somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদি আরব ডায়েরি - ১৫ (দাম্মাম ভ্রমন ও অন্যান্য)

১১ ই মে, ২০১১ বিকাল ৫:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার দু’জন কাজিন দাম্মাম থাকেন। তাই ঠিক করলাম দাম্মাম ঘুরে আসব। দাম্মাম সম্পর্কে প্রথমেই যেটা জানলাম- সেখানে প্রচন্ড গরম, ৫০ ডিগ্রি’র আশে পাশে সবসময়ই থাকে।
দাম্মাম সৌদি আরবের ৩য় বৃহত্তম শহর যা পূর্বাঞ্চলের রাজধানী। এবং পৃথিবীর অন্যতম তেল সমৃদ্ধ এলাকা।

আবহা হতে দাম্মাম প্রায় ১৪০০ কি.মি.। তাই উড়োজাহাজই ভরসা। ৪ মে’র টিকিট কাটলাম, বুধবার রাতে গিয়ে শুক্রবার রাতে ফিরে আসব। এর মাঝেই ব্লগে লিখালিখির সুবাদে ব্লগার মোজাম্মেল হক ভাইয়ের সাথে পরিচয়, উনি ২০ বছর ধরে দাম্মাম আছেন। ইমেইল করলাম, ফোনে কথা হলো। উনি আমাকে সাদরে ওনার বাসায় আমন্ত্রণ জানালেন। ঠিক করলাম শুক্রবার সন্ধ্যায় ওনার সাথে দেখা করব। ...

বুধবার রাত ১২টায় যখন দাম্মাম এয়ারপোর্টে নামলাম মনে হয়নি যে এতটা গরম... গরমটা বেশ সহনীয়ই ছিল।
দাম্মামের কিং ফাহাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এয়ারপোর্ট। মূল শহর হতে ২০ কি.মি. দূরে অবস্থিত এয়ারপোর্টটি প্রায় ৭৮০ বর্গ কি.মি. এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ১৯৯০ সালের শেষ দিকে তৈরি হলেও বাণিজ্যকভাবে চালু হয় ১৯৯৯ সালের শেষে, এর আগে ইরাক-কুয়েত যুদ্ধে (Gulf war)এয়ারপোর্টটি ব্যবহৃত হয়েছে।
আমার কাজিন শামসুল ভাই ও বাচ্চু ভাই অপেক্ষা করছিলেন। আমাদেরকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। ওনারা বেশ ক’বছর ধরেই দাম্মাম আছেন, পথঘাট সব চেনা। শামসুল ভাই যে এত ভালো ড্রাইভ করতে পারেন জানতাম না। প্রথম প্রথম একটু ভয় লেগেছিল, কিছুক্ষনের মাঝেই বুঝলাম উনি একজন জাঁদরেল ড্রাইভার।

শামসুল ভাই আল খোবারে একটি বিদেশী কোম্পানীর কম্পাউন্ডের ভেতরে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। ছোট ২ রুমের আবাস ও এটাচড বাথ, হলিউডের সিনেমায় মাঝে মাঝে যেমন দেখা যায়। অনেকটা ক্যারাভান টাইপের। পরেরদিন জায়গাটা ঘুরে দেখি, সব সুযোগ সুবিধাই বিদ্যমান। সুইমিং পুল আছে, আড্ডা দেবার জায়গা আছে। এখানে মূলত ফরেনাররা থাকে। আমেরিকানদের দেখলাম খালি গায়ে সান বাথ নিচ্ছে অথবা সুইমিং করছে। রাতে দেখলাম ২জন তুর্কি ৪ জন ফিলিপেনো মেয়ে নিয়ে কম্পাউন্ড থেকে বেরহচ্ছে। কম্পাউন্ডের ভেতরে বুঝার উপায় নেই যে এটা সৌদি আরব।




... থাকার জায়গাটি আমার বেশ ভালো লাগলো। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি এলাহী কারবার, শামসুল ভাই প্রচুর খাবার এনেছেন। মিক্সড গ্রিল- হামুর মাছ, চিকেন, বিফ, আরবিয় রাইস ও বিভিন্ন রকমের সালাদ। ক্ষুধা ছিলনা, বাসায় খেয়ে এসেছি, বিমানে স্যান্ডউইচ দিয়েছিল, তারপরেও মজা করে খেলাম। আমি বোধয় এ্যারাবিয়ান খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি।

বৃহঃস্পতিবার সকালে “Half Moon Bay” দিকে চললাম। গাড়ীতে যেতে যেতে শুনছিলাম বাপ্পা’র “সূর্য্য স্নানে চল ...”
পারস্য উপসাগর (Persian Gulf)... ছোটবেলায় কত পড়েছি পারস্য উপসাগরের কথা। ... সেই পারস্য উপসাগরের তীরে আমি দাঁড়িয়ে।



এ দুদিনেই দাম্মাম শহরটা বেশ ভালো লেগেছে। শহরটা সাজানো গোছানো। রাস্তাগুলো অনেক প্রশস্ত, দু’ধারে খেজুর গাছের সারি আর নানারকম গাছপালা। সবচেয়ে ভালো লেগেছে সি বিচগুলো দেখে। খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, আছে বসার ব্যবস্থা। সৌদিরা ফ্যামিলি নিয়ে সি বিচের পাশে বসে খাচ্ছে। অনেকেই ছিপ দিয়ে মাছ ধরছিল। এক সৌদি মহিলাকে দেখলাম বোরকা পড়েই সমুদ্রে নামতে। অথচ আমাদের কক্সবাজার পৃথিবী সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত; অবহেলার এক চরম নিদর্শন।



১০ টার দিকে বাঙালি পাড়ার মদীনা রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা করি তুন্দুল রুটি আর খাসির মাংস দিয়ে। চারপাশে বাংলাদেশি, ভালোই লাগছিল। চিন্তা ভাবনা করে মোজাম্মেল ভাইকে জানিয়ে দিলাম শুক্রবার না এসে আজ বিকেলেই আসতে চাই, শুক্রবার কাজিনদেরকে সময় দিতে হবে ও শপিং করতে হবে। কিছু শপিং শেষে বিকেল ৩টার আবার বীচে গেলাম দুপুরের খাবার সারতে। সৌদি আরবের পাশেই বাহরাইন। উপসাগরের উপর দিয়ে বাহরাইন যাবার ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে, তার কিছুটা পাশেই মাদুর বিছিয়ে খেতে বসলাম। এত বাতাস বইছিল যে আমার বেশ ঘুম পাচ্ছিল।






বিকেলে মোজাম্মেল ভাই ফোন দিলেন, জানালাম ১ ঘন্টা’র মাঝেই আসছি। বিচের পাড় ধরে যখন ছুটে চলছি কাকতালীয়ভাবে তখনি বাজতে থাকলো মৌসুমি ভৌমিকের সেই বিখ্যাত গান ... “আমি স্বপ্ন দেখবো বলে ...”। মাগরিবের পর মোজাম্মেল ভাইয়ের নির্দেশিত জায়গায় অপেক্ষা করছি, গাড়ীতে বসে দেখলাম এক ভদ্রলোক আসছেন। কিন্তু ব্লগে দেয়া ছবির সাথে মেলাতে পারলাম না। ... উনি আমাদের দিকেই এগিয়ে এলেন, বুঝতে পারলাম উনিই মোজাম্মেল ভাই। ... শাকিলা বললো, ব্লগের ছবি দেখে মনে হয় দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ ও বয়স্ক একজন লোক, অথচ উনি স্টিল ইয়াং। আমাদের মাঝে ফোনে যখন কথা হয় আমি বলেছিলাম- আমি আপনার চেয়ে অনেক জুনিয়র, উনি বলেছিলেন উনি মনের দিক দিয়ে এখনও ইয়াং।
... মোজাম্মেল ভাইয়ের ছিমছাম পরিবার- ভাবী, ঐশী ও ফাহিম। সবাই সাদরে আমন্ত্রণ জানালো। আমার তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না; ব্লগের সূত্র ধরে পরিচয়, বেড়াতে আসা আর এতটা আন্তরিকতা! ভেবেছিলাম ২০/৩০ মিনিট থাকবো, কিভাবে যেন ১ ঘন্টা কেটে গেল। অনেক খাবারের মাঝে অল্প কিছু খেলাম, পেট ভরা ছিল। মোজাম্মেল ভাই ও আরো কয়েকটি ফ্যামিলি মিলে রাতে বিচে যাবেন- বারবিকিউ হবে। আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানালেন। সময় স্বল্পতা, শপিং আর শাকিলার একটু মাথা ব্যথা করছিল, যেতে পারলাম না। ... সবাই মিলে ছবি তুললাম, বিদায় নেবার সময় মোজাম্মেল ভাই জড়িয়ে ধরলেন যেন কতদিনের পরিচয়। আগামীবার এলে বেশী করে বেড়াব বলে বিদায় নিলাম। ...

... শপিং করছি, ঘন্টা খানেকের মাঝেই মোজাম্মেল ভাইয়ের ফোন- বিচে আমাদের কে খুব মিস করছেন; চলে আসতে বললেন। ওনার বন্ধুরাও কথা বললেন, আমন্ত্রণ জানালেন। কি করবো... সময় যে হচ্ছে না। শাকিলা খুবই আফসোস করলো ওনাদের সাথে বিচে না থাকতে পেরে।

রাতে শামসু ভাইয়ের আনা বড় বড় চিংড়ি আর চিপস গপ গপ করে খেলাম। তারপর বিছানায়... সাথে সাথেই দু’চোখ বুজে এল।


শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়ে বাচ্চু ভাইয়ের কাছে গেলাম। উনি নিজে রান্না করে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। খাবার দাবার সব সাথে নিয়ে চললাম মারজানা আইল্যান্ড। আরো অনেক ফ্যমিলিই সাথে খাবার নিয়ে এসেছিল। বাচ্চু ভাই অনেক আইটেম করেছেন- বিফ, কাকরোল দিয়ে পাবদা মাছ, রুই মাছ, পুই শাক, ঢেড়স ভাজি আর ডাল। সৌদি আসার পর এই প্রথম পুই শাক খেলাম, দারুণ লাগলো।






আমাদের পাশে বেশ কয়েকজন বারবিকিউ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কিন্তু ঠিকমতো আগুন হচ্ছিল না, চারদিক ধোয়ায় ভরে গেল। যখন আমরা ফেরত আসছিলাম, দেখলাম তারা পুড়ে যাওয়া পিস গুলোর দিকে ক্ষুধাকাতর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।

সন্ধ্যা হয়ে এলো, রাত হলো। ১০ টায় ফ্লাইট। শামসুল ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে কষ্ট হলো। এ দু’দিনেই দাম্মাম খুব ভালো লেগে গিয়েছে। আবার আসবো ... ইনশাআল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১১ রাত ১:৩০
১৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×