somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু তোমায় মনে পড়ে ......

০৬ ই আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগষ্ট মাসের প্রথম রোববার .....এবার ৭ ই আগষ্ট ..বন্ধু দিবস । বন্ধুত্ব.......জিনিসটাই অন্যরকম। পরিবারের বাইরে একটা জগত । ভাললাগার...হৃদয়ের গভীরতার এক হাতছানি । দীর্ঘ জীবনের পথ পরিক্রমায় মানুষ অনেকের সাথেই বন্ধুত্ব করে থাকে । কিন্তু সব বন্ধু তো আর টিকে থাকে না ...মহাকালের অতল গর্ভে হারিয়ে যায় ।
জীবনের বেশ কয়েকটা ধাপ পার করে এসেছি । কৈশোরটা হারিয়ে গেছে আমার......সেই সাথে হারিয়ে গেছে আমার কৈশোরের বন্ধুবেলা......হারিয়ে গেছে আমার কৈশোরের বন্ধুগুলো ।
ছোট্টবেলায়....যখনও স্কুলে ভর্তি হইনি তখন আমার বান্ধবী ছিল বাবলি । আমাদের বাসার পাশে ওর নানুবাড়ি । নানুবাড়িতেই বেশি থাকত । একসাথে ঘুরতাম, খেলতাম...সারাটাদিন একসাথেই কাটাতাম । ওদের বাড়িতে একটা বড়ই গাছ ছিল । ও গাছে উঠে বড়ই পেড়ে আমাকে এনে দিত । কত কত মজার স্মৃতি ছিল ওর সাথে । আমার সেই বান্ধবী আজ আমার থেকে অনেক দূরে । কতদিন হলো যোগাযোগ নেই ...দেখাও নেই । ও যখন নানুবাড়িতে আসে আমি যে তখন ঢাকায় !

এরপরে.......আসি স্কুল লাইফে । ভর্তি হলাম পাবনা আলিয়ায়....ক্লাস থ্রিতে । আমার শিক্ষা জীবন শুরু হল । দেখা পেলাম এক বান্ধবী হাসির। একই এলাকাতে আমাদের বাসা । একসাথে দু'জন মাদরাসাতে যেতাম । ক্লাস শেষে বাকি সময়টুকু ও আমাদের বাসাতেই থাকত । লেখা-পড়াও দু'জন একসাথে করতাম ।যখন ঈদ আসত তখন সবচেয়ে বেশি মজা করতাম দুজনে । ও ঈদের আগের দিন বিকেলে ঈদের ড্রেস পড়ে ঈদকার্ড নিয়ে আমাদের বাসায় আসত । ঈদকার্ড দেয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা লেগে যেত দুজনের মধ্যে ....কে আগে দিবে ! এরপর ঈদের সকালে একসাথে ঘুরতে বের হতাম। সারাদিন ঘুরে বিকেলে বাসায় ফিরতাম । ক্লাসেও অনেক মজা করতাম। মাদরাসা থেকে একটু দূরে একটা শিউলি গাছ ছিল । ক্লাস শুরুর আগে ফুল কুড়িয়ে এনে মালা গাঁথতাম । এভাবে চলল ক্লাস এইট, নাইন...নাইনে এসে হাসিকে হারাতে হল :( মাইগ্রেনের আক্রমণে লেখা-পড়াই ছেড়ে দিতে হল তাকে....বাসা থেকেও বিয়ে দিয়ে দিল । এবার বাসায় গিয়ে তার জীবনের বিষাদময় পরিনতির কথা শুনলাম...মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে গেল ....তার জীবনে কি এই লেখা ছিল !

এরপরে.....নাইনে উঠে দুইটা বান্ধবী পেয়েছিলাম...ক্লোজ, খুবই ক্লোজ । বৃষ্টি আর শারমিন । বৃষ্টিটার বাসা আমাদের এলাকাতেই ..আর শারমিনের পাশের এলাকাতে ।রিজার্ভড রিক্সা করে মাদরাসায় যেতাম .....আমি আর বৃষ্টি একসাথে । একটু কিছু হলেই আমাদের বাসায় চলে আসত। ওর বোনের বাসার সাথে একটা নার্সারি ছিল । আমাকে ওখান থেকে ফুলগাছ এনে দিত ...একেবারে ফ্রিতে । প্রতিবার আমার বার্থডেতেও ওর থাকা ছিল বাধ্যতামূলক । আর শারমিনটা...ও ছিল অনেক মজার । প্রথম দিন যেদিন পাবনা মহিলা মাদরাসা থেকে আলিয়াতে ভর্তি হয় সেদিন বৃষ্টি ছিল না ।গম্ভীর হয়ে বলেছিল ওরা নাকি ১২০ টা ভাইবোন ! পরের দিন বৃষ্টি এসে হাজির । সেই থেকে গলায় গলায় ভাব । সেই নাইন, টেন, ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার....সেকেন্ড ইয়ারে বৃষ্টির বিয়ে হয়ে গেল .....সেদিন অনেক মজা করেছিলাম । এরপর ইন্টার শেষ করে ভার্সিটিতে চলে এলাম । যোগাযোগটা থেকেই গেল । শারমিনটারও বিয়ে হয়ে গেল। বৃষ্টি থাকে নারায়ণগঞ্জ আর শারমিন উত্তরায় । হঠাৎ ...এইতো সেদিন......এ বছরের জানুয়ারীতে বাসা থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম ভোর সাতটার পাবনা এক্সপ্রেসে। বাস যখন পাবনার আতাইকুলায় তখন শুনতে পেলাম ওখানে ছয়টার পবনা এক্সপ্রেস একসিডেন্ট করেছে । কিছুক্ষণ পরে আম্মুর ফোন এল ......স্তব্ধ হয়ে গেলাম । চোখ ফেটে কান্না এল । আমার প্রিয় বান্ধবী বৃষ্টি আর নেই । সে ঐ পাবনা এক্সপ্রেসে করে নারায়ণগঞ্জ ফিরছিল :((
শারমিনটার সাথে এখনো যোগাযোগ টিকে আছে । আর কৈশোরের সেই একমাত্র বান্ধবী যার সাথে আমার বন্ধুত্ব এখনো হারিয়ে যায়নি ।
ভার্সিটিতে এসে অনেক বন্ধু -বান্ধব পেয়েছি । তবে সবচেয়ে বেশি ক্লোজ (আমার রুমমেট+ ইয়ারমেট+ বান্ধবী) নিপা আর (এক্স বেডমেট+রুমমেট +রড়আপু নাকি বান্ধবী :P) জাফরিন আপু । ক্লাসের বাইরে সারাটা দিন তাদের সাথে কাটাই । একসাথে খাই , ঘুরি , আড্ডা দেই । মনের যত যা আছে সব তাদের সাথে শেয়ার করি । যে কোন ওক্যাশন অনেক মজা করে পালন করি। প্রত্যেক বন্ধু দিবসে অনেক মজা করি । এবারও আজ রাতে ....কাল দিনে করা হবে ...কিন্তু......আমার সেই হারিয়ে যাওয়া বন্ধুগুলো .......সেই চপল মুখগুলো কোনদিন দেখতে পাব না..........! বন্ধু......আমার হারিয়ে যাওয়া বন্ধুগলো.....তোমাদের খুব মনে পড়ে.....খুব মনে পড়ে......!
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×