somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - বেওয়ারিশ মুখোশ ।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিজু আমাদের বংশ পরম্পরায় একটা জাদু বাস্তবতার নাম। একজন মানুষ সময়ের বিবর্তনে অমূল্য সম্পদ থেকে কিভাবে কীটের সমতূল্য হয়ে উঠে রিজু তার উজ্জ্বল উদাহরণ । রিজুর এই কীটে রুপান্তরের হাতে খড়ি হয়েছিল একদিন সকালবেলা যখন শোনা গেল রিজুর বাবা
মিরাজ উদ্দিন শ্বশুরবাড়ীর গঞ্জনা সহ্য করতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। পুরুষ মানুষের আবার শ্বশুর বাড়ীর গঞ্জনা সহ্য করার কি বালাই তা অবশ্য বিস্ময় জাগানিয়া ।আদতে তাই ঘটেছিল। খালাতো বোনের রুপে বিমোহিত হয়ে বিবাহ করলেও বিয়ের পরে খালাতো বোন আর প্রথাগত আদর্শ স্ত্রী হতে পারেনি। শ্বশুরকুলের প্রতিটি সদস্যর সাথেই তার বচসা লেগে থাকত ।বউয়ের রুপ কিম্বা শ্বশুরবাড়ির প্ররোচনা যার ফলেই হোক মিরাজ উদ্দিন প্রতি ক্ষেত্রেই নিজ পরিবারের বিপক্ষে থাকত ।ফলত বছর দুই না যেতেই সংসার জীবন এক প্রকার দোজখে পরিনত হয়। ফুটফুটে রিজুর আবেদনও অপাংক্তেয় হয়ে পড়ে। একসময় নিজ পরিবারের সাথে ঝগড়ার চুড়ান্ত পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির আহবানে স্ত্রী পুত্র সহ সেখানে গিয়েই উঠে। নিম্ন মধ্যবিত্ত মিরাজের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কিছুদিন যেতেই বুঝতে পারে অনির্দিষ্টকালের জন্য তিনটি মুখের অন্ন সরবরাহের দায় কাধে নিয়ে কি ভুলই না তারা করেছে। মিরাজের শ্বশুরবাড়ির বসন্তকাল তাই মাস না পেরোতেই উধাও হয়ে যায়। বউকে নিয়ে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করে বিধিসম্মত সংসার করার জন্য দিন রাত চাপ দিতে থাকে মিরাজকে ।বউ এবং বউয়ের বাড়ির লোকজনের পক্ষে আজীবন দুতিয়ালি করে আসা মিরাজ এইবেলা মাতা সমীপে নিজগৃহে প্রত্যাবর্তনের আগ্রহ জানালে তাকে একপ্রকার অবাঞ্চিত ঘোষনাই করা হয়। এমন কুলাঙ্গার পুত্রের মুখ দেখতে চান না বলে তার মা সাফ জানিয়ে দেন।

এক বিকালে আসর নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে উচ্চস্বরে পুত্রের শাস্তি দাবি করেন মিরাজের মা । তার অভিশাপের ভাষা এতই প্রখর ছিল যে ইবাদতের গন্ডি পেরিয়ে তার এই মোনাজাত লোকেদের অলস সময়ের আলাপের খোরাক হয়ে থাকে বেশ কয়েক দিন। এক বছর কাটলেও কোন সুরাহার আলামত না দেখে নিজ বাড়ি ও শ্বশুরবাড়িতে অপাংক্তেয় মিরাজ একদিন বিষপানে আত্নহত্যা করে চিরপ্রস্থানের পথিক হয়ে যায়। দুই পক্ষে মামলা মোকদ্দমা চলে কয়েক দফা। মোনাজাতে পুত্রের শাস্তি দাবি করা মিরাজের মা এইবেলা জমি বিক্রি করে পুত্র হত্যার বদলা নেওয়ার লড়াইয়ে নামেন।তারমতে জোর করে বিষ খাইয়ে দেয়া হয়েছে তার ছেলেকে । দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলার ফাদে পড়ে এক প্রকার সর্বসান্ত্ব হয়ে পড়ে ।বছরব্যাপী লড়াইয়ে কেউ কাউকে পরাস্ত করতে না পেরে শেষে উভয়পক্ষই হাল ছেড়ে দেয়। বছর দুই বাদে অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায় রিজুর মায়ের ।

রিজু বড় হতে থাকে নানা বাড়িতে। বন্ধনহীন, লাগামছাড়া রিজু হয়ে উঠে দুষ্টের প্রবাদ পুরুষ। তার যাবতীয় অত্যাচার আর অযাচিত একটি মুখের অন্নদান এক পর্যায়ে অসহনীয় হয়ে ঊঠে সেখানে। তিন চার বছর পরে সবকিছু যখন স্বাভাবিক, পুত্র, জমি হারিয়ে মিরাজের মা এইবার রিজুকে লালন পালনের ভার নিতে চাইলেন। পুত্রশোক ভুলে থাকার একটা চেষ্টা মনে হয় । দাবি উপস্থাপন করা মাত্রই অপরপক্ষ আগ্রহের সহিত রিজুকে হস্তান্তর করে। কিন্তু নাতির মাধ্যমে পুত্রের ছায়া দেখে শোক ভুলে থাকার এই প্রকল্পটিও ভীষন মুখ থুবড়ে পড়ে । রিজুর দুরন্তপনা পরিবারের গন্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে । ক্রমাগত অভিযোগ আর বিনা শ্রমে অন্নধ্বংসের ফলে এইখানেও রিজু বেওয়ারিশ কুকুরের ন্যায় জীবন যাপন করতে থাকে। ছিচকে চুরি, মারপিট, কথার অবাধ্যতা , গেরস্থ কাজে অপারগতা রিজুকে একপ্রকার ঘরহীন করে দেয়। দশ বছরের বালক রিজু উধাও হয়ে যায় একসময়। হাফ ছেড়ে যেন বাঁচে সবাই।

প্রায় পাচ বছর পরে আবার বাড়িতে আসে রিজু। যথেষ্ট বলশালী হয়েছে এরই মাঝে । নরসিংদী না কোথায় যেন রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজে নিযুক্ত আছে বলে জানায়। একই সাথে বাড়িতে আসার কারনও বলে।একমাত্র চাচা মোস্তফা আলীকে সম্পত্তি বন্টনের তাগাদা দিতেই তার আসা বলে জানিয়ে দেয়। তিন মাসের মাঝে পিতার সম্পদ নিজের দখলে নিতে চায় বলে জানায় রিজু। তারপর আবার উধাও। এইবার শোনা যায় ঢাকা শহরে আস্তানা গেড়েছে রিজু। নিজের বলশালী গড়নের কারনেই হোক অথবা অন্য কারনেই শহরের এক উঠতি মাস্তানের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে তার । সেই মাস্তানও দুই একবার রিজুর চাচা মোস্তফা আলিকে ফোনে শাসিয়ে সম্পত্তি রিজুকে বুঝিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। যদিও মোস্তফা আলি অগ্রজের ওয়ারিশকে সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে কখনোই অনাগ্রহ ছিলোনা তা সত্ত্বেও নিজের বলয়ের জোর জানান দিতেই যেন রিজু দাবি উপস্থাপন অব্যাহত রাখত। তারও তিন চার বছর বাদে রিজুর বিবাহের সংবাদ শুনতে পাওয়া যায়। ছায়া দানকারী মাস্তানের ( রিজুর ভাষায় ওস্তাদ) ভাগ্নির সাথেই তার বিয়ে হয়েছে বলে জানা যায়।রিজুর বেশ দাপট ও অর্থযোগের সংবাদ ও বাতাসে ভেসে বেড়ায় ।

গত ডিসেম্বরে রাত তিনটার দিকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যাওয়ার পথে পলাশী মোড়ে মুখোশ পড়া তিন যুবক পথরোধ করে রিজুর বাবার চাচাতো ভাই আদতে তার ও চাচা ইউনুস আলীর । চাকু এবং আগ্নেয়াস্ত্র মেলে ধরে মোবাইল , মানিব্যাগ কেড়ে নিতে উদ্যত হয় যুবকেরা। আঘাত এড়াতে বিনা বাধায় ইউনুস আলী সবকিছু দিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই যুবকেরা হাত ইশারায় না দিতে আহবান জানায় ।অপেক্ষাকত কমবয়সী যুবকটি জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে তাদের হুকুমদাতার দিকে তাকালে হুকুমদাতা তাদের সরে যেতে বলে। মুখোশ খুলে এগিয়ে আসে সে।সন্ত্রস্ত্র ইউনুস আলী হতভম্ব অবস্থায় ও চিনতে পারে । রিজু। মাস্তান হোক আর অপরাধী হোক মানবিক বোধ কিছুটা সচল আছে তার মাঝে এখনো। পা জড়িয়ে ধরে মাফ চায় সে । হাসপাতালে যাওয়ার কারন শুনে সমবেদনা জানায় । হাত ধরে আরেকবার মাফ চেয়ে বিদায় নেয় রিজু। মুখোশ পড়ে আবার সঙ্গীদের খোজে রাস্তার ওইপারে আধো আলো আধো অন্ধকারে মিলিয়ে যায় রিজু।পথের রিজু পথেই আছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৫৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×