somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দান নয়, প্রয়োজন অধর্ম রোধন

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমরা যারা কিছুটা ধনবান তাদের মধ্যে যারা দান-খয়রাতে নিজেকে কিছুটা বা পুরোটা যুক্ত রাখতে পারছেন তারা নিজেদেরকে অনেক কিছুই ভাবছেন হয়তো। এই ভাবনটা খারাপ না, এটা আত্মশুদ্ধির কিছুটা হলেও কাজে লাগে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের দান-খয়রাত আমাদেরকে কুসংস্কার ও অধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দাড় করাচ্ছে। আপনি হয়তো অস্বীকার করে বলবেন নাঃ 'কই, আজ থক্ দেখি নাই তো কোথাও আমায় অধর্মের প্রতিষ্ঠাতার আসন দেওয়া হয়েছে!'। হ্যা, এসব নিরবে প্রতিষ্ঠা লাভ পরবর্তী নিরবেই গায়েল করে চলেছে দারিদ্র্য পরিবারগুলোকে। এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও তার থেকে বাহিরে নয় আর দারিদ্রসীমার নিচের অবস্থানকারীদের গ্রাস তো করছেই নিত্য। আমি বলছি এসব পরিবারের কন্যাদের বিবাহের সময় আমাদের দান-খয়রাতের কথা। প্রসঙ্গত, আমাদের অনেকেই হয়ত ক্যাশ টাকাকেই যৌতুক ভাবছি অথচ তাই কেবল যৌতুক নয়। আমার মতে, কনের সাথে তার স্বামীগৃহে কাঠপালং পাঠানো, বরযাত্রী কর্তৃক কন্যার পিতার উপর ভোজনায়োজন পর্ব, কনের পিতার কাছে মোটরযান প্রাপ্তির আশা রাখা ইত্যাদি সবই যৌতুকের সজ্ঞায় পড়ে। যা আমাদের মাধ্যমেই সমাজে সৃষ্টি লাভ করেছে এবং তা ক্রমাগত চলছে।



নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থানকারী পরিবারের বিবাহযোগ্যা কন্যাদের বিবাহকালে আমরা ধনবানরা তাদেরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে হয়ত ভাবছি 'পূন্যের সাগর আমার'। আদতেই আমরা যা ভাবছি তা কি সত্য?
আচ্ছা, কনের সাথে তার স্বামীগৃহে কাঠপালং পাঠানো বা বরযাত্রী কর্তৃক কনের পিতার উপর ভোজনায়োজনের নামে অধর্মের যে চর্চাটা আমরা চালু রেখেছি তা কি আদৌও ইসলাম সমর্থন করে কিংবা তা কি সুপরিকল্পিত সামাজ ব্যাবস্থার নিয়মের ভেতর পড়ে?

প্রথমে ইসলামের বিধান মতে বিষয়টিকে স্বল্প বিশ্লেষণ করি চলুন, তারপর করা যাবে সুপরিকল্পিত সমাজ ব্যাবস্থার আলোকে বিশ্লেষণ। সকলেই অবগত যে, ইসলাম অতিরিক্ত ব্যায়কে কখনো সমর্থন করে না। পবিত্র কোরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই।’ (বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬-২৭)
বিবাহে অতিরিক্ত ব্যায় না হওয়ার ব্যাপারে নবীজি (সা) ছিলেন খুবই কঠোর, এবং স্বল্প খরচের প্রতি ছিলেন পূর্ণ তুষ্ট। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বাধিক বরকতপূর্ণ বিয়ে হচ্ছে, যার খরচ যত সহজ ও স্বাভাবিক হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৪৫২৯)
আমরা ধরবানরা আপোন অধীনস্থদের বিবাহকালে যে অধর্ম চর্চার মাধ্যমে কুসংস্কারগুলো পালন করছি তাই কিন্তু এই নিম্নপর্যায়ের পরিবারগুলোর জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা আমাদের জন্য স্পষ্ট অপ্রয়োজনীয়, অপব্যয়। কুরআনের ভাষায় যা শয়তানের কর্ম তুল্য।

নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থানকারী পরিবারগুলোর মেয়েদের বিবাহের ক্ষেত্রে কনের সাথে তার স্বামীগৃহে কাঠপালং পাঠানো বা বরযাত্রী কর্তৃক কন্যার পিতার উপর ভোজনায়োজনের নামে অধর্মের কর্মগুলো শরিয়তের দৃষ্টিতে মেয়ের পরিবারের প্রতি অবিচার। সুতরাং এমন কাজ পরিহার করা উত্তম। (আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস : ১১৫৪৫, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৭/৫২২)। তবে ওয়ালিমা সুন্নত। এই সুন্নতটি পালনের দায়বদ্ধতা পুরোপুরি বর্তায় বর ও তার অবিভাবকদের উপর; কনের পৈত্রিক খরচে নয়।

আসুন, এখন সুপরিকল্পিত সমাজ ব্যাবস্থার আলোকে বিশ্লেষণ করা যাক। আমরা যারা বিবাহে কনের সাথে কাঠপালং দেওয়া ও বরযাত্রীদের ভোজনায়োজনকে খুবই স্বাভাবিকভাবে দেখি। যাদের কাছে এ ব্যায় তেমন বেশি না। স্বাচ্ছন্দ্যে করার মত। এমনকি সমাজে যেসকল পরিবার আপোন মেয়েদের বিবাহ খরচ বহন করতে পারে না তাদেরকেও আমরা সাহায্য করি। হ্যা, এই আমরা সাহায্যকারীরাই অধর্মের রক্ষক। বলবেন কেমনে?
আমরা যারা ধনবান তারা এই অধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে আপোন সন্তান ও অধীনস্থদের বিবাহের আয়োজনে এসকল কুকাজ করে চলেছি। এবং তাদেরকে সহযোগীতা করছি যারা এই ব্যায় টানতে পারছে না। তাদেরকে আমরা সাহায্য দিয়ে পূন্যের আশাবাদী। অথচ আমাদের স্বাভাবিকভাবে পালনীয় এই কুসংস্কার ও অধর্মের কারণেই কিন্তু এসকল পরিবার আজ অত্যাচারে পিষ্ট। তারা কিন্তু একমাত্র সমাজ রক্ষায় আপোন কন্যাদের বিবাহের ব্যায় টানতে না পেরে ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হয়, কেউ অন্যের কাছে হাত পেতে ঋণের পাহাড় কাঁধে নেয়। তাদের মধ্যে যারা নিজেদের বুদ্ধিমান ভাবে তারা কন্যা সন্তার জন্মের পর থেকেই ২-৩ লক্ষ টাকা সঞ্চয় করতে মরিয়া হয়ে উঠে। কিন্তু তারা এই অধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় না, যদিও তাদের দাঁড়ানো উচিত। 'কিন্তু সমাজ বলে একটা আছে না।' প্রতিষ্ঠিত কুধর্ম সমাজ পালন করে মহা উল্লাসে। সেখানে তারা বিরুদ্ধবাদী হতে পারে না। কারণ তারা সুশীলদের দ্বারাই পরিচালিত, যে সুশীলরা নিজেরা তো এ অধর্ম পালন করেই সেই সাথে তাদেরকেও পালন করতে উৎসাহিত করে; অর্থ দানে কিংবা মুলার বাতাস প্রদানে।

আমরা বিবাহের ব্যায় টানতে না পারা এসকল অভিভাবকদের কিছু টাকা দিয়েই মনে করি কুধর্ম রক্ষায় এতটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু ঐ পরিবারের মানুষই কেবল জানে একটি মেয়ের বিয়েতে তাকে কী পরিমাণ মর্মান্তিক অবস্থার স্বীকার হতে হয়! তাছাড়া এমন অনেক পরিবার তো আছেই যাদেরকে আমরা সাহায্য পাঠাতে পারছি না। কিন্তু তারা ঠিকই (আমাদের দ্বারা পালিত স্বাভাবিক ব্যায়ের) বিয়েকে টানতে গিয়ে তাদের সর্বস্ব হারাচ্ছে। যা পালন আমাদের কাছে স্বাভাবিক, অতি সহজতর সেটাই তাদের কাছে পাহাড়সম অসাধ্য। আমরা তাদের অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে ভাবার কারণে আমাদের কাছে মনে হয় তাদের জন্যও এটা সহজতর পালনীয় বিষয়।

এসব আমাদের আলেমকুল আমার চেয়ে ভালো জানেন। তারা বিয়েতে ওয়ালিমা ঠিকই পালন করেন কিন্তু পাশাপাশি অধর্ম চর্চায় সমাজের সাথেও থাকেন। তাদের এহেনোবস্থায় মনে হয় এ ব্যাপারে তাদের কোন দায়িত্ব নেই! অথচ এসকল অধর্মের বিপরীতে তাদের অবস্থান হওয়ার কথা ছিল প্রথম সারিতে। যাক, তাদের এই নিরবতা পাপকে সমর্থন করার মতই। সৃষ্টিকর্তা তাদের শুভবুদ্ধির উদয় ঘটাক।

"তুমি অধম–তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?”
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই কথাটার যথার্থ অর্থ না তুলে একটুখানি উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে ধরতে গেলে আলেমদের দ্বারা এসকল অধর্ম রোধনের অপেক্ষায় থাকা বোকামি। সুতরাং আমাদের উচিত আপন কাজ সম্পাদনে সচেষ্ট হয়ে উঠা। সুতরাং আমি মনে করি এই অধর্ম প্রতিহত করা একমাত্র আমাদের মত ধনবানদের দ্বারাই সম্ভব। এজন্য প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে এটা কতটুকু সমাজধ্বংসী। আমরা ধনবানরা এটা পালন করছি বিভিন্ন সহজলভ্য কারণ সামনে রেখে। কিন্তু তারা পালন করছে সমাজ রক্ষায়; বাধ্য হয়ে, যতই তারা মুখে তা অস্বীকার করুক। এটা কেবলমাত্রই আমাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি অধর্ম অপসংস্কৃতির কারণে। আমরা ধনবানরা এটাকে সহজভাবে পালন করার কারণেই আজ সমাজে এই অধর্মের এত ব্যাপকতা সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি অনেকের কাছে এই অপসংস্কৃতি পালন অসাধ্য সত্বেও তা পালন করতে বাধ্য হচ্ছে। যদি আমরা নিজ অধীনস্থদের বিয়েতে এসকল অধর্ম পালন না করে বরং সকলকে এর বিরুদ্ধে কৌশলগত অবস্থান অবলম্বনের জন্য উৎসাহিত করি, তবেই আমরা পাবো সম্প্রীতি বান্ধব এক সমাজ। আমাদের আজকের এই সমাজের পরিবর্তন ঠিকই ঘটবে; অধঃপাতের দিকে কিংবা শান্তিময় ও সুশৃঙ্খলার দিকে। আমাদের উচিত শান্তিময় ও সুশৃঙ্খলার দিকে সমাজকে এগিয়ে নিতে নিজ ভূমিকা স্পষ্ট করার পাশাপাশি এসব অধর্ম রোধনে বদ্ধপরিকর হয়ে কাজ করা।

ছবিঃঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:১০
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিছু হিন্দু অখন্ড ভারত চায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৮




মুসলিম অখন্ড ভারত শাসন করেছে তখন তারা ছিলো সংখ্যা লঘু। খ্রিস্টান অখন্ড ভারত শাসন করেছে, তারা তখন সংখ্যা লঘু মুসলিম থেকেও সংখ্যা লঘু ছিলো। তারপর মুসলিমদেরকে সাথে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। টাইম ম্যাগাজিনের আগামীর ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় বাংলাদেশের নাহিদ ইসলাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:১২




নাহিদের ভাষ্য, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে। বাংলাদশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতার যে পালাক্রম– অবশ্যই তার অবসান হতে হবে। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গল্প প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়

লিখেছেন জাহিদ শাওন, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৫০


এক কাপ চা, শীতের সন্ধ্যায় বেশি ঝালের ভর্তায় মাখানো চিতই পিঠার অজুহাতে বুকপকেটে কতবার প্রেম নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম সে গল্প কেউ জানে না।
আজকাল অবশ্য আক্ষেপ নেই।
যে গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধী চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশের মিলিটারীকে ক্ষমতা থেকে দুরে রাখতে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৩:২৪



১৯৭১ সালের জেনারেশন'এর কাছে ইন্দিরা (১৯১৭ - ১৯৮৪ ) ছিলেন ১ জন বিশাল ব্যক্তিত্ব; যু্দ্ধ লেগে যাওয়ার পর, উনি বলেছিলেন যে, বাংগালীরা ভালো ও নীরিহ জাতি, তিনি এই জাতিকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - পর্ব ৩

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:২৩

জুলাই ১৮: ছাত্রলীগের হামলা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যা এবং ঢাবি প্রশাসনের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে ১৭ই জুলাই কমপ্লিট শাট ডাউন কর্সুচী ঘোষনা করে বৈষম্যিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×