somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গলা কাঁটা আফ্‌ফান !!! রম্যরচনা

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গলা কাঁটা আফ্‌ফান !!!
অত্র তল্লাটে গলা কাঁটা আফ্‌ফানের চিনে না এমন লোক খুবই কম আছে।
মাঝে মাঝে বউকে পেটানো ছাড়া আফ্‌ফান কোনদিন কাউকে গলা কাঁটা তো দুরের কথা কারোর উপর চোখ লাল করতে পারেনি, তারপরও এমন একটি গাঁ গরম করা নাম পাওয়ায় মাঝে মাঝে আফ্‌ফান বেশ ফুরফুরা মেজাজে থাকে।

হুমায়ুন আহমেদের বিখ্যাত উক্তি “মরিচ জব্দ শিলে, আর বউ জব্দ কিলে” একথা স্মরণ করে প্রায় বউকে জব্দ করতে কিল না দিয়ে ডাকাত পেটানো পেটায়। বউয়ের একটু পান থেকে চুন খসলেই মোটামুটি গুছিয়ে জব্দ করা শুরু করে। :) :) :)

কোন বাচ্চা-কাচ্চা না হওয়ায় আফ্‌ফানের বউয়ের মনে খুব কষ্ট। কেন বাচ্চা-কাচ্চা হয় না সেটি আফ্‌ফান ভাল করে জানে :D :D :D । সেদিন আফ্‌ফানের বউ আফ্‌ফান যে বাচ্চা দিতে পারে না তাই তার মুরদের কথা ওঠাতেই আফ্‌ফানের ইজ্জতে ঢোলের বাড়ি পড়লো। একথায় পান থেকে শুধু চুন না খয়ের র্জদ্দা, সুপারি সব খসে পড়লো। কি করবে ভেবে না পেয়ে “উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে না দিয়ে বউয়ের ঘাড়ে দিয়ে বউ জব্দ করা শুরু করলো আফ্‌ফান”। প্রতি জব্দে বউয়ের পাশাপাশি নিজের ঘরের ছাউনি পোড়া মাটির টালি দু-একটা না ভাঙলে নিজেকে পুরুষ মনে হয় না, তাই বউ যখন দৌড়ে ঘরে দরজা দিয়ে দিলো তখন দু-একটা টালি ভেঙে হ্যস্তন্যস্ত করেই খ্যান্ত হলো।

মোটামুটি এক সপ্তাহ’র জন্য বউ জব্দের কাজ শেষ করা হলো ভেবে আফ্‌ফান বাজারের উদ্দেশ্য রওনা হলো। বাপের পাওয়া একটি জাপানী 30-CC মোটরগাড়ী তার অমূল্য ধন। তেল না থাকলেও প্যাডেল মেরে চালানোর বেশ সুবিধা থাকায় গাড়ীটি কেউ কোটি টাকায় কিনতে চাইলেও আফ্‌ফান এ গাড়ী বিক্রি করতে রাজী না, এমন কথা ভাবতে ভাবতে মেঠো রাস্তা ধরে বাজারে যাচ্ছে সে।

বাজারে পৌছাতে না পৌছাতে সে বুঝতে পারলো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য পেটের ভিতর আষাঢ়ের কিছু ঘন মেঘ জমা হয়েছে। বাজারের এই সুন্দর মার্কা কমোডের টয়লেট গুলো তার কোন দিনই পছন্দ না। প্রকৃতির কাজ প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যের খুব কাছাকাছি থেকে করতে হয়। মাথার উপর সোজা আকাশের মেঘ ক্লিয়ার দেখা না গেলে আফ্‌ফানের পেটের মেঘও ক্লিয়ার হয় না। =p~ =p~ =p~

এতো সেতো না ভেবে আফ্‌ফান তার কোটি টাকার জাপানী 30-CC মোটরগাড়ী নিয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার জন্য ছুটলো। বাড়ি পৌছাতে ২ কি.মি বাকি থাকতে সে বুঝতে পারলো তার কোটি টাকার গাড়ীর তেল শেষ। প্যাডেল ব্যবস্থা না থাকলে যাচ্ছে-তাই অবস্থা হতো ভেবে প্যাডেল মারা শুরু করলো। কিন্তু ১ কি.মি যেতে না যেতে তার অবস্থা কাহিল :D :D :D । যত প্যাডেল মারে তত যেন শরীরটা টনটন করে ওঠে :D :D :D

ঐ দেখা যাচ্ছে রইচ মৃধার পাচিঁলের দেওয়া বাড়ি। পাচিলের গা ঘেঁষে বুনো বিঁচিকলা (যশোরের ভাষায় দয়াকলা) গাছের ঝোপ। আফ্‌ফান আর পেরে দিচ্ছে না ভেবেই ঐ ঝোপে সময় মত কোপ মারতে হবে ভেবে রইচ মিয়ার পাচিঁল ঠেকিয়ে তার গাড়িটি রেখে প্রকৃতির কাছে চলে গেল। ফিরে এসে নিজের কাছে খুব হাল্কা মনে হলো । সময় মত ঝোপ বুঝে সে কোপ মেরেছে ভাবতেই নিজের কাছে আজ অন্যরকম বুদ্ধিমান মনে হচ্ছে। কারণ সময়ের কাজ সময়ে অনেকে করতে পারে না। আজ সে পেরেছে। দূর্ঘটনা ঘটে গেলে কি বেইজ্জতের কাজই না হতো বউয়ের সামনে।

রাতে বেশ ফুরফরা মেজাজে ঘুমিয়ে গেল আজ আফ্‌ফান। কারন আজ সে দুটি দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পেরেছে। মোটামুটি একটু ঘুম ধরে এসেছে তখন দরজায় খটখট শব্দ। আফ্‌ফান বেশ ভয়ে ভয়ে পুরুষে গলায় বললো "কে"??? (কারণ বেশ রাত হলে আফ্‌ফান ভয়ে ঘর থেকে বের হয় না)। বাইরে থেকে বললো ”পুলিশ”। পুলিশের কথা শুনেই আফ্‌ফানের গলায় জ্যৈষ্ঠ্য মাসের খরা।

ভয়ে ভয়ে দরজা খুলতেই এক পুলিশ তার লুঙ্গির গিট ধরলো। আফ্‌ফান আর তার বউ হাউমাউ করে বললো, স্যার কি হয়েছে??? পুলিশ বললো, রইচ মিয়ার মেয়ে গুম!!! আর আজ বিকেলে তোর জাপানি গাড়ি রইচ মিয়ার বাড়ির সামনে কয়েকজন দেখেছে। তাকে গলা কেঁটে কোথায় রেখেছিস বল??? আর গলা কাঁটার আগে না জানি কি কি করেছিস। আফ্‌ফানের বউ বললো, স্যার আমাদের উনি এমন কিছু করতেই পারে না ( কারণ তার মুরোদ আফ্‌ফানের বউ জানে :D :D :D )। আফ্‌ফান বলে, স্যার ওখানে কি হয়েছিল পাশে চলেন বলতেছি। পুলিশ বললো, থানায় নিয়ে চলো তারপর সাড়াশি দিয়ে টেনে পেট থেকে সব কথা বের করবো।

থানায় এখন বুলডেজার ডলায় হচ্ছে তার। আগে কাজ পরে কথা এ কাজ যথাযথ পালন হয় থানায়। আসামী ধরার সাথে সাথে আগে পিটানি পরে জিজ্ঞাসা। ১ম ধফার কাজ শেষ করে এখন পুলিশ ২য় ধফায় হাত দিলো।
রইচ মিয়ার মেয়েকে গলা কেঁটে কোথায় রেখেছিস???
স্যার বিশ্বাস করেন আমি জানি না।
কষেঁ একটা থাবা দিয়ে জিজ্ঞাস করলো তোর জাপানি গাড়ি তার বাড়ির সামনে কি হেঁটে হেঁটে গিয়েছিল??? আর যাওয়া উদ্দেশ্য কি ছিল।
আফ্‌ফান এবার তার প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার কথা সব খুলে বললো। কারণ সে জানে পুলিশি প্যাঁচ বড় প্যাঁচ। একবার প্যাঁচে পড়ে গেলে জাল থেকে টেংরাপুটি বের হতে পারলেও সে বের হতে পারবে না।
পুলিশ তাকে বললো, নিজেকে সাধুবাবা পরিচয় দিয়ে দিলি, গলা কাঁটা আফ্‌ফান নাম কি আর এমনি এমনি হয়েছে???
তখন তার গাঁ গরম করা নামের ইতিহাস শুরু করলো আফ্‌ফান।

স্যার, অনেক দিন আগের কথা আমার একবার টন্সিল হয়েছিল গলায়। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার জানালো টন্সিল গলা কেঁটে অপারেশন না করালে ঠিক হবে না। করালাম অপারেশন কিন্তু দু:খের বিষয় আমার শশুর বাড়ি থেকে কেউ আমাকে দেখতে এলো না। যেদিন বাড়িতে গেলাম তার এক সপ্তাহ পরে আমার শালা দেখতে এলো। শরীরটা খিটমিট করতেছিল কিন্তু কিছু বলতে পারতেছিলাম না। যখন এক সাথে খেতে বসলাম তখন আমার অন্ন ধ্বংস হচ্ছে ভেবে আরও রাগ বেড়ে গেল। ভাতের ভিতর চুল পাওয়ায় সুযোগ পাওয়া গেল। বউয়ের দু-এক কথায় পিটানি শুরু করলাম এই ভেবে যে অন্তত ঝি মেরে বউ শিক্ষাটা হোক। কিন্তু শালা বাধাঁ দিতে আসায় ঝি মেরে না, বউ মেরে বউ শিক্ষার সুযোগ হাতের কাছে চলে এলো। আচ্ছা মত পিটালাম শালাটার। সব মিলে ষোল কলা পূর্ন হলো। কিন্তু শালা ঐ অবস্থায় আমার নাম ধরে “গলা কাঁটা আফ্‌ফান” হাঁক পাড়তে পাড়তে গ্রাম থেকে চলে যায়। বিশ্বাস করেন স্যার সেখান থেকে আমার নাম ঐটা হয়ে যায়।

নারী নির্যাতন আর শালা নির্যাতনের কথা শুনে আরও কষা দিলো। আরো বললো, নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করিস না?? কাল সকালে বাকি হিসাব বুঝা হবে একথা বলে আজকের মত ইনিংস ঘোষনা দিয়ে পুলিশ চলে গেল। সকালে পুলিশের কাছে খবর আসলো ঐগ্রামের কদরের ছেলেও গুম। তারা এক সাথে স্কুলে এক ক্লাসে পড়তো। তখন পুলিশের বুঝতে আর বাকি নেই যে কেঁস কোন মফিজের কোঁটে। আফ্‌ফানের শুধু শুধু ফ্রি হিটে ছক্কা মারার মানে হয়নি।

পুলিশ আফ্‌ফানকে ডাকে আনলো। একটু লজ্জিত চোখে তাকাচ্ছে পুলিশ। আফ্‌ফানকে বললো, বাড়িতে চলে যা, মন দিয়ে কাজ কর্ম কর আর বউকে যেন কোন রকম পিটানোর কথা না শুনি। এমন ভাবে কেউ বউ পেটায়??? আফ্‌ফান চলে আসার সময় স্যারের সালাম দিয়ে বললো, স্যার আমার গাড়ী রাখার ঘটনা আর আমার নামের ইতিহাসের কথা দয়া করে কাউকে বলেন না। বোঝেন তো আমার নামের একটা ইজ্জত আছে। পুলিশ বললো, চোখের সামনে থেকে এখনই কেটে পড়।

কিছু না হোক পুলিশি প্যাঁচ থেকে রক্ষা হলো এই ধফায় এটিই কত। ঐ জাপানী গাড়ীর জন্য এত কিছু হলো, এবার বাড়ীতে গিয়ে ঐ গাড়ীর একটা ধফারফা করতে হবে ভাবতে ভাবতে বের হলো থানা থেকে। থানার সামনে জনমানবহীন রাস্তা দেখা যায়। কোথাও কেউ নেই। গেটের সামনে এসে একটু দাঁড়াতেই ডান কাধেঁ একটু পিছনে গরম অনুভব করলো। তাকিয়ে দেখলো উপরের ইলেক্ট্রসিটি তারে বসে থাকা কাঁকে প্রকৃতির কাজ সেরেছে।

আফ্‌ফান একটি র্দীঘশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবলো, নামে সাথে কামের মিল না থাকলে এমনই হয়। আজ যদি নামের সাথে কাম করতে পারতাম তাহলে কতজন ফুল নিয়ে দাড়িঁয়ে থাকতো আমাকে বরণ করতে। অথচ সেটি তো হল না বরং........ না থাক আর ভাবতে ই্চ্ছা হচ্ছে না। জনমানবহীন পথে মানবপূর্ন করতে আফ্‌ফান রাস্তায় নেমে পড়লো। একা একা হেঁটে যাচ্ছে সে রাস্তায়, অচেনা এক গলা কাঁটা আফ্‌ফান...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:০১
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×