আমি যেদিন পিএইচডি ড্রিগ্রি লাভ করি...
সন্ধ্যা বেলা বাসায় ফিরলে আমার স্ত্রী বললেনঃ তোমাকে বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলে দেখেছি। বিশেষ করে চ্যানেল আই জনাব শাইখ সিরাজ তোমার উপরে সুন্দর একটি রিপোর্ট বানিয়েছেন।
আমি খুশি হয়ে বললাম শাইখ স্যার তো আমার স্যারই তিনি আমার জন্য করনে না তা কে করবে???
আমার স্ত্রী আবার বললেনঃ
৪-৫ বছর ধরে তোমার পাগলামী অনেক সহ্য করেছি। আজকে তুমি সেই পাগলামীর সার্টিফিকেট পেয়েছো। এখানে তুমি যে সময়টা দিয়েছো। যে পরিমানে রাত দিন পরিশ্রম করেছো। যে পরিমান অর্থ দিয়েছো। যত জায়গায় গিয়েছো। যত মানুষের সাথে কথা বলেছো। এই সময়টি তুমি যদি অন্য কোন কাজে দিতে, তাহলে আমার ঢাকা শহরে মাথাগুজার ঠাই হয়ে যেতো। এতদিন আমার মেয়ে নিজস্ব গাড়ীতে চড়ে স্কুলে যেতে পারতো।
আমি বললামঃ তুমি ঠিকই বলেছো (মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইলাম)
আমার মেয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বললঃ
আমার লক্ষীআব্বু, তোমাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর আমার ছোটভাই ফোন দিলোঃ কি টেলিভিশনে তোমার উপর রিপোর্ট হলো দেখলাম, তা ভালো কাপড় চোপড় পরে একটু সাজুগুজু করে যেতে পারোনি। তোমার গোফটা অনেক বড় দেখা গেছে।
ভাইয়ের ফোন নিয়ে আমার বাবা বললেনঃ বাবা তুমি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছো? আমাকে আগে বললেনা কেনো? আমি একটু ঢাকা আসতাম।
ঐ ফোনে আমার মা বললেনঃ “বাবা তুমি ডিগ্রি নিয়েছো সবাই বলছে। আমার খুব আনন্দ লাগছে” (খুশিতে কাঁদতে লাগলেন) পরে বললেন “আমি সব সময় ভাবতাম তুমি অনেক লেখা পড়া করবে। লেখাপড়া শিখে মানুষ হবে। তোমার নানা বলতেন তুমার অনেক লেখাপড়া হবে।তোমার নানা আমাকে বলে গিয়েছিলেন আমি যেন যত কষ্ট হোক তোমাকে লেখাপড়া শেখাই। আমি একটি শাড়ি পরতাম। গোসল করে রোদে সেই শাড়ী শুকাতে দিয়ে ঘরে বসে থাকতাম, সেই শাড়ী শুকালে তাই পরে ঘর থেকে বের হতাম, কাজ করতাম। তোমার জন্য অনেক কষ্ট করেছি। বিলের নাইল(শাপলা) খড়খড়ি, ড্যাপের চালের ভাত খেয়েছি, আটার জাউ খেয়েছি।দিনে একবেলা আধা পেটও খেয়েছি, নুন ছাড়া তেল ছাড়া তরকারী খেয়েছি। আর স্বপ্ন দেখেছি-তুমি একদিন লেখাপড়া শিখে মানুষ হবে। আল্লা আমার, তোমার নানার, তোমার দাদা-দাদীর ডাক শুনেছে। যাই আল্লার প্রতি শুকুরানা নামাজ পড়ে তোমার জন্য দোয়া করি।”
বলে ফোনটি আমার ছোট ভাইয়ের হাতে দিলো।
মায়ের দোয়া ও চেষ্টায় আমি রাজধানী শহরে চাকরি করি নামে আগে ড. লিখি।
মা, নামের আগে ড. লিখে লাভ কি!!!
হতে পারিনি তুমি যেমন মানুষ হিসেবে আমাকে দেখতে চাও তেমন মানুষ!!!
মা, মানুষ হতে পারিনি !!!!
আমি প্রতিনিয়ত কাজ করে যাই অন্যের প্রতিষ্ঠানের জন্য। রোজগার ব্যায় করি স্ত্রী-সন্তানের জন্য।
তোমার জন্য কি করলাম!!!
তুমি কি পেলে তোমার উচ্চশিক্ষিত ছেলের কাছ থেকে!!!
পারলে আমায় তুমি ক্ষমা করে দিও।।।