somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন জীবন

১১ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-এ্যাই ওঠ!

এমন নবাবী চালে ঘুমাচ্ছিস যে বড়!

কাজ করব কি তোর মায়?

বাড়িওয়ালীর হাঁক-ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায় রতনের। উঠতে ইচ্ছে করছে না তার। এমনিতেই যে শীত পড়েছে আজ কাল। তারপরে আবার বাড়িওয়ালীর ফুট-ফরমাশ খেটে গভীর রাতে শুতে হয়।

কতই বা বয়স তখন। পাঁচ-ছয় বছর বয়স হয়ত হবে। ফুটপাতে পড়ে ছিল সে। ঐ বড় মহল্লার ধন্যাঢ্য ব্যবসায়ী আকন্দ সাহেব রোজ সকালে মর্নিং ওয়াকে বের হন। একদিন হঠাৎ করে চোখ পড়ল ছেলেটার দিকে।

-কিরে ? কি নাম তোর?

-রতন।

-এখানে কি করিস? বাড়ি-ঘর নাই তোর?

-এইহানেই থাহি। কিছুই নাই আমগো।

-বাপ-মা নাই?

-হেরাও নাই।

-কি করে খাস?

-কিছুই করিনা, যা পাই তাই খাই।

-তাইলে আমার সাথে চল।

আজ-কাল কাজের ছেলে-মেয়েদের পাওয়া যায় না। একটা ছিল, তাও আবার ভেগেছে। তাই রতনকে সাথে করে নিয়ে এলেন আকন্দ সাহেব। ঠাঁই দিলেন নিজ বাড়িতে।

সেই থেকে তার এ বাড়িতে কাজ শুরু। আজ সাত-আট মাস হতে চলেছে এ বাড়িতে। বাড়িওয়ালার গাড়ি মোছা থেকে শুরু করে বাড়িওয়ালীর থালা-বাসন ধোয়া পর্যন্ত বাদ যায় না তার।

সেই পাখি-ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে তবেই নিস্তার, তবেই একটু ঘুম। আদর-যত্ন না পেলেও প্রথম প্রথম ভালই ছিল অন্তত। কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হয়েছে বাড়িওয়ালীর গালি-গালাজ আর মার-ধোর। পান থেকে চুন খসলেই সেরেছে তার। চড়-থাপ্পর, আরো কত কি? আর গালি-গালাজ, সে-তো তার নিত্য-সঙ্গী।

-এ্যাই ছোড়া, উঠবি না? উঠ, নইলে…

অগত্যা উঠে পড়ে রতন। এই হাড় কনকনে শীতেও হাড়-ভাঙ্গা খাটুনী খাটতে হয় তার। ঘুম থেকে উঠেই কুয়াশার ভারী চাদরের সামিয়ানার ভেতরে নেমে পড়ে। বাড়ির সামনে গ্যারেজে চলে যায় গাড়ি মুছতে। গ্যারেজ থেকে ফিরেই সোজা রান্নাঘরে। সেখানে যে কত কাজ জমা পড়ে আছে!

হঠাৎ ঝনাৎ শব্দ। বাড়িওয়ালী ছুটে আসে রান্নাঘরের দিকে।

-আবার ভাঙ্গলি! রোজ রোজ ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে সব তো শেষ করে দিলি! কাজ তো করতেই পারিস না , আবার…! বেরো আমার বাড়ি থেকে !!!

মারতে মারতে রতনকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় বাড়িওয়ালী। নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে গেটের বাইরে। এখন সে কোথায় যাবে? তার তো কেউই নেই। কাজের বিনিময়ে যা একটু ঠাঁই পেয়েছিল তাও তো শেষ! ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকে রতন। এক সময় দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়, বিকেল গড়িয়ে রাত আসে।

* * * * *

রাশেদ হেঁটে যাচ্ছিল ফুটপাত ধরে আর রুটিন-মাফিক এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল। হঠাৎ চোখ চলে গেল একদিকে। ফুটপাতের উপরে কি যেন একটা কুন্ডলী পাকিয়ে আছে। কাছে যেতেই দেখল, পিচ্ছি একটা ছেলে। বয়স ছয় কি সাত! গায়ে জামা নেই। ফুটপাতে শুয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। ছেলেটার কাছে এগিয়ে গেল রাশেদ।

-কি নাম তোমার?

-রতন।

-এখানে কেন? কেউ নেই তোমার?

-স্যার, আমার কেউ নাই। এক বাড়িত কাম করতাম। হেরায় খালি মারত। আমারে তাড়ায়া দিছে হেরা। সেই থিকা আমি এহানে।

-চল আমার সাথে।

রাশেদ ছেলেটাকে নিয়ে নিজ গন্তব্যে হাঁটা দিল।

তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক বন্ধু মিলে একটা সংঘ করেছে পথশিশুদের জন্যে। সংঘের খরচ দেয় বেশ কিছু শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী আর জনহিতৈষী মানুষেরা। এই শীতে যারা ফুটপাতে পড়ে কষ্ট পাচ্ছে ওদেরও স্থান দিয়েছে সংঘটাতে।

রোজ সকালে একেকজন একেক দিকে বের হয় আর পথশিশুদের নিয়ে আসে। রতনকেও নিয়ে এল আজ। ওকে কাপড়-চোপড় দিল। পথশিশুদের স্কুলে ভর্তি করে দিল। সংঘের হাত ধরে নতুন জীবন পেল রতন।
---------------------------------------------------------------------
(অ.ট. আমার এই গল্পটি চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত মাসিক শিশু কিশোর দ্বীন দুনিয়া-জানুয়ারী-২০১২ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। এককপি ব্লগেও দিয়ে দিলাম :)
মূল গল্প: http://www.skdeendunia.com/archives/252 )
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×