ইচ্ছা ছিল আইনজীবী হওয়ার। হয়ে গেলেন চলচ্চিত্র তারকা। খেতাব পেলেন বিশ্বের সেরা সুন্দরীর। বলছি মনিকা বেলুচ্চির কথা। তার সৌন্দর্য নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পঞ্চাশে পা দিয়েছেন এ অভিনেত্রী। এখনো বিশ্বের সেরা সুন্দরীদের তালিকায় ১ নম্বর অবস্থানে রয়েছেন। অথচ এই ইতালীয় অভিনেত্রীর যে অভিনয় পেশার আশার ইচ্ছা বা সম্ভাবনা কোনটাই ছিল না তা ক’জনই বা জানি। ছোটবেলায় তার স্বপ্ন ছিল একজন ডাকসাইটে আইনজীবী হবেন। ভাগ্যের কী লীলাখেলা! জীবনের বাঁক ঘুরে তিনি এখন অভিনয় জগতের একজন আইকন।
বেলুচ্চি অনর্গল কথা বলতে পারেন ফ্রেঞ্চ, ইংলিশ, স্প্যানিশ ও ইতালিয়ান ভাষায়। প্যারিসের গ্রেভিন মিউজিয়ামে মনিকা বেলুচ্চির একটি মোমের প্রতিকৃতিও রয়েছে। আজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরব হলো মনিকা বেলুচ্চির জীবনের বিভিন্ন পট পরিবর্তনের নানা তথ্য।
[জন্ম ও পরিবার
১৯৬৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইতালির চিটা ডি ক্যাস্টেলো, পেরুজিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সংক্ষেপে তাকে সবাই মনিকা বেলুচ্চি নামে চিনলেও তার পুরো নাম মনিকা আনা মারিয়া বেলুচ্চি। তার বাবার নাম প্যাস্কুয়েল বেলুচ্চি, তিনি পেশায় একটি ট্র্যাকিং কোম্পানির কর্ণধার। মা ব্রুনেলা একজন পেইন্টার। মনিকা তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।
শৈশবের স্বপ্ন ও অভিনয়ে জড়ানো
শৈশবে মনিকার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একজন আইনজীবী হবেন। লক্ষ্য অনুযায়ী এগোচ্ছিলেনও তিনি। তিনি যখন ইউনিভার্সিটি অব পেরুজিয়াতে ভর্তি হন তখন তার স্কুলের খরচ পরিশোধ করার জন্য একবার মডেল হয়েছিলেন। আর এটাই তার জীবনের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়। মডেলিংয়ের ডাক আসে বিভিন্ন জায়গা থেকে। শেষে আইনী পড়াশুনা বাদ দিয়ে মনোনিবেশ করেন মডেলিং পেশায়। নিজেকে মডেল হিসেবে ঘষেমেজে তৈরি করার জন্য ১৯৮৮ সালে তিনি চলে যান মিলানে। সে সময় মিলান ছিল ইউরোপের ফ্যাশন কেন্দ্র। সেখানে গিয়ে এলিট মডেল ম্যানেজমেন্ট এ যোগ দেন।
[অভিনয় জীবন
শুরুতে টুকটাক মডেলিংয়ের মাধ্যমে রূপালী জগতে পদচারণা শুরু করা মনিকা বেলুচ্চির অভিনয়ে অভিষেক হয় ১৯৯০ সালে। ‘ভিটা কোই ফিজলি’ নামের একটি টিভি নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার এই অভিষেক হয়। মুভিতে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা সেই বছরই হয়। ‘ব্রিজান্টি’ বা ইংরেজি ‘লাভ অ্যান্ড লিবার্টি’ মনিকা বেলুচ্চির প্রথম মুভি। প্রথম মুভিতেই নিজের জাত চিনিয়ে দেন এ অভিনেত্রী। ছড়িয়ে পড়ে সুনাম। ফলে ইতালির গন্ডি পেরিয়ে ডাক পান হলিউডে। ১৯৯২ সালে অভিনয় করেন আমেরিকার ‘ব্রাম স্টোকার’স ড্রাকুলা’ মুভিতে। এরপর ১৯৯৬ সালে অভিনয় করেন ‘এল অ্যাপার্টমেন্ট’ বা ‘দি অ্যাপার্টমেন্ট’ মুভিতে। ১৯৯২ সাল থেকে শুরু করে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৫৯ টি মুভিতে অভিনয় করেন বেলুচ্চি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি পায় তার ইতালীয় ‘Le meraviglie’ বা ইংরেজী ‘The Wonders’ মুভিটি। এছাড়া মনিকা বেলুচ্চির উল্লেখযোগ্য মুভিগুলোর মধ্যে রয়েছে –
আন্ডার সাসপিশন (২০০০), মালেনা (২০০০), ইরিভার্সিবল (২০০২), দি ম্যাট্রিক্স রিলোডেড (২০০৩), দি ম্যাট্রিক্স রিভলিউশনস (২০০৩), দি প্যাশন অফ দি ক্রাইস্ট (২০০৪), ও এন (লো ই নেপোলিয়ন) (২০০৬)।
[সবচেয়ে সুন্দর ঠোঁটের অধিকারী
বৈজ্ঞানিকভাবে মনিকা বেলুচ্চির ঠোঁটকে সবচেয়ে সুন্দর ঠোট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ড. কেন্ড্রা শিমিড নামে একজন বায়োমেট্রিকস বিশেষজ্ঞ এবং লিপোলজিস্ট লিপ অ্যাট্রাক্টিভনেস বা ঠোঁটের আকর্ষণীয়তা পরিমাপ করার একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। সেই সফটওয়্যারের ভিত্তিতে ১০ পয়েন্টের স্কেলে পূর্ণ ১০ পয়েন্ট পেয়ে নাম্বার ওয়ান র্যাংকিং দখল করেছেন মনিকা। তার ঠোঁট যেমন ভরাট, তেমনি মসৃণ এবং এর উচ্চতা ও দৈর্ঘ্যের অনুপাত একেবারে আদর্শ দুই-তৃতীয়াংশ।
[বিশ্বের সেরা সুন্দরী
আগেই বলেছি মনিকার বয়স এখন ৫০ এর ঘরে। এই বয়সে এসেও অনেক তরুণী সুন্দরীদের হারিয়ে বিশ্বের সেরা সুন্দরীর মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে হলিউডবাজ ওয়েবসাইটের এক জরিপে তিনি এই খেতাব জয় করেন। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছেন মডেল কেট আপটন এবং হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। চতুর্থ স্থানে রয়েছেন সাবেক বিশ্ব সুন্দরী ও বলিউড অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ মনিকাকে বিশ্বের সেরা প্রতিভাবান ও সুন্দরী নারী হিসেবে ভোট দিয়েছেন। এর আগে ২০০৪ সালের ৮ নভেম্বর লা প্লাস বেলে ফেম ডু মন্ডে নামে টিভি শোতে ফরাশি দর্শকদের ভোটে দি মোস্ট বিউটিফুল ওম্যান ইন দি ওয়ার্ল্ড হয়েছিলেন মনিকা।
[মনিকার রূপের রহস্য
মনিকার কথায় বয়স ধরে রাখতে আহামরি কিছুই করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘বয়স ধরে রাখার জন্য বিশেষ কিছুই করি না আমি। এমনকি বিশেষ কোন খাদ্য তালিকাও মেনে চলি না। আমার প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে ইতালিয়ান পাস্তা আর পারমিজিয়ানো। তবে ছবিতে চরিত্রের প্রয়োজনে ডায়েট করে ওজন যেমন কমাতে পারি, তেমনি ওজন বাড়াতেও পারি।’
[প্রেম-ভালোবাসা ও বিয়ে
১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত অভিনেতা নিকোল ফ্যারনের সাথেই প্রেম ছিল মনিকার। কিন্তু তাদের সেই প্রেমের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত টেকেনি। ১৯৯৫ সালে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে দুই অভিনয় শিল্পীর। এর ৪ বছর পর ১৯৯৯ সালে ফরাসি অভিনেতা ভিনসেন্ট কাসলকে বিয়ে করেন মনিকা। ২০০৪ সালে তাদের ঘর আলো করে আসে তাদের প্রথম কন্যা সন্তান ‘দেভা কাসল’। ‘মিউনি’ নামে তাদের আরও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মনিকার সাথে ভিনসেন্ট ক্যাসেলের প্রথম পরিচয় হয়েছিল ১৯৯৬ সালে ‘দ্য অ্যাপার্টমেন্ট’ ছবির সেটে। ওই ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে বয়সে দুই বছরের ছোট ক্যাসেলের প্রেমে পড়েন মনিকা। তবে ২০১৩ সালে এসে দীর্ঘ ১৪ বছরের সংসার জীবনে ভাঙ্গন ধরে তাদের। বিয়ের পর থেকেই মনিকা ও কাসল বেশিরভাগ সময়ই আলাদা থাকতেন। মনিকা থাকতেন লন্ডনে আর কাসল থাকতেন প্যারিসে।
[নতুন প্রেমের সম্পর্ক
প্রেম মানে না বয়স। ১৪ বছরের সংসার জীবনে ভাঙনের পর নতুন করে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন বেলুচ্চি। বিবাহ বিচ্ছেদের অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ম্যাক্সিকান এক ধনকুবেরের সঙ্গে বেলুচ্চির প্রেমের বিষয়টি বেশ আলোড়ন তোলে। তবে বিয়ে বিচ্ছেদের আগে থেকেই অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকেই নাকি তাদের দুজনের মধ্যে এই সম্পর্ক চলে আসছিল। এ কারণেই মনিকার বিবাহ বিচ্ছেদ বলে ধারণা ঘনিষ্ঠ অনেকের।
এ পর্যন্তই আজ