somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি

১২ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাসুকের এতদিন ধারনা ছিল সে একজন কবি। তার বাল্যবন্ধু নয়ন উপপাদ্যের মত প্রমান করে দিল সে কোন কবিটবি কিছু না। সে যা লেখে তা কোন কবিতার পর্যায়েই পরে না।

মাসুক নির্বিকারভাবে বলল, এগুলা কবিতা না, তাইলে কি?

‘এগুলোকে কবিতা না বলে টবিতা বলতে পারিস।’

ক্ষুধায় মাসুকের পেট চোঁচোঁ করছে। এতবড় অপমানের পরে ক্ষুধা অনুভব করার কথা না। কবিতা লিখতে লিখতে বহুদিন মাসুক গোসল করতে ভুলে গেছে, খেতে ভুলে গেছে । কবিতা মাথায় এলে মাসুক আর মাসুক থাকে না, অন্য কেউ হয়ে যায়। তখন কিসের ক্ষুধা, কিসের কি?

‘খাবার দাবার কিছু আছে?’

‘সাতটার দিকে ভাত খাইয়া ফেলছি। জামার পকেটে একটা সিগারেট আছে, ধরা।’

খুব আনন্দের কোন কিছু হলে মাসুকের মনে হয় একটা সিগারেট হলে ভাল হতো। যখন খুব মন খারাপ করার মত কিছু হয় তখন মনে হয় একটা সিগারেট হলে ভাল হত। এতবড় অপমানের পরও মনে হচ্ছে একটা সিগারেট হলে খারাপ হত না। নয়ন বিছানায় শুয়ে কি যেন একটা কবিতা পড়ছে। নয়ন অনেক বড় বড় কবির কবিতা পড়ে। দেশী কবির কবিতা, বিদেশী কবির কবিতা। অনেক কঠিন কঠিন কবিতা। সেসব কবিদের নামও মাসুক জানেনা। মাসুক অনেক সহজ কবিতার অর্থই উদ্ধার করতে পারেনা। অথচ নয়ন কবিতাগুলো অনায়াসে ব্যবচ্ছেদ করে ফেলে । কবিতা আবৃতি করতে করতে নয়ন যখন জিজ্ঞেস করে , মানেটা বুঝেছিস তো? মাসুক শুধু মাথা নাড়ে। নয়ন তবু কবিতা তর্জমা করতে থাকে। আসলে নয়ন না বুঝালে কবিতাটা শুধু কবিতাই থেকে যেত অর্থটা জানা হতো না কখনো। কবিতা লেখার জন্য কত কিছু যে জানতে হয়। হরেক রকম ছন্দ, হরেক রকম অলংকার। কিছুই জানা হল না। তবু মাসুক কবিতা লেখে। কবিতা আসার উপরে তার নিজের কোন হাত নেই। মাঝে মাঝে কোথা থেকে যেন কবিতা আসতে থাকে, সে শুধু কাগজের উপর কলম চালায়।

মাসুক সিগারেট ধরিয়ে নিবিষ্টভাবে ধোঁয়া ছাড়তে লাগল। অপমানটা পোড়া নিকোটিনের ধোঁয়ায় দ্রবীভুত হয়ে একটু একটু করে উড়ে গেলে ভাল হত। মাসুকের মনে হচ্ছে অপমানটা বোধ হয় উড়ে আসতে চাচ্ছে। কিন্তু গলার কাছাকাছি এসে আটকে যাচ্ছে। একটা গিঁট্টুর মত দলা পাঁকিয়ে গেছে। ঢোঁক গিলতে কি রকম যেন কষ্ট হচ্ছে।

নয়ন কবিতা পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছে। বুকের উপর কবিতার বই । সব্যসাচী লেখক বুদ্ধদেব বসুর ,বন্দীর বন্দনা। কি আছে বন্দীর বন্দনায়? কারাগারে কোন বন্দীর মুক্তির প্রত্যাশা? নাকি পৃথিবীটাই একটা কারাগার, মানুষ ঈশ্বরের কৃপা প্রত্যাশায় নিরন্তর বন্দেগী করে যাচ্ছে সেসব কথা। মাসুকের এসব ভেবেই বা লাভ কি, সে তো কবি নয়। সে হচ্ছে টবি। যিনি কবিতা লেখেন, তিনি হচ্ছেন কবি। যিনি টবিতা লেখেন, তিনি টবি। মাসুক নয়নের মেস থেকে বের হয়ে এল।

নয়নের মেসটা কাঁঠালবাগানে। রাত মাত্র পৌনে দশটা। মাসুকের হলে ফেরা দরকার। সাড়ে দশটার মধ্যে হলে না ফিরলে ডাইনিং ধরা যাবে না। ডাইনিংয়ের শেষ সময়, সাড়ে দশটা। রাস্তায় লোকজন কম। রাস্তারপাশের বড়বড় দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট ছোট পান বিড়ির দোকান খোলা। মাসুকের বুকের ভিতরটা হুহু করছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। ক্ষুধা দারিদ্র্যের এ দেশে কবিতা লেখা হল না বলে চিৎকার করে কান্না চরম বিলাসিতা। মাসুক তবু কাঁদছে। নিশব্দে কাঁদছে, চোখের পানি গড়াচ্ছে। নোনতা নোনতা পানি।


মানুষের মন অত্যন্ত বিচিত্র উপাদান। চরম দুঃখের মধ্যেও অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা মাথায় আসে। মাথার মধ্যে একটা প্রশ্ন ঢুকেছে। প্রশ্নটা হচ্ছে, চোখের পানি যে গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়, সেই গ্রন্থির নাম কি? উত্তরটাও মাসুকের জানা, তবু মনে আসছে না।

মাসুক অনেক চেষ্টা করছে। তবু গ্রন্থিটার নাম মনে করতে পারছে না। গত সপ্তাহেই নাফিসাকে মাসুক গ্রন্থিটার নাম বলেছে। নাফিসার মেমরী অত্যন্ত ভাল, কোন জিনিস মাথায় একবার ঢুকিয়ে দিলে মাথার মধ্যেই থেকে যায়।





(চলবে)
বিশ্বাস
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ১১:৩০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৌলবাদ: ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ প্রযুক্তি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫১




মজার বিষয়—

আজকের মৌলবাদীরা রোকেয়া বেগমকে মুরতাদ ঘোষণা করে বুক ফুলিয়ে হাঁটে, অথচ নিজেদের অস্তিত্ব টিকেই আছে যাদের ঘৃণা করে— সেই “কাফেরদের” বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে। ইতিহাস পড়লে এদের বুকফুলা হাওয়া বের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতী এখন পুরোপুরিভাবে নেতৃত্বহীন ও বিশৃংখল।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩



শেরে বাংলার নিজস্ব দল ছিলো, কৃষক প্রজা পার্টি; তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। একই সময়ে, তিনি পুরো বাংগালী জাতির নেতা ছিলেন, সব দলের মানুষ উনাকে সন্মান করতেন। মওলানাও জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট

লিখেছেন আরোগ্য, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬



ওসমান হাদী অন্যতম জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, প্রতিবাদী চেতনা লালনকারী, ঢাকা ৮ নং আসনের নির্বাচন প্রার্থী আজ জুমুআর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×