somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূর্বিসহ জীবন যাপন করছে পোল্ট্রি খামারীরা!!! হ্যচারী মালিক,ফিড মিলার এবং ডিলারদের দৌরাত্নে আটকে যাচ্ছে এই শিল্প!!!...

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দির্ঘ দিনের ক্ষতি পুশিয়ে নিতে যখন ব্রয়লার ১ দিনের বাচ্চার দাম একটু কমেছে তখন খামারীরা উৎসাহবোধ করে খামারে বাচ্চা তুলতে শুরু করেছে ঠিক তখনি পোল্ট্রি মুরগীর সরবরাহ কম হওয়ায় পাইকারী বাজার দর বেড়ে যায় কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকা আর এতেই মুনাফাখোর হ্যচারী সিন্ডিকেট ২৮ টাকা থেকে বাচ্চার দাম ২ সপ্তাহে ৫০ টাকায় নিয়ে আসে।সরকারের উদাসিনতায় এমন যা ইচ্ছে তাই কান্ড করে যাচ্ছে হ্যচারী সিন্ডিকেট, ফিড মিলার এবং ডিলারদের কারসাজিতে পোল্ট্রি খামারীরা দুর্বিসহ জীবনে পর্যবেশিত হয়েছে। দেশের উত্তরাণ্ঞ্চলের পোল্ট্রি খামারগুলি দিনের পর দিন উৎপাদন খরচ না মিটাতে পারায় বন্ধ হয়েছে অধিকাংশ খামার!!..


একদিন বয়সের ব্রয়লার বাচ্চা।

বেশ কয়েকদিন যাবৎ সংবাদপত্র ঘেটে জানতে পারলাম দেশে প্রায় ৬০% পোল্ট্রি ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে!!
আমাদের দৈহিক আমিষের চাহিদা পূরনে পোল্ট্রির ভুমিকা অপরিহার্য। খাল বিল নদী নালা শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ দিনের পর দিন চাহিদার অপ্রতুল হয়ে যাচ্ছে। পোল্ট্রি মুরগি ভোক্তার আমিষের চাহিদা পুরন করে যাচ্ছিল।কিন্তু দির্ঘ ৭-৮ মাস যাবৎ হ্যচারী সিন্ডিকেট ১ দিনের একটি ব্রয়লার বাচ্চা ২৮ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রী করেছে। যে খামারী ৮০ টাকার বাচ্চা কিনেছিল সে ওই বাচ্চাগুলি লালন পালন করে পুর্ণ মুরগি বানিয়ে কতটাকা বিক্রী করেছিল?..
ধরুন ৮০ টাকার বাচ্চা ২.৫০ কেজি ফিড ৪৫*২.৫০=১১২ টাকা খাদ্য +৮০ টাকা বাচ্চা
+ অন্যান্য খরচ ২৫ টাকা হলে সর্বমোট একটি মুরগির পিছনে খরচ দাড়ায়=২১৮ টাকা। ওইসময় মুরগির পাইকারী বাজার ছিল ১২৮ টাকা হিসাবে একটি মুরগির গড় ওজন ১.৫০ কেজি হলে দাম দাড়ায় ১.৫০*১২৮টাকা=১৯২ টাকা।
তাহলে একজন একটি ব্রয়লার মুরগি পালন করে ২১৮ টাকা বিণিয়োগ করে উৎপাদিৎ মুরগিটি
বিক্রয় করেন ১৯২ টাকায় তাহলে ওই খামারীর লোকসান দাড়ায় ২১৮-১৯২ টাকা=২৬ টাকা প্রতি পিছ মুরগিতে লোকসান!!!.. তাহলে খামারীটি যখন ১০০০ মুরগি পালন করবেন তখন তার লোকসান হয়েছে ২৬০০০ টাকা!!! এভাবে কয়েকবার লোকসান করে পূজিঁ হারিয়ে খামারীরা খামার বন্ধ করে দিয়েছেন যার ফল স্বরুপ বাজারে মুরগির মুরগির সংকট এবং দাম চড়া!! বর্তমানে জেলা ভিত্তিক এক কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৪০-১৫০ টাকা। রাজধানীর বাজারে হয়তো ১৬০ টাকার মত কেজি!!


ফিড মিলারদের কারসাজি!!
এক বছরের দুরত্বে ৫০ কেজি ব্রয়লার মুরগির ফিডের দাম ১৬৬৫ থেকে বেড়ে দাড়িয়েছে বর্তমানে ২২২০ টাকা তাহলে ৫০ কেজিতে খামারীকে বেশি দিতে হচ্ছে ৫৫৫ টাকা। সে হিসেবে প্রতিটা মুরগির উৎপাদন খরচে শুধুমাত্র খাদ্যতে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে ১২*১.৫০=১৮ টাকা। তাহলে ১ বছরের ব্যবধানে ফিডের দাম বৃদ্ধির কারনে খামারীদের ফিডের জন্য বাড়তী ব্যয় হচ্ছে ১৮০০০ টাকা!!
অথচ এবছরে দেশে ভুট্টার উৎপাদন হয়েছে বাম্পার এবং উৎপাদন বেশি হওয়ায় ভুট্টা চাষীরা ১ বছর আগের চেয়ে প্রতিমণ ভূট্টাতে ৫০-১০০ টাকা কম দামে বিক্রী করতে বাধ্য হয়েছে।
অথচ পোল্ট্রি ফিডে ৮৫% ভুট্টা থাকে সেখানে ভুট্টার দাম কমলো, উল্টো বাড়লো ফিডের দাম!!!


সূদুর অষ্ট্রেলিয়া থেকে ভুট্টা আমদানী করে যদি ১৬৬৫ টাকা বস্তা মুরগির খাদ্য বিক্রয় করে ফিড মিলারদের লাভ হয় তাহলে দেশে উৎপাদিত ভুট্টায় খাদ্য প্রস্তত করে ২২২০ টাকা দাম হবে কেন??..
সরকারের এত উদাসিন হলে চলবে??..


সরকার নির্ধারিত বাচ্চার দাম কার্যকর করছেনা হ্যচারী মালিকেরা!!২০১১ সালের জুন/জুলাইয়ের দিকে যখন পোল্ট্রি বাচ্চার দাম হ্যচারী সিন্ডিকেট হু-হু করে বাড়াচ্ছিল তখন মাননীয় প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী মহোদয় হ্যচারী মালিক ফিড মিলার এবং খামারী এসেসিয়েশনদের নিয়ে বৈঠক করে প্রতি পিছ ব্রয়লার বাচ্চা ৩২ টাকা এবং প্রতিপিছ লেয়ার বাচ্চা ৩৪ টাকা ধার্য করেন। উভয়পক্ষ তা মেনে নেন। মাত্র সাতদিনের ব্যবধানে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের বিদেশ গমনের সুযোগে হ্যচারী মালিকেরা মাননীয় হাইকোর্ট থেকে ছয়মাসের সময় চেয়ে রিট করেন। মাননীয় আদালত তা মন্ঞ্জুর করেন।
হ্যচারী সিন্ডিকেট পরের সপ্তাহে বাচ্চার দাম একলাফে ৫০টাকা+ করে লুফে নিতে থাকে খামারীদের থেকে কষ্টার্জিত টাকা!! ছয়মাস গিয়ে আরো কতমাস গেল হ্যচারী মালিকেরা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখছেনা!! এবিষয়ে সরকার নির্বিকার!! সাধারন খামারীরা কি করতে পারে??..


২৫ দিন বয়সী ব্রয়লার।

শেষ কথা!!
যিনিই হ্যচারী মালিক তিনিই ফিড মিলার!! অধিকাংশ ফিড মিলারদের হ্যচারী আছে, আছে পর্যাপ্ত শেড যা দিয়ে খামারীরা ষ্ট্রাইক করলে ২ সপ্তাহের উৎপাদিত বাচ্চা খাদ্য তারা ব্যবহার করেন এজন্য খামারীদের কথা তারা ভাবেনা!! তাদের নিজেরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে পারলেই হলো!!...
বর্তমানে দেশে পোল্ট্রি খামারের ৬০% বন্ধ রয়েছে,চালু আছে মাত্র ৪০% খামার!!!
ক্রমাগত লোকসান দিয়ে খামার চালু রাখা এইসব গরীব খামারীদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা তাই তারা ধীরে ধীরে পোল্ট্রি ফার্ম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। খামারীরা যখন একটিবার কিছু লাভের সুযোগ পেল তখনি সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ২৮ টাকা থেকে বাচ্চার দাম ৫০ টাকায় নিয়ে গেল!!!!!!!!
এভাবে কি কোন শিল্প চলতে পারে??.. পোল্ট্রিওতো একটা খুদ্র শিল্প?? অথচ পোল্টিকে শিল্প হিসেবে সরকারী অনুমোদন দেয়া সত্তেও তাদের বিদ্যূৎ সংযোগ নিতে হয় বাণিজ্যিক হিসাবে!! বিদ্যূতের দাম দিতে হয় বাণিজ্যিক রেটে!! সরকার যেমন উদাসীন তেমনি সুযোগ সন্ধানী সিন্ডিকেট!! মাঝখান থেকে এদের যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে নিপিড়িত হচ্ছে কিছু স্বশিক্ষিত বেকার যারা খামারী নামে পরিচিত!!!
যদি ৬০% বলকে ৬০০০০ খামার বন্ধ ধরা হয় …প্রতি খামারে যদি গড়ে ৩ জন করে ব্যক্তি কাজ করে থাকে তাহলে ৩*৬০০০০=১৮০০০০ লোক বেকার হয়ে গেছে!!!
এই বেকারত্বের লাইন আর কত দির্ঘ হবে??..
সরকার কি তাদের চাকুরীর নিশ্চয়তা দিতে পারবে??..

(ছবি সংগ্রহ-গুগল থেকে)

পোষ্টটি উৎসর্গ -ব্লগার আবুসিথি
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:৪১
৩৯টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×