somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কোরানী সত্যকে কওমি মাদ্রাসার হুজুরগন এড়িয়ে চলেন

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোরান ও হাদিসের আলোকে রাসুলের(সাঃ) পরিবার(আঃ)-রাসুলের নির্বাচিত উত্তরসুরী

সংকলকঃ মোঃ নিজামুল হক

মহিমান্বিত আল-কুরান,সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট হতে শেষনবী সাইয়েদুল মুরসালিন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)এর উপর নাজিলকৃ্ত ওহী,,ইসলাম ধর্মের সকল আইনের উৎস। ইহা মানব সমাজের জন্য একটি পুর্নাঙ্গ জীবন পদ্বতি এবং নৈ্তিক মুল্যবোধের সুসংজ্ঞায়িত বিধি-বিধান।প্রত্যেক মুসলমান অবগত যে,তার দৈনন্দিন জীবনে কুরানের বিধি-বিধানের প্রয়োগ করে চলার ও পথনিদেশের প্রয়োজনে তাকে অনুসরন করার জন্য বাধ্যবাধকতা রয়েছে।নবী পরিবার(আঃ) অত্যন্ত সুউচ্চ স্তরের মর্যাদাবান এবং কেবলমাত্র তাঁরাই অনুসরনযোগ্য-পবিত্র কুরানের অসংখ্য আয়াত ইহা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিশেষভাবে উপস্থাপন করেছে,যেন মুসলমানগন তাঁদের পথ বিশ্বস্ততার সাথে অবিচল্ভাবে অনুসরন করে,বিচ্যুতির হাত হতে পরিত্রান পায়।সার্বিককভাবে বলতে গেলে এই আয়াতগুলোকে নিম্নের শ্রেনিতে বিন্যাস করা যায়ঃ
১)কুরানশরিফের আয়াতে নবীপরিবারের(আঃ) বিশেষ মর্দাযা সম্পকিত সরাসরি তথ্যনিদেশক দলিল রয়েছে,যেমন-আয়াতে তাতহির(পবিত্রতার আয়াত)এ নবী পরিবার বা আয়াতে মাওয়াদ্দাহয়(নিকট আত্নীয়ের আয়াত)আল-কুরবা(নিকটাত্নীয়)।
আবার, কোন কোন সময় কুরান শরিফের আয়াতসমুহ এতদসম্পকিত দলিল পরোক্ষভাবে উপস্থাপিত হয়েছে যা রাসুল(সাঃ) সাহাবীদেরকে ব্যাখ্যার মাধ্যমে সুস্পষ্ট করেছেন।
২) আহলে বায়েতের সাথে সম্পকিত এবং তাঁদের মযাদাসুচক ও গুনাবলীর নিদেশক কতিপয় ঘটনাবলীর দলিলও আল-কুরান উল্লেখ করেছে।একইভাবে মুসলিম উম্মাহর নেতৃ্ত্বের ইস্যুটিকেও ইহা ফয়সালা করে দিয়েছে।আহলে বায়েতকে ইহা উপস্থাপন করেছে সামষ্ঠিকভাবে বা এককভাবে ;সামষ্ঠিকভাবে যেমন আয়াতে মুবাহালা ও সুরা দাহার এর ৮ম আয়াতে,অথবা এককভাবে যেমন নিম্নের অলি-সম্পকিত আয়াতেঃ
“তোমাদের অলি(অভিভাবক) তো আল্লাহ,তাঁর রাসুল এবং ঐ মু’মিনগন-যারা নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত দেয় রুকু অবস্থায়(সুরা মায়েদাঃ৫৫)”।আহলে বায়েতের বিশেষ গুনাবলী,যোগ্যতা এবং সুউচচ মযাদার বননা স্মবলিত কুরানের আয়াতের সংখ্যা অনেক।আমরা এখন তদসম্পকিয় কয়েকটি আয়াত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।
১।
পবিত্রতার আয়াত (আয়াতে তাতহির)
“…..(হে)আহলে বাইত!আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পুন রুপে পুতঃপবিত্র রাখতে”(সুরা আহজাবঃ৩৩)”।
কুরানুল করিমের সকল তাফসিরকার এবং রাসুল(সাঃ)এর হাদিছ বননাকারীগন সকলে সবসম্মতভাবে ঐকমত্যে উপনীত হয়াএছেন যে,আহলে বায়েত শব্দটি দ্বারা, যেমনটি আল্লাহ কুরানে ব্যাবহার করেছেন,কেবলমাত্র ৪ ব্যাক্তিত্বকে নিদেশ করা
হয়েছেঃরাসুল(সাঃ)এর কন্যা ফাতিমা(আঃ),তাঁর স্বামী আলী(আঃ) এবং তাঁদের ২ সন্তান হাসান(আঃ) ও হুসাইন(আঃ)।
বিখ্যাত তাফসিরকার জালালুদ্দিন সয়ুতি তাঁর সুপ্রসিদ্ব তাফসীর গ্রন্থ দুররে মানসুরে উম্মে সালামা সনদে তাবারানী’র বননা উদ্বৃত করেছেনঃরাসুলুল্লাহ(সাঃ)তাঁর প্রিয়তমা কন্যা ফাতিমাকে একদা তাঁর স্বামী ও তাঁর ২ ছেলে হাসান ও হুসাইনকে ডাকতে বললেন।তাঁরা যখন এলেন রাসুল(সাঃ) তাঁদেরকে ফাদাকের(মদিনার উপকন্ঠে)১খানা চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন এবং তাঁদের উপর তাঁর পবিত্র হাত রেখে দোয়া করলেনঃহে আল্লাহ এরাই হচ্ছে আলে মুহাম্মাদ(ভিন্ন বননায় বলা হয়েছে আল্,অথ হচ্ছে পরিবার) ।সুতরাং তুমি তোমার রহমত ও বরকত আলে মুহাম্মাদের উপর বষন কর যেমন তুমি আলে ইব্রাহিমের উপর বষন করেছিলে;তুমিই তো সবোত্তম প্রশংসার অধিকারী ও পরম গৌরবময়।উম্মে সালামা বলেন যে,তিনি তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য সেই চাদরটি উত্তোলন করেছিলেন,কিন্তু মহানবী(সাঃ)তার হাত থেকে সেটি টেনে নিলেন এবং বললেনঃতুমিও সঠিক পথের উপর অবস্থান করছো(মানাকিবে আহলে বাইত,ভলিউম-২,পৃঃ৩০৮)।
উম্মে সালামার সনদে অন্য এক বননায় উদ্বৃত হয়েছে যে,একদা মহানবী(সাঃ) তার ঘরে বিছানায় শায়িত ছিলেন।তিনি আবৃত ছিলেন খায়বরের একটি চাদর দ্বারা।এমন সময় তাঁর প্রিয়তমা কন্যা হযরত ফাতিমা(আঃ)’খাজিরা’-র(এক বিশেষ ধরনের খাবার) একটি থালাসহ ঘরটিতে প্রবেশ করলেন।নবীজী(সাঃ) তাঁকে তাঁর স্বামী(আলী) এবং দুই পুত্র হাসান ও হুসাইন-কে ডাকার জন্য বললেন। তিনি তাঁদের ডাকলেন।তাঁরা যখন খাবার খেতে একত্র বসলেন,আল্লাহ তখন রাসুলের (সাঃ) উপর এই আয়াতটি নাজিল করেনঃ
“….হে আহলে বায়েত!আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পুন রুপে পুতঃপবিত্র রাখতে”(সুরা আহজাবঃ৩৩)”।
এই প্রেক্ষিতে রাসুলাল্লাহ(সাঃ) তাঁদের সকলকে তাঁর চাদর দ্বারা আবৃত করলেন এবং আকাশের দিকে দ’হাত তুলে ধরে বললেনঃ “হে আল্লাহ!এরাই হলো আমার আহলে বায়েত(পরিবারের লোক) এবং আমার নিকটতম আত্নীয়।অপবত্রিতা থেকে তাঁদেরকে দূরে রাখো এবং তাঁদেরকে সবতোভাবে পুতঃপবিত্র রাখো!”
উম্মে সালামা আরো বলেন,রাসুল(সাঃ) তিন বার এই শব্দগুলো পুনরাবৃত করলেন।অতঃপর যখন তিনি চাদরের ভিতর তার মাথা গলিয়ে দিয়ে নবীজীকে জিজ্ঞেস করলেন,‘আমিও কি আপনাদের মধ্যে আছি?’ তখন তাকে নিরস্ত করার সুরে নবীজী দুইবার বললেনঃ“তুমিও সৎ(ন্যায়নিষ্ঠদের) বান্দাদের মধ্যে অন্তরভুক্ত আছো”(এই হাদিছটি ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল ‘গায়াত আল- মারাম’গ্রন্থে ৩জন বননাকারীর সনদে উম্মে সালামা হতে বননা করেছেন)।
অনেকগুলো উপলক্ষে মুসলমানদের নিকট এই আয়াতের অন্তরনিহিত তাৎপরয রাসুলাল্লাহ(সাঃ) উপস্থাপন করেছেন এবং এর গুরুত্বের প্রতি তাদের মনযোগ আকষ্রন করেছেন।আবু সাইদ খুদরি রাসুলের(সাঃ)উদ্বৃতি উল্লেখ করে বলেন,তিনি(নবীজী) বলেছেনঃ
“এই আয়াত নাজিল হয়েছে ৫ ব্যাক্তিকে উদ্দেশ্য করেঃআমি নিজে, আলী, ফাতিমা,হাসান ও হুসাইন”।
“….হে আহলে বায়েত!আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পুন রুপে পুতঃপবিত্র রাখতে”(সুরা আহজাবঃ৩৩)”।(এই বননাটি আবু সাঈদ খুদরিকে উদ্বৃত করে বননা করেছেন ইবনে জরীর তাবারী,ইবনে আবি হাতাম এবং তাবারানী।‘গায়াত আল- মারাম’গ্রন্থেও উম্মে সালামার সালাবী-র তাফসীর,ইবনে মারদাওয়াইয়া ও বায়হাকীর সুনান-কে উদ্বৃত করে বননা করেছেন)।
এই আয়াতটির দ্বারা ঐ ৫ ব্যাক্তিকেই বুঝানো হয়েছে।উম্মুল মু’মেনিন হযরত আয়েশার বনিত একটি হাদিছও ইহা নিশ্চিত করে।তিনি বলেছেনঃ “একদিন রাসুল(সাঃ) একটি কালো চাদর দ্বারা আবৃত হয়ে ঘরে ফিরলেন।তারপর হাসান এলেন এবং তিনি তাঁকে চাদরের নীচে ডেকে নিলেন।তারপর হুসাইন এলেন এবং তাদের সাথে চাদরের নীচে একত্রিত হলেন।কিছুক্ষনের মধ্যে তার কন্যা ফাতিমা এলেন এবং তিনি তাকেও চাদরের ভিতর নিয়ে নিলেন;অতঃপর আলী এলেন এবং তাকেও চাদরের নিচে দেকে নেয়া হলো।যখন ৫ ব্যাক্তির সকলে চাদরের নিচে সমবেত হলেন,আয়েশা বলেন,রাসুল(সাঃ)আহলে বায়েতের মযাদা পুনঃনিশ্চিতের জন্য এই পবিত্র আয়াতটি(আয়াতে তাতহীর) তেলাওয়াত করলেন,যেমন এই আয়াতটি পুবে নাজিল হয়েছিল এই ৫ মাসুম(নিশপাপ)ব্যাক্তিকে উদ্দেশ্য করেঃ “….হে আহলে বায়েত!আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পুন রুপে পুতঃপবিত্র রাখতে”(সুরা আহজাবঃ৩৩)”।(ইহা ‘গায়াত আল- মারাম’ অনুযায়ী আয়াশাকে উদ্বৃত করে বুখারি ও মুসলিমের ‘সহিহাইন’এর বননার অনুরুপ।‘তাফসীর আল-কাশশাফে’ জামাখশারি আয়াতে মোবাহেলার ব্যাখ্যায় ইহা বননা করেছেন)।
ইসলামি শাস্রে আর একটি বিখ্যাত হাদিছে দেখে যায়,এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসুল(সাঃ) ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার পথে যখনি কন্যা ফাতিমার(আঃ)ঘর অতিক্রম করতেন,তখনি তিনি এই বলে আহবান করতেনঃ “নামাজের জন্য আসো,হে আহলে বায়েত!আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পুন রুপে পুতঃপবিত্র রাখতে”(সুরা আহজাবঃ৩৩)”।(ইবনে আবি শায়াবার সনদের ভিত্তিতে ইবনে মারদাওয়াইয়্যা,আহমদ,তিরমিজি,ইবনে মুনজির,তাবারানি ও হাকিম এর বিশুধ্ব বননা।বিস্তারিত তথ্যের জন্য আল্লামা তাবাতাবাঈর আল মিজান কি তাফসির আল কুরান,আয়াতে তাতহির-এর ব্যাখ্যা দেখুন।)
আল-কুরান আহলে বায়েত(আঃ)কে এভাবেই উপস্থাপন করেছে,এবং অপবিত্রতা,অবাধ্যতা,পাপ ও খামখেয়ালিপনা মুক্ত তাঁদের নিস্পাপ (মাসুম) বাক্তিত্বকে স্পষ্টায়ন করেছে।
কামালিয়াত(পুনতার)পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের চরিত্র ও আদব কায়দা হচ্ছে মুসলমানদের জন্য আদশ/মডেল।তাঁদের মহানুভব অবস্থান ও উচ্চপদমযাদার প্রতি কুরান বিশেষ গুরত্ব নিদেশ করেছে যাতে মুসলিম উম্মাহ তাঁদের উজ্জ্বল উদাহরনসমুহ অনুসরন করে এবং রাসুল(সাঃ)এর পর শরিয়তের আইন ও সিদ্বান্ত সম্পকিত তথ্যাদি ও পথনিদেশের জন্য তাঁদেরকে মেনে চলে।তাঁরা হচ্ছেন সেই ব্যাক্তিত্ব যারা ইসলামের বাস্তব নমুনা এবং ধারনা,মতামত ও চিন্তার মতদ্বৈততা নিরসনের বিষয়ে ঐকমত্যের প্রতীক।
আল-কুরানের অসংখ্য আয়াত এই বাস্তবতাকে সুপ্রতিষ্টিত করেছে,এবং এটাও সন্দেহাতিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে,রাসুল(সাঃ) পর নেতৃ্ত্বের দায়িত্ব হল আহলে বায়েতের।
প্রত্যহ ভোরে কন্যা ফাতিমার(আঃ) ঘরের দরজায় নিয়মিতভাবে দাঁড়ানো, এবং তাঁর(ফাতিমা জাহরা)পরিবারের সদস্যবরগকে আহলে বায়েত হিসেবে সম্বোধনের বিষয়টি দ্বারা এই অথই বুঝায় যে, রাসুলের (সাঃ)কাযত মুসলমানদের নিকট এর দ্বারা আয়াতে তাতহীরের(পবিত্রতার আয়াত) প্রায়োগিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন।রাসুলুল্লাহ(সাঃ) আহলে বায়েতের এই গুরুত্বের প্রতি মুসলিম উম্মাহর মনোযোগ আকষন করেছেন যাতে করে তারা তাঁদেরকে ভালবাসতে পারে,আনুগত্য ও অনুসরন করতে পারে,এবং গোমরাহ হওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে।।……..
…….।অতএব উক্ত আলোচনা হতে ইহা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে,রাসুল(সাঃ) কতৃক তাঁর কন্যা ফাতিমার(আঃ) গৃহে প্রত্যহ দাড়ানোর অভ্যাস ও তাঁর পরিবারের সদস্যগনকে ‘আহলে বায়েত’ হিসেবে সম্বোধন উদ্দেশ্যবিহীন ছিল না।প্রকৃ্তপক্ষে তিনি এর দ্বারা ‘আহলে বায়েত’এর পরিভাষাগত অথের ব্যাখ্যা স্পষ্টায়ন করেছেন এবং মুসলমানদের নিকট আয়াতে তাতহীরের (পবিত্রতার আয়াতের) প্রায়োগিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন।আরো সুস্পষ্টভাবে বলতে গেলে,ইহা দ্বারা রাসুলাল্লাহ(সাঃ) আহলে বায়েতের গুরুত্ব এবং তাঁর অবতমানে তাঁদের(আহলে বায়েত)নেতৃ্ত্বে আসীন হওয়ার বিষয়ের প্রতি মুসলিম উম্মাহর মনোযোগ আকষন করেছেন যাতে মুসলমানগন তাঁদেরকে মহব্বত করতে পারে এবং আনুগত্য ও অনুসরন করতে পারে।
আরো অগ্রসর হওয়ার পুবে পাঠকদের মনে উদ্রেক হতে পারে এমন যে ধরনের সন্দেহ অপনোদন করা প্রয়োজন,যেমন-এই আয়াত(আয়াতে তাতহীর) উম্মুল মোমেনিনগনকেও অন্তরভুক্ত করে কি-না।কিছু কিছু লোক নিশ্চিতভাবে এর ভুল ব্যাখ্যা করতে থাকে।প্রকৃ্ত সত্য হলো,এই আয়াত(আয়াতে তাতহীর) উম্মুল মোমেনিনগনকে কোন ভাবেই অন্তরভুক্ত করেনা।কারন,পুববতি আলোচনা হতে ইহা স্ফটিকের মত স্পষ্ট প্রমানিত হয়েছে যে,ইহা ইতিপুবে উল্লেখিত কেবলমাত্র বিশেষ ৫ ব্যাক্তিকেই উদ্দেশ্য করে নাজিল হয়েছে,যাদের মধ্যে ৪জন পুরুষ,ব্যাতিক্রম শুধু রাসুলাল্লাহর (সাঃ)কন্যা ফাতিমা(আঃ)।
অধিকন্তু,এই আয়াতে পুংবাচক লিঙ্গ ব্যাবহার হয়েছে।আরবী ভাষা সম্পকে যাদের ধারনা আছে তাদের নিকট ইহা সুস্পষ্ট যে-‘আনকুম’ এবং ‘ইউতাহহিরাকুম’ শব্দ দুটি(যাদের অথ ‘তোমাদের থেকে’ ও ‘তোমাদেরকে সম্পুনরুপে পুতঃপবিত্র করতে’)পুংবাচক শব্দ হিসেবে ব্যাবহার হয়েছে এবং ঐ ব্যাক্তিদেরকে,যাদের অধিকাংশই হলো পুরুষ,যৌথভাবে নিদেশ করেছে। যদি এর দ্বারা আল্লাহ উম্মুল মোমেনিনদেরকে বুঝাতে চাইতেন,যেমন কেউ কেউ ভ্রান্ত ধারনা পোষন করে থাকেন,তবে আরবী ভাষার সবচেয়ে নিখুত সবশ্রেষ্ট গ্রন্থ আল-কুরান অবশ্য অবশ্যই পুং-বাচক ঐ শব্দ দুটির পরিবরতে স্ত্রী-বাচক শব্দ আনকুন্না এবং ইউতাহহিরাকুন্না ব্যাবহার করতো,কারন তারাই ছিলেন সংখ্যায় অধিক।
এভাবে স্পষ্ট হয়ে যায় যে,এই আয়াত মানুষের মনে আল্লাহর গ্রন্থ আল-কুরানের সঠিক উদ্দেশ্যের সুস্পষ্ট ছবি একে দেয়।ইস্পাতদৃঢ় অটল অক্ষশক্তি আহলে বায়েতের পুতঃপবিত্রতা এবং শুধ্ব-সৎ নিরভরযোগ্য দৃঢ় বুনিয়াদের উপর মুসলিম সমাজের সৌধ বিনিরমানের প্রচেষ্টা গ্রহন করে।
২।
মহব্বতের আয়াত(আয়াতে মাওয়াদ্দাহ)
“……(হে মুহাম্মাদ!)আপনি মানবজাতিকে বলুন,আমি এই (নবুয়তি) কাজের বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আমার নিকট আত্নীয়দের প্রতি(আহলে বায়েত) গভীর ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোন প্রতিদান চাইনা।যে উত্তম কাজ করে আমি তার জন্য এতে কল্যান বধিত করি;….”(সুরা শুরা ৪২,আয়াত ২৩)।
৩।
লা’নতের আয়াত(আয়াতে মুবাহেলা)
“তোমাদের নিকট জ্ঞান পৌঁছানোর পর যে কেহ এই বিষ্যে তোমার সাথে বিতক করে,তা’হলে তাকে বলঃ’এস,আমরা আহবান করি আমাদের সন্তানদেরকে আর তোমরাও তোমদের সন্তানদেরকে,আমরাও আমদের নারীদেরকে আর তোমরাও তোমাদের নারীদিগকে,আমাদের নিজদিগকে ও তোমাদের নিজদিগকে;অতঃপর আমরা(আল্লাহর কাছে) বিনীত ফরিয়াদ জানাই এবং মিথ্যাবাদীদের উপর দেই আল্লাহর লা’নত”(সুরা আলে ইমরানঃ৬১)।
এ আয়াতখানি নবযুগের সুচনা সৃষ্টিকারী একটি ঘটনার প্রতি অঙ্গুলি নিদেশ করে।সকল ঐতিহাসিক ও তাফসিরকার এই ঘটনা বননা করেছেন।এ ঘটনা পরম মহিমান্বিত আল্লাহর নিকট রাসুল(সাঃ)এর পরিবার(আহলে বায়েত) কত আপন আর কত প্রিয় মুদলমানদের কাছে তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
এ ঘটনা রাসুল(সাঃ)এর আহলে বায়েতের সুনিদিষ্ট মযাদাকে সুষ্পষ্টভাবে চিঞ্ছিত করেছে যা ইসলামের ইতিহাসের ঘটনাপঞ্জিতে মুবাহেলা (অথাত মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লা’নত প্রাথনা করা)নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক ও তাফসিরকারকগন ঘটনাটিকে নিম্নরুপে বননা করেছেনঃ
নাজরানের খৃষ্টানগনদের একটি প্রতিনিধিদল রাদের ধমবিশ্বাসের সপক্ষে যুক্তি-তক উপস্থাপনের জন্য পয়গাম্বরে ইসলাম(সাঃ)এর কাছে এসেছিল।নবীপাক(সাঃ) তাদের কাছে উপঞ্ছাপন করলেন যে,মরিয়মের পুত্র ঈসা(আঃ) ছিলেন একজন মানব সন্তান ও একজন নবী,এবং তাঁকে আল্লাহর পুত্র গন্য করা আল্লাহর পবিত্রতার বিষয়ে ঠাট্টা করার শামিল;কারন পরম মহিমান্বিত আল্লাহ এ ধরনের সকল মানবীয় বৈশিষ্ঠের অনেক উধ্বে।রাসুল(সাঃ) যখন তাঁর বিষয় পরিপুনরুপে যুক্তি প্রমানের সাহায্যে দৃঢ়তার সাথে উপস্থাপন করছিলেন,তখন দেখা গেল তারা উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে ঈসা(আঃ)কে ঈশ্বর হিসেবে বিবেচনায় করার তাদের মিথ্যা বিশ্বাসের উপর অনঢ় অবস্থান গ্রহন করল।অতঃপর সেই সময় আল্লাহপাক এই আয়াত নাজিল করেন।এটা খৃষ্টানগনদের প্রতি চ্যালেঞ্জ-আল্লাহর কাছে প্রাথনা করা এবং ফরিয়াদ জানানো যেন তাঁর লা’নত সেই দলটিকে ধ্বংস করে দেয় যারা মিথ্যাকে আকড়ে ধরেছে ( ইবনে সাবাক্ক মালেকী,আল০ফুসুল আল-মুহিম্মা,গ্রন্থকারের মুখবন্দ)।
পরের দিন জিলহজ্জ মাসের ২৪ তারিখে সকালে আল্লহর আদেশ অনুসারে রাসুল(সাঃ) নিদিষ্ট মাঠে আগমন করলেন;হুসাইনকে কোলে নিয়ে এবং হাসানকে তাঁর হাত ধরে(আমাদের ছেলেদের),তাঁকে অনুসরন করে পিছনে পিছনে এলেন তাঁর প্রিয়তমা কন্যা ফাতিমা(আমাদের নারীগন),তাঁর পিছনে আলি(নিজদিগকে)ইসলামের পতাকা বহন করে এলেন।রাসুল(সাঃ)এর সাথে তাঁর নিকট পরিবারকে আসতে দেখে এবং মুঃসাঃএর সত্যবাদী হওয়া সম্পকে তারা নিজেরা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায়,তা-না হলে এই প্রেক্ষাপটে তিনি তাঁর সাথে তাঁর প্রিয়তম নিকট আত্নীয়দের নিয়ে আসতে সাহস করতে পারতেন না, খৃষ্টানগন পরস্পরকে লা’নত দেয়ার মুখোমুখি দ্বন্দ্ব থেকে পিছু হটে গেল,এবং এর পরিবতে জিজিয়া কর দিতে রাজী হলো।
জামাখশারী তার রচিত ‘আল-কাশশাফ’ গ্রন্থে বলেনঃ(যখন এই আয়াতটি নাজিল হয়) তখন মহানবী(সাঃ) খৃষ্টানদের কাছে জানতে চাইলেন তারা মিথ্যাবাদীদের উপর লা’নত বষন করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রাথনা জানাতে একটি মুবাহেলা করতে রাজি আছে কিনা।সেই রাতেই খৃষ্টানগন তাদের নেতা নিজেদের মধ্যে একটি আলোচনা সভায় মিলিত হলো।সেই সভায় তাদের নেতা আব্দুল মসিহ তার মতামত ব্যাক্ত করেছিল এইভাবেঃ “আল্লাহর কসম,হে খৃষ্টানগন!তোমরা জানো যে,মুহাম্মাদ আল্লহর প্রেরিত নবী যিনি তোমাদের কাছে তোমাসের প্রতিপালক প্রভুর নিকট হতে চুড়ান্ত পয়গাম নিয়ে এসেছেন।আল্লাহর কসম!কোন জাতিই আজ পযন্ত কখনো একজন নবীর সাথে লা’নত দেয়ার চ্যালেঞ্জ করতে সাহস করেনি,কেননা তাতে তাদের উপর দুদশা নিপতিত হতো।লা’নত দ্বারা শুধুমাত্র তারাই ধংস হয়ে যাবে না বরং তাদের সম্প্রদায়ও ধ্বংশ হবে”।
এর মাধ্যমে তিনি একথা বুঝাতে চাইলেন যে, তাঁর সত্যকে চ্যালেঞ্জ করার ও তার ফলে ধ্বংশ হয়ে যাওয়ার পরিবতে বরং রাসুল(সাঃ)এর সাথে একটি আপোষ মীমাংসায় উপনীত হওয়া অধিকতর মঙ্গলজনক।খৃষ্টান নেতা আব্দুল মাসীহ তার দলকে শত্রুতা ও বিবাদ-বিসংবাদ বন্দ্ব করার ও রাসুল (সাঃ)প্রদত্ত শতগুলো মেনে নিয়ে তাদের নিজেদের ধরমকে রক্ষা করার পরামশ দান করলো।“সুতরাং তোমরা যদি(মুখোমুখি হওয়ার জন্য)অবিচল থাকো,তাহলে আমরা সকলে ধ্বংশ হয়ে যাবো।কিন্তু যদি তোমাদের ধরমকে টিকিয়ে রাখতে চাও তাহলে চরম শক্তি পরীক্ষা হতে তোমাদের বিরত থাকা উচিৎ;কাজেই তোমরা যেমন আছো তেমনটি থাকো।অতঃপর তোমরা সেই মানুষটির(মহানবী)সাথে সন্ধ্বি কর এবং তোমাদের দেশে ফিরে যাও”।
জামাখশারী আরো বলেনঃ
“পরের দিন রাসুল(সাঃ) হুসাইনকে কোলে নিয়ে এবং হাসানের হাত ধরে,তাঁর পিছনে পিছনে কন্যা ফাতিমা আর তাঁর পিছনে আলী(আঃ) সেই নিধারিত স্থানে এলেন;আহলে বায়েতের(আঃ)উদ্দেশ্যে তিনি বললেনঃ “যখন আমি আল্লাহর কাছে মোনাজাত করব,তখন তোমরা সকলেই বলবেঃ আমীন”।
মহানবী(সাঃ)কে এবং তাঁর পরিবারকে দেখে নাজরানের প্রধান ধ্রম যাজক খৃষ্টান্দের সম্বোধন করে বললেনঃ
“হে খৃষ্টানগন,আমি এমন সব চেহারা দেখতে পাচ্ছি যে,যদি আল্লাহ চান তো তাদের খাতিরে পরবতমালা তার নিজ স্থান থেকে সরিয়ে দেবেন।মুবাহেলার জন্য তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করোনা,কেননা যদি তোমরা তাই করো তাহলে তোমরা সকলে ধ্বংশ হয়ে যাবে এবং পুনরুথান দিবস পযন্ত আর কোন খৃষ্টান পৃথিবীর বুকে থাকবে না”।তাঁর উপদেশের মরম বুঝে খৃষ্টানগন রাসুল(সাঃ)কে বললোঃ”হে আবুল কাসিম,আমরা আপনার সাথে মুবাহেলা না করার সিধ্বান্ত নিয়েছি।আপনি আপনার ধমের পথে চলুন এবং আমরা আমাদের ধমের পথে চলি”।
রাসুল(সাঃ) তাদের বললেনঃ “যদি তোমরা মুবাহেলা করতে অস্বিকার করো তাহলে তোমরা ইসলাম কবুল করো;অতঃপর মুসলমানগন যা পায় তোমরাও তাই পাবে,আর তোমরাও তাই দিবে মুসলমানগন যা দেয়”।
খৃষ্টানগন আরবদের সাথে মুবাহেলার ব্যাপারে তাদের অনাগ্রহের কথা জানালো।অতঃপর শান্তির জন্য ও বলপ্রয়োগের দরুন নিজ ধম ত্যাগ না করার স্বাধীনতার জন্য তারা সন্ধির প্রস্তাব দিল।বিনিময়ে তারা মুসলমানদের ২০০০ মুদ্রা বাষিক জিজিয়া কর প্রদান করতে সম্মত হলো,যার ১০০০ হাজার মুদ্রা সফর মাসে এবং বাকী ১০০০ রজব মাসে পরিশোধ করবে।এছাড়াও এই সন্ধির আওতায় তারা ৩০টি লৌহ বরম প্রদান করবে।
এই প্রস্তাব গ্রহন করে রাসুল(সাঃ) মন্তব্য করলেনঃ
“সেই একক সত্বার কসম যার হাতে রয়েছে আমার প্রান।নাজরানের লোকদের উপর মৃত্যু আবিভুত হয়াছিল।(মুবাহেলার চ্যালেঞ্জ যদি তারা গ্রহনের ধৃষ্টতা প্রদরশন করতো তাহলে)তাদেরকে বানর ও শুকরে রুপান্তরিত করা হতো এবং(নাজরান) উপত্যকাকে জ্বালিয়ে দেয়া হতো। আল্লাহ নাজরানকে তার লোকজনসহ ধ্বংশ করে ফেলতেন।গাছের মাথায় বসে থাকা পাখিও নিস্তার পেতো না এবং বছর শেষ হওয়ার আগেই খৃষ্টানগন সকলেই মৃত্যুমুখে পতিত হতো”( ইবনে সাবাক্ক মালেকী,আল০ফুসুল আল-মুহিম্মা,গ্রন্থকারের মুখবন্দ)।
জামাখশারী আয়াতে মুবাহেলার তাফসীর সম্পকে আরো গভীরে অগ্রসর হন।এব্যাপারে তিনি আহলে বায়েতের মযাদার উপর জোর গুরুত্ব উপস্থাপন করার জন্য রাসুল(সাঃ)এর স্ত্রী হজরত আয়েশা থেকে নীচের বননা উদ্বৃত করেছেনঃ “তিনি তাদের কাছে ‘নফস’(অথাত নিজদিগকে) শব্দটিকে উল্লেখ করার আগে আহলে বায়েতের কথা উল্লেখ করেছেন;ইহা করেছিলেন আহলে বায়েতের মযাদা ও আল্লাহর কাছে তাঁদের নৈকটের অবস্থানকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে,এবং ‘নফস’-এর (নিজদিগের) কাছে তাঁদের অগ্রাধিকারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার জন্য।‘আহলে কিসা’র
(আহলে কিসা একটি পরিভাষা।এর দ্বারা তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যাঁরা রাসুলুল্লাহ(সাঃ)এর চাদরের নীচে তখন একত্রিত যখন তাঁদের উদ্দেশ্য করে আয়াতে তাতহির নাজিল হয়েছিল।তাঁরা হলেনঃআলী,ফাতিমা,হাসান এবং হুসাইন।)মযাদা সম্পকে এর চেয়ে অধিকতর জোরালো প্রমান আর নেই।এটা রাসুল(সাঃ)এর নবুয়তি মিশনের সত্যতার প্রমান।কেননা কেউ যত পক্ষপাতদুষ্টই থাকুক না কেন খৃষ্টানগন মুবাহেলার চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে সাহস দেখিয়ে ছিল এটা কেউ কখনই বননা করেনি”(জামাখশারী,তাফসীর আল কাশশাফ,সুরা আলে ইম্রানঃ৬১ এর তাফসীর)।

ফখরুদ্দিন রাজী তাঁর ‘তাফসীর আল কাবির’ কেতাবে অভিন্ন বননা উদ্বৃত করেছেন,এবং জামাখশারীর উল্লেখিত বননা উদ্বৃত করার পর বলেছেনঃ “তোমরা মনে রেখো,(কুরানের)সকল তাফসীরকারকগন এবং (হাদিছের) সকল বননাকারীগন এই বননার প্রামানিকতা সম্পকে সরবসম্মতভাবে একমত পোষন করেছেন”(তাফসীর আল কাশশাফ,সুরা আলে ইম্রানের তাফসীর।মুযাহিদ ও কুলাইবির সনদের ভিত্তিতে তাফসীরে সালাবী-তেও এই একই বিষয় বনিত হয়েছে)।
আধুনিক কালের প্রখ্যাত তাফসীরকার আল্লামা মুহাম্মাদ হোসাইন তাবাতাবাই তার রচিত আল-কুরানের অমর তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীর আল-মিজানে’ এই আয়াত-‘উহারা তারা আল্লাহ যাদের মাধ্যমে তাদের শত্রদের উপর লা’নত দিয়েছেন’-এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেনঃরাসুলুল্লাহ(সাঃ),আলী,ফাতিমা,হাসান এবং হুসাইন ছাড়া এই ব্যাক্তিবগ আর কেউ নন।তিনি আরও বলেন,’….সকল হাদিছ বননাকারীগন এই হাদিছ বননা করেছেন এবং সকল হাদিছ সংগ্রাহক তাদের সংকলনে ইহা লিপিবদ্ব করেছেন,যেমন-মুসলিম কতৃক তার সহীহ-তে ও তিরমিজি কতৃক তার সহীহ-তে।ঐতিহাসিকগনও যথারীতি এই ঘটনাকে নিশ্চিত করেছেন।
সুচনালগ্ন থেকে আজ পযন্ত সকল তাফসীরকার এবং তাবারী,আবুল ফিদা,ইবনে কাছির,সয়্যুতি প্রমুখের মত প্রখ্যাত হাদিছবেত্তা ও ঐতিহাসিকগন কোনরুপ আপত্তি বা সন্দেহ ছাড়াই ইহা উল্লেখ করেছেন।
এভাবে উক্ত আলোচনার আলোকে ইহা সুষ্পষ্ট যে,সকল তাফসীরকার সবসম্মতভাবে আহলে বায়েত হিসেবে আলী,ফাতিমা,হাসান ও হুসাইনকে নিদেশ করেছেন।
মুবাহেলার আয়াতে তাঁদেরকে উল্লেখ করার ফলে তাঁরা আল্লাহর সাহায্য প্রাথনার উসিলায় পরিনত হয়েছেন;ইহা(এই আয়াতে তাঁদের উল্লেখ)তাঁদের সুউচ্চ ও পবিত্র মানসিক ও নৈ্তিক গুনাবলীর একটি সুস্পষ্ট নিদেশক।আর এই ঘটনা তথা মুবাহেলার ময়দানে এই সকল পুতঃপবিত্র ব্যাক্তিবগকে আনয়নের জন্য আল্লাহ কতৃক তাঁর রাসুল(সাঃ)কে প্রদত্ত নিদেশনা তাঁদের(আহলে বায়েতের)পুতঃপবিত্র থাকার আরও একটি সুস্পষ্ট প্রমান হয়ে দাড়ায়।আর শত্রদের উপর আল্লাহর লা’নত প্রাথনা করার জন্য রাসুলের(সাঃ) এই চ্যালেঞ্জ আল্লাহর কাছে তাঁরা কত সুউচ্চ মযাদার অধিকারী তা প্রকাশ করে দেয়।
যেহেতু দ্বন্দ্ব ছিল সত্য এবং মিথ্যা এ দুটো সরাসরি বিপরীতমুখী স্রোত ধারার মধ্যে,সেহেতু ইসলামের সমগ্র অবকাঠামো যাদের উপর দাড়িয়েছিল এরুপ সরবোত্তম ব্যাক্তিবরগের মাধ্যমে ধরম বিশ্বাসের উপস্থাপনই ছিল সেই সময়ের পরিস্থিতির দাবী।মুবাহেলায় মহানবী(সাঃ)এর সঙ্গী হওয়ার মত আহলে বায়েত ছাড়া এমন যোগ্যতার অধিকারী আর কেউ ছিল না যাদের উপর ইসলামের ভাগ্য নিরভর করা সম্ভব ছিল।তাঁরা ছিলেন আহলে বায়েত হেদায়াত ও সৎকরমের আলোকবরতিকা।সবশক্তিমান আল্লাহ নিজে আল-কুরানে তাঁদেরকে পবিত্রতার আধার হিসেবে মযাদা প্রদান করেছেন।ইহা তাঁদেরকে পুনরায় সকল দৃষ্টিকোন হতেই পরিনত করেছিল সবশ্রেষ্ট আকষনীয় ব্যাক্তিত্বে।তাঁরা ছিলেন ইসলামের মহাসত্যের হুজ্জাত(অকাট্য প্রমান)।
প্রকৃ্তপক্ষে,মহাজ্ঞানী আল্লাহ মুসলমানদেরকে অঙ্গুলি নিদেশ করেছেন যে,খোদায়ী মিশনের ধারাবাহিকতা খাতামুন নাবিয়ীনের পর থেমে যাবে না,বরং তাঁর মাসুম(নিষ্পাপ) বংশধরদের মাধ্যমে উহা অব্যাহত থাকবে।তাঁদের কোনও প্রাথনা নামঞ্জুর থাকবে না এবং তাঁদের কোনও কথা বিভ্রান্ত হবে না।তাঁদের কথায় পরবত পযন্ত ঞ্ছানান্তর হতে পারে,মুবাহেলায় খৃষ্টানরা যা অনুধাবন করতে পেরেছিল।
এসব নিষ্কলুষ(মাসুম)ব্যাক্তিবগের ব্যাপারে শত শত বছরের মুনাফেকীর ফসল হিসেবে উম্মাহর কিছু অংশের মধ্যে ভ্রান্ত ধারনা সুদীরঘকাল ধরে প্রতিষ্টিত থেকে যায়।অসংখ্য সাধারন মানুষ এর দ্বারা বিভ্রান্ত হয়।তবে,এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য শুধুমাত্র এই আয়াতটিই যথেষ্ট।কুয়াশা কেটে যাওয়ার সাথে সাথে আহলে বায়েত হতে প্রাপ্ত সত্যের ছবি আরও সুস্পষ্ট রুপে প্রতিভাত হতে থাকবে;সুস্পষ্ট হতে থাকবে তাঁদের প্রদশিত শিক্ষা,চিন্তা-চেতনা,ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন,বননা-বিবরন,ফেকাহ….. ইত্যাদি রাসুলুল্লাহ(সাঃ)এর পয়গাম ও আহলে বায়েত কতৃক একনিষ্টভাবে সংরক্ষিত ও পৌছে দেয়া ইসলামের পুতঃপবিত্র নিরভেজাল অমীয়সুধা।তাঁদের দ্বারা পাক কুরান ইসলামের শত্রুদের চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল এবং সরবকালের জন্য স্পস্টায়ন করেছিল যে,যারা তাঁদেরকে প্রত্যাখান করে তারা মিথ্যাবাদী ছাড়া আর কিছুই নয়,তারা লা’নত ও শাস্তি পাওয়ার যোগ্যঃ’….. আর মিথ্যাবাদীদের উপরে আল্লাহর লা’নত দেই’।
তাঁদের(আহলে বায়েত) চিরন্তন সত্যতা ও অনমনীয় দৃঢ়তা/ ন্যায়পরায়নতা ব্যাতিরেকে আল্লাহতায়ালা তাঁদেরকে এমন উচ্চমযাদা দান করতেন না,আর কুরান পাকেও তাঁদের সম্পকে এমন উচ্চমযাদাপুন ভাষ্য উচ্চারিত হতো না।
এই আয়াতে ভাষা সম্পকীয় কয়েকটি বিষয় রয়েছে যা পযবেক্ষনের জন্য মনোযোগের দাবী রাখে।এই দল(আলী,ফাতিমা,হাসান ও হুসাইন) বিশেষ একটি ‘আমাদের নারীদেরকে’ আর ‘আমাদের নিজদিগকে’ শব্দগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় নবীজী শব্দটি এখানে করতা(একটি কারক সম্বন্ধীয় পদ)হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে।
রাসুল(সাঃ) যদি ফাতিমাকে(আঃ) না নিতেন তাহলে লোকেরা ‘আমাদের নারীদেরকে’ বলতে উম্মুল মোমেনিনদেরকে ভাবতো,’আমাদের সন্তান্দেরকে’ বলতে ফাতিমা(আঃ)কে উল্লেখ করতো যদিও তিনি মাত্র একজন মহিলা এবং ‘আমাদের নিজদিগকে’ বলতে কেবলমাত্র তাঁর পবিত্র সত্বাকে নিদেশ করতো।
কিন্তু কেবলমাত্র এই ৪জনকে নিদিষ্ট করে সাথে নিয়ে,এবং এর বাহিরে আর অন্য কাউকে না নিয়ে,মহানবী(সাঃ) মুসলমানদের দেখাচ্ছিলেন যে,নারীদের জন্য সবোত্তম আদশ ফাতিমা(আঃ),বালকদের জন্য হাসান ও হুসাইন(আঃ);কুরানের বাক্য প্রকাশের ধারা অনুসারে আরও সূক্ষভাবে আলী(আঃ)এর জন্য ‘আমাদের নিজদিগকে’ শব্দটিকে ব্যাবহার করা হয়েছে যা দ্বারা মহানবী(সাঃ)এর সাথে তাঁর ঘনিষ্ট নৈকট্যের প্রতি মনোযোগ আকষন করা হয়েছে এবং উত্তরাধিকারের প্রশ্নটির সমাধান চিরতরে করে দেয়া হয়েছে।
(মুলঃআল বালাঘ ফাউন্ডেশন,অনুবাদঃমতিউর রহমান)
يقول : انت سيد ابن سيد, و انت امام ابن امام, و انت حجة ابن حجة, و انت ابو حجج تسعة, تاسعهم قائمهم
“সালমান ফারসী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন ঃ এমতবস্থায় রাসূল (সা.) এর নিকট উপস্থিত হলাম যে যখন হোসাইন তাঁর ঊরুর উপর ছিল এবং তিনি তার চোখ ও উষ্ঠতে চুম্বন দিচ্ছেন আর বলছেন যে, তুমি সাইয়্যেদের সন্তান সাইয়্যেদ এবং তুমি ইমামের সন্তান ইমাম, তুমি ঐশী প্রতিনিধির সন্তান ঐশী প্রতিনিধি। আর তুমি নয় জন ঐশী প্রতিনিধির বাবা, যাদের নবম ব্যক্তি হলেন কায়েম (ইমাম মাহদী)।” (ইয়া নাবী উল্ মুয়াদ্দাহ্ (সুলাইমান বিন ইব্রাহীম কান্দুযি) ৭ম মুদ্রণ, ৩০৮ নং পৃষ্ঠা।)

‘ইকমালুদ্দিন’ গ্রন্থে একটি হাদিস জাবির আল-জু’ফির সুত্রে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্নিত হয়েছে যেঃ তিনি বললেন,”আমি বললামঃ হে রাসুলাল্লাহ(সাঃ),আমরা আল্লাহকে জেনেছি এবং তার রাসুলকে জেনেছি,তাহলে ‘উলুল আমর’(কর্তৃত্বের দায়িত্বপ্রাপ্তরা) কারা-যাদের আনুগত্য করাকে আপনার আনুগত্যের মতোই বাধ্যতামুলক বলে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন? তখন রাসুল্লালাহ(সাঃ) বললেনঃ ‘হে জাবির,তারা আমার পরে আমার প্রতিনিধিগন এবং মুসলমানদের ইমামগন;এদের মধ্যে ১ম জন হলো আলী ইবনে আবি তালিব,এরপর(ইমাম) হাসান এবং (ইমাম) হুসাইন;এরপর আলী ইবনে হুসাইন;তারপর মুহাম্মাদ ইবনে আলী- তাওরাত গ্রন্থে সে আল-বাক্কির নামে পরিচিত এবং তাকে তুমি দেখবে।হে জাবির, যখন তোমার সাথে তার দেখা হবে,তাকে আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবে।এরপর আস-সাদিক্ক-জাফর ইবনে মুহাম্মাদ,এরপর মুসা ইবনে জাফর,এরপর আলী ইবনে মুসা,এরপর মুহাম্মাদ ইবনে আলী,এরপর আলী ইবনে মুহাম্মাদ,এরপর হাসান ইবনে আলী এবং তারপর আল-ক্কায়েম-যার নাম ও উপনাম আমারই নাম।সে পৃথিবীতে আল্লাহর প্রমান(দলীল) এবং তার দাসদের মধ্যে যে বাকী আছে।সে(ইমাম) হাসান ইবনে আলী(আল-আসকারী)-এর সন্তান।এ হলো সেই ব্যক্তি যার হাতে সুমহান ও চিরস্মরনীয় আল্লাহ পৃথিবীর পুর্ব ও পশ্চিমগুলোর বিজয় আনবেন এবং এ হলো সেই ব্যক্তি যে তার অনুসারী(শিয়া) ও যারা তাকে ভালবাসবে তাদের নিকট থেকে অদৃশ্যে থাকবে।এ সময় তার ইমামতের(কর্তৃত্বের) বিষয়টি কারো কথা দিয়ে প্রমানিত হবে না,যতক্ষন না আল্লাহ তার ঈমানকে যাচাই করে নিয়েছেন’।
জাবির বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলামঃ ‘হে রাসুলাল্লাহ(সাঃ),তার অদৃশ্যকালে কি তার অনুসারিরা তার থেকে উপকৃত হতে পারবে?’তিনি(সাঃ) বললেনঃ ‘হ্যা,যিনি আমাকে নবী করে পাঠিয়েছেন তার শপথ,তারা তার নুর থেকে আলোকিত হবে এবং নিশ্চয়ই তার অদৃশ্যকালে তার বেলায়াত(কর্তৃত্ব) থেকে তারা উপকৃত হবে,ঠিক যেভাবে সুর্য মেঘে ঢাকা থাকলেও মানুষ তার কিরন থেকে উপকৃত হয়......’।“(ইকমালুদ্দিন,খন্ড-১,পৃষ্টা-২৫৩ এবং প্রায় একই অর্থে ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাহ,পৃষ্টা-১১৭)।

ইমাম আবুল হাসান আলী ইবনে মূসা
আর-রেযা (আ.) থেকে বর্ণিত বিষয়সমূহ
ইস্তিফা (রাসুলের সাঃ উত্তরসুরি নির্বাচিতকরণ) এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইমাম (আ.)-এর বক্তব্য
(হাদিস গ্রন্থঃ তুহাফুল উকুল,)
ইমাম রেযা (আ.) যখন মামুনের জলসায় উপস্থিত হলেন এবং ইরাক ও খোরাসানের একদল পন্ডিত সে জলসায় বসা ছিলেন, মামুন উপস্থিতবৃন্দকে বললেন : আমাকে এ আয়াতের অর্থ সম্পর্কে অবগত করুন : ‘অতঃপর আমরা কিতাবের উত্তরাধিকার করেছি তাদেরকে যাদেরকে নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে বেছে নিয়েছি।’ পন্ডিতবর্গ সকলেই বললেন : ‘এখানে বাছাইকৃত বান্দাদের বলতে আল্লাহর উদ্দেশ্য সকল উম্মত।’
মামুন ইমাম রেযা (আ.)-কে বললেন : হে আবাল হাসান! আপনি কী বলেন? উত্তরে ইমাম রেযা (আ.) বললেন : যদি উদ্দেশ্য সকল উম্মত হয়ে থাকে তাহলে সকলেরই উচিত বেহেশতে যাওয়া। কারণ, আল্লাহ্ এর পরেই বলেন : ‘তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি জুলুম করে আর কেউ কেউ ন্যায়ানুগ আচরণ করে। আর কেউ কেউ যে কোনো কল্যাণ কাজে অগ্রবর্তী হয় আল্লাহর অনুমতিক্রমে। এটাই হলো সে মহান মর্যাদা।’ অতঃপর তাদের সকলকেই বেহেশতের অধিকারী বলেছেন : ‘আদ্ন বেহেশত যেখানে তারা প্রবেশ করে।’ সুতরাং উত্তরাধিকারিত্ব কেবল পবিত্র আহলে বাইতের জন্য নির্দিষ্ট। অন্যদের নয়। অতঃপর ইমাম রেযা (আ.) বলেন : এরা হলো তাঁরা, আল্লাহ্ স্বীয় কিতাবে যাদের গুণ বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে : ‘আল্লাহ্ তো চান শুধু তোমাদের থেকে সকল পঙ্কিলতা দূর করতে হে আহলে বাইত! এবং তোমাদেরকে পূত- পবিত্র করতে।’ এবং যাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন : ‘নিশ্চয় আমি দু’টি ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি : আল্লাহর কিতাব এবং আমার ইতরাত (আমার আহলে বাইত)। এ দু’টি কখনোই একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না হাউযে কাউসারে আমার সাথে মিলবে। লক্ষ্য করবে কীভাবে তাদের ব্যাপারে আমার স্থলাভিষিক্ত হও। হে লোকসকল! তাদেরকে শেখাতে যেও না। কারণ, তারা তোমাদের চেয়ে বেশি জ্ঞানী।’
পন্ডিতরা বললেন : হে আবাল হাসান! আমাদেরকে বলুন : ইতরাত কি ঐ ‘আল’ নাকি ‘আল’ ব্যতীত অন্য কিছু? ইমাম রেযা (আ.) বলেন : ইতরাত ঐ ‘আল’ই। পন্ডিতবৃন্দ বললেন : কিন্তু স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন : ‘আমার উম্মতের সকলেই আমার আল।’ আর যেহেতু হাদীসটি মুস্তাফিয (তিনের অধিক) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে তাই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য নয়। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, আলে মুহাম্মাদ হলো তাঁরই উম্মত।
ইমাম রেযা (আ.) বললেন : আমাকে বলুন দেখি, সাদাকা (যাকাত ও দান) আলে মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর নিষিদ্ধ নাকি নিষিদ্ধ নয়? তারা বললেন : জি, নিষিদ্ধ।
ইমাম রেযা (আ.) বললেন : সাদাকা কি সকল উম্মতের ওপরে নিষিদ্ধ? তাঁরা বললেন : না। ইমাম বললেন : এটাই হলো উম্মত ও আলের মধ্যে পার্থক্য। ধিক্ আপনাদের! আপনারা কোথায় সরে গেছেন? আপনারা কি কোরআনের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছেন নাকি আপনারা অবিবেচক দল? আপনারা কি জানেন না যে, রেওয়ায়েত বাহ্যত নির্বাচিত পথপ্রাপ্তদের সম্পর্কে, অন্যদের সম্পর্কে নয়? তাঁরা বললেন : হে আবাল হাসান! কিসের ভিত্তিতে বলছেন? ইমাম বললেন : আল্লাহর বাণী থেকে। ইরশাদ হচ্ছে : ‘আর প্রেরণ করেছি নূহ ও ইবরাহীমকে এবং তাঁদের বংশে দিয়েছি নবুওয়াত ও কিতাবকে, তাদের কিছু কিছু পথপ্রাপ্ত হয়েছে আর তাদের অনেকেই অনাচারী।’ সুতরাং নবুওয়াত ও কিতাবের উত্তরাধিকার থেকেছে পথপ্রাপ্তদের মধ্যেই, অনাচারীদের মধ্যে নয়। আপনারা কি জানেন না যে, নূহ তাঁর প্রতিপালকের কাছে আবেদন করলেন এবং বললেন : ‘নিশ্চয় আমার পুত্র আমার আহলভুক্ত এবং নিশ্চয় আপনার প্রতিশ্রুতি সত্য।’ একথা এজন্য ছিল যে, আল্লাহ্ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁকে তাঁর পরিবারবর্গসহ ডুবে যাওয়া থেকে নাজাত দান করবেন। তখন তাঁর প্রতিপালক মহামহিম আল্লাহ্ বলেন : ‘নিশ্চয় সে তোমার আহলভুক্ত নয়। নিশ্চয় সে অসঙ্গত কর্ম (মন্দকর্মের প্রতিকৃতি)। অতএব, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সে ব্যাপারে আমার কাছে আবেদন করবে না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’ (সূরা হূদ : ৪৬)
মামুন জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহ্ কি ইতরাতকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন? ইমাম রেযা (আ.) বললেন : নিশ্চয় মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ্ ইতরাতকে অন্যদের ওপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন স্বীয় সৃদৃঢ় কিতাবে। মামুন বললেন : এটা আল্লাহর কিতাবের কোথায়? ইমাম রেযা (আ.) বললেন : আল্লাহর এই বাণীতে : ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ আদম, নূহ, আলে ইবরাহীম ও আলে ইমরানকে জগৎবাসীর ওপরে নির্বাচিত করেছেন। তারা এমন এক বংশধর যারা একে অপরের থেকে।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩৩-৩৪)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন : ‘নাকি তারা হিংসা করে মানুষের সাথে আল্লাহ্ তাঁদের স্বীয় করুণা থেকে যা দান করেছেন সেজন্য। অবশ্য আলে ইবরাহীমকে দান করেছি কিতাব ও প্রজ্ঞা এবং দান করেছি মহান রাজত্ব।’ (সূরা নিসা : ৫৪) অতঃপর অন্যান্য মুমিনের উদ্দেশে কথা বলেন এবং ইরশাদ করেন : ‘হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে উলুল আমরের।’ (সূরা নিসা : ৫৯) অর্থাৎ যাদেরকে কিতাব ও প্রজ্ঞার উত্তরাধিকারী করেছেন এবং যারা অন্যদের হিংসার মুখে পড়েছেন। আল্লাহর এ বাণীর প্রেক্ষিতে : ‘তবে কি তারা হিংসা করে মানুষের সাথে, আল্লাহ্ আপন করুণা থেকে তাদের যা দান করেছেন সেজন্য। অবশ্যই আমি আলে ইবরাহীমকে দান করেছি কিতাব ও প্রজ্ঞা এবং দান করেছি মহান রাজত্ব।’ (সূরা নিসা : ৫৪) এখানে উদ্দেশ্য, মনোনীত পূত-পবিত্রদের আনুগত্যের অধিকার। আর এখানে ‘মুল্ক’ (রাজত্ব) বলতে আনুগত্যের অধিকার বুঝানো হয়েছে।
মজলিসের পন্ডিতবৃন্দ বললেন : ‘আল্লাহ্ কি ইসতিফা (বাছাইকৃত, মনোনীত, নির্বাচিত)-কে কোরআনে ব্যাখ্যা করেছেন?
ইমাম রেযা (আ.) বললেন : ‘ইসতিফা’কে কোরআনে (যে সকল আয়াতে) বাতেনী অর্থে (এসেছে) ছাড়া যাহেরীভাবেও ১২টি স্থানে ব্যাখ্যা করেছেন :
প্রথমত, আল্লাহর এ বাণী ‘এবং সতর্ক করুন নিকটতম আত্মীয়বর্গকে এবং আপনার নিষ্ঠাবান জ্ঞাতিগোষ্ঠীকে’ উবাই ইবনে কাব এর পঠনে (সংকলিত কোরআনে) এরূপ রয়েছে। আর আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদের মুসহাফেও তা লিপিবদ্ধ রয়েছে। (অতঃপর যখন খলিফা ওসমান, যায়েদ বিন সাবিতকে কোরআন সংকলনের নির্দেশ দেন তখন এ আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অংশটিকে কোরআন থেকে বাদ দেন)। এ হলো উচ্চস্থান মহান করুণা এবং উন্নত মর্যাদা যখন আল্লাহ্ এ শব্দটি দ্বারা ‘আল’-কে উদ্দেশ্য করেছেন। এটা হলো একটি।
ইসতিফা সম্পর্কে দ্বিতীয় আয়াত হলোআল্লাহর এ বাণী ‘হে আহলে বাইত! আল্লাহ্ তো চান শুধু তোমাদের থেকে সকল অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূত-পবিত্র রাখতে।’ (সূরা আহযাব : ৩৩) এটা এমন এক মর্যাদা যা কোনো অস্বীকারকারীই অস্বীকার করতে পারে না। কারণ, এটা স্পষ্ট মর্যাদা।
তৃতীয় আয়াতটি হলো যখন আল্লাহ্ পূত-পবিত্রদেরকে তাঁর সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক করেছেন। মোবাহিলার আয়াতে স্বীয় নবীকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন : ‘বলুন (হে মুহাম্মাদ!) এস, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদেরকে ও তোমাদের পুত্রদেরকে এবং আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের নিজেদেরকে। তারপর (আল্লাহর কাছে) অভিশাপ কামনা করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’ (সূরা আলে ইমরান : ৬১) তখন নবী (সা.) আলী, হাসান, হুসাইন ও ফাতিমা (আ.)-কে নিয়ে বের হলেন এবং তাঁদেরকে নিজের সঙ্গী করলেন। আপনারা কি জানেন ‘আমাদের নিজেদের’ ও ‘তোমাদের নিজেদের’ এর অর্থ কী? পন্ডিতবৃন্দ বললেন : ‘এর অর্থ স্বয়ং মহানবী (সা.)।’ ইমাম রেযা (আ.) বললেন : ভুল বলেছেন। নিশ্চয় একথার উদ্দেশ্য আলী (আ.)। এর একটি প্রমাণ হলো নবী (সা.)-এর বক্তব্য যখন তিনি বললেন : ‘বনি ওলিয়াহ (ইয়েমেনের কিন্দাহর একটি গোত্র)-কে অবশ্যই বিরত হতে হবে। নতুবা আমি এমন একজন লোককে তাদের উদ্দেশ্যে পাঠাব যে হবে স্বয়ং আমার মতো।’ তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আলী (আ.)। এটা এমন এক বৈশিষ্ট্য যে ব্যাপারে কেউই আলীর অগ্রগামী হতে পারেনি। আর এমন এক গুণ কোনো মানুষই যাতে পৌঁছতে পারেনি। আর এমন এক মর্যাদা যে ব্যাপারে কেউই আলীকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। কারণ, আলীকে স্বয়ং নিজের স্থলে দিয়েছেন। এটা হলো তৃতীয়।
চতুর্থটি হলো, সকল লোককে তাঁর মসজিদ থেকে বের করে দিলেন, শুধু ইতরাত ব্যতীত। তারপর লোকেরা যখন এ প্রসঙ্গে কথা বলল এবং আব্বাসও বললেন : ‘হে রাসূলুল্লাহ্! আলীকে ছেড়ে দিলেন আর আমাদেরকে বের করে দিলেন যে?’ তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.)বললেন : ‘আমি তাকে ছেড়ে দেইনি এবং তোমাদেরকে বের করে দেইনি; বরং আল্লাহ্ই তাকে ছেড়ে দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে বের করে দিয়েছেন।’ আর এরই মধ্যে রয়েছে আলী (আ.)-এর ব্যাপারে তাঁর এ কথার ব্যাখ্যা অর্থাৎ ‘আমার নিকট তোমার স্থান মূসার নিকট হারুনের স্থানের ন্যায়।’
পন্ডিতবৃন্দ বললেন : এটা কোরআনের কোথায় আছে? ইমাম রেযা (আ.) বললেন : আমার কাছে এ সম্পর্কে কোরআন (এর আয়াত) রয়েছে এবং তোমাদের জন্য পাঠ করব। তারা বললেন : আনুন। তিনি বললেন : মহামহিম আল্লাহর এ বাণী ‘এবং আমি ওহী করলাম মূসা ও তাঁর ভাইয়ের প্রতি যে তোমরা দু’জন তোমাদের স¤প্রদায়ের জন্য মিশরে বাড়িঘর প্রস্তুত কর এবং আপন আপন ঘরসমূহকে কিবলা বানাও।’ (সূরা ইউনুস : ৮৭) এ আয়াতেই নিহিত রয়েছে মূসার নিকট হারুনের মর্যাদা ও স্থানের ব্যাখ্যা। আর এরই মধ্যে নিহিত রয়েছে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর নিকট আলী (আ.)-এর মর্যাদারও নির্দেশনা। আর এর সাথে প্রকাশ্য প্রমাণ রয়েছে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কথায় যখন তিনি বলেন : ‘নিশ্চয় এটা মসজিদ, সেখানে কোনো জানাবাতগ্রস্ত ও হায়েযগ্রস্ত ব্যক্তির অবস্থান বৈধ নয়, কেবল মুহাম্মাদ ও আলে মুহাম্মাদের জন্য ছাড়া।’ তখন পন্ডিতবৃন্দ উচ্চকিত হয়ে বললেন : এই ব্যাখ্যা এবং এই বয়ান আপনাদের রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর আহলে বাইতের নিকট ছাড়া পাওয়া যায় না।
ইমাম রেযা (আ.) বললেন : কে আছে এর অস্বীকারকারী? যখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন : ‘আমি হলাম জ্ঞানের নগরী আর আলী তার দরজা। যে ব্যক্তি জ্ঞানের নগরীতে প্রবেশ করতে চায় তাকে তার দরজা দিয়ে ঢুকতে হবে।’ আমরা এই যা কিছু ফযল ও মর্যাদা সম্পর্কে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছি এবং অগ্রগামিতা, ইসতিফা ও পবিত্রতা সম্পর্কে যা কিছু বলেছি, তা এমন জিনিস যে শত্রু ব্যতীত কেউ তা অস্বীকার করবে না। আর সেজন্য সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই। এ হলো চতুর্থ।
পঞ্চমটি হলো : মহামহিম আল্লাহর এ বাণী ‘আর নিকটাত্মীয়কে তার অধিকার প্রদান করুন।’ (সূরা বনি ইসরাঈল : ২৬) এটা এমন এক বৈশিষ্ট্য মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ্ যা দ্বারা তাঁদেরকে নির্দিষ্ট করেছেন এবং সকল উম্মতের ওপরে তাঁদেরকে মনোনীত করেছেন। যখন এই আয়াত রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয় তখন তিনি বললেন : ‘ফাতিমাকে আমার কাছে ডেকে আন।’ তাঁকে ডেকে আনা হলো। তখন নবী বললেন : ‘হে ফাতিমা।’ ফাতিমা বললেন : ‘জি, হে রাসূলুল্লাহ্্।’ তখন বললেন : ‘ফাদাক হলো এমন সম্পত্তি যা অশ্বারোহী ও উষ্ট্রারোহী বাহিনীর জোরে হস্তগত হয়নি এবং স্বয়ং আমারই জন্য নির্দিষ্ট মুসলমানদের বিপরীতে। আর আমি তা তোমাকে দিলাম। কেননা, আল্লাহ্ আমাকে তার নির্দেশ দিয়েছেন। তাকে তোমার জন্য, তোমার সন্তানদের জন্য গ্রহণ কর।’ এ হলো পঞ্চম।
ষষ্ঠটি হলো : মহান আল্লাহর বাণী ‘বলুন : আমি তোমাদের থেকে পারিশ্রমিক চাই না, শুধু নিকটাত্মীয়ের ভালোবাসা ব্যতীত।’ (সূরা শূরা : ২৩)
এটা হলো অন্যান্য নবীর ওপর মহানবী (সা.)-এর একটি শ্রেষ্ঠত্ব এবং তাঁর আলের জন্য একটি বৈশিষ্ট্য, অন্যদের বিপরীতে। আর এটা একারণে যে, আল্লাহ্ হযরত নূহ (আ.)-এর স্মৃতিকথা বর্ণনা প্রসঙ্গে নবীদের থেকে তুলে ধরেছেন : ‘হে আমার স¤প্রদায়! এর বিনিময়ে আমি তোমাদের নিকট ধনসম্পদ যাঞ্ছা করি না। আমার পারিশ্রমিক তো আল্লাহরই নিকট এবং মুমিনদিগকে তাড়িয়ে দেওয়া আমার কাজ নয়। তারা নিশ্চিতভাবে তাদের প্রতিপালকের সাক্ষাৎ লাভ করবে। কিন্তু আমি তো দেখছি তোমরা এক অজ্ঞ সম্প্রদায়।’ (সূরা হূদ : ২৯) আর হূদ (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন : ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট পারিশ্রমিক যাঞ্ছা করি না। আমার পারিশ্রমিক আছে তাঁরই নিকট যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি তবুও অনুধাবন করবে না?’ (সূরা হূদ : ৫১)
আর তাঁর নবীকে বলেছেন : ‘বলুন, আমি তোমাদের থেকে কোনো পারিশ্রমিক চাই না, শুধু নিকটাত্মীয়ের ভালোবাসা ছাড়া।’ আল্লাহ্ তাঁদের ভালোবাসাকে ওয়াজিব করেছেন। একারণে যে, তিনি জানতেন, তাঁরা কখনই দীন থেকে প্রত্যাবর্তন করবেন না এবং কখনই পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত হবেন না। আরেকটি কথা হলো এই যে, যদি কেউ কারো অনুরাগী হয় ও তাকে ভালোবাসে, কিন্তু তার পরিবারের কেউ তাকে শত্রু মনে করে তাহলে তার অন্তর তাকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে আর নিখাদ থাকে না। তাই আল্লাহ্ চেয়েছেন রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর অন্তরে মুমিনদের সম্পর্কে যেন কোনো উৎকণ্ঠা না থাকে।
আর এজন্যই নিকটাত্মীয়ের ভালোবাসাকে তাদের ওপর ফরয করেছেন যাতে যে ব্যক্তি তদনুযায়ী আমল করবে এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতকে ভালোবাসবে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাদেরকে ঘৃণা করতে পারবেন না। আর যে তা বর্জন করবে এবং তা গ্রহণ করবে না এবং তাঁর নবীর আহলে বাইতের প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে, তাহলে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর জন্য ন্যায্য হবে তাকে ঘৃণা করা। কারণ, সে আল্লাহর ওয়াজিবকৃত একটি ওয়াজিব বর্জন করেছে। আর কোন্ অনুগ্রহ ও মর্যাদা আছে যা এর চেয়ে অগ্রগণ্য হতে পারে? তাই যখন আল্লাহ্ এ আয়াতকে তাঁর নবী (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ করলেন : ‘বলুন এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কিছুই চাই না, কেবল নিকটাত্মীয়ের ভালোবাসা ব্যতীত’, তখন রাসূলুল্লাহ্্ (সা.) স্বীয় সাহাবীদের মাঝে দাঁড়িয়ে গেলেন, অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি জ্ঞাপন করলেন এবং বললেন : ‘হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের ওপর একটি কাজ ফরয করেছেন। তোমরা কি তা পালন করবে?’ কেউ তাঁর উত্তর দিলেন না। অতঃপর দ্বিতীয় দিনে তিনি তাঁদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং আগের দিনের মতো বললেন। কিন্তু কেউ তাঁকে উত্তর দিলেন না। তিনি তৃতীয় দিনে তাঁদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং বললেন : ‘হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের ওপর একটি কাজ ফরয করেছেন। তোমরা কি তা পালন করবে?’ তখনও কেউ তাঁর উত্তর দিলেন না। অতঃপর তিনি বললেন : ‘এ ফরয কাজটি স্বর্ণ বা রৌপ্য কিংবা খাদ্য বা পানীয় সম্পর্কিত নয়।’ তারা বললেন : ‘তাহলে সেটা আনুন।’ তখন তিনি এ আয়াতটি তাদের সামনে পাঠ করলেন। তারা বললেন : ‘যদি এটাই হয়ে থাকে, তাহলে হ্যাঁ (পালন করব)।’ অথচ তাঁদের অধিকাংশই তাঁদের কথা রাখেননি।
তারপর ইমাম রেযা (আ.) বলেন : আমার পিতা আমার পিতামহ থেকে এবং তিনি স্বীয় পিতৃপুরুষদের মাধ্যমে হুসাইন ইবনে আলী (আ.) থেকে আমার জন্য বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন : ‘মুহাজির ও আনসাররা রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর নিকট এসে বললেন : ‘হে রাসূল! নিশ্চয় আপনার নিজের জন্য এবং যেসব অতিথি আপনার কাছে আসে তাদের জন্য খরচ প্রয়োজন রয়েছে। আমরা আমাদের সমুদয় সম্পদ ও জীবন আপনার হাতে তুলে দিলাম। এ সম্পর্কে আপনি যে নির্দেশই দিবেন তা সঠিক সিদ্ধান্ত ও এজন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত হবেন। আপনি যা চান দান করুন আর যা চান রেখে দিন কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই।’ তখন মহামহিম আল্লাহ্ রুহুল আমীনকে প্রেরণ করলেন এবং বললেন : ‘হে মুহাম্মাদ! ‘বলুন, আমি এর বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক চাই না, শুধু নিকটাত্মীয়ের ভালোবাসা ব্যতীত।’ আমার পরে আমার নিকটাত্মীয়দের কষ্ট দিও না।’ তারপর সবাই বের হয়ে গেল। তখন তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পরস্পরে বলতে লাগলেন : ‘রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আমাদের প্রস্তাবকে গ্রাহ্য করলেন না। আমাদেরকে তাঁর নিকটাত্মীয়ের ভালোবাসতে প্রবৃত্ত না করা ছাড়া। আর এই যে আয়াত তিনি পড়লেন তাঁর মজলিসে, এটা তাঁর নিজেরই উদ্ভাবিত।’ তাঁদের এ বক্তব্য অনেক বড় কথা ছিল। তাই আল্লাহ্ এ আয়াতটি অবতীর্ণ করলেন : ‘তবে কি তারা বলে যে, সে (রাসূল) এটা উদ্ভাবন (রচনা) করেছে। বলুন, যদি আমি এটা উদ্ভাবন করে থাকি তবে তোমরা তো আল্লাহর শাস্তি থেকে আমাকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারবে না। তোমরা যে বিষয়ে আলোচনায় লিপ্ত আছ, সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ সর্বাধিক অবহিত। আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে তিনিই যথেষ্ট এবং তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আহকাফ : ৮)
তখন নবী (সা.) তাঁদের সন্ধানে প্রেরণ করলেন এবং বললেন : ‘নতুন কিছু কি (তোমরা বলেছ)?’ তাঁরা বললেন : ‘জ্বি, আল্লাহর কসম, হে রাসূলুল্লাহ! আমাদের কেউ কেউ অনেক বড় কথা বলেছে যা আমরা অপছন্দ করেছি।’ তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাঁদের জন্য এ আয়াতটি পাঠ করলেন। ফলে তাঁরা কেঁদে ফেললেন এবং অঝরে কাঁদলেন। তখন আল্লাহ্ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন : ‘তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও পাপ মোচন করেন এবং তোমরা যা কর তিনি তা জানেন।’ এ হলো ষষ্ঠ।
আর সপ্তমটি হলো : মহান আল্লাহ্ বলেন : ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর ওপরে দরূদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য দরূদ প্রেরণ কর এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ তাঁদের শত্রুরাও জানে যে, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো তখন বলা হলো : ‘হে রাসূলুল্লাহ্! আপনার ওপর দরূদ প্রেরণ আমরা বুঝলাম। কিন্তু আপনার ওপর সালাওয়াত কিভাবে?’ তিনি বললেন : ‘বলবে : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলি মুহাম্মাদ কামা সল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’
ইমাম রেযা (আ.) বললেন : হে লোকসকল! এ ব্যাপারে তোমাদের মধ্যে কি কোনো মতপার্থক্য রয়েছে? তারা বলল : না। মামুনও বললেন : এ ব্যাপারে কোনো মতপার্থক্য নেই। এটা সর্বসম্মত। আপনাদের কি ‘আল’ সম্পর্কে কোরআনে এর থেকে স্পষ্টতর আর কিছু রয়েছে? ইমাম রেযা (আ.) বললেন : আপনারা আমাকে বলুন দেখি : ‘ইয়াসীন, শপথ জ্ঞানগর্ভ কোরআনের, আপনি অবশ্যই রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত, আপনি সরল পথে প্রতিষ্ঠিত।’ (সূরা ইয়াসীন : ১-৪) এখানে ‘ইয়াসীন’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে? সকল পন্ডিত বললেন : ইয়াসীন হলো মুহাম্মাদ (সা.), এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইমাম রেযা (আ.) বললেন : আল্লাহ্ এর মাধ্যমে মুহাম্মাদ ও আলে মুহাম্মাদকে এক শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, আপনাদের মধ্যে কেউ যতই বুদ্ধি খরচ করুন না কেন এর মর্ম উপলব্ধি করতে পারবেন না। এটা এজন্য যে, আল্লাহ্ কারো ওপর সালাম প্রেরণ করেননি, নবীগণ ব্যতীত। মহামহিম আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন : ‘সমগ্র বিশ্বের মধ্যে নূহের ওপর সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক।’ (সূরা সাফফাত : ৭৯) আরো বলেন : ‘সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক মূসা ও হারুনের ওপর।’ (সূরা সাফফাত : ১২০) আল্লাহ্ কিন্তু বলেননি : ‘সালাম বর্ষিত হোক আলে নূহের ওপর।’ কিংবা বলেননি : ‘সালাম বর্ষিত হোক আলে ইবরাহীমের ওপর’, কিংবা বলেন নি : ‘সালাম বর্ষিত হোক মূসা ও হারুনের আলের ওপর’। তবে আল্লাহ্ বলেছেন : ‘সালাম বর্ষিত হোক আলে ইয়াসীনের ওপর’। (সূরা সাফফাত : ১৩০) অর্থাৎ আলে মুহাম্মদ। মামুন বললেন : আমি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি যে, এই ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ নবুওয়াতের খনির মধ্যেই নিহিত। এ হলো সপ্তম।
অষ্টমটি হলো আল্লাহ্ বলেন : ‘আর জেনে রাখ, তোমরা যা গনীমত অর্জন করবে তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর, রাসূলের এবং নিকটাত্মীয়ের।’ (সূরা আনফাল : ৪১) এখানে নিকটাত্মীয়ের অংশকে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর অংশের সাথে উল্লেখ করেছেন। এটাই হলো আল ও উম্মতের মাঝে পার্থক্য। কারণ, আল্লাহ্ তাঁদেরকে এক স্থানে নির্ধারণ করেছেন আর সকল উম্মতকে নির্ধারণ করেছেন তা থেকে নিম্নতর স্থানে। আর আলের জন্য সে জিনিসই পছন্দ করেছেন যা নিজের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাঁদেরকে নির্বাচিত করেছেন। অতঃপর নিজেকে দিয়ে শুরু করেছেন, তারপর স্বীয় রাসূলকে দ্বিতীয় স্থানে এনেছেন, তারপর নিকটাত্মীয়কে যা কিছু ফাই (শত্রুর থেকে বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ), গনীমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) ইত্যাদি থেকে আল্লাহ্ নিজের জন্য পছন্দ করেছেন, তা তাঁদের জন্যও পছন্দ করেছেন ও বলেছেন (আর তাঁর কথা সত্য) : ‘জেনে রাখ, তোমরা যা গনীমত অর্জন করবে তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর, রাসূলের এবং নিকটাত্মীয়ের।’ এটা হলো তাঁদের জন্য জোরালো গুরুত্বারোপ ও স্থির নির্দেশ, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত, আল্লাহর সবাক কিতাবের মধ্যে যে কিতাবের মধ্যে বাতিলের প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই, না তার সামনে থেকে, না তার পেছন থেকে এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে প্রজ্ঞাবান প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে। তবে, এই আয়াতের বাকি অংশে যে বলেছেন, ইয়াতীম ও মিসকীনদেরও অংশ রয়েছে (এটা সাময়িক), কারণ, যখন ইয়াতিম সাবালক হয় তখন গনীমতের ব্যয় থেকে বাইরে চলে যায় এবং কোনো প্রাপ্য থাকে না। তদ্রুপ মিসকীনও যখন সামর্থ্যবান হয়ে যায়, তখন আর গনীমতের কোনো প্রাপ্য পায় না, তা থেকে গ্রহণ করা বৈধ থাকে না। আর নিকটাত্মীয়ের অংশ কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকে, সামর্থ্যবান থাকুক আর দরিদ্র থাকুক। কারণ, নিকটাত্মীয়রা ব্যতীত কেউ নেই যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের অংশ গ্রহণ করতে পারে। আল্লাহ্ নিজের জন্য তা থেকে একটি ভাগ বরাদ্দ রেখেছেন এবং তাঁর রাসূলের জন্য এক ভাগ। আর যা কিছু নিজের জন্য ও তাঁর রাসূলের জন্য পছন্দ করেছেন, তাদের জন্যও তা পছন্দ করেছেন। তদ্রুপ ফাই (শত্রুর থেকে বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ) থেকে যা কিছু নিজের জন্য ও তাঁর রাসূলের জন্য পছন্দ করেছেন, নিকটাত্মীয়ের জন্যও তা পছন্দ করেছেন। (সূরা হাশর : ৭) যেমনভাবে গনীমতের বেলায় তাদের জন্য অনুমোদন করেছেন। নিজের দ্বারা শুরু করেছেন, তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এবং তারপর নিকটাত্মীয়। আর তাঁদের ভাগকে নিজের ভাগের ও স্বীয় রাসূলের ভাগের সাথেই যুক্ত করেছেন। মহান আল্লাহর আনুগত্যের বেলায়ও ঠিক এরূপ।
ইরশাদ হচ্ছে : ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে উলিল আমরের।’ (সূরা নিসা : ৫৯) এখানেও নিজেকে দিয়ে শুরু করেছেন। অতঃপর তাঁর রাসূলকে এবং তারপর তাঁর আহলে বাইতকে। বেলায়াতের আয়াতের ক্ষেত্রেও একই কথা। ইরশাদ হচ্ছে : ‘তোমাদের অভিভাবক তো আল্লাহ্, তাঁর রাসূল এবং মুমিনগণ।’ (সূরা মায়িদা : ৫৫) এখানে তাঁদের বেলায়াতকে রাসূলের বেলায়াতের সহযোগে তাঁর নিজের বেলায়াতের সাথে যুক্ত করেছেন। যেমনভাবে নিজের অংশকে রাসূলের অংশের সহযোগে তাঁদের অংশসমূহের সাথে যুক্ত করেছেন, গনীমতের ক্ষেত্রে ও ফাই-এর ক্ষেত্রে। কাজেই বরকতময় মহান আল্লাহ্, তাঁর নেয়ামত এ আহলে বাইতের ওপর কতই না মহান! আর যখন সাদাকার প্রসঙ্গ আসল তখন তিনি যাঁর স্মরণ মহীয়ান নিজেকে যেমন তা থেকে মুক্ত ঘোষণা করলেন, তেমনি তাঁর রাসূল এবং তাঁর আহলে বাইতকেও তা থেকে মুক্ত ঘোষণা করলেন। ইরশাদ হচ্ছে : সাদাকা তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। এখানে কি কোথাও পাবেন যে, তাঁর নিজের জন্য কোনো ভাগ বরাদ্দ রেখেছেন কিংবা তাঁর রাসূলের কিংবা নিকটাত্মীয়ের জন্য? কারণ, যেহেতু নিকটাত্মীয়কে সাদাকা থেকে পবিত্র জেনেছেন, নিজেকেও পবিত্র জেনেছেন, তাঁর রাসূলকেও পবিত্র জেনেছেন এবং আহলে বাইতকেও পবিত্র জেনেছেন? না, বরং সাদাকা তাঁদের জন্য হারাম করেছেন। কারণ, সাদাকা মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের জন্য হারাম। (কেননা,) তা জনমানুষের উচ্ছিষ্ট এবং তাঁদের জন্য হালাল নয়। কারণ, তাঁরা সকল নোংরা ও ময়লা থেকে পবিত্র হয়েছেন, (আল্লাহ্) যেহেতু তাঁদেরকে পবিত্র করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন, সুতরাং তাঁদের জন্য সেটাই পছন্দ করেছেন যা নিজের জন্য পছন্দ করেছেন। আর তাঁদের জন্য খারাপ মনে করেছেন যা কিছু নিজের জন্য খারাপ মনে করেছেন।
আর নবমটি হলো আমরা হলাম সেই আহলে যিকর যা আল্লাহ্ তাঁর মজবুত কিতাবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে : ‘তোমরা জিজ্ঞাসা কর আহলে যিকরকে, যদি না জান।’ তখন পন্ডিতবৃন্দ বলে উঠলেন : এখানে তো ইঙ্গিত করা হয়েছে ইহুদি ও নাসারাদেরকে। ইমাম রেযা (আ.) বললেন : এ রকম নির্দেশ কি শোভন যখন তারা আমাদেরকে ডাকে তাদেরই দীনের দিকে এবং দাবি করে যে, তা ইসলামের চেয়ে শ্রেষ্ঠ? তখন মামুন বললেন : হে আবাল হাসান! আপনার কাছে কি কোনো ব্যাখ্যা আছে যা পন্ডিতবৃন্দ যা বলেছেন তার বিপরীত হবে? ইমাম বললেন : হ্যাঁ, এখানে যিক্র বলতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে আর আমরা তাঁর আহল। আল্লাহ্ এ অর্থটিকে স্বীয় কোরআনে বর্ণনা করেছেন সূরা তালাকে তাঁর বাণীর মধ্যে। ইরশাদ হচ্ছে : ‘অতএব, তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর, হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা! যারা ঈমান এনেছ। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন যিক্রকে। এক রাসূল যে তোমাদের নিকট আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করে।’ (সূরা তালাক : ১০-১১) সুতরাং ‘যিকর’ হলেন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আর আমরা তাঁর আহল। এ হলো নবম।
দশমটি হলো আয়াতে তাহরীম-এ মহান আল্লাহর বাণী : ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, কন্যা ও ভগ্নীদেরকে (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)।’ (সূরা নিসা : ২৩) আমাকে বলুন দেখি, আমার কন্যা, আমার পুত্রের কন্যা কিংবা যে কেউ আমার বংশ থেকে আসবে, যদি রাসূলুল্লাহ্ (সা.) জীবিত থাকেন তাহলে কি তাদের কাউকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করতে পারবেন? তাঁরা বললেন : না। ইমাম বললেন : বলুন তো, আপনাদের কন্যাদেরকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করতে পারবেন কি না? তাঁরা বললেন : জ্বি। ইমাম বললেন : এটা নিজেই একথা স্পষ্ট করে দেয় যে, আমরাই তাঁর আল। আর আপনারা তাঁর আল নন। যদি তাঁর আল হতেন তাহলে আপনাদের কন্যারাও তাঁর জন্য হারাম থাকত। যেমনভাবে আমার কন্যারা তাঁর জন্য হারাম। কেননা, আমরা হলাম তাঁর আল আর আপনারা তাঁর উম্মত। আর এটা হলো আল ও উম্মতের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য। কারণ, আল হলো তাঁর থেকে। আর উম্মত যারা তাঁর বংশ থেকে নয় তারা তাঁর থেকে নয়। এ হলো দশম।
এগারতম হলো আল্লাহ্ সূরা মুমিনের মধ্যে এক ব্যক্তির উল্লেখ করে বলেছেন : ‘ফিরআউনের পরিবারভুক্ত একজন মুমিন ব্যক্তি যে স্বীয় ঈমানকে গোপন রাখত সে বলল : তোমরা কি এমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করছ, যে বলছে, ‘আমার প্রতিপালক হলেন মহান আল্লাহ্’, অথচ সে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ তোমাদের কাছে এনেছে?’ (সূরা মুমিন : ২৮০) সে ছিল ফিরআউনের খালাতো ভাই। তাকে ফিরআউনের পরিবার ও বংশভুক্ত জেনেছেন ও তার স্বধর্মী বলেন নি। তদ্রুপ আমরা হলাম রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বংশভুক্ত। আর অন্য মুসলমানদের সাথে স্বধর্মী হিসাবে একীভূত। এটাও হলো উম্মত ও আলের মধ্যে আরেকটি পার্থক্য। এ হলো এগারতম।
বারতম হলো মহান আল্লাহর এ বাণীটি : ‘এবং তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও ও তার ওপর অবিচল থাক।’ (সূরা ত্বাহা : ১৩২) এ দ্বারা আমাদেরকে বিশেষ এক মর্যাদায় আসীন করেছেন যখন আমাদেরকে তাঁর আদেশ দ্বারা আদিষ্ট করেছেনÑ উম্মতের বিপরীতে স্বতন্ত্রভাবে। এজন্য রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে নয় মাস যাবৎ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় হলে আলী ও ফাতেমা (আ.)-এর ঘরের দরজার কাছে আসতেন। আর বলতেন : ‘নামাযকে ধরে থাক। আল্লাহ্ তোমাদের রহমত দান করুন।’ আল্লাহ্ কোনো নবীর বংশধরকে এভাবে সম্মানিত করেননি যা তিনি আমাদের করেছেন উম্মতের মাঝে আমাদেরকে স্বতন্ত্র করার মাধ্যমে। আল ও উম্মতের মধ্যে এটাও একটি পার্থক্য। ওয়াল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিহ্।
ইমাম রেযা (আ.) কর্তৃক ইমামত, ইমাম ও তাঁর মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণনা

আবদুল আযীয ইবনে মুসলিম বলেন : আমরা মারভে ইমাম রেযা (আ.)-এর সাথে ছিলাম। একদিন সেখানকার জামে মসজিদে আমরা সমবেত হই এবং লোকেরা ইমামত সম্পর্কে আলোচনা করছিল এবং এ ব্যাপারে যে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে সেগুলো স্মরণ করছিল। আমি আমার মাওলা ও মনিব ইমাম রেযা (আ.)-এর কাছে উপস্থিত হলাম এবং লোকদের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাঁকে অবগত করি। তিনি মৃদু হাসলেন। অতঃপর বললেন : হে আবদুল আযীয। লোকেরা মূর্খ এবং স্বীয় দীনে তারা ধোঁকা খেয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ্্ তাঁর নবীকে মৃত্যু দান করেননি যতক্ষণ না স্বীয় দীনকে পূর্ণ করেছেন এবং তাঁর প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছেন যার মধ্যে সবকিছুরই বর্ণনা রয়েছে। হালাল, হারাম, দন্ড-বিধি, বিধি-বিধানসহ মানুষের যা কিছু প্রয়োজন রয়েছে সামগ্রিকভাবে তিনি তার বিবরণ তাতে দিয়েছেন এবং বলেছেন : ‘কোনো কিছুই আমি বাদ দেইনি এ কিতাবে।’ (সূরা আনআম : ৩৮) আর বিদায় হজে যা তাঁর জীবনের শেষ ভাগে ছিল, তাঁর প্রতি অবতীর্ণ করেন ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।’ (সূরা মায়েদা : ৩) ইমামতের বিষয়টি হলো দীন পূর্ণ হওয়ার শর্ত। আর নবী (সা.) ইন্তেকাল করেননি যতক্ষণ না পর্যন্ত তাঁর উম্মতের জন্য দীনের সমুদয় শিক্ষা বর্ণনা করেছেন এবং তাদের পন্থাসমূহ বাতলে দিয়েছেন ও তাঁদেরকে সোজা পথে চালিত করেছেন। আর আলী (আ.)-কে তাদের ইমাম ও নেতা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর উম্মতের প্রয়োজনীয় এমন কিছুই বাদ রাখেননি তার ব্যাখ্যা প্রদান করা ব্যতীত। যে ব্যক্তি ধারণা করবে যে, আল্লাহ্্ তাঁর দীনকে পূর্ণ করেননি, সে আল্লাহর কিতাবকে প্রত্যাখ্যান করল। আর যে আল্লাহর কিতাবকে প্রত্যাখ্যান করে সে কাফের হয়ে যায়। তারা কি ইমামতের গুরুত্ব ও তার মর্যাদা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে যে, এ ব্যাপারে তাদের নির্বাচন বৈধ হবে?
ইমামত এমন একটি মর্যাদা যা মহান আল্লাহ্্ ইবরাহীম খলীল (আ.)-এর জন্য বিশেষায়িত করেছেন নবুওয়াত ও বন্ধুত্বের (খলীল হওয়ার) মর্যাদা অর্জন করার পরে, একে তাঁর তৃতীয় অর্জন হিসাবে দেখেছেন এবং তাঁকে তা দ্বারা মর্যাদাবান করেছেন। আর তাঁর নামকে করেছেন সমুন্নত। মহামহিম আল্লাহ্্ বলেন : ‘এবং (স্মরণ কর) যখন ইবরাহীমকে তাঁর প্রতিপালক কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন এবং সেগুলো সে পূর্ণ করেছিল, তখন তিনি (আল্লাহ্্) বললেন : আমি তোমাকে মানব জাতির নেতা করলাম।’ (সূরা বাকারা : ১২৪) এতে আনন্দিত হয়ে খলীলুল্লাহ বললেন : ‘আমার বংশধরগণের মধ্য হতেও (নেতা মনোনীত করুন)!’ তিনি (আল্লাহ্্) বললেন : ‘আমার প্রতিশ্রুতি যালিমদের জন্য প্রযোজ্য নয়।’ সুতরাং এ আয়াত কিয়ামত পর্যন্ত যে কোনো যালিমের জন্য ইমামতকে নাকচ করে দিয়েছে এবং একে শুধু বিশেষ নির্বাচিতদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ্্ একে সম্মানিত করেছেন এবং শুধু নির্বাচিত ও পবিত্রদের বংশধরের মধ্যে তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর বলেছেন : ‘এবং আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক এবং পৌত্ররূপে ইয়াকুব আর তাদের প্রত্যেককেই করেছিলাম সৎকর্মপরায়ণ এবং তাদেরকে করেছিলাম নেতা; তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করত, তাদেরকে ওহী প্রেরণ করেছিলাম সৎকর্ম করতে, সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত প্রদান করতে, তারা আমারই ইবাদত করত।’ (সূরা আম্বিয়া : ৭২-৭৩) অতঃপর এই বংশধারা একের পর এক শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে উত্তরাধিকার লাভ করেছে, এভাবে তা পৌঁছায় নবী (সা.) পর্যন্ত। তখন আল্লাহ্্ বলেন : ‘নিশ্চয় মানুষের মধ্যে তারাই ইবরাহীমের ঘনিষ্ঠতম যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নবী ও যারা ঈমান এনেছে।’ (সূরা আলে ইমরান : ৬৮) ইমামত শুধু তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল এবং নবী (সা.) তা আলী (আ.)-এর ওপর অর্পণ করেন, অতঃপর এ দায়িত্ব তাঁর বংশধরের নির্বাচিত সেই ব্যক্তিদের হাতে অর্পিত হলো যাঁদেরকে আল্লাহ্্ জ্ঞান ও ঈমান দান করেছেন। এটা তাঁর বাণীতেই এসেছে। ইরশাদ হচ্ছে : ‘কিন্তু যাদেরকে জ্ঞান ও ঈমান দেওয়া হয়েছে তারা বলবে : তোমরা তো আল্লাহর বিধানে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবস্থান করেছ। এটা তো পুনরুত্থান দিবস, কিন্তু তোমরা জানতে না।’ (সূরা রূম : ৫৬) ঐ একই প্রথায় আল্লাহ্্ তাঁর (রাসূলের) সন্তানদের মধ্যেই ইমামত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন কিয়ামত দিবস পর্যন্ত। কারণ, মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরে কোনো নবী নেই। কোথা থেকে এসব মূর্খ তাদের নিজেদের রায়ের মাধ্যমে ইমামতকে নির্বাচন করবে? নিশ্চয় ইমামত হল নবীদের স্থান আর ওয়াসিগণের উত্তরাধিকার। নিশ্চয় ইমামত হলো আল্লাহর খেলাফত ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর খেলাফত এবং আমীরুল মুমিনীন (আ.)-এর মর্যাদা এবং হাসান ও হুসাইন (আ.)-এর খেলাফত। নিশ্চয় ইমামত হলো দীনের লাগাম, মুসলমানদের শৃঙ্খলা, দুনিয়ার কল্যাণ আর মুমিনদের সম্মানস্বরূপ। ইমাম হলেন ক্রমবর্ধমান ইসলামের ভিত্তি আর তার বিকশিত প্রশাখা। ইমামের দ্বারাই নামায, যাকাত, রোযা, হজ ও জিহাদ সঠিক ও প্রতিষ্ঠিত হয়। আর খাজনা ও সাদাকাসমূহ প্রাচুর্য লাভ করে আর দ-সমূহ ও বিধি-বিধান বাস্তবায়ন হয়। আর সীমান্ত ও প্রদেশসমূহ সুরক্ষিত থাকে।
ইমামই আল্লাহর হালালকে হালাল গণ্য করেন আর হারামকে হারাম গণ্য করেন। দন্ড-কে কার্যকর করেন এবং আল্লাহর দীনের প্রতিরক্ষা করেন আর আল্লাহর পথে আহ্বান করেন প্রজ্ঞা, উত্তম উপদেশ এবং যথার্থ প্রমাণ সহযোগে।
ইমাম হলেন কিরণময় সূর্য যার আলো পৃথিবীকে উদ্ভাসিত করে এবং দিগন্তে তার অবস্থা যেখানে দৃষ্টিসমূহ ও হাতসমূহ পৌঁছে না।
ইমাম হলেন আলোময় চাঁদ, শিখাময় প্রদীপ, অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে পথনির্দেশক নক্ষত্র, হেদায়াতের পথপ্রদর্শনকারী আর ধ্বংস থেকে মুক্তিদাতা।
ইমাম হলেন টিলা শৃঙ্গের অগ্নিশিখা, প্রত্যেক শীতার্তের উষ্ণতা প্রদানকারী, প্রত্যেক বিপর্যয় থেকে মুক্তির দিশা, যে ব্যক্তি তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে সে ধ্বংস হবে।
ইমাম হলেন বৃষ্টিবর্ষণকারী মেঘ, তীব্রবেগী বৃষ্টি, ছায়া বিস্তারকারী আকাশ, মসৃণ ভূমিতল, প্রবহমান ঝরনাধারা, জলাধার ও উদ্যান।
ইমাম হলেন বিশ্বাসী সহচর, দয়ালু পিতা, সহোদর ভাই এবং দুগ্ধপোষ্য শিশুর মমতাময়ী মাতাস্বরূপ আর আল্লাহর বান্দাদের আশ্রয়।
ইমাম হলেন আল্লাহর ও তাঁর সৃষ্টির মাঝে তাঁর আমানতদার (বিশ্বস্ত রক্ষক)। আর তাঁর বান্দাদের ওপরে তাঁর হুজ্জাত এবং তাঁর দেশে দেশে তাঁরই খলীফা এবং আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী আর আল্লাহর (দীনের) সীমার প্রতিরক্ষাকারী। ইমাম গোনাহ থেকে পবিত্র এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে মুক্ত, জ্ঞানে বিশেষায়িত ও সহিষ্ণুতায় খ্যাত; দীনের শৃঙ্খলাবিধায়ক, মুসলমানদের সম্মান প্রতিষ্ঠাকারী, মুনাফিকদের ক্রোধের কারণ, আর কাফেরদের ধ্বংসকারী।
ইমাম তাঁর যামানার একজনই, (সৃষ্টিজগতে) কেউ তাঁর সমকক্ষ নয় এবং তার সমান কোনো জ্ঞানী নেই। তাঁর কোনো বদলা ও সদৃশ ও দৃষ্টান্ত নেই। তিনি কিছু চাওয়ার পূর্বেই তাঁকে সকল মর্যাদার বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে। এ বৈশিষ্ট্যসমূহ কৃপাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে কেবল তাঁর জন্যই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তাই কে আছে যে ইমামের পরিচয়ে পৌঁছতে পারে ও তাঁর গুণের মর্ম অনুধাবন করতে পারে?
অনেক দূরে! অনেক দূরে! তাঁর একটি মর্যাদা ও গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে মেধাসমূহ হয়রান। বক্তাদের ভাষা আড়ষ্ট, কবিদের মন শ্রান্ত, সাহিত্যিকরা ব্যর্থ, বিশুদ্ধভাষীরা বোবা, পন্ডিতরা নিশ্চুপ ও (তাদের) মাথা হেঁট। সকলেই তাঁর মর্যাদার বৈশিষ্ট্যসমূহ হতে এমনকি একটি গুণ বর্ণনায়ও নিজের অপরাগতা ও ত্রুটি স্বীকার করে, তাঁর সকল পুর্ণতার বর্ণনা তো দূরের কথা! কীভাবে তারা তাঁর প্রকৃতির পূর্ণ বর্ণনা দান করবে? কেউ কি আছে যে তাঁর স্থলে দাঁড়াতে পারে কিংবা তাঁর ন্যায় উপকার সাধন করতে পারে? কোথা থেকে পারবে? যখন তিনি হলেন নক্ষত্রের মতো এমন উচ্চ স্থানে অবস্থানশীল যে, সে স্থান হস্ত প্রসারণকারীদের নাগাল থেকে ও গুণ বর্ণনাকারীদের থেকে দূরে। তারা কি মনে করে যে, ইমাম রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আল (বংশধর) ব্যতীত পাওয়া যায়? আল্লাহর কসম! (যদি তারা এ ভিন্ন চিন্তা করে তবে) তাদের নিঃশ্বাসগুলোও তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে গণ্য করবে। আর তারা অলীক আশা করেছে যেন তারা এমন উঁচু ও কঠিন গিরিপথে আরোহণ করেছে এবং পিচ্ছিল স্থানে পা রেখেছে যা তাদেরকে নিক্ষিপ্ত করবে। এজন্য যে, তারা চায় নিজের জন্য একজন ইমাম বানাবে। কীভাবে পারে নিজের জন্য ইমাম নির্বাচন করতে যখন এমন একজন জ্ঞানী ইমাম আছেন যাঁর কোনো মূর্খতা নেই, এমন এক অভিভাবক আছেন যিনি কখনও ধোঁকা দেন না, যিনি নবুওয়াতের খনি, তাঁর বংশধারায় কোনো কলুষ নেই এবং অন্য কেউ বংশ মর্যাদায় তাঁর সমানে পৌঁছতে পারে না। তাঁর পরিবার কুরাইশ থেকে এবং বনি হাশিম বংশীয় রাসূল (সা.)-এর ইতরাত থেকে, মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আবদে মানাফের প্রশাখা। প্রবৃদ্ধিমান জ্ঞানসম্পন্ন, পরিপূর্ণ সহিষ্ণু, ইমামতের কাজে শক্তিমান আর রাজনীতিতে পন্ডিত, প্রধানকর্তা হওয়ার যোগ্য এবং আবশ্যিক আনুগত্যের পাত্র, আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নকারী এবং আল্লাহর বান্দাদের শুভাকাংক্ষী।
নবিগণ এবং ওয়াসিগণকে আল্লাহ্্্ তৌফিক দেন ও সাহায্য করেন এবং স্বীয় প্রজ্ঞার ভান্ডার থেকে তাঁদেরকে দান করেন, যা অন্যদেরকে দেন না। তাঁর জ্ঞান সে যুগের সকলের চেয়ে শ্রেয়। মহামহিম আল্লাহ্্্ বলেন : ‘যিনি সত্যের পথনির্দেশ করেন তিনি আনুগত্যের অধিকতর হকদার, না যাকে পথ না দেখালে পথ পায় না সে? তোমাদের কি হয়েছে? তোমরা কেমন বিচার করে থাক?’ (সূরা ইউনুস : ৩৮) আর তালুতের কাহিনীতে আল্লাহ্্্ বলেন : ‘(নবী) বলল : আল্লাহ্্্ অবশ্যই তাকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধ করেছেন। আল্লাহ্্্ যাকে ইচ্ছা স্বীয় রাজত্ব দান করেন।’ (সূরা বাকারা : ২৪৭) আর দাউদের কাহিনীতে বলেছেন : ‘দাউদ জালুতকে সংহার করল, আল্লাহ্্্ তাকে রাজত্ব ও হেকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা থেকে শিক্ষা দিলেন।’ (সূরা বাকারা : ২৫১) আর তাঁর নবীর জন্য বলেছেন : ‘আর আল্লাহ্্্ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমত অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনি যা জানতে সক্ষম ছিলেন না তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আপনার প্রতি রয়েছে আল্লাহর মহা অনুগ্রহ।’ (সূরা নিসা : ১১৩) আর তাঁর নবীর আহলে বাইতের ইমামগণ ও তাঁর ইতরাত ও বংশধরদের জন্য বলেছেন : ‘তবে আল্লাহ্্্ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন সেজন্য মানুষরা কি তাদের প্রতি ঈর্ষা করে?... (আয়াতের শেষ পর্যন্ত) জাহান্নামই যথেষ্ট।’ (সূরা নিসা : ৫৪-৫৫) আর নিশ্চয় আল্লাহ্্্ যখন তাঁর কোনো বান্দাকে বান্দাদের কার্য পরিচালনার জন্য নির্বাচিত করেন তখন তাঁর বক্ষকে একাজের জন্য প্রসারিত করে দেন এবং প্রজ্ঞার প্রস্রবণসমূহকে তাঁর অন্তরে সোপর্দ করেন। আর তাঁর জিহ্বাকে বাগ্মী করে দেন যাতে এরপরে সে উত্তর প্রদানে ব্যর্থ না হয় এবং সঠিক ছাড়া না বলে। আর সবসময় সফলকাম, অপরাজেয় ও মদদপুষ্ট হয়। ভ্রান্তি ও বিচ্যুতি থেকে নিরাপদ থাকে। আল্লাহ্্্ তাঁকে এ স্থানে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছেন যাতে তাঁর সৃষ্টির ওপরে হুজ্জাত হন এবং তাঁর বান্দাদের ওপর হন সাক্ষী। তারা কি এরূপ ক্ষমতা রাখে যে, এরূপ ইমামকে নির্বাচন করবে এবং তাদের কর্তৃক নির্বাচিত যে, সে এসব গুণের অধিকারী থাকবে?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×