জামাতের রাজনৈতিক পরিচয় মুছে দিতে হবে... এই দাবী আমাদের আজকের নয়। ছাত্র জীবনে স্লোগানে স্লোগানে গলার রগ ছিড়ে ফেলার উপক্রম করেছি। এতদিন পর এসে কিছু আলো দেখতে পাচ্ছি...
কেন চাই জামায়েত নিষিদ্ধ হোকঃ
ভারতীয় উপমহাদেশে কয়েক শত বছর ধরে ইসলাম তার শিকড় ছড়িয়ে আপন মহিমায় চর্চিত হয়ে আসছে। অসম্ভব ধর্মপ্রাণ ইসলাম অনুসারি মানুষের বিশ্বাস কে পুঁজি করে যে লোকটি বিশ্ব খেলাফতের শাসন প্রতিঠা এবং নেতৃতের খোয়াব দেখেছিলেন সেই পাকিস্তানি মওদুদী হলেন বাংলাদেশের জামায়েতের গুরু। এই মওদুদী নিজ স্বার্থে ভিন্ন ভাবে ইসলামকে উপস্থাপন করতে থাকে যার মুল টার্গেট ক্ষমতা দখল। এই লক্ষে মওদুদীর বিশেষ ইসলামীর সরূপ লক্ষ্য করুনঃ
" আজ আপনাদের সামনে জার্মানি ও ইটালীর দৃস্টান্ত মৌজুদ রয়েছে। হিটলার ও মুসোলিনি যে বিরাট শক্তি অর্জন করেছে তা সমগ্র বিশ্বে স্বীকৃত।কিন্তু তাদের সাফল্যের কারন আপনাদের জানা আছে কি? বিশ্বাস ও নির্দেশের প্রতি আনুগত্য সাফল্যের কারন। নাৎসি ও ফ্যাসি দল কখনো এতো শক্তি অর্জন করতে পারতো না, যদি তারা নিজেদের বিশ্বাসের প্রতি অটল বিশ্বাস না রাখতো এবং নিজেদের নেতৃবিন্দের কঠোর অনুগত না হতো। (তরজামানুল কুরআন: ডিসেম্বর ১৯৩৪)
বুঝেন ঠ্যালা, এরা নাৎসি ও ফাসিবাদের ধারায় অনুপ্রানিত।
"জামায়েতে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দলে যোগ দেওয়া কিংবা অন্য কোন দলের সরকার গঠন অ-ইসলামী, ধর্মদ্রোহিতা"
"জামায়েতের ইসলামের সমালোচনা করলেই কেবল মূরতাদ হয় না, জামায়েতের সদস্য হয়ে তা ত্যাগ করলেও মানুষ মুরতাদ হবে। তা'র শাস্তি মৃত্যুদন্ড।"
ছাত্রাবস্থায় এক শিবির নেতা এসে আমায় বলেছিল "ভাই আপনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরেন খুবই ভালো, কিন্তু কবরে যখন আপনাকে জিজ্ঞেস করবে কোন দল করতেন, কি জবাব দিবেন" । বুঝেন এবার, আপনি জামাত শিবির করলে আপনার কবরের আজাব মাফ হবার চান্স আছে...
আর নির্বাচনের সময় গ্রামে গ্রামে ঘুরলে শুনতে পাবেন " দাড়ি পাল্লায় ভোট দিন, বেহেস্তের টিকিট নিন" " হাসরের দিনে আল্লাহ্ যে পাল্লায় আমলনামা মাপবে এটা সেই মার্কা"
জামায়েত করলেন তো আপনি মুসলমান না হলে মুরতাদ।
"আমরা রাস্ট্র ক্ষমতা অধিকার করবো। তারপর তোমাদের ইসলাহের কাজ আরম্ভ করবো।তোমরা দেখবে যে, রাস্ট্র ক্ষমতা আমাদের হস্তগত হওয়া মাত্র আমরা মারপিট করে কীরুপে তোমাদের চিত্তশুদ্ধি সাধন করি। সুতরাং এই পার্টির পক্ষে হুকুমত হস্তগত করা ছাড়া উপায় নেই। (হকিকতে জ্বিহাদ, পৃ, ৫৯)
"জামায়েতে ইসলাম দেশের ক্ষমতা দখল করার পর অন্য দেশ যুদ্ধ করে দখল করে নিবে। সমগ্র বিশ্ব থেকে সকল অধর্ম, কূফর দূর করা জামায়েতে ইসলামের লক্ষ।"
অর্থাৎ জামায়েত ক্ষমতা দখল করতে পারলে তাদের বিরুদ'ধাচারী সকল কে হত্যা করবে। অবশ্য তার আগে সবাইকে জামায়েতে ইসলাম একটি সুযোগ দিবে জামায়েতে যোগ দেওয়ার যেন মুরতাদরা মুসলমান হতে পারে। ( হেলায় সুবর্ণ সুযোগ হারাবেন না... )
পাকিস্তানের ইসলামিক চিন্তাবিদরা, আলেমগন মওদুদী কে বর্জন করেছে ইসলামের অপব্যক্ষাকারী, বিনস্টকারী হিসেবে, এমনকি তাকে মুসলমান বলতেও রাজী না। গণ হত্যার দায়ে এই মওদুদীর ফাঁসীর রায় ঘোষণা করেছিলো পাকিস্তান সরকার কিন্তু মধ্যপ্রাচ্চের চাপে কার্যকর করতে পারেনি। এরা সেই সময়ও আন্তর্জাতিক মাধ্যমে লবিঙয়ে শক্তিশালী ছিল এখনও তাই আছে।
এই মওদুদীর চ্যালারাই ১৯৭১ সালে ব্লু প্রিন্ট করে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা সহ অন্য সকল অপকর্ম সাধন করে। স্বাধিন হবার পর এদের নিষিদ্ধ এবং হুলিয়া জারি করা হলে কেউ পাকিস্তানে, কেউ আত্মগোপনে চলে যায়। কিছু গ্রেফতার হয়ে বিচারাধীন থাকে।
৭৫ পরবর্তীতে এদের বিচার বাতিল করা হয় এবং আইন করে বন্ধ করা হয়, আরও আফসোস ১৯৭৯ সালে জামায়েত কে রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হয়। গোলাম আজম পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে পুনরায় বাংলার মাটিতে পা রাখে।
এরা প্রতিষ্ঠাকালে যেমন ছিল আজও তেমনি আছে। ক্ষমতায় যাবার জন্য এরা যা খুশি তাই করতে পারে আর এর জন্য তাদের প্রধান হাতিয়ার ইসলাম, প্রয়োজনে তারা ইসলামকে বিশেষ ইসলামে রুপান্তর করে নির্লজ্জ ভাবে। মওদুদী মতবাদ এবং ১৯৭১ জলন্ত উদাহরণ। বাংলাদেশে মওদুদীর লেখা বই নিষিদ্ধ হলেও প্রতিটি জামায়েত শিবির কর্মীরা এখনও এটাই ফলো করে চলে।
বাংলাদেশে জামায়েতে ইসলামী একমাত্র ইসলামী দল নয়, আরও অনেক দল আছে যাদের সাথে সম্পর্ক কখনোই মধুর নয়। এই বাংলার মাটিতেই অনেক অনেক মাদ্রাসা আছে যেখানে জামায়েতে ইসলাম-শিবির নিষিদ্ধ।
আমি চাই জামায়েত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক, সেই সাথে এটাও নিশ্চিত করতে হবে এরা যেন অন্য কোন দলে পুনর্বাসিত হতে না পারে।বুঝি নিষিদ্ধকরণের বিষয়টি এত সহজ হবেনা। কিন্তু কি ভাবে এটা বাস্তবায়ন হবে তা করে দেখানোর কাজ দেশ পরিচালনকারীদেরকেই করতে হবে।
ব্যাক্তিগত ভাবে আমি এবং আমরা যা করতে পারি তাহলো, সরকারকে সমর্থন এবং জামায়েতী অর্থ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান বর্জন।
জামায়েত নিষিদ্ধ হোক এটি দায় মুক্তিকামী বাঙালির দাবী। জয় বাংলা।