somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ দিনে বাবার সাথে............ (''নুহাশ'' তুমিও কি আমার মত, নাকি আমি তোমার মত!!!)

২৩ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






১৯৯৮ সাল, ২৮ ডিসম্বর। ক্লাস নাইনে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ, রেজাল্টও হয়ে গেছে। তারপরও পড়াশুনা করতে হবে, মা'র হুকুম। কারণ নাইন-টেনে একই বই পড়ে এস এস সি পরীক্ষা দিতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কতগুলো ইলেকটিভ ম্যাথ কষে দৌড়ে চলে গেলাম বাড়ির সামনে মাঠে খেলতে। দুপুর বারোটা/সাড়ে বারোটা হবে, এমন সময় মা ডাকাকাকি শুরু করলো। মা বলল- এখুনি আশা কে (আমার মেজো বোন) একটা ফোন ...করে আয়, তোর আব্বা যেন কেমন করছে। আমাদের বাসার টি এন্ড টি তে সমস্যা থাকায় আমি চলে গেলাম মোড়ের ফোনের দোকানে। মেজআপুকে ফোন করে বললাম- তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসো, আব্বা যেন কেমন করছে। মেজআপু শোনা মাত্র হাউমাউ করে কেঁদে দিল। আমি বাসায় ফিরছি পথে দেখা হলো বড় দুলাভাইয়ের সাথে, জিজ্ঞাসা করলাম- ভাইয়া, আব্বা কেমন আছে? ভাইয়া বলল- ভাল, তুমি বাসায় যাও। বড় বোনের দু'দিন আগে একটা বাচ্চা হয়েছে, তাকে হাসপাতাল থেকে এনে বাসায় রেখে দুলাভাই বেরিয়েছে কেবল। গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখি পাশের বাসার বাবুল আঙ্কেল, আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ দু'দিন আগে বল লাগিয়ে বাবুল আঙ্কেলের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ফেলেছিলাম। ভেবেছি আঙ্কেল মনে হয় মা'র কাছে নালিশ করতে এসেছে। না, উনি নালিশ করতে আসেনি, ঘরে ঢুকে দেখলাম পাড়ার অনেক মানুষ আমাদের বাড়ীতে। সবাইকে সরিয়ে আমি ভেতরে ঢুকে দেখি আমার বাবাকে ঠান্ডার মধ্যে মেঝেতে শুইয়ে রেখেছে একটা পাতলা সাদা চাদর দিয়ে ঢেকে। ক্লাস টেনে পড়ুয়া আমার কিশোর মন কোন কিছু বুঝতে বাকী রইল না। আমার বুকের সমস্ত রক্ত চোখের পানি হয়ে দু'গাল বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে। বাবুল আঙ্কেল এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তখন শুধু একটা কথাই চিন্তা হচ্ছিল- মা যখন আমাকে শাষণ করবে তখন কে আমাকে বুকের মধ্যে আগলে রাখবে! কে আমার মাথায় ছায়া হয়ে থাকবে!
একটু পর মা এসে বলল- বাসার মধ্যে যেন কোন কান্নার আওয়াজ না হয়, আলো কে( আমার বড় বোন) একটু আগে হাসপাতাল থেকে আনা হয়েছে। আমরা সবাই চুপ করে থাকলাম। কিছুক্ষন পর ছোট আপা আসলো ভার্সিটি থেকে, এসেই ওর শরীর থেকে চাদরটা খুলে দলা করে বাবার মাথার নিচে দিতে দিতে বলছে- আমার আব্বা তো বালিশ ছাড়া শুয়ে থাকতে পারেনা, কেন আমার আব্বা বালিশ ছাড়া শুয়ে আছে!
এরপর বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সবাই ইফতারী করল যে যেখানে পেরেছে। আমিও একটু পানি খেয়ে রোজা ভাঙ্গলাম। বাড়িতে অনেক মানুষ এসেছে। এইবার বাবাকে নিয়ে যাওয়ার পালা। আমার মায়ের তার পঁয়ত্রিশ বছরের জীবনসঙ্গী আজ তাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছে, পাগলের মত হয়ে গেছে আমার মা।
নির্জন রাত, একটু আগেই আমার বাবাকে আমার নিজ হাতে কবরে শুইয়ে দিয়ে আসলাম। একা একা বাসায় ফিরলাম। আমার ঘরে ঢুকে ইলেকটিভ ম্যাথের বইটা আর খাতা নিয়ে বসলাম মায়ের বকুনির ভয়তে। চশমার কাঁচে বারবার পানি জমে যাচ্ছে, ঘোলা হয়ে যাচ্ছিল অংক গুলো।
চৌদ্দ বছর হয়ে গেছে, আজও পারিনা বুকের রক্ত চোখের পানি হয়ে গড়িয়ে যাবার বাঁধা দিতে যখন চিন্তা করি আমার মাথার উপর কোন ছাঁয়া নাই, যখন চিন্তা করি আমার মা প্ঁয়ত্রিশ বছর সংসার করে আজ নিঃসঙ্গ!!!
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×