somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মানেই প্রহসন নয় ....

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমারা যারা ভালো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাইনি, পড়ছি এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে, বাবা-মা প্রতি সেমিস্টারে যখন অনেকগুলো টাকা খরচ করে তখন খুব খারাপ লাগে। আমারা কিভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারি ? কিংবা আমাদের যাদের সিজিপিএ খারাপ তারা কিভাবে ভালো একটি ক্যারিয়ার গড়তে পারবো। এই দুইটি প্রশ্ন মাথায় রেখে আজকের আলোচনা....

স্বর্ণ যদি দুধে চুবিয়েও রাখি সেটা স্বর্ণ থাকবে আবার সেটা যদি ময়লা পানিতে চুবিয়েও রাখি সেটা স্বর্ণ থাকবে। স্বর্ণ কোথায় আছে এটা বিবেচনা করে এর মূল্য কোনভাবেই কমবে না। ঠিক একইভাবে তুমি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আছো না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আছো এর দ্বারা তোমার মূল্য কমবে না যদি তুমি নিজেকে স্বর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে পারো। একটু খেয়াল করে দেখোতো- যে ছেলে বাবা-মাকে আদব করে চলে, মুরব্বিদের শ্রদ্ধা করে চলে, ঘরের কাজে সাহায্য করে তাদের দেখে প্রতিবেশিরা কি বলে- একদম সোনার টুকরা ছেলে আপনার! তাহলে দেখেছো- মানুষও সোনার মানুষ হতে পারে।

তুমি বিভিন্ন কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেতে পারো। এর মানে এই নয় তোমার জীবন থেমে গেছে। তুমি আর সফল হতে পারবে না। যারা সফল তারাও অনেকবার ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু প্রতিবার ব্যর্থ হয়ে তারা বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এরজন্যই তারা সফল। ঠিক একইভাবে তুমি এ+ না পেয়েও, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে
চান্স না পেয়ও জীবনে সফল এবং সুন্দর ক্যারিয়ার গড়তে পারবে যদি তুমি নিজে ঘুরে দাঁড়াও, নিজেকে স্বর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে পারো।

এই পর্যায়ে এসে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তোমাদের মাথায় খেলা করছে কিভাবে তুমি নিজেকে স্বর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করবে?

তুমি প্রাইভেট বা পাবলিক যেখানেই পড় না কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় এই কাজ গুলো করবে তাহলে নিজেকে স্বর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে, আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হতে পারবে-

১) বন্ধু নির্বাচণঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধু নির্বাচণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দেখা যায় আমার সাথের বন্ধুরা ঠিক মত এসাইনমেন্ট এর কাজ করে না, পরীক্ষার আগের রাতে পড়ে, কোন সংগঠন এর সাথে জড়িত না, কোন সেমিনার বা কনফারেন্স এ যোগদান করে না তাই আমিও করি না। বন্ধু হিসেবে তাকেই নির্বাচণ কর যে তোমাকে বুঝে, তোমার ব্যর্থতায় তোমার পাশে থেকে উৎসাহ দেয়, তোমার ভেতরের গুণ বিকশিত করতে উদ্দীপক হয়ে কাজ করে।

২) রক্তদান বা দরিদ্র বন্ধুর চিকিৎসাব্যয় সংগ্রহঃ তুমি যদি রক্ত দান করার যোগ্যতা রাখ তাহলে অবশ্যই রক্তদানের সুযোগ পেলে রক্ত দান করবে। তুমি ভাবছো রক্ত দান করলে তোমার কি লাভ হবে? রক্তদানে লাভ আছে সেটা অদৃশ্যমান লাভ। রক্তদান করলে তোমার ভেতর জীবনে বাঁচার সার্থকতা ফুটে উঠবে। তুমি সহজেই হতাশ হবে না। তোমার কোন দরিদ্র বন্ধু বা পরিচিতজন টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারলে তার পাশে দাঁড়াও। চাঁদা তুলে বন্ধুর চিকিৎসা করাতে সাহায্য কর। এতে তোমার ভেতর ভ্রাতৃত্ববোধ জেগে উঠবে।

৩) বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাওঃ শুধু পড়াশোনাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের লক্ষ্য নয়। আমাদের চারপাশে প্রচুর জ্ঞান ছড়িয়ে আছে। প্রকৃতির এই জ্ঞান আহরণের জন্য বেড়িয়ে পড়তে হবে। সুযোগ পেলেই বন্ধুরা মিলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাও। আমার অনেক ছোটভাইদের এমন হয়- তারা আড্ডা দিচ্ছে এরপর হঠাৎ করে আড্ডার মাঝখানে সিদ্ধান্ত নেয় আজ লঞ্চে করে চাঁদপুর যাবে ইলিশ খেতে। যেই ভাবা সেই কাজ। রাত বিরাতে তারা চলে যায় চাঁদপুর।

৪) নিয়মিত খেলাধূলা বা শরীরচর্চা করাঃ শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত খেলাধূলা করতে হবে। ক্রিকেট, ফুটবল, জগিং, সাইকেল চালানো, সাঁতার ইত্যাদি করতে পারো। আমার যেমন সাঁতার পছন্দ। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে সাঁতার কেটে পাড় করেছি।

৫) বড় ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখাঃ জীবনে সফল হতে হলে নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করতে হবে। ক্যাম্পাসের বড় ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখতে হবে। তাদেরকে মাঝে মাঝে ফোন দিতে হবে। তাদের খোঁজ খবর রাখতে হবে যেন বড় ভাইয়ারা তোমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে। বড় ভাইদের ক্যারিয়ার এর সফলতা বা ব্যর্থতার কাহিনী শুনতে হবে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

৬) বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এর সাথে যুক্তথাকাঃ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এর সাথে যুক্ত থাকতে হবে। অনেকে একসাথে চার-পাঁচটা সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকে ফলে কোন সংগঠনকে ঠিকমত সময় দিতে পারে না। তখন দেখা যায় তারা শুধু নামেই অমুক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছে কাজে নেই। যে সংগঠনের সাথেই যুক্ত থাকো না কেন- একদম নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে যেতে হবে।

৭) বই পড়ার অভ্যাস রাখাঃ অনেকে মুভি দেখে বেশি কিন্তু বই পড়ে না। মুভি কম দেখে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দেহকে সুস্থ রাখতে যেমন ভালো খাবার দরকার তেমনি মনকে সুস্থ রাখতে ভালো বই দরকার। প্রতিমাসে অন্তত একটি পাঠ্য বই এর বাইরে বই পড়বে এটা সংকল্প করে ফেলো।

৮) তথ্য-প্রযুক্তির সাথে অভ্যস্থ থাকাঃ বর্তমান সময় হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির যুগ। বর্তমানে যার কাছে বেশি তথ্য আছে সেই এগিয়ে থাকবে। এই যে আমি তোমাদের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখছি এটা দিচ্ছি ফেইসবুকের মাধ্যমে। যদি তুমি ফেইসবুকে না থাকতে তাহলে এই চিঠি পড়া থেকে বঞ্চিত থাকতে। আমি অনেক মানুষকে চিনি যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কিন্তু তাদের একটি ইমেইল আইডি নেই। ফেইসবুক ব্যবহার করে না।

৯) নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করাঃ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার বন্ধু গড়ে তোলো। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের সাথে মেশো। নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি কর। ঘুরকনো হয়ে পৃথিবী দেখতে পারবে না, কুয়ো হবে তোমার পৃথিবী।

১০) ইতিবাচক চিন্তা করাঃ নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক চিন্তা করবে। তোমার সমস্যা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানাবে না। তোমার ভালো দিক, তোমার গুণগুলো সবাইকে জানাও। সবাইকে উৎসাহিত করো, প্রশংসা করো।

১১) জীবনের একজন মেন্টর বানাওঃ তুমি ডাক্তার হতে চাইলে একজন ডাক্তার এর কাছে যেতে হবে, গিটার শিখতে চাইলে একজন গিটার জানা লোকের কাছে যেতে হবে। ঠিক তেমনি জীবনে সফল হতে চাইলে একজন সফল মানুষের কাছে যেতে হবে। তাকে মেন্টর বানাতে হবে। তোমার সমস্যা, দোষ ত্রুটি সবই মেন্টর এর কাছে তুলে ধরবে। সে তোমাকে যেভাবে গাইড করবে সেভাবে চলবে। আমরা অনেকেই সবকিছু থাকা সত্বেও একজন মেন্টরের অভাবে দিক হারিয়ে ফেলি।
(সংগ্রহ )
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×