অনেক দিন দূরে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। মনটা একদন বিষিয়ে উঠেছিলো। এইবার ঘটলো সর্বশেষ বিস্ফোরণ। আর না এভাবে কি জীবন কাটে। বন্ধু নবীন কে অনেক দিন ধরে বলছিলাম “চল বান্দারবন যাই”। কিন্তু এই ঝামেলা ওই ঝামেলা করে আর যাওয়াই হয় না। কিন্তু নবীন ভাইয়ের মনে এইবার কি হলো...... কে জানে? কোরবানি ইদের কয়েকদিন আগে আমাকে বলল “চল বান্দারবন যাই” আমিতো খুশিতে পুরাই পাঙ্খা। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল সবাই বলছে ওদিকে নাকি কি একটা ঝামেলা চলছে বাইরের লোকদের বান্দারবনের ভিতরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। কি আর করা হতাশায় পুরাই নিমগ্ন। এমন সময় আশার বানী নিয়ে দোস্ত আবার উপস্থিত। সাথে করে নিয়ে এলো নতুন ডেসটিনেশন। বললাম কই যাবি ? ও বলল সিলেট। শুনে আমি বললাম “হুহহহহ জায়গা আর পাস নাই। ওই জায়গায় আমি আগেও গেছি দেখার কিচ্ছু নাই”। তারপরও বললাম কই কই যাবি, শুনা। ও বলল রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, জাফলং, মাধবকুণ্ড, লাউয়াছড়া, শ্রীমঙ্গল এবং হামহাম। হামহাম কথাটা শোনার পরে একটু নড়ে চড়ে বসলাম, সাত পাচ ভেবে সাথেসাথেই বললাম “যামু”। যাই হোক বকবক অনেক বেশি করে ফেললাম। এবার কাজের কোথায় আসি। টিম মেম্বার মাত্র তিনজন। আমাদের পরিচয়টা দিয়ে ফেলি আমি মামুন, নবীন, আর “হুজুর” থুক্কু মুহিম।
০৩.১১.১২
রাত ১১টার দিকে রওনা দিলাম বাসা থেকে। সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল “শ্যামলী” কাউন্টার থেকে বাস ছাড়ল রাত ১২টায়। রাত তিনটার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। মনটা আমাদের সবারই খুব খারাপ হয়ে গেলো। যাই হোক ফজরের আজানের আগেই বাস আমাদের হজরত মুহাম্মাদ শাহ্জালাল (রাঃ) এর মাজারের সামনে নামিয়ে দিলো
মাজারে ফজরের নামাজ আদায় করে জিয়ারতের কাজটা সেরে বাইরে গেলাম নাস্তা করতে গেলাম। ভিতরে ভিতরে একটা তাড়া কাজ করতে ছিল। যে ভাবেই হোক আজকের মধ্যে রাতারগুল শেষ করে দিনের মধ্যে জাফলং পৌছতে হবেই হবে। মাজার থেকে একটু হেটে আম্বরখানা পয়েন্টে “নাহার হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে তন্দুল রুটি আর বুটের ডাল দিয়ে নাস্তা করে একখানা সিএনজি ২৫০ টাকা দিয়ে ঠিক করে রওনা দিলাম। উদ্দেশ্য মোটরঘাট। মোটরঘাট যেতে সময় লাগবে দেড় ঘণ্টা। মোটরঘাট নেমে এখান থেকে রাতারগুল যেতে হবে নৌকায় করে। অনেক নৌকা দেখলাম। আমাদের দরের সাথে মিল না হওয়াতে ঠিক করতে পারছিলাম না কাকে নিয়া যাব। এমন সময় ওই গ্রামের একজন লোক এগিয়ে এলো, নাম তার জয়নাল আবেদিন। অমায়িক লোক। ব্যাবসায়িক চিন্তা না করে, সে আমাদের একটা নৌকা ঠিক করে দিলো ঘণ্টা প্রতি ১২০ টাকা করে। পরে শুনলাম সে ওই ঘাটের মাতুব্বর টাইপের একজন। আমাদের মাঝির নাম “রশীদ”।
শুরু হয়ে গেলো আমাদের অভিযান। নদীতে এখন পানি খুব কম। প্রথমেই বলে রাখি রাতারগুল আসতে হবে ভরা বর্ষা কালে নয়তো এর আসল রূপ কিছুই দেখা যাবে না। মনে মনে একটু হতাশ হলাম। নদী ছেড়ে নৌকা এবার ছোট ছোট নালার মতন জায়গা দিয়ে চলছে।
বেশি দূরে যাওয়া গেলো না তলা মাটির সাথে ঠেকে গেলো। এবার নামতে হবে। ঘন জঙ্গল মত জায়গা দিয়ে চলতে শুরু করলাম।
জঙ্গল একসময় শেষ হল, সামনে দেখি বিশাল বিরান ভুমি। তার মাঝে মাঝে অল্প পানি আটকা পড়ছে। আর সেই পানিতে স্থানীয় লোকজন মাছ ধরছে। তাদের পার করে আরও সামনে গেলাম। আরও কত দূরে গিয়ে বুঝলাম সামনে দেখার মত আর কিছুই নাই।
কি আর করা ব্যাক করি। শীতের দিনে এদিকে আসলে রাতার গুল না গিয়ে নৌকা ঠিক করে নদীতে নৌকা ভ্রমন করাই ভালো। নদীর দু পাশে দেখার মত তেমন কিছু নাই। তবুও যাদের কাছে গ্রাম-নদী এসব একেবারেই অপরিচিত তারা বেশ মজা পাবেন। সব কথার শেষ কথা রাতারগুল যদি আসতেই হয় তাহলে ভরা বর্ষাকালে আসতে হবে। কারন তখন সব গাছগুলোই অর্ধেক পানির নিচে থাকে, এবং আসল সোয়াম্প ফরেস্ট দেখতে পারবেন। যা আমরা ডিসকভারি কিনবা ন্যাশনাল জিওগ্রাফী চ্যানেলে দেখে থাকি। ঘোরা ঘুরি শেষ করে আমরা আবার মোটরঘাট ফিরে এলাম। মোটরঘাটে দেখার মত একটা জিনিস আছে তা হল হিন্দু মন্দির এবং মুসলিম পীরের একজন মাজার একেবারে পাশাপাশি। কি অপূর্ব সৌহার্দ্য।
মোটরঘাট থেকে আবার সি এন জি করে সিলেট আম্বরখানা পয়েন্ট > টিলাগড় > লোকাল বাসে করে জাফলং। সময় লাগবে দু ঘণ্টা। ভাড়া জন প্রতি ৬৫ টাকা। দূরত্ব হিসাবে ভাড়া অনেক অনেক কম। যাবার সময় দেখতে পারবেন লালা খাল প্রকৃতির এক অন্য রকম ভুবন। দিনের আলোর সাথে সাথে এই খালের পানির রঙ বদলে যায়। কখনো নীল কখনো আবার গাড় সবুজ। জাফলং “মামার দোকান” জায়গায় আমরা নামলাম। নেমে প্রথমে আমরা খুজলাম সস্থায় কন হোটেল কিনবা বোর্ডিং আছে কিনা। সস্থায় এজন্য বলছে যে, তার কারন আমরা সবাই ভালো বাসায় থাকি ভালো খাই। ভ্রমনে এসে না হয় একটু কষ্ট করলাম। আমরা একটু থাকা ও খাওয়ায় একটু কষ্ট করি কিন্তু মজা করবো বেশি। মজা বেশি করতে গেলে থাকা ও খাওয়ায় খরচ একটু কম করতে হয়। যাই হোক পেয়ে গেলাম “পর্যটন হোটেল”। ডাবল বেড ভাড়া ৩৫০ টাকা। উঠে গেলাম। সারা দিন কিছু খাওয়া হয় নাই পেট চো চো করছে। পেয়ে গেলাম একটা রুটির হোটেল। বিশাল বিশাল মোটা মোটা রুটি নিমিষেই করে দিলাম আমি তিনটা, মুহিম দুইটা আর নবীন দেড়টা।
খাওয়া শেষ হতে প্রায় সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত কি আর করা রুমে ফিরে এলাম। সবাই একটু রেস্ট নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম। জাফলং নদীর তীর ধরে একটু হাটাহাটি করে আজকের দিনের মত ভ্রমন শেষ। দিনের শেষ সিগারেট জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
****২য় পর্বে জাফলং, ইন্দিয়ার জিরো পয়েন্ট, সংগ্রাম পুঞ্জি, রাখাইন পল্লী ও জাফলং চা বাগান ইত্যাদি নিয়ে আসবো। সে জন্য অপেক্ষায় থাকুন ****
কৃতজ্ঞতা প্রকাশেঃ নাইম, জয়নাল আবেদিন ও রশীদ মাঝি।
বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ আলম ভাই (সম্পূর্ণ অপরিচিত এক ভ্রমন পাগল লোক যে কিনা আমাদের ভ্রমন পূর্বক পোস্ট দেখে ফোন করে অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন)।
রাতারগুলের খুব বেশি ছবি দিতে পারি নাই কেননা স্ন্যাপ নেবার মতন বিশেষ কিছু চোখে পড়ে নাই। নিজেরা কিছু তুলেছি ওগুলাই দিলাম। পরের পোষ্টে আমাদের ছবি থাকবে খুব কম এবং স্পটের ছবি থাকবে বেশি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




