somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিনে পয়সার গল্প :P

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় দেখতাম পাড়ায় পাড়ায় ভ্যানে করে অথবা গাড়িতে করে অনেক কিছু বেচতে আসত। টুংটুং করতে করতে আইসক্রিম বেচতে আসত.....নয়ত আচার ওয়ালার ভ্যানে বাজত পুরানা দিনের বাংলা সিনেমার গান ! অনেক সময় আবার গল্পের বই বেচতে আসত.....দুই টাকা, তিন টাকা, পাঁচ টাকা ( বুঝতেই পারছেন কেমন সাইজ তার )! এটা কোন গ্রামের চিত্র ছিল না .....কিংবা সেই মুঘল আমলেরও চিত্র নয়। এইতো সেদিন মানে ৯৮...৯৯...২০০০ সহ আরও দু'এক বছরের কথা ...আর প্লেস টা শহরতলীতে !

আমার আবার ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি মারাত্মক ঝোঁক ছিল (তাই বলে পড়তে বসে কোন বই ছিঁড়ি নি ! সেই কাস ওয়ানের বইও এখন পর্যন্ত অত আছে আমার !:P) বাসায় প্রচুর বই থাকত...”শিশু” পত্রিকা, নানান ধরণের মজার মজার গল্পের বই আরো কত কি ! তারপরেও ঐ দুই টাকা-পাঁচ টাকা ওয়ালা এলেই আব্বুর কাছে বায়না ধরতাম, আব্বু, কিনে দাও...একটা গল্পের বই !!! আব্বু গিয়ে কিনে আনত ....পড়তাম সেই দুই টাকার গল্প !

তো চলুন সবাই একটা দুই টাকার গল্প শুনি.......না , এখানে দুই টাকার নয়, একেবারে বিনি পয়সার গল্প !!!!

এক গ্রামে ছিল এক কানা আর এক ল্যাংড়া । তো, দুইজনেই কোন কাজ করতে পারত না। সবার ঘাড়ে বসে খেত। তো একবার ল্যাংড়াকে দিল বাড়ি থেকে বের করে। সে গিয়ে নদীর ঘাটে বসে রইল। এমন সময় কানাও বাড়ি থেকে ঘাড়-ধাক্কা খেয়ে মনের দু:খে হাঁটতে থাকল।হঠাৎ ল্যাংড়ার চোখ পড়ল রাস্তার উপরে। সে চিল্লাতে থাকল, ও কানা ভাই, কই যাও ? কানা উত্তর দিল, মনের দু:খে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি । যেখানে পারি চলে যাব। ল্যাংড়া বলে উঠল, আমিও তো বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি, ভালই হলো। চলো আমি আর তুমি দু’জনে একসাথে চলে যাই।
দুজনে ঘাটে গিয়ে এক মাঝিকে পেয়ে বলল, ও মাঝি ভাই, আমাদের এই নদীটা পার করে দাও , তোমাকে এক আনা দেব । মাঝি নাছোড়বান্দা। সে বলে, নাহ, এক আনায় হবে না ।দুই আনা লাগবে । দ্জুনেই বলে উঠল, ঠিক আছে , পার করে দাও।
মাঝি তাদের ঘাটে নামিয়ে দিল। তারা বলল, মাঝি ভাই, আমরা তো বাড়ি থেকে একেবারে চলে এসেছি। সাথে কোন টাকা-পয়সা নাই । তুমি ঘাটে বসে থাক, আমরা কাজ করে টাকা এনে দিচ্ছি। মাঝি টা ছিল অনেক ভাল মানুষ। সে তাদের কথা মেনে নিল।
এখন পথ চলার পালা। ল্যাংড়া কানার ঘাড়ে উঠে বসে তাকে পথ দেখাতে লাগল আর কানা পথ চলতে থাকল। চলতে চলতে সন্ধ্যা হয়ে এল। রাস্তার মধ্যে পেল এক চুন-ওয়ালার বাড়ি। তারা ঠিক করল, এখানেই রাতটা কাটাবে। দরজায় গিয়ে হাঁক ছাড়ল, ও চুনে ভাই, আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি, রাতটা তোমার বাড়িতে থাকতে চাই। চুনে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল। ল্যাংড়া আর কানা খাইয়ে দাইয়ে দিল একটা ঘুম। ঘুম ভাঙ্গল যখন বাড়ির অন্যরা তখন গভীর ঘুমে অচেতন। কানা আর ল্যাংড়া দুইটা চুনের হাড়ি চুরি করে বের হল। আবার হাঁটা। এইবার সামনে পড়ল এক বিশাল রাজপ্রাসাদ। সদর দরজা খোলা। লাংড়া উঁকি দিয়ে দেখল ভেতরে কেউ নেই। কানাকে বলল, চল কানা ভাই , এর ভেতরে ঢুকি। কানা ল্যাংড়াকে ঘাড়ে নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। ল্যাংড়ার তো চোখ ছানাবড়া! ভেতরে খাবার-দাবার আর হিরে-জহরতে ভরা ! কিন্তু এত বড় বাড়িতে একটা মানুষও নাই! ও কানা ভাই, জান কি দেখছি ! তুমি তো দেখতে পাচ্ছ না ! আমাদের চারপাশে খালি হিরে-জহরত! আমরা এইবার বড়লোক হয়ে যাব!....ল্যাংড়া বলে উঠল। চল, আগে আমরা খেয়ে নেই। এই বলে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো তারা।
আসলে ঐ বাড়িটাতে থাকত রাক্ষসরা। তারা ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত আর সন্ধ্যা বেলায় ফিরে আসত। হঠাৎ সেদিন কি মনে করে একটা রাক্ষস আবার তাড়াহুড়ো করে আগেই ফিরে এল। রাক্ষসটা ছিল দলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। বাড়ির সামনে এসে দেখে,রান্নার ঘ্রাণ বের হচ্ছে। বাহির থেকেই বলল, রান্নাঘরে কেঁ রেঁ ? কানা বলে উঠল, তুই কে রে ? জবাব এল, আমিঁ রাক্ষস। দুইজনের ই পিলে চমকে গেল! কানার আবার ছিল অনেক বুদ্ধি । সে বলে উঠল, আমি তোর বাবা খোক্কস ! রাক্ষসটা ভাবল, সত্যিই বুঝি কোন খোক্কস আছে । তারপরেও নিশ্চিত হওয়ার জন্যে বলল, লেজ টা বাড়া দেখি তুই কেমন খোক্কস ! কানা ভেতর থেকে একটা লাঠির সাথে চুন মেখে বের করে দিল। রাক্ষসটা লেজ ভেবে কামড়াতে থাকল। এবার কানা বলল,এবার তোর লেজটা দেখি ! যেই না রাক্ষসটা লেজ বাড়ায়ে দিল ওমনি ল্যাংড়া দিল লেজটা কেটে। ওমনি বাবাগো মাগো বলে দৌড়ে পালালো। দলপতির কাছে গিয়ে খোক্কসদের কথা বলে দিল। ওরা তখন দলে বলে প্রাসাদের দিকে রওনা দিল।
এদিকে কানা ল্যাংড়াকে বলল, চল, ওরা আসার আগেই আমরা এখান থেকে চলে যাই। একটা বস্তার মধ্যে কিছু হিরে-জহরত আর মোহর নিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়ল। বের হতেই দূর থেকে ঐ লেজ কাটা রাক্ষসটা ওদের দেখতে পেয়ে বলল, ঐ যে খোক্কস দুইটা চলে যাচ্ছে ! এদিকে ওদের দেখতে পেয়ে ল্যাংড়া আর কানা পালানোর রাস্তা খোঁজা শুরু করল। হঠাৎ ল্যাংড়া একটা তাল গাছ দেখতে পেয়ে কানাকে উঠে যেতে বলল। কানা কোন রকমে হাতড়ে হাতড়ে গাছে উঠল আর একটা দড়ি নামিয়ে দিল। ল্যাংড়া ঐ দড়ি বেয়ে গাছে উঠে পড়ল।
এমন সময় ঐ রাক্ষসের দল তালগাছের গোড়ায় এসে হাজির। কানা আবার একটা তাল ছিঁড়ে তালে চুন মাখাতে শুরু করল। এমন সময় রাক্ষস দলের নেতা বলে উঠল, এই তোরা কেমন খোক্কস নিচে আয়, দেখি একবার! কানা আর ল্যাংড়া কোন উত্তর দিল না। তখন সবাই গাছে ওঠার ফন্দি আঁটল। গাছের গোড়া ধরে বসল ঐ লেজকাটা রাক্ষসটা....তার ঘাড়ে চেপে বসল আরেকটা রাক্ষস.....তার ঘাড়ে আরেকটা....তার ঘাড়ে আরেকটা.....এভাবে যখন গাছের মাথা ছুঁই ছুঁই হয়ে গেল তখন ল্যাংড়া ভয় পেয়ে কানাকে জড়িয়ে ধরল আর কানা রেগে মেগে হাতের চুন মাখানো তাল টা ধুম করে নিচে ফেলে দিল । সবচেয়ে নিচে যে লেজ কাটা রাক্ষসটা বসে ছিল সে ভয় পেয়ে চেচাঁতে চেচাঁতে দৌড় দিল, ওরে বাবাগো, খোক্কসটা ক্ষেপে গেছে। আর বাকিগুলো হুড়মুড় করে পড়ল একটা আরেকটার উপর । পড়েই উঠে ভোঁ দৌঁড় !
এই সুযোগে কানা আর ল্যাংড়া গাছ থেকে নেমে মোহরের বস্তাটা নিয়ে তাড়াতাড়ি করে নদীর ঘাটের দিকে হাঁটা দিল। এসে দেখে, মাঝিটা বসেই আছে। তারা ঐ মোহর থেকে তাকে কিছু দিল আর তার নৌকায় করে গ্রামে ফিরে এল।
.........................................................................................................


১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×