এবারের বইমেলায় আমার একটি সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস বের হয়েছে। ব্লগারদের এই সুখবরটি জানানোর লোভ সংবরন করতে পারিনি। বইয়ের শুরুতে ভূমিকা হিসাবে লেখা কৈফিয়ত অংশটুকু তুলে ধরলাম। বিজ্ঞ সায়েন্স ফিকশন প্রেমীদের সমালোচনা প্রত্যাশা করছি।
বইঃ লোলার জগৎ
লেখকঃ মোহাম্মদ সাইফূল ইসলাম
জনরাঃ সায়েন্স ফিকশন
প্রকাশনাঃ বাতিঘর
প্রাপ্তিস্থানঃ ২০২১ বইমেলা স্টল নং ৪০৩-৪০৪
কৈফিয়ত:
সায়েন্স ফিকশন সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসাবে নিজের আসন পাকাপোক্ত করে নিয়েছে বহুযুগ আগেই। বাংলাদেশে এই শাখাটি পশ্চিমা-বিশ্বের তুলনায় খুব বেশি সমাদৃত না হলেও আশির দশক থেকে কয়েকজন অগ্রজ লেখকের হাত ধরে ধীরে ধীরে এর বিকাশ হতে থাকে।
ইদানীং অনেক তরুণ লেখক অগ্রজদের পদাঙ্ক অনুসরণে বাংলা সায়েন্স ফিকশনকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় রত আছেন। বয়সে যুবক কিন্তু লেখালেখির জগতে তরুণ একজন সায়েন্স ফিকশন প্রেমী হিসাবে সকল অগ্রজ ও তরুণ লেখকদের প্রতি রইল নিরন্তর শুভকামনা ও ভালোবাসা।
সায়েন্স ফিকশনের প্রতি ছোট বেলা থেকেই এক তীব্র আকর্ষণ বোধ করতাম। এই ভালোবাসার মূল্য চুকাতে গিয়ে নাওয়া খাওয়া ভুলে সায়েন্স ফিকশন বই পড়ে কিংবা মুভি বা সিরিয়াল দেখে সময় কাটিয়েছি। একসময় মনে হলো সেই ব্যয়িত মহামূল্যবান সময়ের বিনিময়ে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা লব্ধ ক্ষুদ্র জ্ঞানকে অবলম্বন করে সায়েন্স ফিকশনের মহাসমুদ্রে আমিও ক’ফোটা জল সংযোজন করতে পারি।
পাঠকের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ একজন তরুণ সায়েন্স ফিকশন লেখকের ভুল ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিয়ে এবং ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথকে মসৃণ করে তুলবেন।
‘সায়েন্স ফিকশন’ ধারার নামেই অনুধাবন করা যাচ্ছে এতে থাকবে বিজ্ঞান ও কল্পনার যুগলবন্দী। তবে কল্পনার গরুকে কিছুতেই আকাশে উড়ানো যাবে না এটাই এই ধারার গল্পের প্রাথমিক শর্ত। আমার লেখায় চেষ্টা করেছি কল্পনার লাগামকে যথাসাধ্য নিয়ন্ত্রণে রাখার। হয়তো সফল হয়েছি কিংবা ব্যর্থ; এই বিচারের ভার আপাতত পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিলাম।
এবার কিছু বিষয় পরিষ্কার করে না বললেই নয়। এই গল্পে আমি কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্টের বিষয়টি নিয়ে এসেছি। দেখিয়েছি এই পদ্ধতিতে আলোর চেয়ে বেশি গতিতে তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানে এটি ভুল। কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট পদ্ধতিতে আলোর চেয়ে বেশি গতিতে তথ্য যায় না, বরং প্রভাব যায়। ব্যাপারটা একদমই রেন্ডম একটি প্রসেস। এটাকে প্রভাবিত করতে গেলেই এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট নষ্ট হয়ে যায়।
এই সমস্যাকে দূর করার জন্যে গল্পে দেখিয়েছি সুদূর ভবিষ্যতে “এন্ট্যাঙ্গলমেন্টেড ফোটন নেকলেস ম্যাথম্যাটিক্যাল মডেল” নামের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। গল্পের ব্যবহৃত এই মডেলটি পুরোটাই কাল্পনিক। আশা করি বিজ্ঞ-পাঠক একে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভরের কারণে সময়ের গতি ধীর হয়ে যায় এটি আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটির তত্ত্ব দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু এর বিপরীত প্রক্রিয়া, মানে একটি নির্দিষ্ট স্থানে সময়কে দ্রুতগতিতে প্রবাহিত করার পদ্ধতি বাস্তবসম্মত নয়। এর জন্যে ভরের বিপরীত ঋণাত্মক-ভর বা ডার্ক এনার্জির প্রয়োজন পড়বে যার অস্তিত্ব এখনও অপ্রমাণিত।
এই সমস্যা দূর করার জন্যে গল্পে টাইম ডাইলুশন যন্ত্রের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছি। কাল্পনিক এই যন্ত্রটির কাজ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সময়ের প্রবাহকে দ্রুত করে তোলা। সম্পূর্ণ বিষয়টিই ফিকশনের অন্তর্ভুক্ত।
বর্তমানে সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহ-উপগ্রহের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য আমাদের হাতের নাগালে। হয়তো সামনে এক বা দুই দশকের ভেতর মঙ্গলে মানুষের পা পড়বে। সে হিসাবে মঙ্গলের একটি বৃহৎ উপগ্রহ এখনও অনাবিষ্কৃত এবং আরও প্রায় সাত যুগ পর এটি আবিষ্কৃত হবে বিষয়টা বিজ্ঞানমনষ্ক পাঠকের মনে অস্বস্তির অনুভূতির জন্ম দিতে পারে। এখানে তাঁদের আশ্বস্ত করতে চাই, লোলার জগৎ বইটির দ্বিতীয় পর্বে এই বিষয়টি খোলাসা করা হবে।
যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি সায়েন্সের সাথে কল্পনার মিশ্রণ ঘটিয়ে পাঠককে একটি মানসম্মত সায়েন্স ফিকশন উপহার দিতে। এখন বিজ্ঞ পাঠক কীভাবে একে গ্রহণ করবেন তা একান্তই তাদের এখতিয়ার।
পরিশেষে বলতে চাই, যদি কোনও ভুলত্রুটি চোখে পড়ে নির্দ্বিধায় জানিয়ে আমাকে কৃতার্থ করবেন। যে কোনও সমালোচনা ও সে মোতাবেক নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্যে আমি সর্বদা খোলা মনে পাঠকের দিকে তাকিয়ে আছি। সকলের জন্যে রইল অকৃত্রিম
ভালোবাসা ও শুভকামনা।
চমৎকার প্রচ্ছদটি করেছেন Kousik Zaman ভাই
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৪৯