ট্রেন চলছে গন্তব্যের দিকে।বিরক্তির শেষ নেই।প্রয়োজনের চেয়েও বেশি বিরতি দিচ্ছে সাব-স্টেশনগুলোতে।অন্যদিকে একটু পর পর রকমারিসহ ফেরিওয়ালাদের আগমণ আর বেসুরা কন্ঠে-"এই ডিম লাগবে ডিম?"।এ লোক যেতে না যেতেই আরেকজন- "ভাই,চানাচুর খান চানাচুর,ঝাল চানাচুর"।এত কিছুর মাঝে ক্লান্তদেহ মাথা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে একবার ডানদিকে আরেকবার বাম দিকে পড়ছে।
ঘুম আসে আবার কোন কারণে ভেঙ্গে যায়।
ফেনী থেকে লাকসাম অনেকটা লম্বা গ্যাপ।এই সুযোগে ঘুমেরও যেন গভীরতা চলে এসেছিল।হঠাত্ পপ শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।চোখ খুলতেই দেখি আরেক স্টেশনে থেমে গেছে।রাজনৈতিক পোষ্টারে এমপি-মন্ত্রী,আঞ্চলিক নেতা আর ঐ অঞ্চলের নাম দেখে বুঝলাম এটা লাকসাম।
কাঠফাটা রোদ,অবসন্ন শরীর।একটু শীতল পানীয়'র চাহিদা অনুভব করছে ।
এমন সময় জানালার পাস দিয়ে ১২-১৩ বছরের এক ছেলেকে একটি ঝুড়িতে করে পানি,স্প্রাইট,লিচু,সেভেনআপসহ ঠান্ডা উপকরণাদি নিয়ে যেতে দেখে ডাক দিলাম।ছেলেটি কাছে আসতেই এক বয়োবৃদ্ধের আগমন "বাবা,তোমার এই চাচিকে দ্রুত কুমিল্লা নিয়ে যেতে হবে,উনি শারীরিকভাবে অসুস্থ,এখানে ভাল হসপিটালও নেই আবার ট্রেনের টিকেটও পাচ্ছিনা"বৃদ্ধের আকুতি আমার পাষাণ হৃদয়ে হাতুড়ি পেটা শুরু করলো!কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না,
আনমনেই বলে ফেললাম "এত করে বলছেন কেন!উনাকে এখানেই বসান।আমি যুবক,কোন সমস্যা হবে না,কিছু রাস্তা দাঁড়িয়ে যাওয়া ব্যাপারই না।"বুঝলাম বৃদ্ধ মনকে এই বলে ধন্যবাদ দিচ্ছেন উনি তীর ঠিক মতই নিক্ষেপ করেছেন।আমি যখন দাঁড়িয়ে আছি তখন ট্রেন ছাড়বে ছাড়বে, অনেকটা নড়চড়াও শুরু করে দিয়েছে।
পিছন থেকে একটি ডাক শুনে সম্বিত ফিরে পেলাম-'ভাইজান ঠান্ডা কিনবেন না?'এতক্ষনের ঘটে যাওয়া ঘটনা আমার পানির পিপাসা মিটিয়েই দিয়েছিল যার কারণে ছেলেটার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম।কিন্তু ছেলেটা যে কেন আমার তৃষ্ণার টানটি ভুলেনি তা বুঝতে পারিনি।কেন সে এই সময়টা আমার পাশে দাঁড়িয় নষ্ট করলো তারচেয়ে বরং অন্য একজন কাষ্টমার পেত।পুনরায় ট্রেন হুইসেল দিয়ে দিছে,দ্রুত ছেলেটির হাত থেকে ঠান্ডার বোতলটি নিয়ে তার হাতে পঞ্চাশ টাকার একটি নোট ধরিয়ে দিলাম।
ছেলেটা সবগুলো টাকা নিতে অনেকটাই বিব্রতবোধ করছিল!কিছু বলতে যাবো এমন সময় ট্রেন চলতে শুরু করলো,
অনেকটা পড়ে যাবার মত হয়ে টাকাটা তার হাতে গুঁজে দিয়ে সোজা হচ্ছি তখন ছেলেটির একটি কথাই কানে আটকে গেল"পৃথিবীর সব মানুষই একজন মানবতাবাদীর তৃষ্ণায় পিপাসার্থ।"