somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের ভ্রান্ত আক্বীদা ও তার খন্ডন (৪)

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের মাল্‌ফুযাতের ৫৩তম পৃষ্ঠার ৮০তম মালফুযে একথা উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগের বা অতরীক্বত পন্থীদের, তাছাউফ-এর বা সূফীদের বই পড়া উচিৎ নয়।
------------------------------------------------------------------------------------
বস্তুত তাছাউফ-এর বা সূফীদের কিতাবে তাছাউফ সম্পর্কে যে সূক্ষ্ম বর্ণনা রয়েছে, তা প্রচলিত তাবলীগওয়ালা বা অতরীক্বত পন্থীদের পক্ষে বোঝা সত্যিই খুব দুরূহ ব্যাপার। সেজন্য তাদেরকে ইল্‌মে তাছাউফ থেকে ফিরিয়ে রাখা কখনই জায়িয হবে না। কারণ প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জরুরত আন্দাজ ইল্‌মে তাছাউফ শিক্ষা করা ফরজ।
কাজেই “অতরীক্বত পন্থীদের, তাছাউফ-এর বা সূফীদের বই পড়া উচিৎ নয়” একথা বলার অর্থ হলো- পূর্ণ ইসলামী শিক্ষা থেকে মাহ্‌রুম করা ও অন্তর পরিশুদ্ধ করে ইখলাছ অর্জনে বাধা সৃষ্টি করা, যা সম্পূর্ণই শরীয়ত বিরোধী। কারণ কোন লোক যখন ইল্‌মে তাছাউফ অর্জন বা ক্বালবী যিকির থেকে বিরত থাকে, তখন শয়তান তার সঙ্গী হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,

“যে ব্যক্তি আমার যিকির থেকে বিরত থাকে, তার জন্য একটি শয়তান নির্দিষ্ট হয়ে যায়, সে তাকে ওয়াস্‌ওয়াসা দিয়ে গোমরাহ্‌ করে দেয়।” (সূরা যুখরূফ ৩৬)

আর হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,

“শয়তান মানুষের অন্তরে বসে, যখন সে যিকির করে, তখন পালিয়ে যায়। আর যখন যিকির থেকে গাফিল থাকে, তখন ওয়াস্‌ওয়াসা দেয়।” (বুখারী শরীফ)

কাজেই প্রমাণিত হলো যে, ইল্‌মে তাছাউফ চর্চা থেকে বিরত রাখার অর্থ হলো- লোকদেরকে শয়তানের সঙ্গী করে দেয়া বা গোমরাহিতে নিপতিত করা। আরো উল্লেখ্য যে, সূফীদের বই পড়া বা ইল্‌মে তাছাউফ থেকে বিরত রাখার অর্থ হচ্ছে, দ্বীন ইসলামের অর্ধ শিক্ষা ও অর্ধ আমল থেকে বিরত রাখা। অথচ আল্লাহ পাক পরিপূর্ণভাবে দ্বীন ইসলামের মধ্যে দাখিল হতে বলেছেন।

এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে,

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণরূপে দ্বীন ইসলামে দাখিল হও।” (সূরা বাক্বারা ২০৮)

অন্যত্র আল্লাহ পাক বলেন,

“আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।” (সূরা মায়িদা ৩)

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য আল্লাহ পাক-এর বিধানের বিপরীত, যা দ্বীনের মধ্যে তাহ্‌রীফের শামিল ও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। তারা কি চায়, এই কথা বলে ইল্‌মে তাছাউফকে নিশ্চিহ্ন করতে বা ইল্‌মে তাছাউফ-এর শিক্ষা থেকে সাধারণ লোকদেরকে দূরে রেখে নিজেদের দল ভারী করতে। মূলতঃ এটা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

কারণ আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে ইরশাদ করেন,

“তারা চায়, আল্লাহ পাক-এর নূরকে ফু দিয়ে নিভিয়ে দিতে। আল্লাহ পাক তাঁর নূরকে পরিপূর্ণ করবেন, যদিও কাফিরেরা তা পছন্দ করেনা।” (সূরা ছফ ৮)

উপরোক্ত আয়াত শরীফে নূর-এর ব্যাখ্যায় মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও অনুসরণীয় মুফাস্‌সিরীন-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেন, নূর হচ্ছে-দ্বীন ইসলাম। আর ইসলাম হচ্ছে- ইল্‌মে ফিক্বাহ্‌ ও ইল্‌মে তাছাউফ-এর সমন্বয়। (তাফসীরে মায্‌হারী, ইবনে কাছীর, রুহুল মায়ানী, রুহুল বয়ান, কবীর, ফত্‌হুল ক্বাদীর, তাবারী, আবী সউদ ইত্যাদি)

অতএব, ইল্‌মে তাছাউফ থেকে ফিরিয়ে রাখা অর্ধ দ্বীন থেকে ফিরিয়ে রাখার নামান্তর, যা কুফরীর শামিল। তাই ইল্‌মে তাছাউফ, যা দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করার মূল ও একমাত্র মাধ্যম, তা কারো পক্ষেই নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়, বরং তা ক্বিয়ামত পর্যন্তই বহাল থাকবে।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পুর্ণই শরীয়ত বিরোধী। কাজেই এই কথা বলা তাদের উচিৎ হয়নি, বরং তাদের উচিৎ হবে এই কথা বলা যে, যারা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক বা অতরীক্বতপন্থী, তারা যেন হক্কানী পীরানে তরীক্বত, আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের কাছে বাইয়াত হয়ে তাছাউফ শিক্ষা ও কিতাবাদী পাঠের মাধ্যমে ফরজ পরিমাণ ইল্‌ম অর্জন করে। (দুররুল মুখতার, শামী, তাফসীরে মায্‌হারী, কবীর, রুহুল মায়ানী, মাকতুবাত শরীফ, ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন, কিমিয়ায়ে সায়াদাত, ফত্‌হুর রব্বানী, আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ ইত্যাদি)

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের ভ্রান্ত আক্বীদা ও তার খন্ডন (৩)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:৩৭
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×