somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাশের মায়া

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাতের খাওয়া শেষে শোয়ার আগ মুহুর্তে রহিম মিয়ার ফোন বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে রহিম মিয়ার শালির কন্ঠে ভাসে, “আম্মার অসুখ অইছে, বুরে লই জলদি চলি আইয়েন”বলেই লাইন কেটে দেয়। শাশুড়ীর অসুখের কথা শুনে রহিম মিয়া তার স্ত্রী রহিমা বানুকে জানালে রহিমা বানু কাঁন্না শুরু করে দেয়। মাকে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। রহিম মিয়ার বাড়ীটা অজোপাড়া গায়ে।
এখন রাত প্রায় ১১ টা। এ সময়টাতে ভ্যান কিংবা রিক্সা পাওয়াও যাবে না। থাকার মধ্যে আছে রহিম মিয়ার দুই চাকার সাইকেল। সাইকেল দিয়ে রহিম মিয়া ঘুরে আসতে পারতো, কিন্তু রহিমা বানু মাকে দেখতে যাবেই। রহিম মিয়া বিয়ে করছে ৫ বছর শেষের পথে। গত মাসেই তাদের ৪ বছর বয়সি মেয়ে রুপা পানিতে পড়ে মারা যায়। সন্তান হারানো শোকে রহিম ও রহিমা কাতর হয়ে পড়ে। এ সময়ে তাদের সাহস যোগায় রহিমা বানুর মা জোলেখা বেগম।


বিয়ের পর থেকে রহিমা বানুর বাবার বাড়ীতে ভালো কোন রান্না হলেই রহিম মিয়াকে এমনই করে রাত বিরাতে ফোন করে নিয়ে যেতো জোলেখা বেগম। কিন্তু রহিম মিয়ার শালিকার গলার স্বরটাতে তেমন কিছুই বুঝা যায়নি।রহিম মিয়া অনেক বুঝানোর পরও রহিমা বানু বাড়ীতে একা থাকতে রাজি নন, তার সাথেই মাকে দেখতে যাবে।

কি আর করার রহিম মিয়ার সাইকেলটা নিয়ে দুইজনই রওনা দিলো। রহিমা বানু পিছনে রহিম মিয়াকে শক্ত করে ধরে বসে দোয়া দুরুদ পড়তে বলে রহিম মিয়া সাইকেল এর প্যাডে চাপ দিয়ে এগুতে লাগলো। বাড়ী থেকে ৪ কিঃমিঃ দূরে রহিমের শশুড় বাড়ী, পুরো পথই কাঁচা। সন্ধ্যায় একটু ‍বৃষ্টি হওয়ায় কাঁচা রাস্তা ভিজে শ্বেত শ্বেতে হয়ে যায়। কাঁচা মাটির রাস্তার বালি বৃষ্টির পানিতে ভিজে আঠালো হয়ে সাইকেলে চাকার সাথে লেগে একাকার। বহু কষ্টে কিছু পথ অতিক্রম করার পর সামনে একটি মেহগনি গাছের বড় বাগান পড়লো। মেহগনি গাছের বাগানের ভিতর দিয়ে আরেকটা সরু মাটির রাস্তা পার হয়ে রহিম মিয়ার শশুড় বাড়ী যাওয়া লাগে।

তার আগে সাইকেলের চাকা থেকে কাঁদা সরাতে হবে। সাইকেল থেকে রহিমা বানু নেমে রহিম মিয়ার পেছনে দাঁড়ায়।রহিম মিয়া রাস্তার পাশ থাকা শুকনো ডাল দিয়ে সাইকেলের চাকা থেকে মাটি সরাচ্ছে অমনি লক্ষ্য করলো তার গায়ের সাথে লেগে সাদা রঙয়ের একটি বেড়াল রাস্তা পার হলো। ভয় না পেয়ে স্বাভাবিক ধরে নিয়ে সে তার কাজ করতে লাগলো। কিছুটা কাদা ছাড়ানোর পর পুণরায় তারা রওনা দিলো। অল্প একটু যেতে বাগানের ভিতরেই তার সাইকেলের চেইন পড়ে যায়।এবার রহিম মিয়ার মন মেজাজ খারাপ হয়ে উঠলো, রহিমা বানুকে আবারও তার পিছনে দাঁড় করিয়ে সাইকেল এর চেইন তোলার সময় খেয়াল করলো সে রংয়ের বেড়াল আবার তার পাশ ঘেষে বাগানের ভিতর ঢুকে পড়লো। আর রহিম মিয়ার শরীর চমকে ওঠলো। এবার কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো রহিম মিয়া। সে কিছুটা বুঝতে পারছে এটা স্বাভাবিক কিছু নয়। এখানে অন্য রহস্য আছে। দ্রুত সাইকেল এর চেইনটা তুলে রহিমা বানুকে সাইকেলে উঠিয়ে একটু এগুতেই অনুভব করে মেহগনির বাগানের ভিতর থেকে শো শো বাতাসের শব্দ। খুব জোরে বাতাস এসে মনে হচ্ছে রহিম মিয়ার সাইকেলটা ফেলে দিবে। বাতাসের কারনে রহিম মিয়া সাইকেল চালিয়ে সামনে এগুতে পারছে না। ‍উপয়ান্ত না পেয়ে সাইকেল থেকে নেমে এক হাতে রহিমা বানু অন্য হাতে সাইকেল ধরে খুব জোরে হেটে মেহগনী বাগান পার হচ্ছে।

একটু সামনে যেতেই রহিম মিয়ার চোখ কপালে ওঠে। সে দেখতে পায়, মেহগনি গাছের ডালের উপর মৃত মানুষের কাপন মোড়ানোর মত করে কিছু একটা ঝুলছে। ভয়ে রহিম মিয়ার কলিজা শুকিয়ে যায়। রহিমা বানুর চোখে এ দৃশ্য এখনো পড়েনি। বৌকে কিছু না বুঝতে দিয়ে রহিমা বানুকে সাইকেলের সামনে বসিয়ে চোখ বন্ধ করতে বলে। রহিমা বানু কারন জিজ্ঞাস করতেই রহিম মিয়া চেচিয়ে বলে বাঁচতে হলে চোখ বন্ধ করে রাখ, না হয় মরবি, আমি বলা ছাড়া চোখ খুলবি না; এই বলে বৌকে সাইকেলে এর সামনে বসিয়ে সাইকেল ঠেলে রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে থাকে।দৌড়িয়ে মেহগনির বাগান শেষ করে তারা।

সামনে পরে খোলা মাঠ। খোলা মাঠের মধ্য দিয়ে সাইকেলের সামনে রহিমা বানুকে বসিয়ে রহিম মিয়া দৌড়াচ্ছে। একটু সামনে এগুতে দেখে এবার খোলা মাঠের মধ্য রাস্তা বরাবর সাদা কাফন জড়ানো লাশ আকৃতির কিছু একটা শুইয়ে আছে। রহিম মিয়া দৃশ্য দেখে শিউরে ওঠে। রহিমা বানুর চোখ না খোলার জন্য বার বার বলতে থাকে আর মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে থাকে। রহিম মিয়া এ পরিস্থিতিতে কি করবে বুঝতে পারছে না, ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। চাঁদের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে লাশের পাশ দিয়ে যাওয়ার মত সামান্য জায়গা আছে। রহিম মিয়া সাইকেলে উঠে সাহস করে সামনে এগুতে লাগলো। লাশের পাশ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যেতেই তারা পঁচা দুর্গন্ধ পায়। রহিমা বেগম গন্ধের কারন জিজ্ঞাস করলেও রহিম মিয়া এড়িয়ে যায়; কই কিসের গন্ধ, চোখ বন্ধ করে রাখো, আমি বলা ছাড়া চোখ খুলবে না ।

সাইকেল চালিয়ে লাশ ফেলে যেতেই পিছন থেকে তাদের প্রয়াত মেয়ে রুপার স্বর শুনতে পায়। মা, মা বলে কেউ ডাকছে রুপার শব্দে। মা ডাক শুনে রহিমা চোখ খুলার অনুমতি চেয়ে বিষ্মিত হয়ে বলে রুপা, আমার রুপা, সাইকেল থামাও রুপা ডাকছেতো আমায়। রহিম মিয়ার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না, সে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে এটা আমাদের রুপা না।রুপা কোথা থেকে আসবে? রুপাকে আমি নিজ হাতে কবরে শুইয়ে আসলাম। এটা অন্য কিছু, তুমি চোখ খুলবে না, আমার কসম লাগে তুমি চোখ খুলবে না। খুব জোরে সাইকেল চালিয়ে শশুড় বাড়ীর গ্রামে এসে পৌছালো রহিম মিয়া। শ্বশুড় বাড়ীর বাঁশ বাগানের মাথার উপর মাথা কাটা সে লাশটা হাতের ইশারায় তাদেরকে ডাকছে। এমনটা দেখে রহিম মিয়া আরো দ্রুত সাইকেল চালিয়ে শশুড় বাড়ীর দরজায় এসে পৌছায়।


শ্বশুড়কে তাদের বাড়ীর দরজায় তাদের অপেক্ষায় দেখতে পেয়ে রহিমা বেগমকে চোখ খুলতে বলে, উভয়ে সালাম দিয়ে, বাড়ীতে ঢুকে। রহিমা তার বাবার কাছে তার মায়ের অবস্থা জিজ্ঞাস করাতে রহিমার বাবা হেসে বলে; আরেহ তোর মায়ের আর অসুখ! তোর মা তোকে দেখতে চাইলো, জোৎস্না রাত দেখলাম তাই আসতে বলছি। তাছাড়া খাসি ছাগলটা সন্ধ্যার পর হঠাৎ করে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে, জবাই দিলাম। তোর মায়ের অসুখের কথা না বললেতো তোরা আসবি না, তোর মায়ের কিছু হয় নি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। তোদের আসতে কোন সমস্যা হয়নিতো ?
ছবি কৃতজ্ঞ : ব্লগার নীল আকাশ।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১২
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×