একদিনে ঘুরে আসার মত সুন্দর একটি জায়গা বিরিশিরি। বিরিশিরি নামে পরিচিত হলেও এটি মুলত নেত্রকোনা জেলার সুসাং দূর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরের সাদামাটি বা চীনামটির পাহাড়। বিরিশিরির মূল সৌন্দর্য বিজয়পুর চীনামাটির পাহাড়টিই। পাহাড়ের বুক চিরে জেগে উঠেছে নীলচে-সবুজ পানির কৃত্রিম হ্রদ। যেখানে দেখতে পাবেন ছোট ছোট কয়েকটি সবুজ গাছে বেষ্টিত পাহাড় আর লাল, গোলাপী, সাদা ও অনন্য রংয়ের মাটি। চলুন একটু ঘুরে আসি বিরিশিরি থেকে.....
(টপিকটি ভ্রমন ইচ্ছুকদের জন্য:
ঢাকা থেকে সহজে ট্রেনে যাওয়া যায়। রাত ১২টায় কুমলাপুর বা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ঢাকা-মোহনগঞ্জগামী হাওড় এক্সেপ্রেসে চলে যেতে পারেন শ্যামপুর বা নেত্রকোনা স্টেশনে। ভাড়া নিবে শোভন চেয়ার ২২০ টাকা, নরমাল আরও কম। তবে দুজন করে গেলে সুবিধা হবে। কারন শ্যামপুর বা নেত্রকোনা থেকে বিরিশিরি প্রায় ৩০-৩৫ কি.মি. আর সেখানে সাধারন যানবহন থেকে মটরবাইকে চলাচল সুবিধা বেশি। তাই দুজন করে সংখ্যায় গেলে মটরবাইকে চলাচলের জন্য সুবিধা হবে। মটরবাইকে ভাড়া ৮০০-৯০০ টাকা (দরদাম করে নিতে হবে এবং কোথায় কোথায় যাবেন সেটা উল্লেখ করে। সকলে সাধারনত সৌমেশ্বরী নদী হয়ে বিরিশিরি,সাধু যোসেফের ধর্ম পল্লী, হাজং মাতা স্মৃতিস্তম্ভ, বিজয়পুর সীমান্ত)।)
রাতে ঢাকা থেকে ট্রেন ময়মনসিংহ হয়ে নেত্রকোনা সকালে পৌছাবে। হুমায়ুন আহমেদের বিখ্যাত গৌরীপুর জংশন উপন্যাসের গৌরীপুর জংশনটিও দেখা মেলে যেতে যেতে।
হুমায়ুন আহমেদের বিখ্যাত গৌরীপুর জংশন উপন্যাসের গৌরীপুর জং।
দিগন্তজোড়া মাঠের মাঝ দিয়ে ছুটে চলেছে হাওড় এক্সপ্রেস।
নেত্রকোনা পৌছায়ে সকালে নাস্তা সেরে সৌমশ্বরী নদী পার হয়ে যেতে যেতে এই দৃশ্যগুলো চোখে পড়বে। চুনাপাথর, কয়লা উত্তোলনের উপকরন, ছোট ছোট লঞ্চ গুলো।
মটরচালিত নৌকায় সৌমেশ্বরী নদী পার হওয়ার সময় নদীর শেষে ভারতীয় সীমান্তবর্তী পাহাড় গুলো দেখতে দারুণ লাগে। বর্ষায় নদীতে প্রচন্ড ঢেউ তাই এই সময় গোসল করতে না নামায় ভাল। অন্য সময় স্বচ্ছ পানি থাকে তাই ঐসময় নদীতে নেমে শরীরটা ভিজিয়ে শীতল করে নিলে মন্দ হবে না।
ধর্মপল্লীর প্রধান ফটক।
ধর্মপল্লী থেকে সৌমেশ্বরী নদীর উপর ভারতের সীমান্তবর্তী পাহাড়।
ধর্মপল্লীর ভিতরের দৃশ্য।
সুসাং দূর্গাপুরে পৌছে আগে সাধু যোসেফের ধর্মপল্লীও রাণীখং হাই স্কুলে আগে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কারন দুপুর ১ টার পরে ধর্মপল্লী বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই দুপুরের পরে গেলে সুন্দর কিছু দৃশ্য দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন। ধর্মপল্লীর ভিতর সুন্দর পরিবেশ, ধর্মপল্লী হতে ভারতের সীমান্তবর্তী সবুজ পাহাড়, শান্তি কুটির, মারিয়াম ভাস্কর্য, রানীখং হাই স্কুল।
বিজয়পুর সীমান্ত ঘুরে এসে কিছু সময় বিশ্রাম এই মনোরম পরিবেশে। সীমান্তে ছবি তোলা নিষেধ তাই ছবি তোলা হয়নি। পরিচিত বিজিবির সদস্য থাকলে সীমান্ত থেকে নোম্যান্সল্যান্ড থেকে ঘুরে আসা যায় বিজিবির অনুমতি নিয়ে।
হাজং মাতা রাশমণির স্মৃতিসৌধ।
অবশেষে বিরিশিরির সাদা বা চীনামাটির পাহাড়ে।
প্রকৃতিক সুইমিংপুল বলতে পারেন।
সাদা আর সবুজ পানির হ্রদ গুলো।
নীল পানির হ্রদ আর গোলাপী মাটির পাহাড়। এখানে একটি আম বাগানও আছে, সেখানে কিছু সময় বিশ্রাম নিলে সেখানকার শীতল বাতাস আর মনোরম পরিবেশ ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা হবে না।
ভ্রমন ইচ্ছুকদের আরও কিছু তথ্য:
প্রথমে সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী ঘুরে, বিজয়পুর সীমান্ত ঘুরে আসতে পারেন তারপর চীনমাটির পাহাড়ে। চীনামাটির পাহাড়ের আশেপাশে তেমন হোটেল চোখে পড়েনি তাই দুপুরের খাবার সুসাং দূর্গাপুর বাজারে খেতে পারেন। খাবারের দাম নিতান্ত সস্তা, সস্তা হলেও খাবারের মান ভাল। নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি প্রায় সকল হোটেলেই পাওয়া যায় তাই খেয়ে দেখতে পারেন। বিজয়পুর সীমান্তে কোনভাবে ছবি তোলার চেষ্টা করবেন না। সকলের সাথে ভাল আচারন করবেন। সীমান্তের কাছে একটি কমলা বাগান আছে সেখানেও ঘুরে আসতে পারেন।
ট্রেন থেকে নেমে সকালের নাস্তা সেরে রওনা দিলে সকল জায়গা ভালভাবে ঘুরে দেখতে বেশি সময় লাগবে না, কারন স্পটগুলো প্রায় এক একটির কাছাকাছি। তাই কোন জায়গায় তাড়িঘড়ি করবেন না। ১০-১১ টার দিকে হালকা নাস্তা করে চীনামাটির পাহাড়ে যাবেন। সেখান থেকে ১-২ টায় ফিরে দূর্গা ফিরে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। ফিরে আসতে বিকাল ৪-৫ টা। ফেরার জন্য নেত্রকোনা থেকে সরাসরি বাসে আসতে পারেন ঢাকায়। আরও সুবিধা হবে নেত্রকোনা থেকে ৮০-১০০ টাকার ভাড়ায় সিএনজি বা বাসে সরাসরি ময়মনসিংহ চলে আসতে পারেন। রাতে অসংখ্য ট্রেন পাবেন ময়মনসিংহ স্টেশনে। ৮ থেকে ৯ টার ট্রেনে উঠতে পারলে রাত ১১ টার ভিতর ঢাকা পৌছে যাবেন। সবমিলে প্রতি জনে মোট ১০০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা খরচ হতে পারে ঢাকা থেকে।
ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:৫০