বৃদ্ধ বাবা-মা'কে রাস্তায় ফেলে গেছে ছেলে। অথবা বৃদ্ধ বাবা-মা'কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেছে ছেলে। খবরগুলিকে এখন পর্যন্ত আমরা নেতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছি। পক্ষান্তরে মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে ছেলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকে আমরা দেখি ইতিবাচক দৃষ্টিতে!
একটু খেয়াল করুন এই দুইয়ের মধ্যে একটি বিষয়ই কাজ করে আর সেটা হল বৈষয়িক স্বার্থ।
মা মারা গেছেন ছেলের তো অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা। মা'র প্রতি তাঁর ভালোবাসা। মা হারানোর শোক তো তাকে স্তব্ধ করে দেয়ার কথা। ছেলে কি করে পরীক্ষায় বসে? যদি একটি বছর তাঁর জীবন থেকে চলে যায় তাতে এমন কি আসে যায়? আর এই বিষয়টাকে আমাদের গণমাধ্যম কি করে প্রশংসায় ভাষায়? এমন ঘটনা একেবারেই নতুন নয়, প্রতিবছরই এমন দু একটা খবর আমরা পাই। আর ভাবি মানুষ দিন দিন কতটা যান্ত্রিক হয়ে উঠছে। মানুষের চিরায়ত বাৎসল্য, মমত্ববোধ সব যেন ধিরে ধিরে হালকা হয়ে যাচ্ছে। আর তাতে আবার আমাদের গনমাধ্যমগুলো উতসাহ যোগাচ্ছে!
যদি বিষয়টা এমন হত মা হাসপাতালে শয্যাশায়ী তাঁর সাথে সার্বক্ষণিক ছেলের উপস্থিত থাকার প্রয়োজন আর এই সময়েই ছেলের পরীক্ষা শুরু হল। ছেলে কি তখন মা'কে ফেলে রেখে পরীক্ষা দিতে চলে যাবে আর আমাদের গনমাধ্যম এভাবেই প্রসংশায় ভাষাবে?
ঠিক এভাবেই আমরা সব ছেড়ে এখন কেবল নিজেকে নিয়ে ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আর তাই কে বাচল - কে মরল তাতে আমাদের কিছুই আসে যায় না। ব্যক্তি আমি যেন ঠিক থাকি আমার স্বার্থহানী যেন না হয় আমরা কেবল সেটা নিয়ে সচেষ্ট থাকি। এটা কোন সুস্থ মানুষের চিন্তা ভাবনা হতে পারে না।
একজন মানুষ প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত হবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সেটা ঠিক আছে কিন্তু তাঁর আগে তাকে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন একজন ভাল মানুষ হতে হবে। নইলে সে শিক্ষিত অমানুষ হবে, যা অশিক্ষিত মানুষের থেকে অনেক বেশি ভংকর।,কাজেই যেটাকে আপনারা প্রশংসা করছেন আসলে সেটা মোটেই প্রশংসনীয় নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:১৭