একজন আবরার তৈরি করতে একজন মা-বাবা তাদের সারাটা জীবনই ব্যয় করে ফেলেন। সেই একজন আবরার দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ অবধি পৌঁছে যখন কোনরূপ অন্যায় করা ছাড়াই কিছু দুষ্ট লোকের নির্মম প্রহারে অপমৃত্যুর স্বীকার হন তখন তাঁর মা-বাবার সকল অভিশাপ গিয়ে রাজনীতিবিদদের উপরেই বর্তায়। কারন কেবল মাত্র ছাত্র রাজনীতির নামে নিতি হীন রাজনীতির বলী হয়েই আবরারকে অমন অভিশপ্ত মৃত্যু মেনে নিতে হয়েছে।
আবরারকে হত্যার দায়ে যে বিশ জনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হল এবং যে পাঁচজনকে যাবজ্জীবন জেল দেয়া হল। সেই পঁচিশটি ছেলেকেও তাদের মা-বাবা একই ভাবে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন। তাঁরা নিশ্চয়ই নিজেদের জীবনপাত করে এমন নৃশংস হত্যাকারী তৈরি করেন নি। এদের একজনের অভিভাবক বলছিলেন তাদের সন্তান মুরগির রক্ত দেখেও ভয়ে আঁতকে উঠত। সেটাই তো স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বে এই ছেলে গুলি তো এমন ছিল না। তাঁরা সুবোধ এবং সুশীল ছিল। ছিল অধ্যবসায়ী। নয়ত তাঁরা কিছুতেই এখানে ভর্তির সুযোগ পেত না।
প্রশ্ন হল, এই মেধাবী সুবোধ সন্তানেরা কেন এমন হত্যাকাণ্ড ঘটাল? কারাই বা তাদের রাতারাতি হত্যাকারী হিসেবে তৈরি করে ফেলল? যাদের সামনে ছিল একটি ঝলমলে সুন্দর ভবিষ্যতের হাতছানি। তাঁরা কিসের প্রলোভনে, কাদের খুশি করতে এমন জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হল? কারা তাদের অভয় দেন? কোন শক্তি তাদের অসুর করে তোলে? এই প্রশ্ন গুলির উত্তর তো এদের মা-বাবাকে দিতে হবে। সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিক কিংবা রাষ্ট্র। উত্তর পাওয়াটা ভীষণ জরুরী। এই প্রশ্নগুলির উত্তর যদি না মেলে তাহলে বার বার আমাদের সন্তানদের আবরারের ভাগ্য বরন করে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানার্জন করতে এসে অসংখ্য সন্তান নষ্ট হয়ে যাবে। সে দায় কে নেবে? এ দায় তাদেরই নিতে হবে যারা ছাত্র রাজনীতি না থাকলে দেশ রসাতলে যাবে বলে সুর তোলেন। যারা বার বার ছাত্র রাজনীতির অতীত ইতিহাস টেনে এনে একে মহিমাময় করে তোলার চেষ্টায় রত থাকেন। আজ যখন অভিযুক্ত পঁচিশটি ছেলের মা-বাবা বলেন আমাদের ছেলেগুলি রাজনীতির সাথে জড়িয়ে না পড়লে ওরা এমন কান্ড ঘটাত না তখন কি আমাদের রাজনিতিবিদগন লজ্জিত হন? একটিবারের জন্যও ভাবেন ঐ জায়গায় আপনি থাকলে আপনি করতেন। মহান সৃষ্টিকর্তা ছাড় দেন ছেড়ে দেন না। যার যতটুকু দায় তাকে তাঁর ততটুকু ভাড় বইতেই হবে।
ছাত্র রাজনীতি একটি পরাধীন দেশে যে ভূমিকা পালন করে সেই ভূমিকা কখনোই একটি স্বাধীন দেশে পালন করে না। একটি পরাধীন দেশে ছাত্র রাজনীতির যে প্রয়োজনীয়তা সেই প্রয়োজনীয়তা কখনোই একটি স্বাধীন দেশের থাকে না। এটা আমাদের নেতারাও ঠিকই বুঝতে পারেন কিন্তু কেবলমাত্র তাদের বিরুদ্ধে যায় এই ভয়েই তাঁরা ছাত্র রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেন। আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন কেবল মুল রাজনৈতিক দলগুলোর লাঠিয়াল বাহিনীর প্রয়োজনীয়তায়। আর সে প্রয়োজনেই মুল দলগুলো ছাত্রদের অন্যায় কাজে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। কিছু ছাত্র সেই সুযোগটাই গ্রহণ করে লেখাপড়া বাদ দিয়ে নেতাদের পদলেহনে ব্যস্ত হয়ে পরে। অল্প বয়সে অঢেল বিত্ত বৈভবের মোহে তারা অন্ধ হয়ে যায়। কে কার থেকে কতটা শক্তিশালী কে কতটা নেতাদের তুষ্ট করতে পারে এই প্রতিযোগিতায় নেমে পরে। আর সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতার স্বীকার হন সৎ মেধাবী শান্ত প্রকৃতির ছাত্ররা। আর শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা। এরপরেও যদি ছাত্র রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করেন তাহলে এই যে সন্তানগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাঁর দায়ও নিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:১৭