অ
একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণঃ
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের কঠিনতম রাজনৈতিক খেলাটি খেললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। আজ পর্যন্ত দেশের সবাইকে তিনি বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন- গডফাদার শামীম ওসমানই নাসিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী এবং সরকার শামীমকে যে কোন মূল্যে নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্যই সেনা মোতায়েন করেনি, ইভিএম সিস্টেম চালু করেছে ইত্যাদি এরকম আরো নানাবিধ ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু সবই ভুল। শেখ হাসিনা জনগণ তথা বিরোধীদল এমনকি মিডিয়ার চোখকেও ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়েছেন।
শামীম ওসমানকে দলীয় প্রার্থী করা থেকে শেখ হাসিনা নিজেও বিরত রাখতে পারেননি ব্যাক্তিগত দায় থেকে। শামীম ওসমানকে গড ফাদার বানিয়েছিল দলের হাই কমান্ড। তখন শামীমকে লেলিয়ে দিয়ে, তার কাঁধে বন্দুক রেখে গোলাম আজমকে ঠেকিয়ে, খালেদার লংমার্চ ঠেকিয়ে দল ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। ফলাফলঃ শামীম গডফাদার। দেশ থেকে বিতারিত। তার দায় থেকে এবারের নির্বাচনে শামীমকে হাসিনা বিরত রাখতে পারেননি।
শেখ হাসিনার কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল আইভীর জনপ্রিয়তার বিষয়ে। তাই তিনি আইভীকেও নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে পারেননি। বরং তিনি এই সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে গেম এর ছক আঁকেন। আইভীর ব্যাপারে হাসিনা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী থাকার কারণেই তিনি এই গেমে নামেন। শামীমকে দলীয় সমর্থন দেওয়ানো হয় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়ে। সবাই বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়- যে কোন মূল্যে আওয়ামীলীগ শামীমকেই বিজয়ী করতে চা্য়। কিন্তু ভিতরে কাজ করে আরেক চেতনা। যে কোন মূল্যে আইভীকেই বিজয়ী করতে চায় হাসিনা। এতে কি লাভ?
শামীমকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করার জন্য মন্ত্রী করার অফার দেওয়া হলেও সে তা প্রত্যাখ্যান করে। তাই সঙ্গত কারণেই নির্বাচনে শামীমের পরাজয় রাজনীতি থেকে চীর বিদায়। শামীমকে দলীয় সমর্থন- জাষ্ট আইওয়াশ। হাসিনা ভাল করেই জানেন নারায়নগঞ্জবাসী তথা দেশের জনগণের কাছে গডফাদার শামীম ওসমান বর্তমানে আর হিরো নন, জিরো। বিগত কয়েকদিনের গণমাধ্যমের টকশো ও পাবলিক রিভিউ বিচার বিশ্লেষন করলে সেটাই প্রমাণ হয়। তাই যে কোন মূল্যে আইভীকে বিজয়ী করে একটি বিশাল গেম এর মাধ্যমে শামীমকে এবারও বলির পাঠা বানানো হচ্ছে।
সেনা মোতায়েন না করা সরকারের পূর্ব সিদ্ধান্ত। সরকার দেশবাসীকে দেখাতে চায় সেনা মোতায়েন ছাড়াও আওয়ামীলীগের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সরকার করতে পারে। তাই যে কোন মূল্যে যে কোন সহিংসতা প্রতিহত করবে সরকার। ভোট কারচুপি অথবা মিডিয়া ক্যু সরকার যদি করে তবে তা আইভীর জন্যেই করবে।
ক্লিন ইমেজের আইভীর বিজয় প্রমাণ করবে নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে। পেশি শক্তির পরাজয় হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে। দেশবাসীর প্রশংসা পাবে। সাময়িকভাবে নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ঠিক, কিন্তু এটা বেশিদিন থাকবে না। নাসিক নির্বাচনে আইভীর বিজয় সরকারের জন্য সূদুরপ্রসারী সুফল বয়ে আনবে।
পূর্ববর্তী ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় দলীয় কমান্ড অমান্য করলে তার পরিণতি কি। কিন্তু নাসিক নির্বাচনে দলীয় কমান্ড না মানার কোন লক্ষণই প্রকাশ পায়নি। বরং দুইজনই আওয়ামীলীগের প্রার্থী। এটাই প্রমাণ করে, নাসিক নির্বাচন হাসিনার একটি গেম।
শেষ মূহুর্তে মধ্যরাতে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করল প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তাতেও সরকারের কিছু যায় আসেনা আইভী প্রতিদ্ধন্দীতায় থাকার কারণে। এটা গেমেরই একটা অংশ। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির কি লাভ হল? বিএনপি এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করে, সরকার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যে কোন মূল্যে শামীমকে বিজয়ী করতে চায়। রাতে বিএনপির প্রেস ব্রিফিং তাই প্রমাণ করে। বিএনপি তাই শামীমের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু মূল গেমটা কি, সেটা বিএনপি মনে হয় বুঝতেই পারেনি। বাস্তবতা কি? যখন আইভী নির্বাচনে বিজয়ী হবে, তখন এই শামীম ইস্যু বিএনপি কি কাজে লাগাবে? শামীমের পরাজয় মানে সরকারের পরাজয়? এটা কি পাবলিক খাবে? আওয়ামীলীগতো কৌশলে বিজয় নিজেদের কাছেই রেখে দিল। বিএনপির এই ভূমিকা প্রমাণ করে দলটি এখনও চাটুকার বেষ্টনী থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। দলে রাজনৈতিক গবেষকের অভাব রয়েছে। বরং বিএনপি যদি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার সাথে সাথে কায়দা করে একটি প্রচারণার মাধ্যমে বিএনপির ভোট আইভীকে দেওয়ার আহ্বান জনগণের নিকট পৌঁছে দিতে পারত, তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে একটি ইস্যু পেয়ে যেত। তখন বলতে পারতো সরকার শত চেষ্টা করেও শামীমকে বিজয়ী করতে পারেনি। শামীমের পরাজয় মানে সরকারের পরাজয়। কিন্তু এখন বিএনপি কি বলবে?
নাসিক নির্বাচন! শেখ হাসিনার ব্লেম গেম! বলির পাঠা শামীম! মধ্যরাতে বিএনপির বোধোদয়!!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২৫টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=
০১।
=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা
ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা
সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন
পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।
পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।
জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সমস্যা মিয়ার সমস্যা
সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।
তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন