somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব’য় য-ফলা আ-কার খ’য় আ-কারে খা. . . .ব্যাখ্যা

১৫ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ৭:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসিএস প্রিলিমিনারিতে পাশ করেও রিটেন পরীক্ষা না দেয়া, এটা আমার একটা পুরান সমস্যা। ভয়াবহ একটা সিলেবাস মাথায় নিয়ে রিটেন পরীক্ষা দিতে হয়। বাংলা সাহিত্য থেকে শুরু করে আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান পর্যন্ত সবকিছু আছে এই সিলেবাসে। দরকার অনেক পড়াশুনা, বিরাট আয়োজন। পড়াশুনা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হতে পারত যদি সিলেবাস বলে কিছু না থাকত। আফসুস, সিলেবাস আর সাজেশান ছাড়া কোন কিছু পড়ার সুযোগ আমাদের হয়না। তাই পড়াশুনা করে আমরা কোনকালে আনন্দ পাই না। অতি পূজনীয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইতঃপূর্বে বলে ফেলেছেন, আনন্দহীন শিক্ষা শিক্ষাই না। সে অর্থে আমরা অশিক্ষিত।

জীবন কবিতার মত। আর কবিতা দূর্বোধ্য। মাঝে মাঝে নিজেকে নিজেই বুঝি না। এবার কেন জানি ইচ্ছে হল রিটেন পরীক্ষাটা অবশ্যই দিতে হবে। বিজ্ঞানের ছাত্র বলে অর্থনীতি, ভূগোল, রাজনীতি, কূটনীতি কিছুই ভাল করে জানিনা। রিটেন পরীক্ষা দেয়ার কারনে কিছুটা হলেও যদি জানতে পারি।

বাংলা বই নিয়ে বসলাম। অশুদ্ধি শুদ্ধিকরন।

বিসিএস বাংলা বিষয়ে অশুদ্ধি শুদ্ধি করন একটি অতি গুরুত্বপূনর্ অংশ। তার উপর পরীক্ষার্থীর মনে বিভ্রান্তি ঢুকিয়ে দিতে মাঝে মধ্যে শুদ্ধ বাক্যও পরীক্ষা করে ঠিকঠাক লিখতে বলা হয়। গাইডে বলা আছে, পুরানো প্রশ্ন ঘাটাঘাটি করে দেখা গেছে বিসিএস বাংলা পরীক্ষায় দেয়া বিগত দিনগুলোর প্রশ্নপত্রে শতকরা ৫০ ভাগের উপরে অশুদ্ধ বাক্যই বানান গত ভুল। বিরাট সমস্যা।

মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে একবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, বড়ই আফসুস... .. এত সুন্দর ভাষাটা ভাসা ভাসা জানিলাম। আসলেই বাংলাভাষাটা ভাল করে জানাই হলো না। ছোটবেলা থেকে এত এত ভুল বানান শিখেছি। এটা দুএক মাসে ঠিক করা সহজ ব্যাপার না।

আমি তখন বুয়েটে পড়ি। ক্যাম্পাস বন্ধ। দুপুর বেলা ইকবাল রোড থেকে টিউশনি করে ফিরছি।মাথার উপর প্রচন্ড রোদ। হাঁটতে হাঁটতে আসাদ গেটে যাব, সেখান থেকে বাসে উঠব। একা একা হাঁটছি। আমার সামনে একটা বাচ্চা মেয়ে তার বাবার হাত ধরে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছে। বাবা মেয়ের মধ্যে খুবই ভাব গাম্ভীর্যপূর্ন কথাবার্ত চলছে। এতটুকু একটা বাচ্চা কী সুন্দর বয়স্ক মানুষর মত কথা বলছে। শোনার লোভ সামলাতে পারছিলাম না। আমি পা মেপে মেপে ওদের পিছন পিছন হাঁটছি।
‘ আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।’

‘ কেন মা?’

‘ এত পড়াশুনা করি কিন্তু পরীক্ষায় নম্বর পাই না। আজকে বাংলা পরীক্ষায় দশের মধ্যে পেয়েছি পাঁচ।’

‘ কেন আম্মু ? কী ভুল করেছ?’

‘ভুল যে কী করলাম সেটাই তো বুঝতে পারছি না।’

দুইজনই খুব গম্ভীরভাবে হাঁটছে। আমিও খুব গম্ভীর হয়ে গেলাম। মেয়েটার দুঃখে দুঃখিত হলাম।

‘ আচ্ছা বাবা, বলতো ব্যাখ্যা বানান কী?’

‘ ব’য় য-ফলা আকার খ’য় আকারে খা, ব্যাখ্যা।’

‘আমিতো খাতায় সেটাই লেখলাম তারপরও স্যার কেটে দিয়েছে কেন বুঝতে পারছি না।’

দুজনই খুব গম্ভীর। আমি দ্রুত হাঁটা মানুষ। পা মেপে মেপে হাঁটতে পারছি না। সূর্যও আগুন ঝরাচ্ছে। এত ছোট মেয়েটা চোখের সামনে ভুল একটা বানান শিখছে দেখে খারাপ লাগল।

আমি পিছন থেকে বললাম, বাবু ব্যাখ্যা বানান হচ্ছে ব’য় য-ফলা আকার, খ’য় য-ফলা আকার।

‘শোন মা তোমার আংকেল কী বলছে।’

‘দুটোতেই য-ফলা হবে?’

আমি ওকে আদর দিয়ে বলি, হ্যাঁ।

‘ও এ জন্যই আমারটা কেটে দিয়েছে।’

আমি মুচকি হেসে জোরে পা চালাই।

ছোট বেলা থেকে আমরা ইচ্ছা অনিচ্ছায় এত এত ভূল শিখেছি যে সব গেঁথে গেছে। এখন শুদ্ধকে মনে হয় ভুল। ভুল কে শুদ্ধ। ভুল সবই ভুল।

কবে যে আমরা একটু আনন্দ নিয়ে শিখব? কবে যে জাতি হিসেবে একটি শিক্ষিত জাতি হব?

কবি
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১১:১২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৌলবাদ: ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ প্রযুক্তি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫১




মজার বিষয়—

আজকের মৌলবাদীরা রোকেয়া বেগমকে মুরতাদ ঘোষণা করে বুক ফুলিয়ে হাঁটে, অথচ নিজেদের অস্তিত্ব টিকেই আছে যাদের ঘৃণা করে— সেই “কাফেরদের” বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে। ইতিহাস পড়লে এদের বুকফুলা হাওয়া বের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতী এখন পুরোপুরিভাবে নেতৃত্বহীন ও বিশৃংখল।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩



শেরে বাংলার নিজস্ব দল ছিলো, কৃষক প্রজা পার্টি; তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। একই সময়ে, তিনি পুরো বাংগালী জাতির নেতা ছিলেন, সব দলের মানুষ উনাকে সন্মান করতেন। মওলানাও জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট

লিখেছেন আরোগ্য, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬



ওসমান হাদী অন্যতম জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, প্রতিবাদী চেতনা লালনকারী, ঢাকা ৮ নং আসনের নির্বাচন প্রার্থী আজ জুমুআর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×