আমার বাড়ির কার্ণিশে ভাড়া থাকে এক চড়াই দম্পতি। গেলো মাস চৈতে তারা খড়কুটো আর শুকনো গাছের ডালা-কঞ্চি নিয়ে উঠেছিলো কার্ণিশে।
তার আগের তিনমাস ওই কার্ণিশটা চড়াইহীন পড়েছিলো, ভাড়াটে পাইনি বলে
এতোদিন আমার অভাবে অভাবে কষ্টে কেটেছে রাত, সকাল-দুপুর।
রাতে ঘুম হতো না সকালটা শুন্য মনে হতো আর দুপুরকে মনে হতো
শব্দহীন-বধির। যাক, অবশেষে মিললো ভাড়াটে।
একদিন ভোরে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে, তিন সকালের গান গেয়ে
ওই চড়াই দম্পতি আমার ভাড়াটে হয়ে গেলো। ভাড়াটে মন্দ নয়।
রোজ রোজ ভোরে সকালের গান গেয়ে ওরা আমার ভাড়া ঠিকই দিয়ে যায়।
আর এতে আমার অভাবও গেছে কেটে। এখন আর নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হয় না।
এভাবেই, ওই চড়াই দম্পতি থাকতে লাগলো সুখে, আমার বাড়ির কার্ণিশে।
ওরা সংসার গোছালো খড়কুটো দিয়ে।
আর আমিও নিয়মিত ভাড়া পেয়ে যাই বলে ধীরে ধীরে ওদের প্রতি আমার
খোঁজ গেলো কমে। আমার আর কোনো অভাব নেই
ফলে এখন আমি ব্যস্ত ভীষণ কবিতার খাতা নিয়ে।
কিন্তু একদিন হলো গণ্ডোগোল। আমার কবিতার ছন্দগুলো এলোমেলো
হতে লাগলো, রাত হতে লাগলো ঘুমহীন। নিজেকে আবার অভাবী দরিদ্র
মনে হতে লাগলো। বাড়ির কার্ণিশটার ভাড়া ছাড়া আমার আর কোনো
আয় রোজগার নেই। সেই থেকে আমার আয় গেলো কমে, ভাড়া না পেয়ে পেয়ে।
আমি আর না পেরে, ক্ষেপে গিয়ে নোটিশ দিলাম কার্ণিশের দেয়ালে।
ভাড়া দাও না হলে উচ্ছেদ হও। অবাক কাণ্ড! তাতেও কোনো সাড়া দিলো না
ওই চড়াই দম্পতি। অবশেষে কবিতা লিখতে না পারার ক্ষোভে
আমি ওদের বাসায় উঁকি দিয়ে দেখি, ধবধবে সাদা দুটো ডিম।
তাতেও কবির মন গলেনি। কবিতা যেন মায়া ও ভালবাসারও উর্ধ্ধে।
কবিতার কোনো পিছুটান নেই।
তাই একদিন হুংকার দিয়ে বলি, ভাড়া দাও, ভাড়া দাও, ভাড়া দাও...
ঠিক তখনই কার্ণিশের ফোকর থেকে ডেকে ওঠে একটি চড়াই ছানা।
আমার চোখ আনন্দে নেচে ওঠে। আমি চিৎকার করে উঠি, পেয়েছি !!
আমি নিলামে তুলবো ওই চড়াই ছানার প্রথম ডাক। আমি রাস্তার মোড়ে,
বাজারের অলিতে-গলিতে ঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দিই,
নিলাম হবে নিলাম।
তাই শুনে একদিন ভোরে আমার বাড়ির উঠানে সমবেত হলো কয়েকজন কবি
তারা নাকি কিনে নিতে চায় চড়াই ছানার প্রথম ডাক, কবিতা লিখবে বলে
ছুটে আসে আঁকিয়ের দল, তারা দিতে চায় সর্বোচ্চ দাম।
ক'জন সুরকার, তারাও নাকি সুর দিতে চায় চড়াই ছানার প্রথম ডাকে।
দু'জন প্রাণীবিদ সকাল থেকে বসে আছে আমার পাশ ঘেঁষে,
তাদের নাকি গবেষণা প্রয়োজন।
অবশেষে কবিতার দোহাই, আমি ভাবি, থাক না। চড়াই ছানা আমারই থাক।
আমিই না হয় প্রতি ভোরে ওই চড়াই ছাড়ার ডাক শুনে শুনে কবিতা লিখবো।
কিন্তু হায়!! আমি কার্ণিশে উঁকি দিয়ে দেখি, কখন যে ডানা গজিয়েছে তার
কখন যে উড়ে গেছে পাখি... কেউ তা জানে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ৮:৩৯