somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিটামিন সি'র প্রথম ট্রেন ভ্রমন (জীবনে প্রথম ট্রেন ভ্রমনের গল্প)।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৯৯৩-৯৪ সালের কথা লিখছি। আমাদের বাড়ি ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের পাশে। রাস্তার পাশে হওয়াতে যান্ত্রিক যানবাহনগুলির সাথে ছোটবেলা থেকেই পরিচিত। কিন্তু কোনদিনও ট্রেন দেখিনি তখনও। কারণ ট্রেন লাইনের কাছে কোন স্বজনের বাড়ি নেই, ঢাকায়ও তখন যাওয়া হয়নি, ময়মনসিংহে গেলেও ওই মচিমহা/চড়পাড়া পর্যন্তই। তাহলে ট্রেন দেখবো কিভাবে? না দেখার কারণেই মনের ভেতর এক দূর্দমনীয় কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে ট্রেন সম্পর্কে।
১৯৯৩ সাল, আমার বড় আপার এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তারপরই খালুজান আসলো তাদের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যেতে বড় আপাকে। আমার খালা বড় আপাকে খুব আদর করেন, আমাকেও আদর করেন। তবে খালু মনে হয় বেশি আদর করেন আমাকে। কারণ খালু আমাকে ছোট শ্বশুর বলে ডাকেন। শ্বশুর ডাকে বলে লজ্জায় আমি উনার সামনেই যাই না। আমিও তো ছোট তখন। কত আর বয়স হবে, আট বছর মাত্র। খালু কেমন আদর করেন বলছি, আমাকে কেউ তাদের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে গেলে উনার সকল কাজ-কর্ম বন্ধ। শেষ রাতে পুকুরে জাল নামাবে, অনেক মাছ ধরবে, তারপর ৪/৫ টা বড় কার্ফু মাছ ছাইয়ের গাদায় রেখে এসে আমাকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে মাছ দেখাবে আর গল্প করবে। বলবে আমি এসেছি শুনে তাদের পুকুরের মাছ নাকি লাফিয়ে বাড়িতে যেতে চেয়েছিলো, পরে রাস্তা চিনে নাই, তাই এখানে লাফাইতেছে!! (সোনলী অতীত)। এলাকার সবার সাথে সকালেই একদফা পরিচয় করাবে, বলবে "আমার ছোট শ্বশুর এসেছে" - আমার এই খালু এইরকমই। থাকে না কিছু মানুষ অতিথীবৎসল, তিনি সেই রকমই একজন। খালার বাড়ি যাওয়ার প্রধান আকর্ষনই ছিল খালার হাতের বানানো নানা রকম মজাদার পিঠা-পুলি।

তো যাই হউক, খালু আমাদেরকে নিয়ে তাদের বাড়িতে গেলেন। রাতে খালার পিঠা বানানোর উৎসব চললো। রাতেই ঠিক হলো ভোরবেলা আমাদেরকে ট্রেন দেখাতে নিয়ে যাবেন, তাই খুব ভোরে উঠতে হবে। তারপর আমাদেরকে ট্রেনে করে নিয়ে যাবেন উনার এক আ্ত্মীয় বাড়িতে। ভোরবেলা উঠলামও ঘুম থেকে। আগেই বলে রাখি আমার খালার বাড়ি একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে সবে মাত্র গতবছর পল্লীবিদ্যুৎ তাদের বিদ্যুৎ বিতরণ শুরু করেছে (ত্রিশাল+গফরগাঁয়ের সীমার কাছাকাছি নদীর পাড় এলাকায়)। এখান থেকে যাওয়ার মাধ্যম তখন কেবল হাঁটাই ছিল, এখনকার মতো এতো রিকশা, ভ্যান, সিএনজি ছিল না তখন। তো শুরু হলো আমাদের জার্ণি টু রেল লাইন। ভোর বেলা খালু, আমি বড় আপা আর খালাতো বোন হাল্কা নাস্তা করেই বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য ধলা রেল স্টেশন; হাঁটছি তো হাঁটছিই। খালুদের বাড়ি থেকে পূর্বদিকের কাঁচা মাটির রাস্তা ধরে। ট্রেন দেখার উত্তেজনায় কতটুকু রাস্তা হাঁটলাম তার খেয়াল নেই। উত্তেজনা হবেই না বা কেন? খালুদের বাড়ির যত ছেলে মেয়ে আছে তারা ট্রেনের হুইসেল শুনেই বলে দেয় এইটা অগ্নিবীনা, এইটা যমুনা, এইটা বলাকা ইত্যাদি (পরে জেনেছি হুইসেল শুনে নয়, সময় জেনে তারা বলে, তবে সঠিক ও না, আমাকে আবুল পেয়ে মন যা চায় তা ই বলে দেয় আর আমি তো তাই বিশ্বাস করি)। এই রকম করতে করতে চলে আসলাম ধলা রেল স্টেশনে, গফঁরগাঁওয়ের পরের স্টেশন সম্ভবত। এখানে এসেই খালু দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো যে বলাকা/অথবা অন্য কোন নাম, ঠিক মনে নেই, চলে গেছে কিনা। দোকানদার জানাল, বলাকা আজকে লেট এখনো আসে নাই।

তারপর এক দোকানে বসে আমরা সবাই কাঠগজা নামক মিষ্টি খেলাম, হাঁটতে হাঁটতে ক্ষুধা তো সবারই লেগেছে। খাওয়ার পরেও ট্রেন আর আসে না। অপেক্ষা করছি ট্রেনের জন্য। স্টেশনের পাশেই দেখি তখন দুই-তিনজন লোক পুকুরে কাটা মাংস ছুঁড়ে দিচ্ছে। সেটাই দেখতে লাগলাম। ওই স্টেশনের পাশেই তখন একটা বিদেশী মাগুর মাছের খামার ছিলো। খামারী মরা গরুর মাংস কেটে পুকুরের পানিতে ফেলছে আর মাগুর মাছ সেই কাটা মাংস নিয়ে গুতাগুতি, মারামারি করে খাচ্ছে। ইয়া বিশাল বিশাল মাগুর। (সেটা বর্তমানে শাপলা মৎস হ্যাচারি হয়েছে, ট্রেন থেকে এখনও এই হ্যাচারি দেখা যায়) এই দৃশ্য আগে কোথাও দেখি নাই। তখনো মাছের চাষ আমাদের এলাকায় শুরু হয় নাই। মাছ বলতে বিল আর পুকুরের মাছ চিনি।
তারপর আরো আরো অপেক্ষা, এইবার খালু আমাদের চা-বিস্কিট কিনে খাওয়ালেন। আমি তো গরম চা খেতে পারি না। তখন বুদ্ধি দিলেন কাঠি বিস্কুট (টোষ্ট) চায়ের কাপে ভিজিয়ে খেতে এতে করে চাও খাওয়া হবে, বিস্কিটেরও একটা হিল্লে হবে। আমি তো আর খাইনা। আরে আমি চা খাওয়া শুরু করলাম আর অমনি ট্রেন চলে আসলো, তারপর আমি দেখতে পেলাম না। আমি কি আর এত বোকা নাকি!!

অগত্যা যখন ট্রেন আর আসেই না, তখন ঠান্ডা চা খেলাম। তার আরও পরে ট্রেন আসার হুইসেল শোনা গেল, আমি তো ভেতরে ভেতরে দারুন উচ্ছসিত। ট্রেন আসলো, থামলো। লোকজন নামলে-উঠলো, আমরাও উঠলাম। হায়রে মানুষ আর মানুষ, ট্রেনের ভেতরে পা ফেলার জায়গা নেই। এত মানুষ আমি আগে আর দেখি নাই। নিজেকে কতক্ষন পরে আবিস্কার করলাম আমি এক লোকের কোমর জড়িয়ে আছি। ট্রেন মাঝ রাস্তায় মানে বালিপাড়া/আওলিয়া নগর আসার আগেই থেমে গেল। লোকজন হৈ হৈ করতে লাগলো কি হলো, কি হলো বলে। পরে জানা গেল অন্য ট্রেন ময়মনসিংহ থেকে এসে পড়েছে এই একই লাইনে। সেটা প্ল্যাটফর্ম ক্রস করলে এটা প্লাটফর্মে ঢুকবে। উরে বাপ্পস, থামা টে্রনে কি গরম!! কোন বাতাস নেই, ফ্যান নেই। ট্রেন থামা অবস্থায় খালু সর্বক্ষন আমার হাত ধরে রাখলেন। সব শেষে ট্রেন আ্ওলিয়া নগর থামলো, আমরা নামলাম। ওমা একি, এখানে তো দেখি রেল লাইন কেম প্যাঁচানো। খালুকে জিজ্ঞেস করে জানলাম এখানে আরো ৩টা লেন আছে। একটা মালগাড়ির মাল রোড করার জন্য, একটা প্লাটফর্ম বিজি থাকলে অন্য ট্রেন বাইপাস করার জন্য। শেষ হলো ভ্রমন, তারপর সেখান থেকে টেম্পুতে করে খালার বাড়ি পেীঁছতে পেীঁছতে দুপুর গড়িয়েছে। একটা ম্যাচ, আমার গপ্প শেষ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০২
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×