মনে আছে জমিদার মিঞার ব্যাটার সেই উক্তি - টাকা আমার চাই, নইলে জমি?
মনে আছে সংশপ্তক নাটকের কথা?
মনে আছে কপালে ছ্যাঁকা সহ হুরমতীর কথা? মনে আছে কুমারী হুরমতী সন্তানের জন্ম দিলে ধর্মগুরুর সহায়তায় সমাজপতিরা তার যে বিচার করে? মনে আছে যে সমাজপতি মূল বিচারকের আসনে বসা ছিল সেই হুরমতীকে ধর্ষন করেছিল?
মনে আছে সমাজপতিরা লেকু নামে এক খেটে খাওয়া লোককে হেনেস্তা করেছিল কারন সে প্রশ্ন উপস্থাপন করেছিল যে একজন নারী কোন পুরুষের ভূমিকা ছাড়া গর্ভধারণ করতে পারে না?
শহিদুল্লাহ কায়সারের সংশপ্তক উপন্যাস অবলম্বনে আবদুল্লাহ আল মামুন নাট্যরূপ দিয়েছিলেন যা বিটিভিতে প্রচার হয়েছিল। উপন্যাসের পটভূমিতে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলন, দাঙ্গা, মহামারী, দেশ বিভাগ এবং ইংরেজদের বিদায়।
বাংলার এক কোনে ছোট এক গ্রাম বাকুলিয়া। গ্রামের এক প্রান্তে মিঞা বাড়ী, আরেক প্রান্তে সৈয়দ বাড়ি। বাকুলিয়া গ্রামের মানুষের জীবনকাহিনী, জমিদারের শোষন, নায়েবের কূটচাল, প্রতিবাদী যুবকের সমাজ পরিবর্তন করবার যুদ্ধ, নারীদের প্রতি সমাজের অন্যায় এসব নিয়ে সংশপ্তক।
বরিশালের উত্তর কড়াপুরে মিঞা বাড়ীর পুরনো মসজিদ দেখতে যেয়ে শুনলাম এই মিঞাবাড়ীর কথাই উঠে এসেছে শহিদুল্লাহ কায়সারের সংশপ্তক উপন্যাসে। শহিদুল্লাহ কায়সার নাকি এখানে এসেছিলেন।
জমিদার বাড়ী এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ, কিচ্ছু নেই, কিচ্ছু না। তবে মসজিদটি টিকে গেছে। সাম্প্রতিককালে মসজিদটি রঙ করা হয়েছে যার কারনে প্রাচীন বৈশিষ্ট্যগুলোর কিছু কিছু বিলীন হয়েগেছে। উঁচু বেসম্যাণ্টের উপর রয়েছে মুল মসজিদ এবং নীচতলায় বেসম্যাণ্টের ভেতরে আছে কয়েকটি কক্ষ। মসজিদটির উপরিভাগে তিনটি ছোট আকারের গম্বুজ আছে । উপরিভাগ এবং সবগুলো মিনারে এবং গম্বুজে রয়েছে কারুকাজ।
মসজিদের পুবপাশে একটি বিশাল পুকুর আছে। পুকুরপার থেকেও মসজিদটি দেখতে বেশ লাগে।
এই উত্তর কড়াপুরে মিঞা বাড়ীর ষষ্ট প্রজন্ম বাস করে এখন। জৌলশহীন বেঁচে থাকা। তাই তো হবে কারন উপন্যাসে আছে নায়েব কানকাটা রমজান মিঞার ব্যাটার জমিদারি দখল করে নিয়েছিল সেই চল্লিশের দশকে।
ষষ্ট প্রজন্মের একজনের সাথে কথাও হলো, অভিজাত, পরিশীলিত তার চলাফেরা, চোস্ত তার পোশাক। আমাদের বেশ খাতির করলেন। দুপুরের খাবার তার ঘরে করে যেতে বললেন, আমরা বিনয়ের সাথে অপারগতা জানালাম।
যাওয়া যায় কিভাবেঃ
বরিশাল শহরের হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা থেকে বাসে করে কড়াপুর পপুলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় হয়ে মিঞা বাড়ী যাওয়া যায়। পপুলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মিঞা বাড়ী এক কিলোমিটার পথ। রিকশা বা ভ্যান হতে পারে যান। বরিশাল শহরের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকেও যাওয়া যায়। প্রথমে যেতে হবে বসুরহাট। সেখান থেকে রিকশা বা ভ্যানে মিঞা বাড়ী।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:০৬