টরেন্টো টেলিভিশন স্টুডিওর স্টাফরা আজ একটু বেশিই উত্তেজিত। কর্তাদের হম্বিতম্বি আর টেকনিশিয়ানদের ব্যস্ততা ছাপিয়ে সেই উত্তেজনা উপচে পড়ছে। চোখে চোখ পড়লেও কেউ আড়াল করছে না তা। ক্যামেরাম্যান আর স্টাফদের নিয়ন্ত্রণ করতে সাধারণত প্রোগ্রাম প্রডিউসাররাই থাকেন অনুষ্ঠানের সেটে। আজ স্টুডিও ডিরেক্টরকেও দেখা গেল উপস্থিত হয়েছেন। কিছুক্ষণ পর যে লাইভ শো টেলিকাস্ট করা হবে, সেটাকে ঘিরেই এত তোড়জোড়। লাইভ শো টেলিকাস্ট করা এই স্টুডিওর স্টাফদের নিত্যদিনের কাজ। কিন্তু আজকের ‘শো’ টার বিশেষত্ব অন্যরকম। আজ এখানে আসবেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি ব্যাখ্যাতীত একটা কাজ করে দেখাবেন। সে বিষয়ে সবাই সতর্ক। মানুষটি যদি কোনো ধরনের চাতুরীর আশ্রয় নেয়, তাহলে সেটাও ধরে ফেলার আয়োজন চলছে। একসময় টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গেল সেই মানুষটিকে। নাম তার টেড সিরিয়স। পেশায় ট্রাক ড্রাইভার।
আসন গ্রহণ করে সবাইকে ধন্যবাদ জানালেন তিনি। তারপর সামনে রাখা পোলারয়েড ক্যামেরাটা হাতে তুলে নিলেন। 'পোলারয়েড' হচ্ছে এমন এক ধরনের ক্যামেরা, শাটারে ক্লিক করার ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই এ থেকে ছবি প্রিন্ট হয়ে বেরিয়ে আসে। ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে সেটার লেন্সের দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন টেড সিরিয়স। তারপর টিপে দিলেন শাটার। ১০ সেকেন্ড পর ছবিটা বের হয়ে এলো। উপস্থাপক ছবিটা হাতে তুলে নিয়ে মহাবিস্ময়ে ছবিটি দেখলেন কিছুক্ষণ। তারপর টিভি ক্যামেরার দিকে ফেরালেন সেটা। ছবিটায় দেখা যাচ্ছে প্রাচীন এক দুর্গের ছবি। সঙ্গে দেখা যাচ্ছে দুর্গের আশপাশের দৃশ্যাবলি। অথচ স্বাভাবিক নিয়ম মানলে ছবিটায় টেড সিরিয়সের মুখের ছাপ দেখতে পাওয়ার কথা! এমন ঘটনা টেডের কাছে নতুন নয়। ব্যাখ্যাতীত কোনো উপায়ে তিনি মনে মনে যে দৃশ্যের কথা ভাবেন, সেটাই তার চোখ থেকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন ক্যামেরার লেন্সে! টেড সিরিয়সের এই 'থট ফটোগ্রাফি' বা থটোগ্রাফির (Thoughtography) কথা জানতে পেরে তাকে নিয়ে গবেষণায় মেতে ওঠেন কিছু বিজ্ঞানী। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জুল আইজেনবার্গ ও তার দল মিলে টানা দু'বছর টেডের ওপর গবেষণা চালান। সেই দলে ছিলেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ, টেকনিশিয়ানসহ নানা পেশার মানুষ। গবেষণা শেষে তারা মত দিয়েছেন, সত্যিই টেড সিরিয়স ব্যাখ্যাতীত কোনো উপায়ে বহুদূরের কোনো দৃশ্য কল্পনা করে সেটার ছবি তুলতে পারেন। টেডের খ্যাতি ছড়িয়ে পরে যখন জুল আইজেনবার্গ তাঁর গবেষনার উপর ভিত্তি করে একটি বই প্রকাশ করেন। ১৯৬৭ সনে প্রকাশিত বইটির নাম ছিল ‘The World of Ted Serios: "Thoughtographic" studies of an extraordinary mind’। সন্দেহবাদীদের সংখ্যাও নেহায়েত কম ছিল না। বিখ্যাত স্টেজ ম্যাজিশিয়ান ‘জেমস রান্ডি’ দাবী করেন টেড গোপনে কোন সূক্ষ্ম কৌশল খাটান, তা না হলে পদার্থ বিজ্ঞানের সব সূত্র বিশেষ করে অপটিকস এর সব সূত্র মিথ্যা হয়ে যাবে। অবশ্য অনেক চেষ্টা করেও রান্ডি সেই ‘সূক্ষ্ম কৌশল’ ধরতে পারেননি! বিখ্যাত প্যারসাইকোলজিস্ট Stephen E. Braude নিজেও অনেক চেষ্টা করেও রহস্যভেদ করতে পারেননি। তিনি বলেছিলেন- ‘এটা খুবই অদ্ভুত যে টেড ক্যামেরা থেকে কয়েক মিটার দূরে দাঁড়িয়ে থেকেও ক্যামেরার লেন্সে ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারে!’। টেড তার 'কল্পনার' ছবি সাধারণ ক্যামেরার লেন্সেও ফুটিয়ে তুলতে পারেন, তবে সেটার প্রিন্টআউট পোলারয়েড ক্যামেরার মতো এত স্পষ্ট হয় না। টেড ছিলেন প্রচন্ড রকমের এলকোহলিক কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে সম্পূর্ন মাতাল অবস্থাতেও তিনি থটোগ্রাফি করে দেখিয়েছেন একাধিকবার!
১৯৫৪ সালে প্রথমবারের মতো টেড তার এই অস্বাভাবিক ক্ষমতার কথা জানতে পারেন। এক বন্ধুকে গুপ্তধন খোঁজার ব্যাপারে সাহায্য করতে গিয়ে সেটা জানা যায়। প্রথমদিকে নিজের 'ভাবনার' ছবি ক্যামেরায় তুলে দেখাতে তার বেশ কষ্ট হতো। পরে সেটা সহজ হয়ে ওঠে। তবে টেডের এই আশ্চর্য ক্ষমতার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। ২০০৬ সালে তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এ রহস্য রহস্যই থেকে গেছে। জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘দ্য এক্স ফাইলস’ এর একটি পর্বও (Unruhe) প্রচারিত হয়েছিল টেডের রহস্যময় Thoughtography নিয়ে।
টেড সিরিয়স সম্পর্কে আরও জানতে
থটোগ্রাফি সম্পর্কে আরও জানতে
(সংকলিত) বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এইটা না লেখলে আমাকে সবাই লেখা চোর বলবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




