সেদিন এ্যাকনা ঢ্যানা চ্যাংড়া আসি কৈলে,
- আমি পত্রিকা অফিস থেকে এসেছি, বীরাঙ্গনা ফিরোজা বানু কি আপনি? হামি কলাম,
-বাপ মাই তো নাম রাখছোলো ফিরোজা বানু,
বীরাঙ্গনা তো রাইখেনি, ও নামে তো ডাকেওনি।
তা বাহে, তুমি হামার কাছে আসিছো ক্যানে?
-খবর পেয়েছি এ গ্রামে একজন বীরাঙ্গনা নারী আছেন। এবার বিজয় দিবসে পত্রিকায় তাঁর কথা লিখব, তাই ঢাকা থেকে এতদূর এলাম। গ্রামের লোকজন আপনার বাড়িটা দেখিয়ে দিল।
-গেরামের লোকে কত কিছুই তো বুলে! বদ বেটিছাওয়া, ধাগড়ী মাগী আরো কত কি! এবার তালি বীরাঙ্গনা বলিছে?
-আপনি ভুল বুঝছেন। বীরাঙ্গনা অর্থ 'বীর নারী' মুক্তিযুদ্ধে যেসব নারী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদেরই সম্মান জানিয়ে আমরা 'বীরাঙ্গনা' বলি।
- হামি বীরাঙ্গনা হব ক্যানে, হা? মাইনসে কয় নষ্ট বেটি হয়ি গেছুঙ, মোক সম্মান দিব ক্যানে?
-আপনি হয়তো জানেন না, সরকার বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরি করছে, আপনার কথা পত্রিকায় ছাপা হলে সরকারের নজরে পড়বে। তখন আর আপনার কোন কষ্ট থাকবে না, মাসে মাসে সরকারি ভাতা পাবেন আপনি।
-তাই নাকি? কিন্তু কবে দিব? শুনছি মাইমুনা, রাজিয়া, সুলেখা মইরা গ্যাছে। হামিই বা আর কদিন বাঁচিম? মইরে যাবার আগে সরকার মোক ভাতা দিব তো?
-অবশ্যই দেবে। আচ্ছা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে কিছু বলুন।
-মুক্তিযুদ্ধ! আমি এ্যারে মুক্তিযুদ্ধ কব না, এ্যাতো মরণ যুদ্ধ। কত মাইনসে মরিল! মোর বাপ-মাই, বাই-বইন বেবাগরে মাইরে ফেলছিল। কুকুরের মত মাইরেছিল সোয়ামী আর ছোইল কোনাক, তারপর হামারে শকুনের মত খুবলে খুবলে খাইল। তাও শান্তি মেলেনি জারুয়া গুলার, সাথে করে নিয়ে গ্যাছিল স্কুল ঘরেl
ছোডকালে যেই ঘরে মাস্টারের সাথে সুর করে লেহাপড়া করতাম, সেই ঘরে হামার মত আরো কত মাইয়ার চিক্কুর শোনা যাইতো! ঐ স্কুল ঘরেই আমরা বারবার কইরে মইরতাম।
-আজ আমরা স্বাধীন শুধু ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়েই নয়, সাথে জড়িয়ে আছে দুই থেকে চারলক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমl আপনাদের এ ত্যাগ বৃথা হবে না, জাতি চিরকাল মনে রাখবে। হামি কলাম,
-না বাহে, মুই এতকিছু চাঙ না। বীরাঙ্গনা নাম, না কোন সম্মান। হামি শুধু মাথা গোঁজবার একটু ঠাঁই চাই, দিবা মোক এ্যাকনা ঘর? হামি দু'বেলা ভালোমন্দ খাতি চাই, দিবা মোক দু'মুঠ ভাত? মাইনসে মোক নষ্টা বেটি না বলুক, বেবাগরে কইয়ে দিবা? মোক ভালোভাবে শান্তিত বাঁইচতে দিবা? হামি আর কতদিন ভাইগ্য বিড়ম্বিতা হইয়ে থাকমো?
পাঠকের জন্যঃ রংপুরের আঞ্চলিক ভাষার কবিতা এটিl যদিও আমি চট্টগ্রামের বাসিন্দাl আঞ্চলিক ভাষায় দেবব্রত সিংহের 'ত্যাজ' কবিতাটির আবৃত্তি শুনে আমিও আঞ্চলিক ভাষায় লিখতে উৎসাহিত হইl গুগলে সার্চ দিয়ে এবং এক রংপুরের বোনের সাহায্য নিয়ে কবিতাটি লিখেছিl পাঠকের সুবিধার্থে শব্দের অর্থ সংযোজন করে দিলাম,
এ্যাকনা ঢ্যানা চ্যাংড়া আসি কৈলে- একজন যুবক এসে বলল, হামি- আমি, বাহে- বাপু, হামার- আমার, ক্যানে- কেন, বুলে- বলে, গেছুঙ- গিয়েছি, মোক- আমাকে, বাঁচিম- বাঁচব, ছোইল কোনাক- ছেলেকে, জারুয়া গুলার- জানোয়ার গুলোর, চাঙ না- চাই না, খাতি- খেতেl
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৭