সকালমিয়ার বয়স প্রায় চল্লিশের ওভার ব্রীজ পার হতে চলেছে। কিন্তু তিনি খুব চালাকির সাথে এখনো মরন ফাঁধে পা দেননি। মানে বিয়েটা এখনো করেন্নি। আসলে করেন্নি নাকি করতে পারেন্নি তা নিয়ে একটু সংশয় রয়েই যায়। কারন তার নায়কটাইপ চেহারা থাকা সত্বেও কেনো যে বিয়েটা সারতে পারলেননা তা একটু আধটুতো বুঝা যাইই। নষ্টামীর ফসল আরকি। কিয়া কারেগা শালা কারেক্টার ঢিলাহে। এই টাইপ।
এদিকে বয়সের গন্ডি দিন দিন বাড়তে থাকলেও সাহস করে যে বিয়ের কথা ঘরে বলবে সে দুঃসাহসও তার নেই। কোন রকমেযে দু’চারটে খেতে পাচ্ছে তাও ভাগ্য ভালো। কি করবে উপায় না পেয়ে এক দোস্তকে কাচ্চি বিরিয়ানির বিনিময়ে হায়ার করলো। যে করেই হোক তাদের ঘরে তার বিয়ের কথাটার বিল পাস করাতেই হবে। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হয়না। দোস্তরে কাচ্ছি খাওয়াইতে খাওয়াইতে তার পকেট প্রায় শেষ। তার দোস্তটাও তেঁদরের তেঁদর। এই কাচ্ছি বিরিয়ানির লোভে কতোনা অপমান সহইলো তার ইয়ত্বা নেই। লাজ লজ্বার চাইতে বিরিয়ানিটাই আসল তার কাছে। সে যাই হোক, এভাবে সকালমিয়ার দোস্তটি তার পরিবারের কাছ থেকে চ্রম অপমানিত হতে হতে কাচ্ছি বিরিয়ানি খেতে খেতে আরো একটি বছর গত হলো। চল্লিশের ওভার ব্রীজ ক্রস করেই ফেল্লো। অবশেষে তার কপাল খুল্লো বলে।
পরিবার থেকে তার বিয়ের জন্য সম্মতি প্রদান করায় সেতো খুশিতে পারলে নাচে। মনে মনে কতো কিছুই কল্পনা করিয়া লইলো। কন্যা দেখতে যাবে, কন্যাকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করবে, একসাথে বসে আইচক্রীম খাবে, ফাকে একটা রোমান্টিক চিমটিও কাটবে। বিধিবাম তা আর হলোনা। কন্যা দেখাতো দুরে থাক, উল্টো তাকেই দেখতে আসলো কন্যা পক্ষ। বিয়ের পাত্রের ইন্টারভিউ সংক্রান্ত তার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় বেচারা দারুন বিপদেই পড়লো। লিখিত হলে নাহয় নকল করে জান বাঁচান যেতো। যথাসময়ে বিয়ের ইন্টারভিউ ভাইবা আরম্ভ হলো। প্রথম প্রশ্নতেই সকালমিয়া থতমত খেয়ে গেলো। চোখ দুটো কপাল থেকে মাথায় উঠে ঠেকলো।
তা বাবা তুমি কি করো?
এরকম একটা প্রশ্নযে কেই কাউকে নির্লজ্বভাবে করতে পারে তা সে জীবনেও ভাবেনি। কাম কাইজ যে করেনা সেটা নাহয় কোন প্রকারে বলা যায়। কিন্তু মাইয়াদের পিছনে পিছনে ঘোরাঘুরি করেইযে তার দিন কাটে এই কথাটা কিভাবেইবা বলে? তার কপাল বেয়ে ঘাম পড়া আরম্ভ হলো ।
ইয়ঙ টাইপ একটা পুলা জিজ্ঞেস করলো আপনার কি সামুতে একাউন্ট আছে?
সকালমিয়া একটু নড়েচড়ে বসে। মনে মনে ভাবে আরে পয়সা কামাইলেইনা একাইন্ট থাকবে। তারপরও সাহস করে বলেই ফেল্লো। না, তবে জনতা ব্যাংকে একটা আছে, বিয়ে পরবর্তী আপনাদের সহযোগীতায় আয়উন্নতি ভালো হলে সামুতে নাহয় একটা একাউন্ট খুলেই ফেলবো।
ইয়ঙটাইপ পিচকাটা চোখ উল্টায়া কয় , কি?? সামুতে একাউন্ট নাই?? এই আধুনিক যুগে সামুতে একাউন্ট নাই? আনইসমার্ট ম্যান, না হবেনা, এই গেয়োঁ পুলার লগে বিয়ে হতে পারেনা ।
মেহমানরা চলে যাবার পর সকালমিয়া তার দোস্তরে কইসা একটা থাপ্পর দিয়ে বলে আরে বেটা বিয়ের জন্যযে সামুতে একাউন্ট খুলতে হয় তা আমাকে আগে বলবিনা?? কয় টাকা আর খরচ হইতো?? আচ্ছা এই সামুটা কার?? কোন জায়গায় এই ব্যাংক?
তারপর অনেক খোঁজখবর, ঘাটাঘাটির পর সামুর রহস্য উৎঘাটিত হলো। শ্লার এইই সামু? এই জিনিস ফেলে বেহুদা আমি এতগুলো সময় নষ্ট করলাম রোদের ভিতরে ঘুরাঘুরি করে। মাইয়াদের রাস্তায় টিজ করার চাইতেতো এখানে টিজ করা অনেক সুবিধা। আর কতো দিন গালাগালি করিনাই মনের সুখে। আহা।
আবারো বিয়ের পাত্র দেখতে আসবে কন্যা পক্ষ। এবার তার আর কোন টেনশন নাই। বেজায় খুশি খুশি ভাব। ফেবু, গুগোল, সামু সব তার মুখস্থ। এবার তার বিয়ে ঠেকায় কে??
আগের মতো প্রশ্নগুলোর পর আবারও আরেক ভদ্রগোচের এক মোল্লাটাইপ ইসমার্ট পুলা জিজ্ঞেস করলো, তা আপনার কোন কোন জায়গায় একাউন্ট আছে।
এই প্রশ্নের জন্যই সকালমিয়া অপেক্ষায় ছিলো।
তা আর কই এতো, এই ফেবুতে দুইটা, ইয়াহুতে একটা আর সামুতে তিনটা। বাকিগুলো আর বলতে হলোনা। তার আগেই মোল্লাটাইপ ইসমার্ট পোলাটা চোখ কপালে উঠিয়ে বলে,
আস্তাগপিরুল্লাহ সামুতে একাউন্ট? সামুতে?? এমন একটা খারাফ জায়গায় ঘোরাঘুরি? এই পোলার কারেক্টার শেষ। এই পুলা পুরাই বরবাদ। নাহ হবেনা, এই বিয়ে হবেনা।
সকালমিয়া ভাবে শ্লার এ কোন যন্ত্রনায় পরলামরে?? সামুতে একাউন্ট থাকলেও দোষ না থাকলেও দোষ। শ্লার মোল্লা তুই কেুে জানলি সামু খ্রাফ?? তাইলে তুইও ঘুরশ, তুইও খ্রাপ তোর চৌদ্দগুষ্টিই খারাপ। শ্লার চোরে কয় আমি চোর। শ্লার বিয়াই করুমনা। সকালমিয়া দোস্তরে ঝাটকি দিয়ে বলে, ওই তুই আমার সব কাচ্ছিবিরিয়ানির টাকা ফেরত দিবি কইলাম। বিয়ার গুষ্টি কিলাই।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:১৫