অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিতকরণের বিচারকার্য পরিচালনায় আমাদের উচিত সহযোগিতা করা। ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের রায় নিয়ে কিছু বলতে চাই না। মোটাদাগে যা বলতে হয়, বিচারকের ধূর্তামিপূর্ণ কথোপকথন। যা সচেতন মহলকে ধোকা দেওয়ার আনাড়ি বচনকৌশল।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চিরতরে রূদ্ধ হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দেশকে বিরাট বিপদ থেকে রক্ষা করে শান্তিপূর্ণ ঢেকুর দিচ্ছেন মাননীয় বিচারপতি। অথচ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম করে সরকার ও তার সমর্থকরা নিজ অপছন্দনীয় সক্রিয়তার বিরোদ্ধে এই জামিন–অযোগ্য ধারায় মামলা করছেন। পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটক করছেন। এই ধারায় প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচটি মামলা হচ্ছে। এই ধারা যেমন সুবিধা দিচ্ছে সরকারপন্থীদের তেমনি টুঁটি চেপে ধরেছে বাক স্বাধীনতার। যেখানে বাক স্বাধীনতা নেই সেখানে জীবনযাপনের সামগ্রিক স্বাধীনতা কখনো অক্ষুণ্ণ থাকে না।
বাক স্বাধীনতা হরণের এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২০টি ধারার ১৪টিই অজামিনযোগ্য। এখান থেকে অনুধাবন করা যায় ডিজিটাল আইনের নামে কী পরিমাণ জুলুম-নিপিড়ন চলছে দেশে। যারা ফেঁসে যাচ্ছে এমন মামলায় তাদের অধিকাংশই অজামিনযোগ্য বলে বিবেচিত হওয়ায় জেলই তাদের জীবনের কালো অধ্যায় রচনা করে যাচ্ছে। ডিজিটাল আইনের ফলে মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ও কারাগারে প্রেরণের ঘটনা ঘটে দ্রুত। এ বিষয়ে যখন কেউ সরকার বিরোধী পক্ষের কারো বিপরীতে মামলা করতে যায় তখন থানার কর্মকাতারা মামলার যোগ্যতা যাচাইপূর্বক মামলা গ্রহণ করেন। অনেক ক্ষেত্রে থানা কর্তৃপক্ষের জন্য মামলার যোগ্যতা যাচাই সম্ভবও হয় না। অভিযোগকারী যদি ক্ষমতাসীন দলের কেউ হন তবে এই মামলার শাস্তি সীমা অনুধাবন না করেই অনেক সময় থানা কর্তৃপক্ষ মামলাটি গ্রহণ করেন; অভিযোগের মেরিট বা মামলার যোগ্যতা যাচাই তো দূরের কথা। বাকস্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরার লক্ষ্যে প্রণীত এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পোষা হচ্ছে ভিজিলান্টি জাস্টিস। যা আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎকে অবচেতনার সগরে ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনালের বিচারপতির মুখে বাক স্বাধীনতা রক্ষার বুলি । বিপরীতে রাষ্ট্রযন্ত্রের মেশিনে বের হয়ে আসে বাক স্বাধীনতা হরণের ফটোকপি। এমন দুমুখো নীতির প্রশংসা না করে যদি কেউ প্রশ্ন উত্তাপণ করে সে নির্ঘাত বোকা। আর বোকা লোকের বেশি কথা বলা ঠিক না। তাই এখানেই থামলাম!
ভালো থাকুন সকলে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৪৯