somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইলেক্ট্রনিকসের খুঁটিনাটি - পর্ব ৮ (ওয়াই-ডেল্টা কানেকশন) :):)

২০ শে জুন, ২০১২ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এমনিতে জিনিসটা একটু হিজিবিজি। এই বিষয়ে হয়তোবা আরও পড়ে লিখতাম, কিন্তু কয়েকজনের অনুরোধে আজকেই লিখতে বসলাম। :)

ওয়াই-ডেল্টা রেজিস্টর কানেকশন খুবই জনপ্রিয় এবং অনেক কাজের একটা কানেকশন। এটা সাধারনত পাওয়ার লাইনে ব্যাবহার করা হয় তবে আজকে আমরা শুধুমাত্র রেজিস্টর এবং ডিসি সার্কিট দিয়ে এই কানেকশন শিখব। পাওয়ার লাইনে ব্যাবহার নিয়ে পড়ে আলোচনা হবে। ;)

এই কানেকশনগুলা অনেকের কাছে অনেক জটিল মনে হয়, কারন সমীকরন গুলা বেশ বড় আর মনে রাখা কষ্টকর। তাতে কি? মুখস্ত করার কি দরকার? যখন দরকার পড়বে বইটই একটুখানি দেখে নিলেই হয়। ;) আমি নিজেও কিছু মুখস্ত করিনা। আমি চেষ্টা করব খুব সহজ ভাবে বুঝানোর।

এখন কথা হল এই ওয়াই আর ডেল্টা মানে কি? ওয়াই তো ইংরেজি বর্ণমালার একটা বর্ণ। তেমনিভাবে ডেল্টা হল গ্রিক বর্ণমালার একটা বর্ণ।
ওয়াই দেখতে এরকমঃ (Y) আর ডেল্টা দেখতে এরকমঃ ()
ওয়াই কানেকশনে সার্কিট এর এলিমেন্ট গুলা ঠিক ওয়াই এর মত সবগুলার এক মাথা একসাথে লাগানো হয়। বাকি ৩ টা মাথা অন্য এলিমেন্টের সাথে যুক্ত থাকে। ডেল্টাতেও ঠিক ত্রিভুজের মত করে ৩ টা এলিমেন্ট লাগানো হবে। তাহলে ওয়াই থেকে ৪ টা নোড বের হল আর ডেল্টা থেকে ৩ টা। আচ্ছা একটা কথা। ওয়াইকে “টি” (T) কানেকশন ও বলে। কারন দেখতে একইরকম। আর ডেল্টাকে “পাই” () কানেকশন ও বলে। উল্লেখ্য যে, পাই ও গ্রিক বর্ণমালার একটা বর্ণ। এইটা কিন্তু খাওয়ার পাই না।:P দুঃখিত সামুর ফন্ট সমস্যার কারনে ডেল্টা আর পাই এখানে দেখাচ্ছেনা তাই আমি এই ২ টার ছবি দিয়ে দিলাম। /:)নিচে দেখেন।


এবার এই ছবিটা দেখলেই কানেকশনের ব্যাপারটাও ক্লিয়ার হয়ে যাবে। ছবিতে আমি প্রত্যেকটা নোডের একটা করে নাম দিয়েছি।


প্র্যাক্টিক্যাল কাজে প্রায়শই এদের মধ্যে এক কানেকশন থেকে অন্য কানেকশনে পরিবর্তন এর প্রয়োজন পড়ে। এটা সাধারনত বড় বড় আর জটিল সার্কিট কম্বিনেশন কে ধাপে ধাপে সহজ রূপে এনে সমাধান করার কাজে লাগে। এই কাজ টা করতেই সাধারনত সবার মাথা খারাপ হয়ে যায়। আমার নিজেরও হয়েছিল এককালে। :P

জিনিসটা আসলে খুব সোজা শুধুমাত্র এখানে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে, বাইরের সার্কিট কিন্তু এই কম্বিনেশন গুলাকে শুধুমাত্র এদের নোড এর উপর ভিত্তি করে চিনবে। সিরিজ আর প্যারালাল কম্বিনেশনের ইকুইভ্যালেন্ট বা সমতুল্য রেজিস্ট্যান্সের কথা মনে আছে? এখানেও ঠিক সেরকম। B-)
কম্বিনেশনের ভিতরে আপনি যাই করেন না কেন, ২ নোডের ভিতর ইকুইভ্যালেন্ট রেজিস্ট্যান্স সমান থাকলে বাইরের সার্কিট বুঝবেই না যে ভিতরে কি কম্বিনেশন করা হয়েছে। ধোঁকা দেয়ার খুবই সহজ উপায়।;)

উপরের ছবিতে বাইরের সার্কিটের সাথে কানেকশন হয়েছে শুধুমাত্র A, B, C নোড এর মাধ্যমে। সুতরাং, AB, BC, CA নোডগুলির ভেতর ইকুইভ্যালেন্ট রেজিস্ট্যান্সের একই থাকলেই কেল্লা ফতে। এক কম্বিনেশনকে অন্যটা দ্বারা বদলিয়ে ফেলা যাবে এবং এতে সার্কিটের কার্যক্রমের কোনই পরিবর্তন হবেনা। :|

আমরা এখন এই কাজটাই করব। অবশ্যই অবশ্যই ২ ক্ষেত্রেই নোড গুলার অবস্থানেরও কোন পরিবর্তন হবেনা। নিচের এই সহজ ছবিটা মনে রাখেন। অনেক কাজে দিবে।



ডেল্টা থেকে ওয়াইতে পরিবর্তনঃ
নোড CA এর পরিস্থিতি বিবেচনা করি। ডেল্টার জন্য ইকুইভ্যালেন্ট রেজিস্ট্যান্সের মানঃ
Rb || ( Ra + Rc ) আর ওয়াইর জন্য R1 + R3
এখন কম্বিনেশন একে অন্যতে পরিবর্তন করতে গেলে, এই ২ টা মান সমান হতে হবে ।
R1 + R3 = Rb || ( Ra + Rc ) = Rb ( Ra + Rc ) / Ra + Rb + Rc (১)
তেমনি ভাবে,
R1 + R2 = Rc ( Ra + Rb ) / Ra + Rb + Rc (২)
R2 + R3 = Ra ( Rb + Rc) / Ra + Rb + Rc (৩)
এখন (৩) নং হতে (১) নং বাদ দিলে পাই,
R1- R2 = Rc ( Rb – Ra) / Ra + Rb + Rc (৪)
(১) আর (৪) যোগ করলে পাই, R1 = Rb Rc / Ra + Rb + Rc (৫)
তেমনিভাবে, R2 = Rc Ra / Ra + Rb + Rc (৬)
এবং, R3 = Ra Rb / Ra + Rb + Rc (৭)
এখন এইগুলা সমীকরন দিয়ে খালি হিসাব করবেন আর সেই মান গুলা ইকুইভ্যালেন্ট ওয়াই তে বসাবেন। ব্যাস কাজ শেষ।

ওয়াই থেকে ডেল্টাতে পরিবর্তনঃ
এইটা আরও সোজা। (৫), (৬) আর (৭) দিয়ে নিচের মতন কাম করেন। মানে হইলেঃ
(৫*৬)+(৬*৭)+(৭*৬) কত হয় সেইটা বের করেন।
R1R2 + R2 R3 + R3 R1 = Ra Rb Rc (Ra + Rb + Rc)/ (Ra + Rb + Rc)2 (৮)
অথবা, R1R2 + R2 R3 + R3 R1 = Ra Rb Rc / (Ra + Rb + Rc) (৯)
এবার (৯) কে (৫), (৬), (৭) দিয়ে সিরিয়ালি ভাগ দিলে নিচের ৩ টা সমীকরণ পাওয়া যায়। একটা করলেই বাকি ২ টাও পারবেন।
Ra = (R1R2 + R2 R3 + R3 R1) / R1 (১০)
Rb = (R1R2 + R2 R3 + R3 R1) / R2 (১১)
Rc = (R1R2 + R2 R3 + R3 R1) / R3 (১২)
এই সমীকরণ গুলা দিয়ে খুব সহজেই ওয়াই থেকে ডেল্টাতে পরিবর্তন করা যাবে।

সমীকরণ দেখতে বড় মনে হলেও কিন্তু কঠিন না। কারন একটু খেয়াল করলেই পেয়ে যাবেন। প্রত্যেকটার ভেতরেই অদ্ভুত রকমের মিল রয়েছে যার ফলে এগুলা মনে রাখাও সোজা। :)

তারপরেও আপনাদের সুবিধার জন্য আমি সবগুলা সমীকরণ একসাথে ছবি আকারে দিয়ে দিলাম। যখন দরকার পড়বে চোখ বুলিয়ে নিবেন। :)


যথারীতি প্রাকটিস করার জন্য এবারো একটা সমস্যা দিব। নিচের “পাই” নেটওয়ার্ক কে “টি” তে কনভার্ট করতে হবে। নিজে একবার চেষ্টা করে দেখেন। সমীকরণ তো আমিই বের করে দিলাম। আপনি খালি মান বসাবেন আর যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ করবেন। এইটুকু না পারলে তো সমস্যা, তাইনা? :P


আজকের মত এখানেই শেষ করলাম। আজকে থেকে আমার আবার থার্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা আরম্ভ হয়েছে। আল্লাহর রহমতে প্রথমটা ভালই দিয়েছি। পরেরগুলার যেন ভাল হয় সেইজন্য সক্কলে দুয়া কইরেন। আল্লাহ হাফিয। :)

বিঃদ্রঃ অনেক বড় বড় সমীকরণ লিখতে হয়েছে, কোন ভুল থাকলে যদি কারো চোখে পড়ে, ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।


___________আগের সব পর্ব_________________

ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি - পর্ব ১(সূচনা সাথে ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর ধারনা। )
Click This Link

ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি পর্ব ২( ভোল্টেজ -কারেন্ট শেষ পর্ব + রেজিস্টর নিয়ে আলোচনা )
Click This Link

ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি পর্ব ৩( রেজিস্টর কালার কোড + আপেক্ষিক রোধ)
Click This Link

ইলেক্ট্রনিকসের খুঁটিনাটি - পর্ব ৪ (সিরিজ - প্যারালাল আলোচনা)
Click This Link

ইলেক্ট্রনিক্সের খুঁটিনাটি -পর্ব ৫(ভোল্টেজ ডিভাইডার + কারেন্ট ডিভাইডার)
Click This Link

ইলেক্ট্রনিক্সের খুঁটিনাটি –পর্ব ৬ ( কার্শফ’স কারেন্ট ল )
Click This Link

ইলেক্ট্রনিক্সের খুঁটিনাটি –পর্ব ৭ ( কার্শফ’স ভোল্টেজ ল )
Click This Link










সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:১০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×