হাওয়া আর ঢেউয়ের উল্টোদিকে
এই যে কবিতা, বইবে আমার স্বাক্ষর
তোমাকে দিয়েছি ধ্বনিমুখরিত ছয়টি মাত্রা−
একটি চাহনি যা বয়ে বেড়ায় (আহত পাখির মতন)
কোমল বেদনা,
কুসুম গরম অথৈ পানির একটু স্বস্তিহীনতা,
একটি আঁধার দপ্তর যার আলোর উৎস
মাত্র আমারই কবিতা
তোমার অনেক একঘেয়ে রাতে জীর্ণ একটি
আঙ্গুলের আবরণ
আমাদের যত ছেলেমেয়েদের একটি আলোকচিত্র
আমার সঙ্গী পিস্তলটির অতি অপরূপা গুলি,
সন্তানদের (সতত গোপন অথচ অতল) যুক্তিরহিত স্নৃতি
যা কিনা একদা ধারণ করেছি আমরা,
এবং আমার কাছে গচ্ছিত জীবনের কিছু শান্তি,
সবই (সানন্দে আর অকাতরে) দিয়ে দিই বিপ্লবকে
এমন তো কোনো শক্তি নেই যা
মিলতে দেবে না আমাদের।
[এটিই চে গুয়েভারার লেখা শেষ কবিতা। লিখেছিলেন তাঁর শেষ অভিযাত্রার কালে। তাঁর যে সময় ফুরিয়ে আসছে, এ কবিতায় সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। বোঝা যায়, এ কবিতাটি তিনি লিখেছিলেন তাঁর কিউবান বংশোদ্ভুত দ্বিতীয় স্ত্রী আলেইদার উদ্দেশে। এ কবিতায় ধরা আছে তাঁর জীবনের অন্তিম অভিপ্রায়। জন লি আন্দেরসনের চে গুয়েভারা: এ রেভ্যুলেশনারি লাইফ, ব্যান্টাম বুকস ১৯৯৭ থেকে]
অনুবাদ: সাজ্জাদ শরিফ
এবং এখানে
আমি মেস্তিজো! জ্বলন্ত প্যালেট হাতে চেঁচিয়ে উঠল চিত্রকর,
আমি মেস্তিজো! আকাশপথে ডেকে যায় উড়ন্ত পাখি,
আমি মেস্তিজো! বিস্কোরিত হয় কবির প্রতিবাদ।
আমি মেস্তিজো! বলে উঠল সেই লোক যে আমাকে
প্রতিটি রাস্তার কোণে খুঁজে পায় দৈনন্দিনের যন্ত্রণায়
এবং এমনকি মৃতদের পাথুরে রহস্য
উজ্জ্বল কাঠের মতো কঠিন ভালোবাসায়
‘সে-ই হলো মেস্তিজো, আমার ভেতরের অদ্ভুত সন্তান’।
আমিও মেস্তিজো, তবে একটু অন্যভাবে:
সেই সংগ্রামে, যেখানে দুই শক্তি পরস্পরের
প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
আমার বুদ্ধিকে করে সংহত, আনে বিভাজন
যে শক্তি গাছে ফল পেকে উঠবার আগেই তার
ভেতর থেকে নিয়ে আসে সময়ের গন্ধ!
আমি ঘুরে বেড়াই হিস্পানিক আমেরিকায়
সীমান্ত ধরে ধরে, সেই অতীতকে ছুঁতে, যা ঘিরে
আছে এই মহাদেশ।
দুর, বহুদুর থেকে ভেসে আসা ঘণ্টার আওয়াজের মতো
স্নৃতিগুলি কী মধুরিম, আশ্চর্য সুবেশ।
প্যালেঙ্ক
তোমার পাথরের চুড়ায় চুড়ায় জীবনের স্পন্দন
হে আমার সবুজ নীলিমা!
বহু জন্েনর নিঃশব্দ গাম্ভীর্য তোমার
সাজিয়েছে সমাধির নিশানা।
ঝুলে পড়া মোটা কাচ বিজ্ঞের উৎসাহে
কখনো বিব্রত ভীষণ,
কখনো আক্রান্ত
মার্কিন পর্যটকের কুৎসিত রসিকতায়,
অথবা নিকষ সবল স্পর্শে।
আমি জানি না, একি অদ্ভুত!
ব্যাপ্ত অরণ্য তোমাকে বুকে টেনে নিয়েছে,
আলিঙ্গন করেছে
প্রতিটি গাছের মাথায় মাথায় আকুল আহ্বানে,
মৃত্তিকার গভীরে তাদের শিরায় শিরায়।
প্রাজ্ঞ প্রাণিতত্ত্ববিদ চলে যান ছবির সেই প্রান্তসীমায়
যেখানে আলোকিত তোমার মন্দির, কন্ঠস্বর
এবং যেখানে এখনো তুমি বেঁচে আছ, অবিনশ্বর!
কোন শক্তি যে তোমাকে শতাব্দীর পর
শতাব্দী ধরে বাঁচিয়ে রেখেছে, বেঁধেছে যৌবনের স্বর,
কে জানে! ঈশ্বর তোমাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন
নিজেরই পায়ের ওপর অবিচলতার কোন তপ্ত প্রয়াসে?
একি কোনো ক্রান্তিকালের উল্লাসে ফেটে পড়া সুর্য?
তাহলে চিচেন ইত্জাতে নয় কেন?
তা কি অরণ্যের মুক্ত আকাশের কলতান,
নাকি পাখিদের হালকা হাওয়ার নিবিড় গান?
কিন্তু কুইরিগুয়া এত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কেন?
তা কি সিয়েরার পাথরে আছড়ে পড়া দুরন্ত নদীর
যৌবনের কলোচ্ছ্বাস?
ইন্কারা এখন শুধু অতীত ইতিহাস।
[এর্নেস্তো চে গেভারা: প্রবন্ধ কবিতা ডায়েরি চিঠিপত্র, নাট্যচিন্তা, কলকাতা থেকে]
অনুবাদ: রথীন চক্রবর্তী

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




