somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রহীমুদ্দির শাওন

১৫ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-আইজু, আমার পলিথিনডা দে তো বাজান !

ছেলে আইজুদ্দিকে ডাকে রহিমুদ্দি। কাল থেকে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। থামার কোন লক্ষণই নাই। রাতে একটু ক্ষান্ত দিয়েছিল। রহিমুদ্দি ভেবেছিল, যাক- বাঁচা গেল। নাহ, তার ভাবনাটা ভুল হয়ে গেল। আর বাঁচা বুঝি গেল না ! শেষরাত থেকেই আবার শুরু হয়েছে সেই ঝুম বৃষ্টি। ঢল নেমেছে বর্ষার।

পলিথিনটা মাথায় জড়িয়ে নিল সে। তারপরে রিক্সা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল। ঘরে একমুঠো চালও নেই যে চার চারটা মুখকে খাওয়াবে। নিজের কথা না হয় বাদ ই দিল ! আরও যে তিনটা মুখ- বউ হাজেরা, ছেলে আইজুদ্দি আর মেয়ে রহিমা চেয়ে আছে তার দিকে! ওদের কি হবে !

বেড়িবাঁধের ওপারে তার বস্তির ঘরের চালায় হাজারটা ফুটো। কাল সারাদিন ঘরে পানি পড়েছে। ভিজে গেছে বিছানা-বালিশ, কাপড়-চোপড়- এমনকি রান্নার চূলাও। লাকড়িগুলোও রেহাই পায় নি।

-ও আইজুর বাপ, একটা বিহিত কর। সব যে ভিইজে গ্যাল! রাধমু কিবা কইরে আর থাকমুই বা কিবা কইরে ?- সারাবেলা হাজেরা প্যান প্যান করেছে। কিন্তু সারাবে কি করে ? হাতে যে একটা পয়সাও নেই তার! দিন আনে দিন খায়। নুন আনতে তার পান্তা ফুরায়।

এসব ভাবতে ভাবতে রিক্সা ঠেলতে থাকে রহিমুদ্দি। রাস্তায় হাঁটুখানেক পানি জমে গেছে। রিক্সা চালানোই দায়। কোনমতে ঠেলে ঠুলে মোড়ের উপরে এসে দাঁড়াল।

একটা ভাড়াও পায় না। শাওনের ঝুম বৃষ্টি। মাথার উপরে থমথমে আকাশ। কে তার রিক্সায় উঠবে ! সবাই তো যাচ্ছে বাসে আর প্রাইভেট গাড়ি করে। তবু ঠায় দাড়িঁয়ে থাকে আশা নিয়ে, যদি একটা পাওয়া যায়!

-এই খালি, কলেজ মোড় যাবা ?
-হ বাইজান, যামু।
-চল।
রিক্সায় উঠে বসল এক যাত্রী। হাঁটুখানেক পানি-কাদার মধ্যে দিয়ে কোনমতে ঠেলে ঠুলে নিয়ে গেল সে। কলেজ মোড়ে এসে রিক্সা থামল।

লোকটা কয়েকটা টাকা বের করে রহিমুদ্দির হাতে ধরিয়ে দেয়।
-বাইজান, আর পাঁচটা টেহা।
-যাও মিয়া, এই তো ভাড়া ! ফুটা রিক্সা. পানি পড়ে ! আর পাঁচটা টাকা চাও ক্যামনে?
রিক্সা থেকে নেমে হনহন করে চলে যায় লোকটা। বৃষ্টিতে জবুথবু রহিমুদ্দি তার পানে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে।

হাতের মুঠোয় টাকাগুলো ধরে রাখে। মাথায় তার হাজারটা চিন্তা। ঘরে একমুঠো খাবার নেই। ঘর ভাঙ্গা, চালা ফুটা- কখন যেন ভেসে যায় যায় অবস্থা। শাওন মাস। বৃষ্টির যে চেহারা তাতে যে কোন সময় বন্যায় সব তলিয়ে যাবে। তার উপর যদি এভাবে কামাই হয় তাহলে খাবেই বা কি আর থাকারই বা কি হবে?

সারদিন বৃষ্টিতে ভিজে আরো দু-চারটা ভাড়া পেল রহিমুদ্দি। রিক্সাটা রাস্তার মোড়ে দাঁড় করিয়ে খুঁটে রাখা টাকাগুলো গুনে দেখল। নাহ, আর কাকভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার দরকার নেই। চাল কেনার মত টাকা হয়েছে। এবার যাওয়া যাক। চাল কিনে নিয়ে বাড়ির দিকে রিক্সা ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গেল।

সন্ধ্যা হতে না হতেই রাস্তায় পানি আরো বেড়ে গেছে। -ঘরডার যে কি হইল?-চিন্তা ভীড় জমাল তার মাথায়।

ঠেলে ঠুলে রিক্সা নিয়ে এসে বস্তির সামনের রাস্তাটায় দাঁড়াল রহিমুদ্দি।

-হায় আল্লাহ, একি হইল !-
মাথায় হাত দিয়ে পানির মধ্যেই বসে পড়ল সে। ঘর তার তলিয়ে গেছে পানিতে। ছেলে-পুলে, বউ তার আর সবার সাথে বাঁধের উপরে বসে অসহায় চোখে তাকিয়ে। বৃষ্টির পানি আর নদীর পানিতে একাকার হয়ে গেছে পুরো বস্তি এলাকা। চাল-চুলো সবই যে তার এখন বন্যার পানিতে !

- হায়রে শাওন, একি করলি আমার !- দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল রহিমুদ্দির বুক চিরে ।


(বি.দ্র: গল্পটি চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স থেকে প্রকাশিত মাসিক শিশু-কিশোর দ্বীন দুনিয়া জুলাই -'১১ সংখ্যায় প্রকাশিত । প্রিয় এক ব্লগার ছোট ভাইয়ের জন্যে আমার গল্পটা ব্লগে দিয়ে দিলাম )
১৮টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×