somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো কথা কইতে আমায় কহযে-ভালো কথা যায় না বলা সহজে

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুন্দর কথা বলুন, মানুষের মন জয় করুন - কথাটি শুনেই একরকম ভাল লাগার অনুরণন কাজ করে। সুন্দর কথা কার না ভালো লাগে! কেউ যখন সুন্দরভাবে কথা বলে সকলের আকর্ষণ তার দিকেই থাকে।

পবিত্র কোরআনে আছে, একটি ভালো কথা এমন একটি ভালো গাছের মতো, যার শেকড় রয়েছে মাটির গভীরে আর শাখাপ্রশাখার বিস্তার দিগন্তব্যাপী, যা সারা বছর ফল দিয়ে যায়।

আর এজন্যেই সুন্দরভাবে কথা বলা হতে পারে আপনার সেরা গুণ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীরা সবাই সুভাষী ছিলেন। আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত আদর্শ ও চেতনা প্রচারিত হয়েছে, তা হয়েছে সুন্দর কথা দিয়ে।

কারণ প্রতিটি ভালো কাজই মানুষের মন জয় করে করতে হয়। আর মানুষের মন জয় করার একটি অব্যর্থ অস্ত্র হলো সুন্দর কথা।

হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) হতে বর্ণিত যে, রসুলুল্লাহ (স) বলেন, যখন একজন মানুষ ঘুম থেকে উঠে তখন তার সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিনীতভাবে জিহবার কাছে নিবেদন করে বলে, আল্লাহকে ভয় করো কেননা আমরা তোমার ওপর নির্ভরশীল। তুমি যদি সোজা থাকো আমরা সোজা থাকবো। আর তুমি যদি বাঁকা হও তাহলে আমরা বাঁকা হয়ে যাবো।

ভাবনা, কথা, শব্দ বা চিন্তাকে আমরা দুটি শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি- একটি হলো সুন্দর কথা বা ইতিবাচক কথা- যা আশাবাদী করে, আত্মবিশ্বাসী করে, কাজের প্রেরণা বা সাহস যোগায়, আনন্দিত করে।
অপরটি অসুন্দর বা নেতিবাচক কথা- যা দুঃখবোধ বাড়িয়ে দেয়, আশা ভঙ্গ করে, মনে অস্থিরতা ও হতাশা তৈরি করে, হতোদ্যম করে, সর্বোপরি মানসিক অশান্তি বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ যে ভাবনা, চিন্তা বা কথা নিজের ও অন্যের জন্যে ক্ষতিকর বা অকল্যাণকর তা-ই নেতিবাচক কথা বা অসুন্দর কথা।

ছোট ছোট সদিচ্ছা, একটু আন্তরিকতা, একটু মনোযোগ, একটু সচেতনতাই পারে আমাদের কথামালাকে সুন্দর করতে।

এখন দেখবো সেই সুবচন/ সুন্দর কথাগুলো কী কী হতে পারে।

১. সবাইকে আগে সালাম দিব। আমাদের অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে যে, সালাম কেবল বড়দেরকেই দিতে হবে তা কিন্তু নয়। ছোট বড় পদমর্যাদা নির্বিশেষে সবাইকে আগে সালাম দিতে হবে। নবীজী ছোটদের আগে সালাম দিতেন।

২. সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতে হবে। প্রাণের প্রাবল্যে ছড়িয়ে দেয়া হাসি বা ব্যবহার একজন মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। একটু হাসি অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিকে সহজ করে দেয়।

৩. সর্বদা সম্মান বা শ্রদ্ধাপূর্ণ কথা বলা : প্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডলে ছোট-বড়-ঊর্ধ্বতন-অধস্তন নির্বিশেষে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করা। আপনি সম্বোধন পারস্পরিক সম্পর্ক, যোগাযোগ অনেক সহজ করে দেয়। অফিসের একজন কর্মচারী বা রিকশাচালককে ‘আপনি’ সম্বোধন করলে সে সম্মানবোধ করবে এবং আপনার কাজ সহজে করে দেবে।

৪. বলা কথাটি হতে হবে বিনয় ও মমতাপূর্ণ। আন্তরিক বিনয় সকল সৎগুণের উৎস। যত বিনীত হবেন তত মানুষের কাছে যেতে পারবেন। বিপদের কথা, দুঃখের কথা বলতে মানুষ আপনার কাছে আসবে। মমতার ভাষা সবাই বোঝে। মমতা অপরপক্ষকে বিচার করে না বরং বোঝার চেষ্টা করে। যে কারণে মমতাপূর্ণ কথায় সবাই প্রভাবিত হয়।

৫. কৃতজ্ঞ মানুষকে সবাই ভালবাসে। আসলে যে মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানাতে পারে না সে আসলে স্রষ্টার প্রতিও কৃতজ্ঞ নন। এ কারণেই ১৫ শত বছর আগে নবীজী বলেছেন, কারো সাথে দেখা হলে সালাম বিনিময়ের পরে কুশল জিজ্ঞেস করলে বলবে, শোকর আলহামদুলিল্লাহ! বেশ ভালো আছি।

৬. মানুষের মন জয়ের জন্যে বলতে হবে কোমল কথা। একবার রাজার এক ভৃত্য পলায়ন করেছে। রাজা তাকে প্রাণদণ্ডের আদেশ দিলেন। তাকে নিয়ে যাওয়া হলো জল্লাদের কাছে। জল্লাদ খড়্গ তুলতে উদ্যত। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বেচারা কাতর স্বরে প্রার্থনা করলো, হে করুণাময় যারা আমাকে হত্যা করতে চাইছে তাদেরকে তুমি ক্ষমা কর। কারণ আমি তাদের ক্ষমা করেছি। বাদশা আমাকে প্রাণদন্ডের আদেশ দিয়েছেন এতে আমার কোনো দুঃখ নেই কারণ এই বাদশাহ আমাকে প্রতিপালন করেছে। তুমি এদের সবার পাপ ক্ষমা করো। বাদশাহ ভৃত্যের ফাঁসির মঞ্চেই ছিলেন। ভৃত্যের মৃত্যুকালীন প্রার্থনা শুনে তার চিত্ত বিগলিত হলো। তার সমস্ত রাগ পানি হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আদেশ দিলেন, ওকে মুক্ত করে দাও।

৭. কেউ বিদ্রুপ করলে জবাব দিন বিনয়ের সাথে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে তার গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্যে নোবেল পুরস্কার পান। পশ্চিমাদের অনেকেরই এটা সহ্য হচ্ছিলো না বরং গাত্রদাহ হচ্ছিলো। একবার এক পশ্চিমা সাহেব রবীন্দ্রনাথকে বলেই বসলেন, গীতাঞ্জলি বইটি দারুণ হয়েছে। আসলে কে তোমার হয়ে ওটা লিখে দিয়েছিলো? সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে এলো কবিগুরুর বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর, তার আগে বলো দেখি, কে আসলে তোমাকে পড়ে দিয়েছিলো, গীতাঞ্জলির মতো কাব্য।

৮. জ্ঞানী কথা বলেন আর প্রজ্ঞাবান শোনেন। স্রষ্টা মানুষকে দুটো কান দিয়েছেন এবং একটি মুখ দিয়েছেন। অতএব শুনতে হবে বেশি এবং বলতে হবে কম। তাই বলার আগে সচেতন হোন কখন, কাকে কী বলছেন। কথা বলার চেয়ে শোনার প্রতি বেশি মনোযোগী হোন। ঝিনুকের মুখ দিয়ে যেমন মুক্তা ছাড়া আর কিছুই বের হয় না, ঠিক তেমনি প্রজ্ঞাবানদের মুখ দিয়ে মূল্যবান কথা ছাড়া আর কিছুই বের হয় না।

৯. আমরা কৌতূহলী হবো কিন্তু কৌতূহল যেন অভদ্রতার পর্যায়ে না পড়ে। কোনো বিষয় বা জ্ঞান অর্জনের জন্যে আমাদের কৌতূহল থাকবে। কিন্তু কারো কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপারে কৌতূহল দেখাবো না। অর্থাৎ যে জিনিস জানা অথবা না জানার ওপর কোনো কিছু নির্ভর করছে না, সেটা জিজ্ঞেস করা থেকে বিরত থাকবো। যেমন: অনেকের সামনে পরীক্ষার রেজাল্ট কী বা দেখতে ভালো লাগছে না বা বয়স- বেতন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা। এগুলো শিষ্টাচারের পরিপন্থী।

১০. একবার নাসিরউদ্দিন হোজার কাছে এক লোক এসে প্রশ্ন করছেন যে- জীবনে সুখী হওয়ার জন্যে আমাদের কোন ব্যাপারটা মনে রাখা উচিত আর কোনটা ভুলে যাওয়া উচিত। হোজা বললেন- আপনি যদি কারো কাছ থেকে উপকার পান তবে সেটা আজীবন মনে রাখবেন আর যদি কারো উপকার করেন তাহলে সেটা ভুলে যাবেন।

আসলে সুন্দর কথার জন্যে চাই সুন্দর মন। রাগ-ক্ষোভ, ঘৃণা, ঈর্ষা থেকে মনকে মুক্ত করুন। দেখবেন, আপনার কথায় লোকজন স্বস্তি পাচ্ছে, আপনার সাহচর্য প্রত্যাশা করছে। বাড়িঘর যেমন নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয়, না করলে যেমন ধুলো জমে যায় ঠিক তেমনি প্রতিদিন মনের ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে মুছে সাফ করুন। এজন্যে নিয়মিত মেডিটেশন করুন। সুন্দর কথা বলার জন্যে প্রয়োজন অনুশীলন ও চর্চা। যত সুন্দরভাবে বলবেন দেখবেন আপনি হবেন হাজার হাজার মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস।
( সংগ্রহ )

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×