somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেবদূতের বিবাহনামা ----- ৬

২৬ শে নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
মালয়েশিয়া থাকা কালিনই অফিস থেকে খবর পেলাম আমার ভিসা বাংলাদেশস্হ লিবিয়ান দূতাবাসে চলে এসেছে। এখন শুধু বাংলাদেশে এসে দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিব আর পরের দিন লিবিয়ায় উড়াল দিবো। সব শুনে বউ এর গাল গেল ফুলে। ওর এক কথা, "আমি যে দিন তোমাকে যাবার অনুমতি দিব সেই দিন তুমি যেতে পারবে তার আগে না"

কেন ? তোমার আবার কি সমস্যা ?

বউ চোখ বড় বড় করে বলে, পনের ষোল দিন পর রোজার ঈদ, তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে যে কয়েকটা দিনের জন্য ঈদ না করে আমাকে একা রেখে তুমি চলে যাবে !

আচ্ছা রোজার ঈদ করেই যাব।

না শুধু রোজার ঈদ করলেই হবে না ! রোজার ঈদের দশ বার দিন পরে আমার জন্মদিন। তার তিনদিন পর তোমার জন্মদিন। এগুলো কোন ভাবেই মিস করা যাবে না। তার বিশ বাইশ দিন পর আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। এটার আগে তো কোন ভাবেই আমি তোমাকে ছাড়বো না।

মনে মনে প্রমাদ গোনলাম ! বললাম, সবচেয়ে ভাল হয় একে বারেই না গেলে, কি বলো?

আমার সাথে তামাসা করছ ?

আরে নাহ্, তোমার সাথে তামাসা করার মত সাহস কি আমার আছে না কি?

অদ্ভুত সুন্দর তার চোখ, বড়বড় টানা টানা, একেবারে মা দূর্গার মত, এই চোখের দিকে তাকালে আমার দুনিয়া উলট পালট হয়ে যায়। হঠাৎ এই চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু একটা চিৎকার দিয়েই বললো, "আরে ! তার বিশ বাইশ দিন পর তো আবার কুরবানীর ঈদ" । প্লিজ প্লিজ তুমি একেবারে কুরবানীর ঈদ করে যাও, তাহলে সবকিছু শেষ করে যেতে পারবে।

সাঁতার না জানা এই আমি তখন সেই চোখের গভীর দিশেহারা।

২.
দেশে এসে প্রথমবার লিবিয়ান দূতাবাসে গিয়ে বিশাল একটা ধাক্কা খেলাম। দূতাবাসগুলো বাংলাদেশী পাসপোষ্টধারীদেরকে কি পরিমান তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে পাসপোর্ট জমাই দিতে পারলাম না। প্রতিদিন যাই ঘন্টা তিনেক লাইনে দাড়িয়ে থাকার পর একসময় ভীতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়; আজকে কোন কাজ হবে না, আগামীকাল বা পরশু আসেন।

একেকটা দিন পার হয় আর আমার উৎকন্ঠা বাড়ে, সেই সাথে নতুনভাবে প্রাণিত হয় বউ এর পটোলচেরা চক্ষুদয়। একেকটা দিন পার হয় আমি ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসি, আর ওর আনন্দ ধরে না। একেকটা দিন পার হয় আর আমার অস্হিরতা বাড়তে থাকে, সেই সাথে বাড়তে থাকে বিবাহবার্ষিকীকে ঘিরে তার নিত্যনতুন পরিকল্পনার । শুধু তার চোখের দিকে তাকিয়ে বিশ্রান্ততা পাই, এই চোখের দিকে তাকিয়ে পৃথিবীর সব কষ্ট, সব না পাওয়া, সব ব্যর্থতাকে ভুলে থাকা যায়।

রোজার ঈদ গেল, বউ এর জন্মদিন গেল, আমার জন্মদিন গেল, একরকম মনস্হির করেই ফেলেছি যে একেবারে কুরবানীর ঈদ করেই যাব, ঠিক এমন সময় সাত তারিখের সাতদিন আগে আচমকা ভিসা হয়ে গেল। সাথে সাথে অফিসকে মেইল করে জানালে, ঐদিনই ওয়েষ্টার্ন ইউনিউনের মাধ্যমে টিকেটের টাকা পাঠিয়ে দিয়ে বলল যেন তাৎক্ষণিক ফ্লাইট ধরে চলে আসি।

এয়ারলাইন্সে ফোন করে জানতে পারলাম চার তারিখের আগে ঢাকা-ত্রিপলী কোন ফ্লাইট নাই, তার পরের ফ্লাইট এগার তারিখে।

ফোনটা রেখে তাকালাম তার দিকে, দেখি ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাঁপছে, চোখ ধীরে ধীরে লাল হচ্ছে আর তার কোনায় জমছে বিন্দু বিন্দু জল। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে কাপড়ে ভাঁজ ঠিক করতে করতে বললাম, "চার তারিখেই যেতে হবে কিছু করার নেই, ব্যাপারটা জরুরী"

৩.
খুব কষ্ট হচ্ছিলো, একদিকে বউ এর আবদার আরেক দিকে অফিস; দায়িত্ব, কিছু করার নেই যেতেই হবে।টিকেট কাটতে যাচ্ছি এমন মোবাইল বেজে উঠলো, সে ফোন করেছে। মনটাকে শক্ত করলাম, ধরলাম না ফোনটা, জানি এখনো শেষবারের মত চেষ্টা করছে আমাকে আটকাতে। এখন ফোন ধরলে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা কষ্টকর হবে। চার পাঁচবার ফোনটা কেটে দেওয়ার পর একটা এস.এম.এস পেলাম।

"Plz don't go. Plz"

বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো, মুহুর্তের কেমন একটা দূর্বলতা এসে ছেয়ে গেল মন, ভাবলাম "কি হয় দশ দিন পরে গেলে? তিন দিনের জন্য জীবনের প্রথম বিবাহবার্ষিকীটা ছেড়ে চলে যাবো ? গিয়ে না হয় কোন কিছু একটা বানিয়ে বলে দেবো" । মুহূর্তের জন্যেই, সাথে সাথে মাথা ঝাড়া দিয়ে ক্ষণিকের এই দূর্বলতা ঝেড়ে ফেলে চার তারিখের টিকেট কেটে ফেললাম।

৪.
বিছানায় দু'দিকে মুখ করে শুয়ে আছি পাশাপাশি দু'জন, কারও চোখে ঘুম নেই। টের পাচ্ছিলাম একটু পর পর মৃদু কেঁপে কেঁপে উঠছে তার পিঠ, খুব নিবিড় ভাবে কান পেতে শুনা যাচ্ছিলো তার চাপাস্বরে কান্নার শব্দ। চুপচাপ তাকে কাঁদতে দিচ্ছিলাম, তার ঐ কান্নাভেজা চোখের দিকে তাকানোর মত শক্তি আমার ছিলো না। কাঁদুক, কাঁদলে কষ্ট কিছুটা হলেও হালকা হবে।তোমাদের কত সুবিধা, একটু কষ্ট পেলেই কেঁদে মনটা হালকা করতে পার, আর আমরা ! আমরা তো কাঁদতেও পারি না, আমরা কিভাবে মন হালকা করবো ? আমাদের কষ্টগুলো কিভাবে প্রকাশ করবো? আমাদের কষ্টগুলো কিভাবে লাঘব হবে?
----------------------------------------------------------------
দেবদূতের বিবাহনামা ----- ৫
---------------------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:৩৭
৬১টি মন্তব্য ৬১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×