somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চে গুয়েভারার কবিতা : স্বরচিত : এটা না পড়ার সুযোগ নষ্ট করবেন ?

১১ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাওয়া আর ঢেউয়ের উল্টোদিকে
এই যে কবিতা, বইবে আমার স্বাক্ষর
তোমাকে দিয়েছি ধ্বনিমুখরিত ছয়টি মাত্রা−
একটি চাহনি যা বয়ে বেড়ায় (আহত পাখির মতন)
কোমল বেদনা,

কুসুম গরম অথৈ পানির একটু স্বস্তিহীনতা,
একটি আঁধার দপ্তর যার আলোর উৎস
মাত্র আমারই কবিতা
তোমার অনেক একঘেয়ে রাতে জীর্ণ একটি
আঙ্গুলের আবরণ
আমাদের যত ছেলেমেয়েদের একটি আলোকচিত্র

আমার সঙ্গী পিস্তলটির অতি অপরূপা গুলি,
সন্তানদের (সতত গোপন অথচ অতল) যুক্তিরহিত স্নৃতি
যা কিনা একদা ধারণ করেছি আমরা,
এবং আমার কাছে গচ্ছিত জীবনের কিছু শান্তি,

সবই (সানন্দে আর অকাতরে) দিয়ে দিই বিপ্লবকে
এমন তো কোনো শক্তি নেই যা
মিলতে দেবে না আমাদের।

[এটিই চে গুয়েভারার লেখা শেষ কবিতা। লিখেছিলেন তাঁর শেষ অভিযাত্রার কালে। তাঁর যে সময় ফুরিয়ে আসছে, এ কবিতায় সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। বোঝা যায়, এ কবিতাটি তিনি লিখেছিলেন তাঁর কিউবান বংশোদ্ভুত দ্বিতীয় স্ত্রী আলেইদার উদ্দেশে। এ কবিতায় ধরা আছে তাঁর জীবনের অন্তিম অভিপ্রায়। জন লি আন্দেরসনের চে গুয়েভারা: এ রেভ্যুলেশনারি লাইফ, ব্যান্টাম বুকস ১৯৯৭ থেকে]
অনুবাদ: সাজ্জাদ শরিফ

এবং এখানে

আমি মেস্তিজো! জ্বলন্ত প্যালেট হাতে চেঁচিয়ে উঠল চিত্রকর,
আমি মেস্তিজো! আকাশপথে ডেকে যায় উড়ন্ত পাখি,
আমি মেস্তিজো! বিস্কোরিত হয় কবির প্রতিবাদ।
আমি মেস্তিজো! বলে উঠল সেই লোক যে আমাকে
প্রতিটি রাস্তার কোণে খুঁজে পায় দৈনন্দিনের যন্ত্রণায়
এবং এমনকি মৃতদের পাথুরে রহস্য
উজ্জ্বল কাঠের মতো কঠিন ভালোবাসায়
‘সে-ই হলো মেস্তিজো, আমার ভেতরের অদ্ভুত সন্তান’।
আমিও মেস্তিজো, তবে একটু অন্যভাবে:
সেই সংগ্রামে, যেখানে দুই শক্তি পরস্পরের
প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
আমার বুদ্ধিকে করে সংহত, আনে বিভাজন
যে শক্তি গাছে ফল পেকে উঠবার আগেই তার
ভেতর থেকে নিয়ে আসে সময়ের গন্ধ!
আমি ঘুরে বেড়াই হিস্পানিক আমেরিকায়
সীমান্ত ধরে ধরে, সেই অতীতকে ছুঁতে, যা ঘিরে
আছে এই মহাদেশ।
দুর, বহুদুর থেকে ভেসে আসা ঘণ্টার আওয়াজের মতো
স্নৃতিগুলি কী মধুরিম, আশ্চর্য সুবেশ।

প্যালেঙ্ক

তোমার পাথরের চুড়ায় চুড়ায় জীবনের স্পন্দন
হে আমার সবুজ নীলিমা!
বহু জন্েনর নিঃশব্দ গাম্ভীর্য তোমার
সাজিয়েছে সমাধির নিশানা।
ঝুলে পড়া মোটা কাচ বিজ্ঞের উৎসাহে
কখনো বিব্রত ভীষণ,
কখনো আক্রান্ত
মার্কিন পর্যটকের কুৎসিত রসিকতায়,
অথবা নিকষ সবল স্পর্শে।
আমি জানি না, একি অদ্ভুত!

ব্যাপ্ত অরণ্য তোমাকে বুকে টেনে নিয়েছে,
আলিঙ্গন করেছে
প্রতিটি গাছের মাথায় মাথায় আকুল আহ্বানে,
মৃত্তিকার গভীরে তাদের শিরায় শিরায়।
প্রাজ্ঞ প্রাণিতত্ত্ববিদ চলে যান ছবির সেই প্রান্তসীমায়
যেখানে আলোকিত তোমার মন্দির, কন্ঠস্বর
এবং যেখানে এখনো তুমি বেঁচে আছ, অবিনশ্বর!
কোন শক্তি যে তোমাকে শতাব্দীর পর
শতাব্দী ধরে বাঁচিয়ে রেখেছে, বেঁধেছে যৌবনের স্বর,
কে জানে! ঈশ্বর তোমাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন
নিজেরই পায়ের ওপর অবিচলতার কোন তপ্ত প্রয়াসে?
একি কোনো ক্রান্তিকালের উল্লাসে ফেটে পড়া সুর্য?
তাহলে চিচেন ইত্জাতে নয় কেন?

তা কি অরণ্যের মুক্ত আকাশের কলতান,
নাকি পাখিদের হালকা হাওয়ার নিবিড় গান?
কিন্তু কুইরিগুয়া এত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কেন?
তা কি সিয়েরার পাথরে আছড়ে পড়া দুরন্ত নদীর
যৌবনের কলোচ্ছ্বাস?
ইন্কারা এখন শুধু অতীত ইতিহাস।

[এর্নেস্তো চে গেভারা: প্রবন্ধ কবিতা ডায়েরি চিঠিপত্র, নাট্যচিন্তা, কলকাতা থেকে]
অনুবাদ: রথীন চক্রবর্তী
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×