আমাদের সরকারের দুরদৃষ্টির অভাব আমদের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার অন্যতম কারন। এ দেশে শিক্ষা খাতের তুলনায় সামরিক খাতে বেশি পরিমান বিনিয়োগ করা হয় অথচ এই বিনিয়োগটা যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষনাগারে করা হতো তাহলে আমরা নিজেরাই আমাদের প্রতিরক্ষা খাতকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে পারতাম ,আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে গিয়ে গবেষণার মাধ্যমে বাইরের দেশের প্রযুক্তিকে উন্নত থেকে উন্নততর করছে অথচ তাদের যোগ্য সম্মান আমরা আমাদের দেশে দিতে পারছিনা। আমরা যদি তাদের "যোগ্য সম্মাননার" পাশাপাশি দেশের মধ্যে "কাজ করার স্বাধীনতা" ও "পরিবেশ" দিতে পারতাম তবে তারা কখনই নিজের দেশ ছেড়ে পরবাসী হোত না।
এবার আসা যাক স্কুল -কলেজ এর শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসঙ্গে আমাদের দেশে প্রায় ৮০ হাজার প্রাইমারি স্কুল , ২০ হাজার হাই- স্কুল, ৩ হাজারের কাছাকাছি কলেজ রয়েছে । শুধু প্রাইমারি স্কুল থেকে প্রায় ১.৭৫ কোটি শিক্ষার্থীর ৪৭% ঝরে যাচ্ছে হাই- স্কুল উঠবার সময়,আবার ২৭% ঝরে যাচ্ছে এস.এস.সি দেবার পর । আমাদের দেশে ১ জন স্কুল বা কলেজর শিক্ষকের যে সম্মান ও মর্যাদা তা মেনে নেওয়া খুবই দুঃখজনক । একটা শিশু যখন ছোট বেলা থেকে বড় হতে থাকে তখন থেকে তারমাথায় ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবার লক্ষ্য জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু একজন অভিভাবক কখনই বলেন না আমার সন্তান ভালো একজন শিক্ষক অর্থাৎ মানুষ গড়ার কারিগর হোক ।
আমাদের দেশের স্কুলের একজন শিক্ষকের যে পারিশ্রমিক তা সচ্ছল ভাবে জীবন ধারনের জন্য ভীষণ অনুপযোগী । অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কিছু প্রদেশ সহ ইউরোপ, আমেরিকা দেশ গুলোর দিকে তাকালে ভিন্ন চিত্র চোখে পরবে। সেখানে অনেক পি.এইচ.ডি হোল্ডারের সাধনা থাকে তিনি পাশ করবার পর মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকাতার সাথে নিজেকে যুক্ত করবেন যোগ্য মর্যাদা পাশাপাশি একটু সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার আশায় । যার উদাহরন আমির খান (3 idiot) সিনেমার মাধ্যমে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন।
তাছাড়া তাদের ঐ সকল দেশে তাত্ত্বিক জ্ঞান এর পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞানে এমন ভাবে দক্ষ করে তোলা হয় যেন তারা মাধ্যমিক পড়া কালীন সময় কিংবা মাধ্যমিক পড়া শেষ করে কিছু না কিছু উপার্জন করতে পারে। এতে সেই দেশের সরকার সাবলম্বি নাগরিক গঠনে যেমন উপকৃত হচ্ছে তেমনি উপকৃত হচ্ছে সেই দেশের শিক্ষার্থীরা। যার উৎকৃষ্ট উদাহরন Apple কিংবা Microsoft এর মত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতারা নিজেরাই । তারা drop out student হওয়া সত্ত্বেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় তাদের ভিত্তি এমন ভাবে গড়ে উঠেছিল যে ঝরে যাবার প্রভাব কর্ম ক্ষেত্রেকে কোনভাবেই প্রভাবিত করেনি।
আমরা যদি ইংরেজ শাসনামলে দিকে তাকাই তবে দেখব ফরায়েজী আন্দোলনের কারনে তৎকালীন সময় প্রতিটা জেলায় ১ টা করে জেলা স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল । যেখানে পর্যাপ্ত সুযোগ- সুবিধার মাঝে শিক্ষকদের মর্যাদা ও সম্মান ছিল কল্পনাতীত।যদিও এই আন্দলেনের অন্যান্য উদ্দেশ্যর পাশাপাশি মূল ও মৌলিক উদ্দেশ্য ছিল ধর্ম প্রচারের মাধ্যমে ফরয কাজ গুলো করার পাশাপাশি স্কুল প্রতিষ্ঠা ।
বিগত কয়েক দশক ধরে এদেশের অর্থনীতির চাকা কে সচল রাখার পিছনে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে তা হোল foreign remittance । কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতায় পিছিয়ে থাকার কারনে বাংলাদেশি প্রতি ৩০ জন শ্রমিক ভারতীও কিংবা শ্রীলংকান ৩ জন শ্রমিকের সম পরিমান উপার্জন করে এবং সেই টাকা দেশে পাঠায় । এজন্য আমাদেরর ভগ্ন প্রায় শিক্ষা ব্যবস্থা যে কতখানি দায়ী তা সহজেই উপলব্ধি করা যায় । সবচেয়ে অবাক করার বিষয় এই যে ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর কিংবা মালয়শিয়া আমাদের অনেক পরে স্বাধীন হলেও শিক্ষাব্যবস্থা উন্নতির কারনে তারা আজ আমাদের তুলনায় অনেক উন্নত, আমরা যদি আমাদের দেশকে মালয়শিয়া কিংবা সিঙ্গাপুর এর মতো উন্নত দেশে পরিনত করতে চাই তবে সবার আগে দরকার উন্নত মানসিকতার পাশাপাশি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা । তবে আমাদের দেশের সমৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন “ প্রজন্ম ” তৈরিতে নিম্ন লিখিত পরিবর্তন গুলো খুবই দরকার
(১) প্রাথমিক শিক্ষক দের বেতন ২০ থেকে ৩০ হাজার মধ্যে নিশ্চিত করণ (যা কিনা মানসম্পন্ন ভালো ১ টি English medium school এর শিক্ষক কে দেওয়া হয় )
(২) প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গবেষণা নির্ভর করে গড়ে তোলা
(৩) প্রাইমারি ও মাধ্যমিক এর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি Nutrition নিশ্চিতকরণ (পশ্চিম বঙ্গের বিহার, শ্রীলঙ্কা সহ বিভিন্ন দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করা হয় )
(৪)স্কুল গুলোতে PhD holder শিক্ষক এর মান নিশ্চিত করণ
(৫) white and blueএর ভেদাভেদ থেকে উঠে আসা (ক্লাসে ধনী এবং গরীবের বৈষম্য বিলুপ্ত করন )
(৬) world standard curriculum প্রণয়ন
(৭) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে সুস্থ সংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলা (আগ্রহ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের সাশ্রয়ী সঙ্গীতে, থিয়েটার কিংবা নাট্য দল গঠনের মাধ্যমে অভিনয়ে দক্ষ করে তোলা)
উপরের উল্লেখিত আবেদন অলিক মনে হলেও এগুলো যেদিন বাস্তবায়ন করা যাবে সেদিন থেকে আমরা স্বনির্ভর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্পন্ন একটি প্রজন্ম পেতে সক্ষম হব।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:২১