somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষেপনাস্ত্র ।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসায় নতুন সিকিউরিটি গার্ড এসেছে। বয়স পঞ্চান্ন ষাটের মাঝামাঝি। ময়মনসিংহ মুক্তাগাছায় বাড়ি। চেহারায় আবহমান বাঙালি পৌঢ় পুরুষের দরদ জাগানিয়া অবয়ব । পরিবার পরিজন ফেলে পড়ন্ত বেলায় কেবল অভাবের তাড়নায় জীবনে প্রথমবারের মত বাঁধাধরা চাকরিতে যোগদান করেছেন। দেশের অর্থনীতি যেখানে পাগলা ঘোড়ার মত উন্নতির মহীসোপানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তিনাদের ময়মনসিংহ মুক্তাগাছায় নাকি অভাব আর অভাব। সাথে মোবাইল নাই। প্রতিবেলা নামাজ পড়েন। অবসরে তজবীহ গুনে জিকির ইবাদতে সময় পার করেন। প্রথম দশ পনের দিন পরিবারের জন্য হাহাকার আর ঢাকা শহরে বসবাসের ঘোর কাটাইতেই গেছে। ধীরে ধীরে জবান খুলতে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগে দুপুরবেলা গেট খুলে আমারে চাচামিয়া সম্বোধন করে আমি কি করি জিজ্ঞেস করে আমার সাথে আলাপের শুরু। তো যে কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং শিক্ষকতা করি তা প্রকাশে আমার বরাবরই অনীহা। কিছু করি না বলে জবাব দিলে তিনি আরও নাছোড়বান্দা হইয়া প্রতি সকালে সুগন্ধি মাইখা ফুলবাবু সেজে বাইরে যাবার কথা মনে করিয়ে দেন। অবশেষে কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং মাস্টারির কথা স্বীকার করিলে তার চেহারায় বিজয়ের ছাপ ভেসে উঠে। আমি এইরকম বিরাট কিছু 'একটা' হব এইটা নাকি দেইখাই বুঝছিলেন। পরক্ষনেই বললেন যে মাষ্টারেরা নাকি টাকার কুমির। ছাত্র পড়াইয়া মাসে লাখ টাকা আয় করেন। আমি হু হা করিয়া বিদায় লইয়া প্রথমবারের মত আলাপে ইতি টানি। এরপর থেকে শুরু হইছে মধুর অত্যাচার।প্রতিবার বাইরে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করে ছাত্র পড়াইতে যাই কিনা এমনকি চা খাওয়ার জন্য লুঙ্গি চপ্পল পরে বের হইলেও। বাসায় ঢোকার সময়ও সেই একই ধারার প্রশ্ন 'ছাত্র পড়াইয়া আইছুন?'। জবাব আর কি দিব মাঝে মাঝে মাথা নাড়ি। মাঝেমাঝে কিছুই বলিনা। উনার আগ্রহের কমতি নাই। একটু সুযোগ পেলেই গল্পের আড়ত খুইলা বসেন। সব অভাবের গল্প। গল্প শুনে মনে হবে ময়মনসিংহে সবার অজান্তে নীরব দুর্ভিক্ষ চলিতেছে। এরপরে শুরু হয়েছে ফোনে কথা বলার পালা। নিজের মেয়ে এবং ছেলের মোবাইল নম্বর লেখা কাগজ বাড়িয়ে দিতে দিতে বললেন 'আপনেরে আপনা লোক মনে করি বলে ছোটখাট এইটা সেইটা আব্দার করি কিছু মনে করুইন না যে।' কিন্তু দুই তিন মিনিট কথা বলার পরেই অপরপাশের কথককে কথা তাড়াতাড়ি শেষ করার তাগাদা দেন। বলেন 'পরের মোবাইল দিয়া ফোন দিছি ।রাইখা দেও। হে রাগ হইব।' আপন পর মাত্র দুই মিনিটের মামলা।
পরবর্তীতে দুই একবার চা সিগারেটের আব্দার। দশ টাকাতেই আবার আপনা লোক ।
সবচেয়ে ভয়ংকর ক্ষেপনাস্ত্রটা ছুড়লেন গতকাল। আমার বাছকাছ কয়জন জিজ্ঞেস করলেন। বাছকাছ কি জানতে চাইলে বলেন ওই ধরেন ছেলেপুলে। নিজের ব্যাচেলর দশা জানাইলে তিনি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সমগ্র ভূমন্ডল একবার পরিভ্রমণ করিয়া আবার যেন উত্তরায় আছড়ে পড়লেন। "এইডা আপনে একটা কাম করছুইন? আমি তো মনে করছি আপনের কমবেশ দুইটা বাছকাছ আছে?"
বিবাহ না করিয়া, বাছকাছ জন্ম না দিয়াও কি কাম( পড়ুন কাজ। কাম শব্দের অন্য তর্জমা আছে) করলাম বুঝলাম না। নিস্তার লাভের আশায় বললাম "চাচা,ছাত্র পড়াইবার যাই । কি বলেন?"
"আইচ্ছা আহুন যে। "
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:০৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×