somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরআনের আলোকে জান্নাতী দশ যুবক - পর্ব ০৭

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা. বা.

নয়. নবী বংশের যুবক

বাহলুল বুযুর্গের নাম আধ্যাত্মিক জগতে সুপরিচিত। তিনি একদিন বসরা নগরীর পথ ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় কতিপয় অল্প বয়সী যুবকেরা খেলা করতে দেখেন। আর তাদেরই পাশে দাঁড়িয়ে একটি যুবককে ক্রন্দনরত দেখেন। তিনি মনে মনে ভাবেন যে, এই যুবকটির নিকট খেলার সামগ্রী না থাকার কারণেই বুঝি সে কান্নাকাটি করছে। তাই তিনি যুবকটির দিকে এগিয়ে যান এবং তাকে সান্ত্বনা দেন।

বাহলুলঃ হে যুবক আমি তোমার জন্য খেলার সামগ্রী সংগ্রহ করে দিব, তুমি খেলবে?

যুবকঃ বেওকুফ! আল্লাহ পাক কি আমাদেরকে খেলাধুলার জন্য সৃষ্টি করেছেন?

বাহলুলঃ কিসের জন্য সৃষ্টি করেছেন?

যুবকঃ দ্বীনি শিক্ষার জন্য এবং ইবাদতের জন্য।

বাহলুলঃ আল্লাহ পাক তোমাকে দীর্ঘজীবী করুন। তুমি তা বুঝলে কি করে?

যুবকঃ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ

افحسبتم انما خلقناكم عبثا

“তোমরা ধারনা করেছ আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি? তোমরা আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে না?”

বাহলুলঃ হে যুবক! মনে হচ্ছে তুমিই খুবই জ্ঞানী। সুতরাং তুমি আমাকে কিছু নছীহতের কথা শোনাও।

যুবকের নছীহত - জাহান্নামের ভয়

যুবকের নছীহত

বাহলুলের আবেদনে নবী বংশের সেই যুবকটি নিম্নের কবিতা আবৃত্তি করেঃ

হে পবিত্র আল্লাহ আপনিই দীনতা-হীনতা প্রকাশের স্থল, আপনিই ভরসাস্থল।

হে আল্লাহ পাক! আপনার দরবারে যে আশা করে সে নিরাশ হয় না, তার আশা অবশ্যই পূরণ করা হয়।

এই কবিতা আবৃত্তি করে যুবকটি কাঁপতে কাঁপতে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে যায়। বাহলুল দ্রুত যুবকটির মাথা নিজের কোলে নিয়ে মুখে লেগে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করে। কিছুক্ষণ পর যুবকের হুশ ফিরে আসলে বাহলুল তাকে বলে, “হে যুবক! তোমার বয়স এখন অনেক কম, এত ভয়ের কি আছে?” যুবক বলল, ‘হে বাহলুল! তুমি দূর হও! আমি আম্মাজানকে চুলায় আগুন জ্বালানোর সময় দেখেছি যে, তিনি লাকড়ির ছোট ছোট টুকরাগুলোকে সবসময় প্রথমে চুলায় দেন, আর বড় লাকড়িগুলোকে পরে দিয়ে থাকেন। আমার ভয় হয়, জাহান্নামের আগুনে ছোট লাকড়ির স্থলে প্রথমে আমাকে রেখে দেয়া হয় কি না!

জাহান্নামের ভয়

জাহান্নাম অত্যন্ত কঠোর শাস্তির স্থান এই জ্ঞান এবং বিশ্বাস যার আছে ছোট হোক আর বড় হোক, বৃদ্ধ হোক আর যুবক হোক গোনাহের কাজ সে করতে পারে না। সাপের মুখে মণিমুক্ত থাকলেও কেউ তার মুখ থেকে তা কেড়ে নিতে সাহস পায় না। সাপের দংশন এবং বিষের ভয় তাকে বিরত রাখে। অনুরূপ যার অন্তরে জাহান্নামের ভয় ও শাস্তির দৃঢ় বিশ্বাস বিদ্যমান রয়েছে, তাকে গোনাহের স্বাদ কোনদিন গোনাহের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে না। এই বিশ্বাসই ছিল যুবকের ভয়ের কারণ যাদের অন্তরে বিশ্বাস ও ভয় নেই, কেবল তারাই শুধু গোনাহের কাজে নির্দ্ধিধায় লিপ্ত হতে পারে।

মৃত্যুর স্মরণ মুক্তির উপায়

রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারত করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে মৃত ব্যক্তি থেকে শিক্ষা লাভ হয়, মৃত্যুর প্রস্তুতির দিকে মন আকৃষ্ট হয়, মরীচিকাময় বস্তু থেকে অন্তর দূরে সরে থাকে। অপর হাদিসে তিনি ইরশাদ করেন, “তোমরা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ কর, কেননা মৃত্যু মানুষের সকল স্বাদ মিটিয়ে দেয়।” এই যুবকের অন্তর মৃত্যুর ভয়ে প্রকম্পিত ছিল। কবরের ভয়-ভীতি দুনিয়া বিরাগী হওয়ার জন্য সহায়ক হয়েছে। সে বুঝতে সক্ষম হয়েছিল যে, বস্তু জগত নিতান্ত অস্থায়ী পথিকের জীবন, স্থায়ী জীবন তো আখেরাতের জীবন। কামিয়াব সেই, যে আখেরাতের জন্য কিছু সঞ্চয় করে। তাই বাহলুল তাকে পুনরায় নছীহত করতে আবেদন জানালে যুবকটি তাকে পুনরায় এরূপ নছীহত করেঃ

(১) “আমি মৃত্যুর বিষয়ে অত্যন্ত উদাসীন, অথচ মৃত্যু আমার পিছে পিছে। আজ হোক কাল হোক আমাকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে।

(২) আমি আমার দেহকে মূল্যবান পোষাক পরিচ্ছদে সুসজ্জিত করে রেখেছি, অথচ এ দেহ কবরে পচে-গলে দুর্গন্ধময় হয়ে যাবে।

(৩) আমি যেন স্বচক্ষে অবলোকন করছি, আমার এই সুন্দর সুঠাম শরীর কবরে পড়ে থাকবে, কবর খনন করে আমাকে গর্তের ভিতর একা রেখে মাটি দিয়ে চাপা দেয়া হবে। আমার সুন্দর মুখমণ্ডল, সুন্দর সুঠাম দেহ সবকিছুই বিলীন হয়ে যাবে, হার গুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। না চামড়ার খবর থাকবে, না গোশতের খবর থাকবে। আমার জীবন শেষ হয়ে চলেছে, অথচ জড় বস্তুর আকর্ষণ কেবল বৃদ্ধিই পাচ্ছে।

(৪) সামনে ভয়াবহ সফর, সম্বল বলতে কিছুই নেই। পাপাচারে লিপ্ত হয়ে স্রষ্টার কাছে কেবল নাফরমানীই করেছি। নাফরমানীর পরিণাম থেকে মুক্তির জন্য কোন কিছুই আমার কাছে নেই।

(৫) আমি অগণিত গোনাহ করেছি, আর মানুষের দৃষ্টিগোচর হওয়া থেকে আল্লাহ সেগুলোকে গোপন রেখেছেন। কিন্তু আমার সমস্ত গোপন গোনাহসমূহ হাশরের ময়দানে মালিকের সম্মুখে প্রকাশ পেয়ে যাবে।

(৬) নিঃসন্দেহে এই ভয় আমার ছিল। আমি আল্লাহর উপর ভরসাশীল এবং তার ক্ষমায় বিশ্বাসী। তিনি সকল প্রসংশার অধিকারী।

(৭) মৃত্যুর পর দেহ গলে-পচে যাবে, ভয়ের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। জান্নাত অথবা জাহান্নামের অঙ্গীকার না থাকলেও ভয়ের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু কি বলা যায়, আমরা অত্যন্ত বেওকুফ। শিক্ষা গ্রহণ করি না।

(৮) আহ! যদি তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিতেন! এছাড়া আর কোন উপায় নেই। গোলামের দ্বারা অপরাধ হয়ে গেলে মনিবই তো ক্ষমা করতে পারেন।

(৯) নিঃসন্দেহে আমি অত্যন্ত নিকৃষ্ট। আমি আমার মাওলার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। অযোগ্য গোলাম এরূপই হয়ে থাকে। তার কোন ওয়াদা ঠিক থাকে না।

(১০) হে আমার মনিব! যখন আপনার আগুন আমাকে দগ্ধ করবে তখন আমার কি অবস্থা হবে? এই আগুন তো কোন পাথরও সহ্য করতে পারবে না। তাহলে আমি কি করে সহ্য করব?

(১১) মৃত্যুর সময়ও আমি একা হবো, কবরেও একাই যেতে হবে, একাই কবর থেকে উঠতে হবে। কোথাও কেউ আমার সাথী ও সাহায্যকারী হবে না।

(১২) হে আল্লাহ পাক! আপনি একক লা-শরীক। আমার মত নিঃস্বকে আপনি ক্ষমা করুন, দয়া করুন।

যুবক অদৃশ্য - সৃষ্টির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য

যুবক অদৃশ্য

বাহলুল বলেন, যুবকের এই সমস্ত কথা আমার অন্তরে গভীরভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আমি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি। কিছুক্ষণ পর আমার হুশ ফিরে আসে। কিন্তু যুবক অদৃশ্য হয়ে যায়। অন্য যুবকদের তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তারা জানায় যে, যুবকটি হযরত হুসাইনের বংশধর। বাহলুল বলেন, আমি যুবকের কথাবার্তা শুনে অত্যন্ত অবাক হয়েছিলাম যে, এ কোন বৃক্ষের ফল। বাস্তবিক এরূপ বৃক্ষ থেকে এরূপ ফলেরই আশা করা যায়। আল্লাহ পাক এই বংশের দ্বারা মানুষকে উপকৃত করুন।

শিক্ষণীয় বিষয়

নবী বংশের এই যুবক একজন আদর্শ যুবকই বটে। এই বংশের সুফল এরূপই হওয়ার কথা। এই বংশের চরিত্র ও অবদান অপরিসীম। এ বিষয়ে অধিক জানার জন্য আমার রচিত “নবী পরিবারের প্রতি ভালোবাসা” বইটি পড়ুন। এই যুবকের বৈশিষ্ট্য ও আধ্যাত্মিক সফলতা কেবল বংশগত ব্যাপার ছিল না। বরং এর পেছনে তার ব্যক্তিগত চরিত্র মাধুর্য, সুস্থ আকীদা ও আমলের প্রভাবও বিদ্যমান ছিল।

সৃষ্টির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য

পৃথিবীর কোন বস্তু অনর্থক নয়। সৃষ্ট পদার্থ সংমিশ্রণ করে মানুষ কত কিছুই আবিষ্কার করে থাকে। এর পিছনেও থাকে কিছু উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। সুতরাং পদার্থ ও মানুষ সৃষ্টির পিছনে কি কোন উদ্দেশ্য-লক্ষ্য নেই? অবশ্যই আছে। তবে যারা মূর্খ, বোকা, বেওকুফ তারা এই বিষয়ের গূঢ়তত্ত্ব অনুধাবনে উদাসীন। এজন্য প্রয়োজন সঠিক জ্ঞানের। আল্লাহ পাক সেই জ্ঞান অর্জনের জন্য পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন, বিশ্ব রাসূলকে পাঠিয়েছেন এবং মানুষকে সেই জ্ঞান অর্জনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সেই জ্ঞানের আলো মানুষকে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দান করে। এই জ্ঞানই এই যুবকের সাফল্যের পথ সুগম করেছে। তাই বাহলুলের প্রশ্নের উত্তরে যুবকটি বলেছিল ‘মানুষকে আল্লাহ পাক অনর্থক সৃষ্টি করেননি। বরং প্রকৃত জ্ঞান অর্জন এবং ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন।’ বস্তুতঃ কুরআন ও হাদীসে এরূপ জ্ঞানে অধিকারীকে সর্বোত্তম মানুষ বলে ঘোষনা করা হয়েছে। অপর এক আয়াতে সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি দিক নির্দেশনা দান করে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ

وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون

অর্থাৎ “আমি জিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি কেবল আমার ইবাদত করার জন্য।”

যুবকের জ্ঞান তাকে সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যের প্রতি দিক-নির্দেশনা দিয়েছিল। তাই যুবক তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এবং জীবনের উৎকর্ষ সাধনে সক্ষম হয়েছে।

বস্তুর আকর্ষণ সফলতার জন্য বাধা - দূরদর্শিতা ও শিক্ষাগ্রহণ

বস্তুর আকর্ষণ সফলতার জন্য বাধা

কোন সৃষ্টিই উদ্দেশ্যবিহীন নয়, হতে পারে না। সুতরাং মানুষের মত উত্তম সৃষ্টিও উদ্দেশ্যবিহীন নয়। এই সৃষ্টির পিছনে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র্য উদ্দেশ্য রয়েছে। কিন্তু উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে বস্তুর আকর্ষণ ও আবরণের কারণে মানুষ বাধাপ্রাপ্ত হয়। তার স্বভাব-চেতনা সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে অক্ষম। এমতাবস্থায় সে সৃষ্টির উদ্দেশ্য অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে নিজেকে জন্তু-জানোয়ারের কাঁতারে দাঁড় করায় এবং পশুদের মত অস্থায়ী জগতকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। অপরাধপ্রবণ হয়ে পাপাচারিতায় লিপ্ত হয়। পক্ষান্তরে মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে সাফল্যের পথে পরিচালিত করে। মৃত্যু তাকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে, মানুষ এই পৃথিবীতে চিরকাল থাকতে পারে না। আজ হোক কাল হোক তাকে যেতেই হবে এবং খালি হাতে একাই যেতে হবে। মাটির নীচে সাড়ে তিন হাত গর্তে স্থান হবে। সেখানে কেউ সাথে যাবে না, সাহায্যও করতে পারে না। দেহ পচে-গলে যায় বটে, কিন্তু বিলুপ্ত হয় না। বরফ যেমন পানিতে অস্তিত্ব নিয়ে বিদ্যমান থাকে, তেমনি মানুষের দেহও মাটির সাথে মিশেও অস্তিত্ব নিয়ে বহাল থাকে। তার সাথে আত্মা সম্পৃক্ত হয়ে কর্মফল হিসেবে প্রাপ্য ভালো-মন্দ, শান্তি-অশান্তি উপভোগ করে। এই অনুভূতিই মানুষকে বস্তু আকর্ষণ থেকে মুক্ত করে আখেরাতের প্রতি ধাবিত করে থাকে। এজন্যই পবিত্র কুরআনে মৃত্যুর প্রতি বার বার মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করা হয়েছে। রাসূল বলেছেন- “তোমরা মূলতঃ পথিক, সুতরাং বস্তু জগতে পথিক হয়েই থেক এবং স্থায়ী ঠিকানার সামগ্রী সংগ্রহ করে নিয়ো। আর অধিক হারে মৃত্যুকে স্মরণ কর। তাহলে বস্তুর স্বাদ ও আকর্ষণ মিটে যাবে, বাদশাহীও তুচ্ছ মনে হবে। যারা এই ধ্রুব সত্য অনুধাবনে সক্ষম হয়েছে, তারাই জীবনে উৎকর্ষ সাধনে সক্ষম হতে থাকবে। এই যুবকের আধ্যাত্মিক সাধনা ও সাফল্যের পিছনে মৃত্যুর অনুভূতি ও কবরে ভয়াবহ অবস্থার উপলব্ধি বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। বাহলুলের প্রতি তার নছীহতসমূহ এর বাস্তব প্রমাণ।

দূরদর্শিতা ও শিক্ষাগ্রহণ

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, “আমি আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করেছি। রাত আসে দিন যায় এবং রাত-দিন ছোট বড় হয়। এতে জ্ঞানী ও দূরদর্শীদের জন্য রয়েছে শিক্ষণীয় বিষয়। যারা জ্ঞানী ও চিন্তাশীল তারা আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টি থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে এবং সঠিক সত্য অনুধাবনে সক্ষম হয়। এর বাস্তব প্রমাণ হচ্ছে নবী বংশের এই যুবকের আদর্শ জীবন। বাহলুল তাকে বলেছিলেন, হে যুবক! তোমার বয়স অতি অল্প, তাই তুমি এতে ভীত কেন? অল্প বয়সের সুবাদে আজ অনেক যুবকই উদাসীন। কেবল যুবকরাই নয়, অনেক বৃদ্ধও এরূপ উদাসীনতার মধ্যে থাকে। আর উদাসীনতার পরিণাম সবসময়ই খারাপ হয়ে থাকে। কিন্তু এই যুবক উদাসীন ছিল না, ছিল অত্যন্ত দূরদর্শী। তাই বাহলুলের উত্তরে বলেছিল, আমি আমার মা-জননীকে দেখেছি ছোট লাকড়িগুলোকে প্রথমে আগুনে নিক্ষেপ করতে। অনুরূপ ছোট বয়সের মানুষেরও মৃত্যু হতে পারে এবং আল্লাহর বিচারে প্রথমেই সে অগ্নিদগ্ধ হতে পারে। সুতরাং যুবক বয়সের সুবাদে উদাসীন হওয়া ঠিক নয়। যুবকের এরূপ উক্তি একদিকে যেমন তার দূরদর্শীতার পরিচয় বহন করে, তেমনি তার শিক্ষা-গ্রহণের মন-মানসিকতার প্রতিও ইঙ্গিত বহন করে। বস্তুতঃ এই গুণটি জান্নাতের পথে পথ চলায় যুবককে সহায়তা দান করেছে।

হাশরের বিচার - ভুলের অবসান

হাশরের বিচার

মানুষ মানুষের প্রতি জুলুম করে থাকে, প্রতিশোধও গ্রহণ করে থাকে। এতে সে তৃপ্তিবোধও করে। জুলুমের প্রতিকারের দাবী মানুষের নিকট ন্যায়সঙ্গত, যুক্তিযুক্ত। কিন্তু যারা নিরীহ, যারা জুলুমের কোন প্রতিকার পায় না, যারা প্রতিশোধ গ্রহণে অক্ষম, তাদের প্রতিকারের দাবী কি ন্যায়সঙ্গত নয়? অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত। এর জন্য স্থাপিত হবে হাশরের ময়দানে আল্লাহপাকের বিচার আদালত। সেখানে জুলুম-অত্যাচারী উভয়ই সমীচীন প্রতিকার লাভে পরিতৃপ্ত হবে। পক্ষান্তরে স্রষ্টার সাথে যারা বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে তারাও সেদিন সমুচিত পরিণাম ভুগতে বাধ্য হবে। কারণ তারাও প্রকৃত অর্থে জালিমই বটে। এই উপলব্ধি জালিমকে জুলুম থেকে এবং বিদ্রোহীদেরকে বিদ্রোহ থেকে বিরত ও নিবৃত্ত রাখতে সক্ষম হয়। এই উপলব্ধি ও অনুভূতি যেমন অনেক মানুষের মুক্তি ও হেদায়েতের কারণ হয়েছে, তেমনি এই অল্প বয়সের যুবকের সফল জীবনেও এ অনুভূতি অবদান রেখেছে। বাহলুলকে উপদেশ দিতে গিয়ে এই যুবকটি বলেছিল “মানুষের দৃষ্টিকে এড়ানো যায় এবং সে চেষ্টাও করা হয়, কিন্তু কাল হাশরের ময়দানে কি উপায় হবে, সেখানে তো সমস্ত গোপন বস্তু প্রকাশ হয়ে যাবে।” বস্তুতঃ প্রশ্ন এটাই যে, আজকের যুবকদের কি এই অনুভূতি আছে? আছে কি হাশরের ময়দানে বিচারের ভয়?

ভুলের অবসান

অনেকেই বলে থাকে যে মানুষ মাত্রই ভুলের শিকার হয়, গোনাহের কাজে লিপ্ত হয়। তাই ভয়ের কোন কারণ নেই। আল্লাহ পাক অতি মহান। তিনি গফুর। তিনি রহমান ও রাহিম, তিনি ক্ষমাশীল। তাইতো তিনি সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও শাস্তির বিধান কার্যকর করেন না; ধৈর্য ধরেন। সুতরাং নিরাশার কোন কিছু নেই। তিনি অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন। প্রশ্ন হলো, তিনি যেমন এসব গুণে গুণান্বিত, তেমনি তিনি ‘কাহহার’, ‘জব্বার’ (পরাক্রমশালী, প্রতাপান্বিত) ইত্যাদি গুণেও গুণান্বিত। তিনি তার এই গুণের কার্যকারিতার কথা বারংবার ঘোষণা করেছেন এবং বাস্তবেও কার্যকর করে দেখান। তার ধৈর্যধারণ যদি ক্ষমার নিদর্শন বহন করে তাহলে অপরাধীকে অবকাশ দিয়ে পরিশেষে তাকে শক্ত হাতে পাকড়াও করার নিদর্শন কেন বহন করবে না? বস্তুতঃ এরূপ ঢালাও ক্ষমার যুক্তিহীন বিবেচনা শয়তানী ধোকা ব্যতীত অন্য কিছু নয়। এ যে মারাত্মক ভুল, যুবক তার নছীহতেই তা উল্লেখ করেছে। পবিত্র কুরআন ও হাদীসেও এর পরিপূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

ক্ষমার আশা

ক্ষমা পাওয়ার আশায় গোনাহ করা যুক্তিযুক্ত নয়, বরং এরূপ ধারণা করাও এক প্রকার স্পর্ধা ও মহাপাপ। তবে কৃত গোনাহের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া এবং তওবা করাই হচ্ছে মুমিনের করণীয়। তাই ক্ষমা প্রার্থনায় দেরী করতে নেই। যে দেরী করে, তাকে আল্লাহ পাক অপছন্দ করেন, আর যে অনুতপ্ত হয়ে অনতিবিলম্বে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ পাক তাকে অত্যন্ত পছন্দ করে থাকেন। হাদীস বিশারদগণ উল্লেখ করেছেন, গোনাহ করে ক্ষমা প্রার্থনায় বিলম্ব করা আরেকটি মহাপাপ। আর গোনাহ করে সাথে সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করা, আল্লাহর দরবারে দীনতা-হীনতা প্রকাশ করা ও নিজেকে অপরাধী হিসেবে পেশ করা মুক্তির অন্যতম উপায়। আল্লাহকে ভয় করা চাই। তবে তার দয়া থেকে নিরাশ হতে নেই। কেননা আল্লাহ ব্যতীত আর কোন আশা-ভরসার স্থল নেই। বান্দার এরূপ বিশ্বাস তার ক্ষমার পথ সুগম করে এবং উন্নতির পথ সহজ ও প্রশস্ত করে। এরূপ ভয় ও আশার মাঝখানে ঈমান অবস্থান করে বলে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মত প্রকাশ করেছেন। এই যুবকের উপলব্ধি এবং বিশ্বাস তাকে লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করেছে। ফলে আজ সে অবিস্মরণীয় যুবক এবং যুবকদের জন্য তার জীবনটি হয়েছে পাথেয়। আল্লাহ পাক তাকে যথেষ্ট প্রতিদানে ভূষিত করুন।

দশ. তায়েবীয় যুবক

আল্লাহ পাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। ইবাদতের দ্বারা না আল্লাহ পাকের খোদায়ী বৃদ্ধি পায়, না তার কোন লাভ হয়। ইবাদত করা না-করার লোকসান সবকিছুই বান্দার। ইবাদত-মুজাহাদার দ্বারা বান্দার কেবল আখেরাতের লাভই হয় না, বরং দুনিয়াতেও লাভ হয়। ইবাদতের বরকতে মানুষ শারীরিক-মানসিক প্রশান্তি বোধ করে, আল্লাহর মারিফাত লাভে ধন্য হয়, ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান হয়ে অন্তর্দৃষ্টি লাভ হয় এবং শয়তানের প্ররোচনা ও ধোঁকা থেকে মুক্তি পায়। এরই একটি বাস্তব উদাহরণ এক তাবেয়ী যুবকের ঘটনা।

মাতা-পিতার খেদমত - যুবতীর অপকর্ম

মাতা-পিতার খেদমত

হযরত উমর ফারুকের খেলাফতের যুগে এই তাবেয়ী যুবক হযরত উমরের অত্যন্ত স্নেহভাজন ব্যক্তি ছিল। তিনি যুবকটিকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। স্নেহের কারণও ছিল। যুবকটি ছিল খুবই ইবাদতগোযার। প্রয়োজনীয় কাজ থেকে অবসর হলেই তাকে সর্বদা মসজিদে ইবাদত-রিয়াজত, নামায, পবিত্র কুরআনের তেলাওয়াত আর জ্ঞান চর্চায় নিমগ্ন দেখা যেত। বস্তুতঃ এমন যুবক কোন বস্তুবাদী বাদশাহের নিকট অপছন্দনীয় বা বেকার মনে হতে পারে, কিন্তু হযরত উমরের মত সাহাবী, বিশ্ব রাসূলের শ্বশুর ও আমীরুল মুমিনীনের দৃষ্টিতে এমন যুবকের কদর ও সম্মান অধিক হওয়াই স্বাভাবিক। এরূপ যুবককেই আল্লাহ পাক হাশরের ভয়াবহ দিনে আরশের নীচে ছায়া দান করে সম্মানিত করবেন বলে বুখারী শরীফের হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। এই তাবেয়ী যুবকের উপরোক্ত গুণ ব্যতীত আরেকটি গুণ এই ছিল যে, সে এশার নামায আদায় করে দৈনিক বৃদ্ধ পিতার খেদমতে নিয়োজিত হতো। পিতার সব ধরণের সেবা ও খেদমত নিজ হাতে করত। কারণ তার বিশ্বাস ছিল, মাতা-পিতার খেদমত জান্নাত লাভের অন্যতম উপায়। পক্ষান্তরে তাদের সাথে কঠোর ভাষায় কথা বলা, তাদের কষ্ট দেয়া, বেয়াদবী করা, তাদের অবাধ্য হওয়া অমার্জনীয় অপরাধ, ধ্বংসের কারণ। সূরায়ে বণী ঈসরাইলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ বিদ্যমান রয়েছে।

যুবতীর অপকর্ম

এই যুবকের প্রতি আকৃষ্ট ছিল এক যুবতী। পিতার খেদমতে যাওয়ার পথে সেই যুবতী প্রতিদিনই এই যুবক-তাবেয়ীকে বিরক্ত করত এবং তাকে পাপাচারে লিপ্ত করার অপপ্রয়াস চালাত। কিন্তু তাবেয়ী যুবক নিজেকে অপরাধ থেকে সংযত রাখত। অবশেষে একদিন যুবতীর আহবানে সাড়া দিয়ে যুবতীর বাড়ী পর্যন্ত সে যায়। বাড়ীর দরজায় পৌঁছার পর হঠাৎ এই আয়াতটি তার মনে পড়ে যায় এবং তার সম্মুখে সেটি ভেসে উঠে।

ان الذين اتقو اذا مسهم طائف من الشيطان تذكرو فاذاهم مبصرون

অর্থঃ যারা খোদাভীরু তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা শক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে।

এই আয়াতের মর্মবাণী অনুধাবনের সাথে সাথে যুবকটি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে এবং বেহুশ হয়ে পড়ে থাকে। বাড়ী ফিরতে অনেক বিলম্ব হয়ে যাওয়ায় পরিবারের লোকজন তার তালাশে বের হয় এবং যুবতীর বাড়ীর সামনে তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় দেখে ধরাধরি করে বাড়ীতে নিয়ে যায়।

অপবাদ রটনা - যুবকের মৃত্যু

অপবাদ রটনা

কেন যুবক সংজ্ঞাহীন হলো? কেনই বা যুবতীর বাড়ীর দরজায় পড়ে থাকলো? এর সঠিক উত্তর পাওয়া সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। এমতাবস্থায় সাধারণতঃ যুবককেই দায়ী করা হয়। কিন্তু এই যুবক ছিল একান্ত আল্লাহ ভীরু, পাক-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী। সে ছিল মাতা-পিতার খেদমতগোযার। চরিত্রহীনতার লেশমাত্রও তার মধ্যে ছিল না। তাই বিষয়টি জটিল হয়ে পড়ে এবং লোকজনের মাঝে শুরু হয় বিভিন্ন ধরণের জল্পনা-কল্পনা। এ কারণে তার পরিবার-পরিজনও অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

যুবকের মৃত্যু

দীর্ঘ সংজ্ঞাহীনতার পর জ্ঞান ফিরে আসলে শ্রদ্ধেয় পিতা তাকে সংজ্ঞাহীনতার আসল কারণ জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু এদিক সেদিকের কোন উত্তর না দিয়ে উপরোক্ত আয়াতখানা তেলাওয়াত করে চিৎকার করে ওঠে এবং পুণরায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। এবার আর তার চেতনা ফিরে আসেনি, এই সংজ্ঞাহীন অবস্থায়ই সে মৃত্যুবরণ করে।

হযরত উমরের শোক - কবর যিয়ারতে আমীরুল মুমেনীন

হযরত উমরের শোক

এভাবে যুবকের মৃত্যু ঘটায় বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। যুবক যে একজন সৎ চরিত্রের আল্লাহভীরু যুবক, একথা আর কারও বুঝতে বাকী থাকে না। কিন্তু সে তো আর জীবিত নেই। সে যাকে ভয় করে তার দরবারে সে পৌঁছে গিয়েছে। তাই বিলম্ব না করে রাত্রেই তার কাফন-দাফন সমাধা করা হয়। সকাল বেলা আমীরুল মুমেনীনকে বিস্তারিত ঘটনা অবহিত করা হয়। হযরত উমর ফারুক যুবকটিকে স্নেহ করতেন, তাই তার মৃত্যু সংবাদে ব্যথিত হন। আরও অধিক ব্যথিত হন সংবাদের বিলম্বের কারণে। তিনি স্বয়ং যুবকের বাড়ী যান এবং তার পিতাকে শোক ও সান্ত্বনার বাণী শোনান। তিনি যুবকের পিতাকে একথা বলেন, “তোমরা আমাকে সময়মতো সংবাদ দিলে না কেন?” পিতা বললেন, “আমীরুল মুমেনীন! রাতের অন্ধকারে আপনার কষ্ট হবে মনে করে আপনাকে খবর দেইনি।”

কবর যিয়ারতে আমীরুল মুমেনীন

আমীরুল মুমেনীন যুবকের পিতাকে বললেন, “তোমরা আমাকে তার কবরে নিয়ে চল। এরপর হযরত উমর অন্যান্য সাহাবী ও সাথীদেরকে নিয়ে যুবকের কবর যিয়ারতে যান এবং এই আয়াতটি তেলাওয়াত করেন-

ولمن خاف مقام ربه جنتان

অর্থাৎ,‘যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয় রাখে তার জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত।’

হযরত উমর (রাঃ) কবর থেকে যুবকের মুখে শুনতে পান, হে উমর! সত্যিই আল্লাহ পাক আমাকে দুটি জান্নাতের অধিকারী করেছেন। কবর থেকে যুবকের মুখে এই উত্তর হযরত উমর ফারুক দুইবার শুনতে পান।

শিক্ষণীয় বিষয় - আল্লাহর ভয়ের উপকারিতা

শিক্ষণীয় বিষয়

মুসলিম যুবকদের ইতিহাসে এরূপ ঘটনা বিরল নয়। নবী হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের বিস্তারিত ঘটনা পবিত্র কুরআনে বিদ্যমান রয়েছে। যুগশ্রেষ্ঠ ওলী আল্লাহ হযরত শাজেলীর ঘটনাও ইবনে বতুতা তার ঐতিহাসিক সফরনামায় উল্লেখ করেছেন। এসব ঘটনাবলী বর্তমান যুবকদের জন্য পাথেয়। এসব ঘটনা মুসলিম যুবকদের ইতিহাসকে গৌরবান্বিত করে। এসব ঘটনা থেকে আজকের যুব সমাজের শিক্ষা গ্রহণ তাই বাঞ্ছনীয়।

আল্লাহর ভয়ের উপকারিতা

কোন ভালো কাজের প্রতি আকর্ষণ ও গোনাহের প্রতি ঘৃণার কারণ সাধারণতঃ দুটি হয়ে থাকে।

(ক) অন্তরের ভয়ে, অর্থাৎ মন্দ ও অনুত্তম আমলের পরিণামে কঠোর শাস্তির ভয় মানুষকে নেক কাজের প্রতি আগ্রহী এবং পাপাচারিতার প্রতি অনাগ্রহী করে তোলে।

(খ) অন্তরের আশা, অর্থাৎ ভালো কাজের উত্তম প্রতিদানের আশা এবং
খারাপ কাজের প্রতি অন্তরের আকর্ষণ ও অনীহা মানুষকে যেমন নেক আমলের প্রতি অনুরাগী করে তুলে, তেমনি পাপাচারিতার প্রতিও করে তোলে অনাগ্রহী। যুবতীর অব্যহত আবেদনের পরও যিনা ও ব্যাভিচারের মত জঘন্য অপরাধ থেকে যুবকের মুক্তির অন্তরালে ছিল তার অন্তরে বিদ্যমান আল্লাহর ভয় এবং তার নেয়ামতের আশা। বস্তুতঃ এ উভয়টিই অত্যন্ত বড় নেয়ামত এবং মানুষের জন্য মুক্তির সনদ।

ঈমানী শক্তির ফলাফল - আল্লাহর সাহায্য

ঈমানী শক্তির ফলাফল

এই ভয় এবং আশা মানুষকে নেক আমলের প্রতি ব্রতী করে তোলে এবং অপরাধ থেকে মুক্তির উপায় হয়। অপরদিকে অপরাধ বর্জন এবং নেক আমল অন্তরে নূরে ইলাহী প্রবেশের কারণ হয়, যে নূর মানুষকে ঈমানী শক্তিতে শক্তিশালী করে তোলে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-

افمن شرح الله صدره للاسلام فهو علي نور من ربه

নূর অন্তরে প্রবিষ্ট হয় কিরূপে? সাহাবী প্রশ্ন করলে এর উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

نور يقذف في قلب المؤمن

‘এই নূর মুমিনের অন্তরে নিক্ষেপ করা হয়।’

এই নূর অর্জনের উপায় কি? সাহাবীর এই প্রশ্নের উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- التجافي عن دار الغرور والانابة الي دارالخلود والاستعداد للموت قبل نزوله

অর্থাৎ দুনিয়ার প্রতি বৈরাগ্য, আখেরাতের প্রতি আকর্ষণ, মৃত্যুর স্মরণ এবং প্রস্তুতি মানুষের জন্য অন্তর্দৃষ্টি লাভের উপায়। এই অন্তর্দৃষ্টি অদৃশ্য বিষয়সমূহের প্রতি প্রত্যক্ষ বিশ্বাস লাভের উপায় হয়। পাপাচারিতার ভয়াবহ পরিণাম ও নেক কাজের উপকারিতা ও লাভ তার সম্মুখে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই ঈমানী শক্তি ও অন্তর্দৃষ্টির পরিণতির বর্ণনা সম্বলিত আয়াতটি তেলাওয়াত করে তাবেয়ী যুবকটি সংজ্ঞা হারায় এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করে। এখান থেকেই যুবকের ঈমানী শক্তি ও অন্তর্দৃষ্টির গভীরতার বিষয়টি আঁচ করা যায়।

আল্লাহর সাহায্য

এরূপ লোকদের প্রতিই আল্লাহ পাকের ক্ষমা, রহমত ও অনবরত সাহায্য আসতে থাকে। হযরত ইউসুফ নবীকে এই সুবাদেই আল্লাহ বুরহান দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। বুখারী শরীফের হাদীসে অন্য এক যুবকের প্রতি অনুরূপ সাহায্যের কথা উল্লেখ আছে। তাবেয়ী এই যুবকের প্রতি আল্লাহ পাকই সাহায্য করেছিলেন। আর সাহায্য করেছিলেন বিধায় সে রক্ষা পেয়েছিল। যারা অনুরূপ গুণের অধিকারী হয়, তাদের প্রতি আল্লাহ পাকের সাহায্য অব্যহত থাকে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আল্লাহ পাক যুবকদের প্রতি ক্ষমা ও সাহায্যের হাত প্রশস্ত রাখুন- এই আমাদের মুনাজাত কবুলের মালিক তিনিই।


সমাপ্ত

৬ষ্ঠ পর্বঃ
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৩২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×