ছাত্রজীবন থেকেই পোলাপাইনের একটা ভীতি থাকে, তা হলো পরীক্ষা ভীতি। আর আমার ছিল দুইটা ভীতি- পরীক্ষা ভীতি আর হিজড়া ভীতি। পোলাপাইনের পরীক্ষার কথা শুনলে যেমন গায়ে জ্বর আসে আর আমার হিজড়া দেখলে পেটের মধ্যে মুচড়ানি শুরু হয়ে যায়।
ঘটনা ১: পড়াশুনা শেষ করে কেবল নতুন চাকরিতে জয়েন করেছি। অফিসের কাজে একদিন গিয়েছি ইস্কাটন। অফিসে ফিরবো বলে মগবাজার থেকে গাড়িতে উঠলাম, গাড়ি মুটামুটি ফাঁকাই ছিল। আমি গাড়িতে উঠে দ্বিতীয় সারির বাম পাশের সিটে বসলাম জানালার পাশে। গাড়ি চলতে শুরু করলো। নাবিস্কো স্টপেজ থেকে উঠলো ৫/৬জন হিজড়া। হিজড়া দেখে প্রথমে ভয় পেলেও ভাবলাম- যাক গাড়ীর ভিতর একটা বিনোদন তো হবে! কিন্তু বিধিবাম! একজন হিজড়া বসলো আমার পাশে। আমার পুরাতন রোগ আবার জেগে উঠলো- পেট মুচড়ানি! কিছুক্ষন পর তার প্রথম কথা- কোথায় যাবি? আমি এমন ভাব করলাম যেন তার কথা শুনিনি। এইবার সে তার কনুই দিয়ে আমাকে একটা গুতা মেরে বলে- এ্যাই! শুনছিস না? তোকে বলছি! কোথায় যাবি তুই?
আমি বললাম- বনানী।
- তুই যাবি আমার সাথে?
- কোথায়?
- গাজীপুর।
আমি খুব বিনয়ের সুরে বললাম- আমার অফিস বনানী, অফিসে অনেক কাজ আছে।
- তুই আমার সাথে যাবি না বলে বলছিস কাজ আছে, চল না আমার সাথে।
আমি চুপ করে গেলাম। আশে পাশে খেয়াল করলাম সব যাত্রীরা, মহিলা সিটের কয়েজন মেয়ে আমার এই মজা দেখছে।
সে আবার শুরু করলো। এবার ডাইরেক্ট এ্যকশান। আমার গাল চেপে ধরে বলে- তুই তো অনেক সুন্দর, তা মুখে দাড়ি রেখছিস কেনো?
আমার তলপেটে ভালই চাপ দিচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি। তারপরও আমি চুপ।
এইবার সে বলে- আমাকে একটা পান খাওয়া না সোনা!
-এইখানে গাড়ীর ভিতর পান পাবো কোথায়?
- টাকা দে, কিনে খাবো।
- টাকা নাই
- তাহলে তোর মানিব্যাগটা দে, দেখি।
তলপেটের চাপ...... উফফফ!!!
ইতিমধ্য গাড়ী দাড়িয়ে আছে মহাখালি সিগন্যালে। আমি একটু সাহস করে মুখ তুলে তার দিকে তাকালাম, দেখি সে অন্য দিকে তাকিয়ে একটু অন্যমানস্ক হয়ে গেছে। আমিও সুযোগটা কাজে লাগালাম। বিদ্যুৎ বেগে লাফ দিয়ে নেমে গেলাম, দৌড় দিয়ে উঠলাম অন্য গাড়িতে। পেছন থেকে শুধু এইটুকু শুনতে পেলাম- এ্যই এ্যই চলে যাস না, তোকে আমি চাই!!!
ঘটনা ২: অফিস শেষ করে সন্ধ্যার পর আড্ডা দিচ্ছি গ্রীনরোডে IBA এর হোস্টেলে। এর মধ্যে এক কলিগ ফোন করে বলল খুব জরুরী বুথে যেয়ে যেন তার একাউন্টে কিছু টাকা জমা করে দিই। চিপাচাপা দিয়ে হাটতে হাটতে কারওয়ান বাজার আসলাম। যেতে হবে রাস্তার ঐপার। রাস্তার মাঝখানে সব তারকাটাঁ মারা, ফুটওভার ব্রীজ ছাড়া গতি নেই। ব্রীজে উঠে যেই হাঁটা শুরু করবো এমন সময় কে যেন পা টেনে ধরলো, নিচে তাকিয়ে দেখি এক ফকির। ফকির বললে ভুল হবে। তার সারা শরীরে বস্তা পেচাঁনো, বলা যায় 'সালা বাবা'। সে ধরেছেতো ধরেছে আর ছাড়বেনা এমন ভাব। আশে পাশের লোকজন বলল- ভাই দুইটা টাকা দিয়ে দেন। আমি পকেট থেকে টাকা বের করা মাত্রই তিন/চারজন হিজড়া কোথা থেকে যেন আমার সামনে উদয় হলো। তাদের ভিতর একজন বলে- এ্যই ওকে দুই টাকা দে। আমি সাথে সাথে দুই টাকা বের করে দিয়ে দিলাম। এইবার একজন হিজড়া বলে- এইবার আমাদের বিশ টাকা দে।
আমি সাথে সাথে চিন্তা করলাম আমার পকেটে খুচরা টাকা আছে কিনা। আমি জানি একশ টাকা দিলে জীবনেও বাকী টাকা ফেরত দেবেনা। এর মধ্যে আশে পাশে মজা দেখার লোকও জমে গেছে।
আমি বললাম- টাকা নাই।
- টাকা দে নইলে কিন্তু চুম্মা লাগায় দেবো।
আমি মনে মনে চিন্তা করি কেন যে সাথে ফ্লাজিল/ স্যালাইন রাখিনা! মানিব্যাগ ঘেটে পেলাম একুশ টাকা, দিয়ে দিলাম। এইবার বলে- তোর মানিব্যাগটা দে।
-কেনো?
-তোর বউয়ের ছবি দেখবো।
আমি চিন্তা করি এই ফুটওভার ব্রীজটা কেন এখন ভেঙ্গে পড়ে না! আমি একটু ফাঁকা পেয়েই দিলাম দৌড়। পিছন থেকে এক হিজড়া বলে- দৌড়াস কেন? চুম্মা খাবি না, চুম্মা!
বোনাস: তখন ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। ভাব ছিল চারুকলার পোলাপাইনের মত, চুল-দাড়ি লম্বা লম্বা। একদিন বন্ধুদের সাথে রাস্তায় হাঁটছি। আমাদের বিপরীতে আসছিলো তিনজন মহিলা, তাদের সবার হাতে ছোট ছোট কাঠের বাক্স। ঐ বাক্সতে নাকি সাপ থাকে, আর ওদেরকে বলে নাকি সাপের বেদিনী। যাইহোক, তারা চুপচাপ আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। একমিনিট পরেই এক বেদিনী এসে পেছন থেকে আমার শার্টের কলার টেনে ধরে বলে- 'এ্যই পাগল টাকা দে!' আমার কোন বন্ধুকে কিছু বললো না। আমার বন্ধুরা কোথায় আমাকে বাঁচাবে তা না তারা দাঁড়ায় মজা দেখছে।
আমার বন্ধুদের কথা হলো- তুই যে পাগল ঐ বেদিনীরা জানলো কেমনে???