাউফ অর্জন করতে হবেই, সাথে সাথে যারা মূর্খ বা জাহিল, তাদেরকেও আল্লাহ্ওয়ালাগণের নিকট বাইয়াত হয়ে ইল্মে তাছাউফ চর্চা করতে হবে। আর যাঁরা হাক্বীক্বী আলিম, তাঁরা তো অবশ্যই ইছলাহ প্রাপ্ত। স্মরণীয় যে, তিন চিল্লা, সাত চিল্লা, দশ চিল্লা কেন, শত-সহস্র চিল্লা দিলেও কেউ ইছলাহ প্রাপ্ত হবে না। কারণ কুরআন-সুন্নাহ-এর কোথাও চিল্লাকে ইছলাহ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য শর্ত করা হয়নি। আর এটাও বলা হয়নি যে, চিল্লা দিলে মানুষ ইছলাহ প্রাপ্ত হবে। বরং শর্ত করা হয়েছে, ইছলাহ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য ইল্মে তাছাউফ শিক্ষা করাকে।
মূর্খ লোক তিন চিল্লা দিলে আমীর হতে পারে, আর আলিম আমীর হওয়ার জন্য তিন চিল্লা দরকার। তাদের একথাও আলিম ও ইল্মকে এহানত করার শামিল। কারণ ইতিপূর্বে কুরআন শরীফ –হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, আলিমদের মর্যাদা মূর্খ লোকের উপর অনেক বেশী।
অতএব, যে সমস্ত কথাবার্তা শরীয়তের খিলাফ ও যার কোন শরয়ী দলীল নেই, এ ধরনের কথাবার্তা থেকে বেঁচে থাকা বা বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ওয়াজিব।
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের ভ্রান্ত আক্বীদা ও তার খন্ডন (৪)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৩