বাচ্চাদের সান্ত্বনা দিতে আমরা যেভাবে তাদের হাতে খেলনা তুলে দেই ঠিক সেই পন্থায় আমাদের চাকরেরা বারবার আমাদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও জনগণের হাতে শান্তনার মুলা ধরিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের শরীরের কোনো অঙ্গ যখন এমন কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয় যা বারবার অস্ত্র পাচার করেও ঠিক করা যায় না তখন সেই ভাইরাস থেকে পুরো দেহ রক্ষার্থে ডাক্তারের পরামর্শ থাকে সেই অঙ্গ কর্তনের। এটা হচ্ছে একেবারে সহজ একটি হিসাব যা অতি সহজেই বোধগম্য।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক কে এম মাসুদ বুয়েটে শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ-এর যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন তা অনেকের কাছে কার্যকরী পদক্ষেপের প্রথম ধাপ মনে হলেও প্রকৃতার্থে এটা একটা স্পষ্ট মুলা। ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি আন্দোলনরত জনতাকে ঠেকাতে আমাদের সরকার মহল বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ধোঁকার পথ অবলম্বন করেছে। তাদের এই ধোঁকায় পড়ে প্রতিবারই আমাদের প্রত্যেকটি আন্দোলন ভেস্তে গেছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবীতে শাহবাগের আন্দোলনের সফলতা শুধু একটি রাজনৈতিক দল ভোগ করেছে। তাদের স্বার্থ আদায়ের পর আর এক মুহূর্তের জন্যও আন্দোলনকে চলতে দেওয়া হয়নি। ঠিক সেই ধারাবাহিকতায় একের পর এক আন্দোলনকে হত্যা করেছে আমাদের সুচতুর একটি রাজনৈতিক দল।
কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য যখন ছাত্ররা রাজপথে নামতে বাধ্য হয় তখন সরকার তাদেরকে শান্ত করতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দেয়। কিন্তু আন্দোলনের রেশ না কাটতেই সেই আন্দোলনকারী ছাত্রদেরকে ধরে ধরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নির্যাতন করতে শুরু করে। প্রশাসন খুবই দক্ষতার সাথে তা মানিয়ে নেয়। সরকার দলীয় রাজনৈতিক দলের কুকীর্তির প্রতি প্রশাসনের এমন সমর্থন ও চামচামির কারণেই আমাদের আন্দোলনগুলো সফলতার মুখ দেখার আগেই মারা যায়। অনেক আন্দোলনেই দেখি বিশেষ ব্যক্তিভাজনের উপস্থিতি ও জেহাদি তজল্লী। এগুলো দেখে সফলতা ভাবার কিছু নেই বরং এই আন্দোলনকেই যখন তার দাবী পূরণের তৃপ্তি দেওয়া যাবে তখনই তাকে একটি শতভাগ সফল আন্দোলন বলে ধরে নেওয়া যাবে।
বুয়েটের ছাত্রদের সাথে শ্রদ্ধেয় আবুল হায়াত সাহেবের এমন উদার মনোভাব প্রকাশকে শ্রদ্ধা জানাতে হয়। একই সাথে অবাক ও ঘৃণা প্রকাশ করতে হয় তাদের প্রতি যারা বুয়েটে পড়া লেখা করে প্রশাসনিক বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করার পরেও বুয়েটের এই দুর্দিনে নিজ স্বার্থকে প্রায়োরিটি দিচ্ছেন। আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই আন্দোলনের সাথে সক্রিয় থেকে কেবল মুখের ভাষায় সন্তুষ্ট না হয়ে বরং পূর্ণ দাবী আদায়ের পর ঘরে ফেরা। শান্তনার মুলা, মুখের ভাষায় রাষ্ট্র দান, আর পুরস্কার কখনো নিরাপত্তা ও প্রকৃত শান্তি দিতে পারে না। আমরা যদি এই সাময়িক মুলায় সন্তুষ্ট হয়ে ঘরে ফিরে যাই তবে তা আমাদেরকে অবচেতনের অথৈ গভীরে নিয়ে যাবে। আর চলতেই থাকবে মৃত্যুর পূনরাবৃত্তির নৃত্য। সুতরাং বিবেকবানরা বুঝতেই পারছেন, এই পূনরাবৃত্তির মৃত্যু ঘটানো আমাদেরই হাতে। তাই আসুন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাই। মুলা নয়, ঘরে নিয়ে যাই আমাদের বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিময় ভবিষ্যতের সুপান।
ছবি-ভিডিও: গুগল-ইউটুব
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৫৫