somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিৎজার পুরস্কার ও পাঁচটি ছবির পিছনের গল্প...

০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুলিৎজার পুরস্কার হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি পুরস্কার, যেটি সংবাদ মাধ্যম, সাহিত্য ও সংগীতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রতিবছর প্রদান করা হয়ে থাকে। হাঙ্গারী তে জন্মগ্রহণ করা মার্কিন সাংবাদিক জোসেপ পুলিৎজার এর রেখে যাওয়া উইল এর বৌদলতে ১৯১৭ সালে এ পুরষ্কারের প্রচলন ঘটে। নিউইয়োর্কের কলোম্বিয়া ইউনিভার্সিটি এই পুরস্কার প্রদানের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে। ২১ টি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয়ে থাকে এ পুরষ্কারটি।

এই ২১ টি ক্যাটাগরির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘ফিচার ফটোগ্রাফী’ এবং ‘ব্রেকিং নিউজ ফটোগ্রাফী’ পুরষ্কার দুটি। ১৯৬৭ সালের পর ‘রিকগনাইজেবল ফটোগ্রাফি’ বিভাগটিকে ভাগ করে এ দুটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে পুরষ্কার দেওয়া হয়ে থাকে। তো আসুন আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেওয়া যাক পুলিৎজার পুরস্কার প্রাপ্ত কিছু ছবি, এবং জেনে নেওয়া যাক সেসব ছবির পিছনের গল্পটি।

American Soldiers Dragging Viet Cong
Photographer: Kyoichi Sawada,
Date: 19 August 1966




উপরের ছবিটি তুলেছেন জাপানি ফটোগ্রাফার Kyōichi Sawada। ১৯৬৬ সালের ৯ই আগস্ট দক্ষিণ ভিয়েতনামের Battle of Long Tan যুদ্ধ শেষ হবার পর তোলা হয়েছে এই ছবিটি। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, একজন ভিয়েতনামের একজন বিদ্রোহীকে হত্যার পর আমেরিকান সৈন্যরা ট্যাঙ্কের পিছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

ছবিটাতে যুদ্ধের বর্বরতা খুব ভালো ফুটে উঠেছে। তবে এই ছবি দেখে আপাতদৃষ্টিতে আমেরিকান সৈন্যদেরকে দোষারপ করাটা ঠিক হবে না। কারণ, এই ছবি তোলার আগের রাতে ভিয়েত কং এর সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ান সৈন্যদের ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা চালিয়ে অনেক সৈন্যকে হত্যা করে।

Lone Jewish Woman
Photographer: Oded Balilty,
Date: 1 February 2006




এই ছবিটি তোলা হয়েছে ইসরাইলের ‘এমোনা’তে, যেটি ইসরাইলের ওয়েষ্ট ব্যাঙ্কে অবস্থিত। ইসরাইল সরকার ‘এমনা’ কে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের শিবির বলে আখ্যায়িত করেছিল। কিন্তু সেই এলাকারসহ সমগ্র ইসরাইলের জনতারা এমনটি মনে করেনি। তাই ১০,০০০ পুলিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ‘এমোনা’র সকল অধিবাসীদের উচ্ছেদ করার জন্য।

হাজার হাজার পুলিশের সামনে যদিও তারা ছিল অসহায়, কিন্তু নিজের প্রিয় আবাসস্থলটকে কি চোখের সামনে ভেঙ্গে ফেলতে দেখা কার পক্ষে সম্ভব!! ছবিটিতে একজন ইহুদী মহিলাকে দেখা যাচ্ছে নিজের দেহের সর্বোচ্চ শক্তিটুকু দিয়ে হাজার হাজার সৈন্যকে ঠেকাতে। তা না হলে যে নিজের সাজানো গোছানো সংসারটিকে ধংসস্থুপে পরিণত করবে তারা... একপর্যায়ে হেরে যায় নির্মম বাস্তবতার কাছে... তখন তাদেরকে ‘অভিশাপ’ দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না মহিলাটির..।।

Saigon Execution
Photographer: Eddie Adams,
Date: 1968





এই ছবিটি হচ্ছে ইতিহাসের কুখ্যাত কিছু তোলা ছবির মধ্যে একটি। ছবিটি তোলার পরপরই গ্যানম্যানের গুলি উড়িয়ে দিয়েছিল ছবিতে থাকা ব্যাক্তিটির। লুটে পরেছিল মাটিতে... কি, খারাপ লাগছে খুব ? প্রচন্ড রাগে কাঁপছেন গ্যানম্যানের উপর ? লাগাটাই স্বাভাবিক, আমারও লেগেছিল প্রথমবার দেখার পর। কিন্তু ছবিটির পিছনের গল্পটি জানার পর হয়তোবা আপনার আর আমার মতো খারাপ লাগবে না।
ছবিতে বন্ধুক হাতে দাঁড়ানো গ্যানম্যান হচ্ছে ‘Nguyễn Ngọc Loan’, দক্ষিণ ভিয়েতনামের মেজর জেনারেল এবং ন্যাশনাল চিফ পুলিস। আর প্রিজনার এর নাম হচ্ছে ‘Nguyễn Văn Lém’, একজন ভিয়েত কং এর লোকাল অফিসার যে কিনা ‘সেইগন’ এলাকার সকল পুলিশ অফিসারকে নির্মমভাবে মেরে ফেলার অন্যতম হোতা। সে এক ডজনের ও বেশী পুলিশ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কে হত্যা করেছিল।
এডি এড্যামসের তোলা এই ছবি প্রেসে আসার পর তা সমালোচনার সৃষ্টি করে। কারণ তার তোলা ছবির মাধ্যমে গ্যানম্যানের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছিল ‘ভিয়েত কং’ এর সদস্যরা। যার দরুন গ্যানম্যান ও তার পরিবার এর জীবণ হুমকির মুখে পরেছিল। পরে অবশ্য ফটোগ্রাফার এডি এডামস দুঃখ প্রকাশ করে।

The Kiss of Life
Photographer: Rocco Morabito,
Date: 1967




এই ছবিতে যেই দুইজনকে দেখতে পাচ্ছেন তারা হচ্ছে লাইনম্যান। একজন হচ্ছে র‍্যান্ডাল চ্যাম্পিয়ন এবং আরেকজন হচ্ছে জে.ডি. থ্যম্পসন (বাম থেকে)। ১৯৬৭ সালের কোনো এক সকালে যখন তারা দৈনন্দিন রুটিনের মতোই লাইন চেক করছিল, র‍্যান্ডাল আটকা পরে যায় উচ্চ ভোল্টেজের একটি লাইনে। সাথে সাথেই র‍্যান্ডালের শরীরের মধ্য দিয়ে ৪০০০ ভোল্ট চলে যায়, আর বন্ধ হয়ে যায় র‍্যান্ডালের হৃদপিণ্ড... আপনারা হয়তো জানেন কিনা জানি না, তবুও বলছি, ইলেক্ট্রিক চেয়ারে ২০০০ বোল্ট ব্যবহার করা হয়। তাই ৪০০০ বোল্ট শরীর দিয়ে প্রভাবিত হওয়ার পর পরই র‍্যান্ডাল লুটিয়ে পরে নিচের দিকে। কিন্তু সেইফটি প্রোটেকশন এর কারণে ঝুলতে থাকে তারের সাথে। ‘থ্যম্পসন’ তখন ছিল র‍্যান্ডালের একটু নিচেই। সে রান্ডালের কাছাকাছি এসে হার্টবিট পুনরায় সচল করার জন্য CPR দিতে থাকে। যদিও ঝুলতে থাকা অবস্থায় কাজটি ছিল অসম্ভবের কাছাকাছি, তারপরও থ্যম্পসন হাল ছেড়ে দেয়নি। পেরামেডিক্স আসার আগ মূহূর্তে থ্যম্পসন সক্ষম হয় র‍্যান্ডালের লাঞ্চ সচল করতে..।।


Vulture Stalking a Child
Photographer: Kevin Carter
Date: 1993


কেভিন কার্টের কে চিনেন ?

কেভিন কার্টার এর একটি তোলা দূর্দান্ত ছবি আমরা সবাই কম বেশী দেখেছি। জ্বি হ্যাঁ, আমি নিচের ছবিটির কথাই বলছি। ছবিতে দেখছি দূর্ভিক্ষে জর্জরিত একটি শিশু মাথা নুয়ে বসে আছে, আর তার পাশেই বসে আছে একটি শকুন।



এবার আসি ছবিটির পিছনের গল্পে। ১৯৯৩ সালের মার্চে কেভিন তার সাংবাদিকতা পেশার জন্য গিয়েছিল সুদানে। সেখানে সে দেখতে পায় এই শিশুটি ‘ফিডিং ক্যাম্পের’ দিকে ঠুকে ঠুকে যাচ্ছে। যার পাশেই কিনা বসে আছে একটি শকূন, অপেক্ষা করছে তার মৃত্যুর.. এই দৃশ্যটি দেখে ছবি তুলে নেয় কেভিন, এবং শিশুটিকে সাহায্য না করেই চলে আসে। অতঃপর New York Times এর কাছে বিক্রি করে দেয় সে ছবিটি, যা ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ প্রকাশিত হয়। এবং তার পরই শুরু হয় বিশ্বজুড়ে তোলপাড়। হাজার হাজার মানুষ New York Times এ ফোন করে জানতে চায় শিশুটির পরিণতির কথা, জানতে চায় শিশুটি কি আদো পৌছাতে পেরেছিল কিনা ক্যাম্পে, নাকি...

১৯৯৪ সালে কেভিন জিতে নেয় পুলিৎজার পুরস্কার, কিন্তু সে বছরেরই ২৭ জুলাই সে আত্মহত্যা করে। সেদিন সে Braamfonte এ নিজের শৈশব যেখানে কাটিয়েছিল সেখানে যেয়ে নিজের পিক আপ ট্রাকের নিষ্কাশন পাইপ এর লাইন নিজের গাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করে কার্বণ মনোক্সাইড বিষক্রিয়ার মাধ্যমে। রেখে যায় তার সুইসাইড নোট...

"I am depressed ... without phone ... money for rent ... money for child support ... money for debts ... money!!! ... I am haunted by the vivid memories of killings and corpses and anger and pain ... of starving or wounded children, of trigger-happy madmen, often police, of killer executioners ... I have gone to join Ken if I am that lucky."

............................................................................................................।।
আজ এ পর্যন্তুই, সামনের পর্বে আরো বিশদভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করবো... সে পর্যন্ত ভালো থাকবেন।

আর হ্যাঁ, দেখা হবে আবার... যদি কিনা আমরা একই পথে থাকি...
............................................................................................................।।
১২টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×