somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিন জিন জিন

১৮ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকে চালাচালি কমেন্টস এর খন্ড বিশেষ।

হাই রুনা লায়লা!
কে রুনা লায়লা?
আপনি!
জ্বি না!
দিস ইজ ওয়ান এন্ড অনলি তানজিন!!
তাই নাকি? হুম

ভার্সিটিতে ছেলেরা ওকে আড়ালে জীন বলে ডাকত। সেই সাথে কিছু মেয়েদেরও সায় ছিল। বায়োলজির জিন না, কুরআন শরীফের জ্বীন। আসলে ওটা ছিল তানজিনের কোডনেম। সেটা তানসেনও হতে পারত। সংগীত সম্রাট তানসেন। প্রত্যেক মেয়ের ই গোপন কোডনেম দেয়া হয়েছিল। যেমন শিউলির কোডনেম ছিল….

২০১০ সালে ভার্সিটি ছাড়ার পর তাঞ্জিনের সাথে তেমন কথা বার্তা হয়নি। ফেসবুকের কল্যানে অল্প কিছুদিন আগে যোগাযোগ কিছুটা বাড়ে। কথায় কথায় ওকে বললাম তোমাকে নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে। কি লিখব জানি না। কারন ওর সম্বন্ধে তেমন কিছুই জানি না। অনেকটা তিমিরে থেকে হাতি দর্শনের মত। কি লিখতে কি লিখে ফেলি ভয় হয় পাছে ও রেগে যায়। রেগে গেলেন ত হেরে গেলেন মহাজাতকের ওই বানীটা কি তানজিন জানে? হয়ত জানে। আল্লাহ ভরসা।

তাহলে প্রথম সাক্ষাৎ থেকেই শুরু করা যাক। মিরপুর এসআইএমটি থেকে আমরা এক ঝাক তরুণ তরুণী নতুন দিগন্তের স্বপ্ন বুকে নিয়ে বিইউবিটি তে ভর্তি হয়েছি। প্রথমেই দিপু স্যার কে খুব ভাল লেগে গেল। চমৎকার মানুষ। যেমন দেখতে তেমনি উনার ব্যবহার। আমরা প্রায় মুগ্ধ। প্রথম ক্লাস করার জন্য মুখিয়ে আছি। আরেকটা ব্যাপার হল অন্য কলেজ থেকেও অনেক ছেলে মেয়ে এসে ভর্তি হয়েছে। নয়ন জুড়ানো সুন্দরী না হলেও ব্রিলিয়াণ্ট একটা মেয়ে এসে নাকি ভর্তি হয়েছে আহসান উল্লাহ পলি টেকনিক থেকে। সবাই বলাবলি করছে। সিজিএপি নাকি ভাল। আমাদের কলেজের মেয়েদের সিজিএপিএ তেমন ভাল ছিল না তাই তানজিন কে ওরা তেমন একটা ভাল ভাবে নেয়নি। তবে ছেলেদের চোখে ওর জন্য মুগ্ধতা নিংড়ে নিংড়ে জানান দিত। আমার প্রিয় বন্ধু জাহিদ তানজিন বলতে পাগল ছিল। এটা সেটা কত ছুতোয় যে ওর সাথে যেচে পড়ে কথা বলত। বন্ধুসুলভ ছিল তাই জিন কখনো মাইন্ড করত না। সমস্যা বাধত যখন ফয়সল জিন কে নিয়ে কিছু বলত। কি বলত সেটা উল্লেখ না করাই ভাল। ছেলেরা আর কি আলোচনাই বা করতে পারে মেয়েদের নিয়ে। জাহিদ বলত, তুই ব্যাটা শিউলীকে নিয়েই ব্যস্ত থাক। অন্য দিকে নজর দিতে হবে না। গত চার বছরে ত শুধু মজাই নিয়ে গেলি। এইবার ক্ষান্ত দে, আমাদের কে একটু সু্যোগ দে। তবে জাহিদ সেটা কখনোই জানতে পারে নি যে বিইউবিটিতে ভর্তি হওয়ার পর ফয়সল শিউলির সমীকরণ কিছুতেই মিলছিল না। কারণ, সমীকরনে তখন এক্স ফ্যাক্টর ছাড়াও ওয়াই ফ্যাক্টরের ইন্টারফেয়ারেন্স ছিল অতি মাত্রায়। শিউলীর জিবনের অঙ্ক কষানোর মাস্টার তখন পুরোদমে রনি। সেই দুঃখেই ফয়সল তখন দেবদাস। তাই একটু আধটু চন্দ্রমুখির দেখা পেলে মন্দ কি? ফয়সল তাই কায়োমনোবাক্যে জেসির জন্য পাগলপারা। কিন্তু জাহিদ কে রাগানোর জন্য জিন কে নিয়ে এটা সেটা বলত। বেচারা জাহিদ। সত্যি মনে করে দুঃখ পেত। জাহিদের নাকি মেয়ে ভাগ্য ভাল না। এত হ্যান্ডসাম হওয়া সত্তেও মেয়ে পটাতে পারে না। প্রায় ই দেখতাম ফয়সল আর সম্রাট ওকে টিপস দিত কি করে মেয়ে পটাতে হয়। অনেক প্র্যাকটিস করেও যখন মেয়েদের সামনে যেত তখন ই সব গুলিয়ে ফেলত। হাহাহা…

মাইনুদ্দিন স্যারের ফিজিক্স ক্লাস সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে করত। সবচেয়ে মজার ক্লাস ছিল ইংরেজি ক্লাস। ইংরেজী স্যারের পড়ানোর ভঙ্গিটা ছিল অসাধারন। কমিউনিকেটিভ ক্লাস। সবাই কে অংশ নিতে হত। এক এক করে সবাইকে স্যার নিজের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করতেন আর তার উত্তর ইংরেজীতে দিতে হত। কিছুটা প্রেজেন্টেশন টাইপ ক্লাস। জিন সেই ক্লাসে বরাবর ই খুব ভাল পারফরমেন্স দিত। সবাই তখন জিনে ধরা। হাহাহা আই মিন জিনে মত্ত্ব। জাহিদ ত শুধু হা করে তাকিয়েই থাকত। জিন কে দেখতে পারত না শুধু একজন। যে দেখতে পারত না সে ই জিন নামটা দিয়েছিল। কি জন্যে দেখতে পারত না সেটা বলা মুশকিল। সেটা কি জিনের মেধা, সৌন্দয্য, সিজিপিএ নাকি প্রত্যাখ্যান! আমি কখনো জিজ্ঞেস করিনি। তবে জিন এসব নিয়ে কখনো মাথা ঘামিয়েছে বলে মনে হয় নি। এসআইএমটি থেকে জিনের দুই তিনজন ভাল বন্ধু জুটে যায়। জেসি, আমিনুল, সুচিত্রা সহ আরো অনেকে। তবে অনেকের মুখেই কানাঘুষা ছিল যে আমিনুল নাকি জিন কে ভালবাসে। যদিও জিজ্ঞেস করলে বলত জাস্ট ফ্রেন্ড। ছেলে মেয়ে কখনো বন্ধু হয় না সেটা কে না জানে। সত্য কি মিথ্যা কি জানি না। ও বলল যদি কিছু লিখি তাহলে যেন সত্যিটাই লিখি। আমি বললাম যাহা লিখিব সত্য লিখিব সত্য বই মিথ্যা কিছু লিখিব না। কিন্তু আমি অন্ধজন, হাতির আর কি বর্ণনাই বা দেব! পড়ে মন খারাপ হলে কিছু করার নাই। এ জগতে কতজনেই ত কতজনকে ভালবাসে। আর ভালবেসে দুঃখ পায়। দুঃখ না পেলে কি কখনো এত এত গান কবিতা গল্প উপন্যাস চলচ্ছিত্রের আবির্ভাব হত? হত না। যাহা হয় ভালোর জন্যই হয়।

তবে এখন আসল কথায় আসি। যে কারনে এই লেখার অবতারণা। একদিন ইংরেজী ক্লাস শেষ, লাঞ্চ করার জন্য বন্ধুদের সাথে ক্যফেতে যাচ্ছি কফি খাওয়ার জন্য। পথে জিনের সাথে দেখা। হালকা কথাবার্তা শেষে জিন বলল, শুনেছি আপনি নাকি ইংরেজীতে খুব ভাল। আপনার ইংরেজী নোটগুলো কি আমাকে দেয়া যাবে? তড়িঘড়ি উত্তর দিলাম, আমি ত কখনোই নোট করে পড়িনা। বলেই হাটা দিলাম। পেছন থেকে জিনের রাগান্বিত মন্তব্য, না দিলে না দিবেন, মিথ্যা বলার কি দরকার?? আমার কান গরম হয়ে গেল। অন্য দিন কফি খেলে কান গরম হত আজ কফি খাবার আগেই গরম হয়ে গেল। লক্ষন ভাল না। সেদিন আমি সত্যি কথাটাই বলেছিলাম যে আমি নোট করে কখনোই পড়িনি। তবে সত্যি কথাটা জিন বিশ্বাস করেনি। আমিও বিশ্বাস করানোর চেস্টা করিনি। সময় গড়িয়ে যায়, স্মৃতি রয়ে যায়। সেই স্মৃতি নিয়ে কিছু লেখা হবে আগে ভাবিনি। যাইহোক সত্য কিংবা মিথ্যা অবশেষে লিখে ফেললাম। আরো কিছু লিখতে পারলে ভাল হত। যাদের নাম উল্লেখ করলাম সবাই বিয়ে শাদি করে পুরোমাত্রায় সংসারী। কেউ হয়েছে আজম খান আর কেউ হয়েছে রুনা লায়লা। হাহাহাহা

অন্যের চোখে নিজেকে দেখতে সবাই ভাল পায়। তবে...

জিন নামটা কে দিয়েছিল সেটা জিজ্ঞেস না করলেই প্রানে বাচি ;)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৭ রাত ২:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×