somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধ ঘরের রহস্য (পর্ব ১)

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.
শহর থেকে দূরে এসেছি একটি পাকা রাস্তা ধরে। রাস্তাটি গ্রামগুলোর ভেতর দিয়ে পাশের উপজেলা তাড়াশ গিয়েছে। সেই উপজেলা আবার অন্য জেলা তথা সিরাজগঞ্জের অংশ। পাকা রাস্তা হলেও মানুষের চলাচল খুব কম। আর এই সুযোগটাই আমরা নিয়েছি। আমরা মূলতঃ সিগারেট খেতে এসেছি। শহরের ভেতরে কোথাও কোন পরিচিত লোক বের হয়ে যায়, তাই নিরাপদ ধূমপানের জন্য গ্রামের ভেতরে আসা। গ্রীষ্মের ছুটিতে ভার্সিটি বন্ধ, বাসায় এসেছি কয়েকদিন আগে। তাই সিগারেট খেতে এত ঝক্কি পোহানো। প্রতিদিন একেকটা রাস্তা ধরে শহর থেকে অনেক দূরে চলে আসি। কখনো অন্য উপজেলায় অথবা অন্য জেলায়। ছুটিটা বেশ ভালোই কাটছে এভাবে।

আজ যে রাস্তা ধরে এসেছি তার নাম ভবানীপুর সড়ক। রাস্তা থেকে গ্রামগুলো বেশ দূরে। পাকা রাস্তা থেকে নেমে কাঁচা রাস্তা ধরে গ্রামে যেতে হয়। তাই রাস্তায় থাকা দোকানগুলোয় ভীড় কম। যাদের প্রয়োজন শুধু তারাই এখানে এসে পণ্য কিনে চলে যায়। আড্ডা দেবার একদম পারফেক্ট জায়গা।

আমরা একটি টঙে বসেছি। দোকানটা ছোটো এবং পাশে ক্যারাম বোর্ড রাখা। কিন্তু কোনো লোকজন চা খেতে এখনো আসেনি। এই গরমে গ্রামের লোকজন চা খাবে, সেটা ভাবাও বোকামি। বেলা এখন প্রায় এগারোটা, কিন্তু সূর্য যেন মাথার উপরে চলে এসেছে।একটা সিগারেট ধরিয়ে আরেফিন আমাকে বলল, 'খেলবি ক্যারাম?? মামা দু'জনকে চা দিয়েন।'

'ক্লাস নাইনের কথা মনে পড়ে? স্কুল ফাঁকি দিয়ে ক্যারাম খেলতাম।' স্মিত হেসে আরেফিন বলল, আমিও হাসলাম। হ্যাঁ, স্কুলে থাকতে প্রচুর ক্যারম খেলেছি ক্লাস ফাঁকি দিয়ে। শহরের এমন কোনো জায়গা বাঁকি ছিলো না, যেখানে আমরা দুজন গিয়ে খেলে আসিনি। জেতার চেয়ে হেরে গিয়েছি বেশি কিন্তু যে অভিজ্ঞতা আমরা পেয়েছি তার কারণে আজ আরেফিন তার ভার্সিটিতে ক্যারম চ্যাম্পিয়ন, আর আমি অবশ্য একবার হল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম।

'তখন তো একটা নেশা হয়ে গেছিলো। ইন্টারে উঠে আবার কার্ড খেলার নেশা ধরলো।' আমরা কথা শেষ না হতেই দু'জনে হো হো করে হাসলাম।

আমাদের আয়েশি খেলা চলছে, সাথে তৃপ্তির সিগারেট টানা। একটু পরেই একটি ভ্যান আমাদের পাশ কাটিয়ে গ্রামের রাস্তায় মোড় নিল। ভ্যানে থাকা বাচ্চাসহ দুজন মহিলা আর্তনাদ করে কাঁদছে। বিষয়টাকে আমি কোনো গুরত্ব না দিলেও, আরেফিন দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো, 'কিছু জানেন নাকি মামা, কি হইছে?'

দোকানদার পানের পিচকিরি ফেলে বললো, 'কালকে রাতে একজন মারা গেছে গা। তারই বউ এড্যা।'

'কিভাবে মারা গেল?' স্ট্রাইক দিয়ে গুটিতে মারল আরেফিন। আমি দেখলাম তা পকেটে পড়লো।

'আর কইয়ো না বাবা, এরা রাইতে মাছ মারতে যায়, আর কিছুদিন পরেই একেক জন কইরা মারা যায়।'

'আগেও মারা গেছে কেউ?' আরেফিনের পাশাপাশি এবার আমিও বেশ কৌতুহল নিয়ে তার দিকে তাকালাম। আরেফিন নির্বিকারে ক্যারাম খেলে যাচ্ছে।

'হ বাবা, দুই তিন মাস আগেও একজন এঙ্কা কইরা মারা গেছিলো। আইজ আবার আরেকজন। ঘরের মধ্যে মইরা পইড়া আছিল। দরজা ভাইঙ্গা তারে বের করছে। সারা শরীরে কোপের দাগ। জ্বীন অনেক ক্ষেপা। সবাইতো ওরেই দেগতে গেছে। তাই তো দোকান খালি।' মামা পিছনে ঘুরে গ্রামের রাস্তার দিকে তাকালো। রাস্তা ফাঁকা।

আরেফিন স্ট্রাইক ছেড়ে সিগারেট টানছে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো, 'মাছ মারার সাথে মারা যাবার সম্পর্ক কি?'

'কি কও বাপু, জানো না কিছু? রাইত কি সুবিধার?? কত জীব জনতু রাইতে ঘুইরা বেড়ায়। জ্বীন ভূতরাও তো থাকে। আর মাছের সাথেই তো তাদের সখ বেশি।' মামা যেন নিশ্চিত জেনেই সব বলছে।

স্ট্রাইক হাতে নিয়ে আরেফিন বলল, 'তা, উনি কিভাবে মারা গেলেন?'

'শুনছি, চাকুর ঘা'য়ে। সারা শরীল জুইরা চাকু মারছে বদ জ্বীনটা।' রাগ প্রকাশ করতে যেন তিনি কটমট করে বললেন।

আরেফিন আমার দিকে তাকালো। কয়েক পলক চুপ থাকার পর জিজ্ঞেস করলো, 'পুলিশ আসছে দেখতে?'

'পুলিশ আসপি ক্যা? কেউ তো আর মাইরা ফেলে নাই। জ্বীন মারছে।' দোকানদার যেন কিছুটা অবাক।

'রক্তবমি করে মারা গেলে তো বুঝতাম পুলিশের দরকার নাই। কিন্তু জ্বীন যে এবার চাকু মারা শুরু করছে। চাকু মারলে তো পুলিশ ধরবেই' আমি হাসতে হাসতে বললাম।

আরেফিন ক্যারাম ছেড়ে আমার কাছে এসে বলল, 'জীবন, চল দেখে আসি। বাইকটা লক কর'
আমি বাইকের ঘাড় লক করে দাঁড়ালাম, আরেফিন দোকানদারকে মোটরসাইকেলটা দেখে রাখতে বলল। দুজনের হাতে নতুন সিগারেট ধরানো। আমরা তো বাসায় সিগারেট খেতে পারি না। তাই বাইরে আসলে একটার পর একটা ধরাতে থাকি।
মাটির রাস্তা ধরে হাঁটছি প্রায় দশ মিনিট। বাইক থাকতেও হেঁটে আসার কোনো যুক্তি আমি পেলাম না। আরেফিন হয়ত তা বুঝতে পেরেছে। তাই সে বলল,

'ওইরকম বাইক নিয়ে গ্রামে ঢুকলে সবাই লাশ ছেড়ে বাইকের দিকেই তাকিয়ে থাকবে।'

২.
গ্রামে ঢুকে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করা লাগলো মরা বাড়ি খুঁজে পেতে। গ্রামের একদম শেষের মাথায় লোকটির বাড়ি। আমরা হাঁটতে থাকলাম, অবশেষে সবার জটলা দেখতে পেলাম। সবাই গোল হয়ে লাশ দেখছে। উঠোনে লাশটা রাখা, সাদা কাফনে ঢাকা। গোসল এখনো হয়নি বলা যায়। উঠোনের পাশেই একটি মাটির ঘর। ঘরের দেউরিতে বসে মাতম করছে কয়েকজন মহিলা। মহিলাদের কান্নার আওয়াজে টেকা দায়। স্বজন হারানোর কষ্টে মানুষ যে কান্না করে তা সবার চোখেই অশ্রু টেনে আনে।

আরেফিন লাশ দেখতে জটলার ভেতরে গেল। আমি উঠোনের কোণে দাঁড়িয়ে রইলাম। স্কুলে থাকতে আরেফিনের গোয়েন্দাগিরির একটা শখ ছিল। যেটা সবারই থাকে৷ তবে ওরটা ভিন্ন রকমের। আমরা যখন তিন গোয়েন্দা বা মাসুদ রানা পড়ে মজা নিতাম। সে এগুলো ছুঁয়েও দেখতো না, তার পছন্দ ফেলুদা ও তার গুরু হোমস!
স্কুলে থাকতে বই ও কলম চোরদের উৎপাত সে বন্ধ করে ছিল। এখন ভার্সিটির শেষ বছরে উঠেছে। না জানি তার স্কুল জীবনের গোয়েন্দা হওয়ার শখটা আবার জাগলো কিনা।

আরেফিন লাশের কাছে না গিয়ে একজন মাঝবয়সী লোকের দিকে এগিয়ে গেল। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর তাকে দেখলাম একদম খাটিয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়াতে। খাটিয়ায় শোয়ানো লাশের শুধু মুখটাই দেখানো হয়। কিন্তু তাকে দেখানোর জন্য বুকের উপরের কাপড়টা খুলে ফেলা হলো। আরেফিন কিছুক্ষণ ঝুকে দেখল। পকেট থেকে নকিয়া হ্যান্ডসেটটি বের করে ছবি তুলতেই সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো। শহরে অনেকের কাছে মাল্টিমিডিয়া সেলফোন থাকলেও গ্রামে এখনো মাল্টিমিডিয়া সেলফোন আসেনি।

আরেফিন আবার লোকটার কাছে গিয়ে কথা বলল। কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফিরে এলো আমার কাছে এবং বলল,' একটা সিগারেট দে তো' আমি প্যাকেট বের করতে যাব এমন সময় বলল, 'না, থাক!'

'লোকটাকে কিভাবে মেরেছে?' আমি জিজ্ঞেস করলাম।

'পুরো শরীরটা দেখতে পারিনি। তবে বুকে দেখলাম বেশ কয়েকটা চাকু মারার আঘাত। চাকু বা ছুড়িটা সাধারণ ছুড়ির মত নয়। সবাই বলল এরকম বিশ-ত্রিশটা আঘাত করেছে জ্বীন!' জ্বীন বলার পর আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালো। মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।

'এ যুগে এসেও মানুষ এসব বিশ্বাস করে?' আমি আসলে অবাক হয়ে গিয়েছি।

'মানুষের বিশ্বাস বড়ই অদ্ভুত ব্যাপার। বিশ্বাস আসে ভয় থেকে। মানুষ যখন বুঝলো আগুন তাদের মেরে ফেলতে পারে, তখনই তারা আগুনের পূজা শুরু করলো আগুনকে খুশী করার জন্য' আরেফিন চারপাশটা ভালো করে লক্ষ্য করছিল, আমিও তাকালাম।

'এখানে কি জ্বীনের ভয় বেশি?'

'হ্যাঁ, তা বলা যায়। আমার এক ধর্ম মামার নেশা ছিল রাতে মাছ মারার। নানা অনেক নিষেধ করেছেন। কিন্তু একদিন সকালে সে রক্ত বমি করে মারা যায়' আরেফিন এক প্রশ্বাসে বলে ফেলল।

'আমরা কি পুলিশে খবর দিব?' আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে বললাম।

'বুঝতেছি না। অনেক হিসেব আছে। পুলিশ আসলেই অনেককে সন্দেহ করবে। গ্রেফতার করবে। টাকা চাইবে ছাড়া পেতে। শেষে দেখবি পুরো গ্রাম পুরুষ ছাড়া। সবার জীবন এলোমেলো হয়ে যাবে?'

'সেটাও একটা বিষয়। কিন্তু পুলিশে তো আমাদের পরিচিত মানুষ আছে। তারা তো এমন করবে না।'

'আমি ইউনিয়ন মেম্বরের সাথে কথা বলেছি। তারা লাশ দাফন করবে। তারা এটা স্বাভাবিক মৃত্যু মনে করে' আরেফিনের মুখে বিরক্তির ছাপ।

'তুই কি মনে করিস?'

'জ্বীন চাকু দিয়ে মারতে যাবে কেন? একবার ভয় দেখালেই তো মানুষ শেষ'

'এখন কি করবি?'

'চল, ঘরটা দেখে আসি'

আমরা উঠোনের জটলা পেরিয়ে একটি লাল মাটির ঘরের পাশে দাঁড়ালাম। একটাই মাটির ঘর। ঘরের দরজামুখে মহিলারা বসে কাঁদছে। ওদিকে না গিয়ে আলাদা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মাঝবয়সী লোকের কাছে গেলাম। আরেফিন এলাকার মেম্বারের সাথে কথা বলে এসেছে, তবুও নতুন কিছু পাবার আশায় আমরা তার সাথে কথা বলা শুরু করলাম।

'চাচা, লোকটার নাম কি?' আরেফিন জিজ্ঞেস করল।

লোকটা আমাদের দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকালো। তারপর বলল-
'আলম। কিন্তু তোমরা কারা বাবা? এইখানে কি করো?'

'আমরা চা খাচ্ছিলাম তিনমাথায়। শুনলাম জ্বীন মানুষ মারছে, তাই দেখতে আসছি'

'ওই কথা আর মুখে আইনো না। বিপদ হবি' লোকটার মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। জ্বীন বা ভূত শুধু আলমকে হত্যা করেনি, হত্যা করেছে এই এলাকার মানুষদের বিশ্বাস, সাহস ও সঠিক চিন্তার করার ক্ষমতাকে।

'শুনলাম মাছ মারতে গেছিলো। তা, কোথায় মাছ মারতে গেছিলো?' আমি বললাম।

'গেরামের পেছনে, মেঘডুম্বুর পুকুরে'

'আগেরজনও কি ওই পুকুরেই মাছ ধরতে গেছিলো?' আরেফিন জিজ্ঞেস করলো।

'না, সে গেছিলো ময়না খালে মাছ মারতে'

'তারেও কি এই ভাবেই মারছিলো জ্বীন?'

'এ্যাকদম এঙ্কা কইরাই' লোকটি যেন নিজের চোখে দেখেছে সেভাবেই হাত দিয়ে ইশারা করল।

'তখন পুলিশ আসছিল?'

'আচ্ছিলো হয়ত, মনে নাই-কা'

লোকটি এবার বিরক্তি নিয়ে তাকানো শুরু করলো। পাছে নানান প্রশ্ন করে, তাই আমরা সরে আসলাম। পাক্কা দুই মিনিট ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো আরেফিন। দৃষ্টি সবার দিকে৷ তারপর আমাকে ইশারা করলো, আমরা গ্রাম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। মহিলাদরে জটলা পার করে ঘরে ঢোকা এখন সম্ভব নয়।

গ্রামের প্রবেশমুখের রাস্তায় দুজন দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালাম। আমি টঙের দিকে তাকালাম, বাইকটা আছেই। আরেফিন সিগারেটে লম্বা টান শেষে আঙুলের টোকা দিয়ে ছাই ফেলে দিয়ে আমাকে বলল,
'এটা যে একটা পরিকল্পিত খুন হতে পারে, সেটা কারো মাথাতেই আসবে না'

'গ্রামের এই গরীব লোককে কে মারতে যাবে? কেন মারতে যাবে? মোটিভ তো দেখি না'

'সবকিছুর ব্যাখ্যা ঐ পুকুর আর খালই দিতে পারবে' আকাশের দিকে ধোঁয়া ছেড়ে বলল আরেফিন।

'যাবি কি ওখানে?' আমি তাকে পরীক্ষা করার জন্য বললাম।

'এত সুন্দর রহস্য, আর যাব না? তোরে কি তালপুকুরের কাহিনিটা বলেছিলাম?' আরেফিন মুচকি হাসলো।

'হ্যাঁ। ভুত ধরতে যাবার কাহিনি? শেষে পালিয়ে রক্ষা?' দুজনই হো হো করে হাসলাম।

'ঠিক! ওখানেও একটা রহস্য ছিল। ভেদ করতে পারিনি৷'

'তাহলে এটা কি ভেদ করতে নামবি?'

'দেখা যাক। চল, বাড়ি যাই। খেতে হবে!'

আরেফিন বাইকে চেপে বসলো। আমি পেছনে বসলাম। সে বাইক টান দিল পাকা রাস্তা ধরে। তিন কিলোমিটার এসে আমরা ডানে মোড় নিলাম। সোজা রাস্তায় আর যাওয়া যাবে না। ওদিকে আরেফিনের নানা'র গ্রাম। আমরা হাইওয়ের দিকে চলতে থাকলাম। বেলা এখন সাড়ে বারোটা।

৩.
এরপর সারাদিন একসাথেই ছিলাম আমরা। ওই ঘটনা নিয়ে আর কোনো কথা হয়নি। কিন্তু আমি বিষয়টা ভুলতে পারিনি। একবার মনে হয়েছিল আরেফিনকে বলি। সে তো একসাথে অনেক চিন্তা করে, কখন যে কোনটা নিয়ে পড়ে থাকে তা বুঝা মুশকিল। তবে বিকেলের আড্ডা শেষে যখন বাইকে করে বাড়িতে ফিরছি, তখন আরেফিন বলল, 'পুলিশ বিষয়টা জানে না। আগেরটাও জানে না'

'আমি তো বিষয়টা নিয়ে পুরো বিকেল ভেবেছি। এটা কিভাবে সম্ভব একটা লোক এভাবে মারা গেল, অথচ কেউ কিছুই করলো না' আমি বললাম।

'চল, বথুয়া ব্রিজে যাই। ওখানে কথা হবে'

পড়ন্ত বিকেল। লাল রক্তিম আভা ছড়িয়ে আছে আকাশে। আমরা সূর্যকে পেছনে ফেলে চলছি। আমাদের ছায়া হালকা হতে শুরু করেছে। ব্রিজের মুখে একটি কড়ই গাছের নিচে আমরা নামলাম। আমি গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম। সে বাইকে বসলো। সিগারেট ধরিয়ে আমাকে দিল। দুই বার কোনো কথা ছাড়াই সে সিগারেট টেনে গেল৷ তারপর আমার পেছনে থাকা মরা নদীর দিকে তাকিয়ে বলল,
'জ্বীন কখনো মানুষকে মারতে পারে না। তাদের ক্ষমতা শুধু ভয় দেখানোতেই৷ এটাও তারা পারে শুধু অদৃশ্যতার কারণে। সাপ, জ্বীন ও পশু এরা মানুষকেই বেশি ভয় পায়। মানুষকে মেরে ফেলা তো দূরের কথা'।

এতটুকু বলে কিছুক্ষণ থামলো। হাতের টোকায় সিগারেটের ছাই ফেলে দিয়ে আবার বলল, 'রক্তবমি কি কারণে হয়, জানিস'?
আমি অবাক হলাম। সে ভাল করেই জানে আমি প্রকৌশলের ছাত্র। তারপরেও জিজ্ঞেস করলো। আমি কথার রেশ না ভেঙে বললাম, 'তোর ভাল জানার কথা। তুই ফার্মাসিস্ট'।

'রক্তবমির প্রধান কারণ, পেপটিক আলসার। কোনো জ্বীন এর পেছনে নাই। প্যানক্রিয়েটিক ডিজিস বা ক্যান্সার আরেকটা কারণ। জ্বরের মতই রক্তবমি একটি উপসর্গ মাত্র কোনো রোগ নয়'।

'তাহলে খাবারের অনিয়ম আর ধূমপানও তো পেপটিক আলসারকে প্রমোট করে'

'একদম ঠিক। গ্রামে এখনো বিড়ি চলে, যার কোনো ফিল্টার নেই। তাই তার ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক। আর যারা রাত জেগে মাছ ধরতে যায়, তারা তাদের নিরাপত্তার জন্যই বিড়ি সবসময় জ্বালিয়ে রাখে'।

'তাহলে তাদের অসুস্থ হবার চান্স বেশি'

'হ্যাঁ। তাই তাদের মিথ হলো, যাদের জ্বীন ধরে, তাদের রক্তবমি হয়ে মারা যায়'।

'তো, এখানে কি ঘটেছে? খুন? হত্যা'?

'তাছাড়া আবার কি? তোর বাড়ির চারপাশের কথা মনে আছে?' আরেফিন আমার দিকে তাকাল।

'না' আমি কিছুটা চমকে গেলাম। আমি খেয়াল করেছিলাম কিন্তু সে নিজে থেকেই বলুক এটাই চাচ্ছিলাম।

'লোকটার বাড়ি গ্রামের উত্তর পাশে একদম শেষ মাথায়। মাত্র একটি থাকার ঘর, তার পশ্চিমে একটি রান্না ঘর। থাকার ঘরটা মাঝারি ধরনের। ঘরের উত্তর দিকে বাঁশের ঝাড় ও জঙ্গল। তারপরে আরও বাড়ি রয়েছে। গোয়াল ঘরটা পূর্ব দিকে। দুইটা গরু আছে। লোকটা মোটামুটি স্বচ্ছল বলা যায়'।

ওর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা যথেষ্ঠ ভাল। দুই মিনিট দাঁড়িয়ে এসবই দেখেছে। আমি কিছু না বলে চুপচাপ শুনছি। ভালই লাগছে। সে আবার শুরু করলো।

'এমন কাউকে দেখলাম না যে, তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। তাই এই বিষয়টা কিছুটা দূর্বল, কিন্তু বাদ দেয়া যাচ্ছে না। লোকজন বলছিল তারা দরজা ভেঙে লোকটাকে বের করে এনেছে। ভেতরে লাশ রেখে খুনী দরজা লাগিয়ে কিভাবে বের হলো? গ্রামের মত জায়গায় এমন করে খুন কেউ করবে, এটা মাথাতেই আসছে না'

'গ্রাম ও শহরের পার্থক্য কিন্তু আমাদের মত গরীব দেশেই বেশি। ধনী দেশগুলোতে কিন্তু ধনীরা গ্রামে থাকে আর চাকুরিজীবীরা শহরে থাকে'! আমি বললাম।

'হ্যাঁ, কিন্তু এতটা সুনিপুণ ভাবে হত্যার চিন্তা কারো মাথায় নিশ্চয় আসবে না?' আরেফিন সিগারেট ফেলে দিলো।

'কাউকে যদি মেরে ফেলার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে গ্রামের লোকজন কি করবে?'

'তাকে গ্রাম ছাড়া করাটাই তো সহজ। কিন্তু এখানে মেরে ফেলা হইছে। আমি নিশ্চিত। এবং এটাও নিশ্চিত ছুড়ির আঘাতে সে মরেনি'

'তাহলে কিভাবে মরছে?' আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম ওর কথা শুনে।

'ছবিটা দেখ' বলেই তার নকিয়া ফোনসেটটা আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি লাশটার ছবি দেখে কিছুই বুঝলাম না।

'চোখের ভ্রু-টা দেখ। একদম লেপ্টে গেছে। কপালের উপর মাথার চুল বসে গেছে। সুতরাং তাকে বালিশ চাপা দেয়া হয়েছিল'

আমি বুঝতে পারছিলাম না, বিশ্বাস করব নাকি করব না। সে বিষয়টা বুঝতে পেরে বলল, 'বালিশের কাপড়ের ভাঁজটা ওর গালের উপর ঝাপ হয়ে ছিল। ছবিতে দেখতে পারবি। আর ঘামের কারণ চুলগুলা ওভাবে হয়ে গেছে।'

আমি ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ও আরেকটি সিগারেট আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি দ্রুত কয়েকটি টান দিলাম। সে আবার বলতে শুরু করলো,

'আমরা যখন ঘুমাই, তখন ঘাড়ের নিচের থাকা বালিশের অংশটা চাপ খেয়ে বসে যায়, ঢালু হয়ে যায়। কিন্তু আমি জানালা দিয়ে দেখেছি, উচু অংশটুকু ঘাড়ের দিকে রাখা ছিল'

'বালিশ চাপা দিয়েই যদি মারবে, তাহলে চাকু দিয়ে খোঁচানোর দরকার কি ছিল'?

'এটাই তো কথা! হয়ত জ্বীনের কাজ বলে প্রচার করতে সুবিধা হত। সবার তো আর রক্তবমি হয় না!'

'তাহলে কি কাল যাবি ওদিকে?'

'এখনই বলতে পারছি না। রহস্যটা কতটুকু টানে সেটাই এখন দেখার বিষয়!'

আমরা ফিরে এলাম বাড়িতে। ওকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে এলাম আমার বাড়িতে। রাতে আর এই বিষয়ে আরেফিনের সাথে কথা হয়নি। আমিও আর এটা নিয়ে ভাবিনি। রাত জেগে বান্ধবীর সাথে কথা বলে ঘুমিয়ে গেছি।
ঘুম ভাঙলো আরেফিনের ফোনে। দেয়ালঘড়িতে দেখি সকাল আটটা বাজে। এত সকালে সে সাধারণত ফোন দেয় না। কারণ সে অনেক রাত জেগে বই পড়ে আর দেরিতে ওঠে। আধো জাগা আধো ঘুম নিয়ে ফোনটা ধরলাম।

'ঘুম কি ভাঙেনি? ইয়াসমিন কি জাগিয়ে দেয় না'? ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ আসলো।

'না, রাতে অনেক গরম ছিল। তাই ঘুমাতে পারিনি'

'বুঝি, বুঝি। ফ্রেশ হয়ে, না খেয়ে আমার নানার বাড়ি চলে আয়। চালের রুটি আর গরুর গোশত খাব'

'ওখানে গেলি কখন?'

'গতকাল রাতে এসেছি। তুই আয়। আর অলসদের ডাকার দরকার নাই'

অলসরা বলতে আমাদের অন্য বন্ধুরা। তারা সব কাজেই হাত লাগিয়ে কোনো কাজেই থাকে না। আরেফিনের নানার বাড়ি শহর থেকে সাত কিলো দূরে৷ গতকাল যে রাস্তায় সিগারেট খেতে গিয়েছিলাম, সেই রাস্তা এই গ্রামের উপর দিয়েও যায়। আমার বুঝতে বাঁকি রইলো না, আরেফিন বিষয়টা নিয়ে পরিস্কার হতে চাইছে। কারণ, আমরা যেখানে একবার সিগারেট খেয়ে আসি, সেখানে আর যাই না আমি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
১.
শহর থেকে দূরে এসেছি একটি পাকা রাস্তা ধরে। রাস্তাটি গ্রামগুলোর ভেতর দিয়ে পাশের উপজেলা তাড়াশ গিয়েছে। সেই উপজেলা আবার অন্য জেলা তথা সিরাজগঞ্জের অংশ। পাকা রাস্তা হলেও মানুষের চলাচল খুব কম। আর এই সুযোগটাই আমরা নিয়েছি। আমরা মূলতঃ সিগারেট খেতে এসেছি। শহরের ভেতরে কোথাও কোন পরিচিত লোক বের হয়ে যায়, তাই নিরাপদ ধূমপানের জন্য গ্রামের ভেতরে আসা। গ্রীষ্মের ছুটিতে ভার্সিটি বন্ধ, বাসায় এসেছি কয়েকদিন আগে। তাই সিগারেট খেতে এত ঝক্কি পোহানো। প্রতিদিন একেকটা রাস্তা ধরে শহর থেকে অনেক দূরে চলে আসি। কখনো অন্য উপজেলায় অথবা অন্য জেলায়। ছুটিটা বেশ ভালোই কাটছে এভাবে।

আজ যে রাস্তা ধরে এসেছি তার নাম ভবানীপুর সড়ক। রাস্তা থেকে গ্রামগুলো বেশ দূরে। পাকা রাস্তা থেকে নেমে কাঁচা রাস্তা ধরে গ্রামে যেতে হয়। তাই রাস্তায় থাকা দোকানগুলোয় ভীড় কম। যাদের প্রয়োজন শুধু তারাই এখানে এসে পণ্য কিনে চলে যায়। আড্ডা দেবার একদম পারফেক্ট জায়গা।

আমরা একটি টঙে বসেছি। দোকানটা ছোটো এবং পাশে ক্যারাম বোর্ড রাখা। কিন্তু কোনো লোকজন চা খেতে এখনো আসেনি। এই গরমে গ্রামের লোকজন চা খাবে, সেটা ভাবাও বোকামি। বেলা এখন প্রায় এগারোটা, কিন্তু সূর্য যেন মাথার উপরে চলে এসেছে।একটা সিগারেট ধরিয়ে আরেফিন আমাকে বলল, 'খেলবি ক্যারাম?? মামা দু'জনকে চা দিয়েন।'

'ক্লাস নাইনের কথা মনে পড়ে? স্কুল ফাঁকি দিয়ে ক্যারাম খেলতাম।' স্মিত হেসে আরেফিন বলল, আমিও হাসলাম। হ্যাঁ, স্কুলে থাকতে প্রচুর ক্যারম খেলেছি ক্লাস ফাঁকি দিয়ে। শহরের এমন কোনো জায়গা বাঁকি ছিলো না, যেখানে আমরা দুজন গিয়ে খেলে আসিনি। জেতার চেয়ে হেরে গিয়েছি বেশি কিন্তু যে অভিজ্ঞতা আমরা পেয়েছি তার কারণে আজ আরেফিন তার ভার্সিটিতে ক্যারম চ্যাম্পিয়ন, আর আমি অবশ্য একবার হল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম।

'তখন তো একটা নেশা হয়ে গেছিলো। ইন্টারে উঠে আবার কার্ড খেলার নেশা ধরলো।' আমরা কথা শেষ না হতেই দু'জনে হো হো করে হাসলাম।

আমাদের আয়েশি খেলা চলছে, সাথে তৃপ্তির সিগারেট টানা। একটু পরেই একটি ভ্যান আমাদের পাশ কাটিয়ে গ্রামের রাস্তায় মোড় নিল। ভ্যানে থাকা বাচ্চাসহ দুজন মহিলা আর্তনাদ করে কাঁদছে। বিষয়টাকে আমি কোনো গুরত্ব না দিলেও, আরেফিন দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো, 'কিছু জানেন নাকি মামা, কি হইছে?'

দোকানদার পানের পিচকিরি ফেলে বললো, 'কালকে রাতে একজন মারা গেছে গা। তারই বউ এড্যা।'

'কিভাবে মারা গেল?' স্ট্রাইক দিয়ে গুটিতে মারল আরেফিন। আমি দেখলাম তা পকেটে পড়লো।

'আর কইয়ো না বাবা, এরা রাইতে মাছ মারতে যায়, আর কিছুদিন পরেই একেক জন কইরা মারা যায়।'

'আগেও মারা গেছে কেউ?' আরেফিনের পাশাপাশি এবার আমিও বেশ কৌতুহল নিয়ে তার দিকে তাকালাম। আরেফিন নির্বিকারে ক্যারাম খেলে যাচ্ছে।

'হ বাবা, দুই তিন মাস আগেও একজন এঙ্কা কইরা মারা গেছিলো। আইজ আবার আরেকজন। ঘরের মধ্যে মইরা পইড়া আছিল। দরজা ভাইঙ্গা তারে বের করছে। সারা শরীরে কোপের দাগ। জ্বীন অনেক ক্ষেপা। সবাইতো ওরেই দেগতে গেছে। তাই তো দোকান খালি।' মামা পিছনে ঘুরে গ্রামের রাস্তার দিকে তাকালো। রাস্তা ফাঁকা।

আরেফিন স্ট্রাইক ছেড়ে সিগারেট টানছে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো, 'মাছ মারার সাথে মারা যাবার সম্পর্ক কি?'

'কি কও বাপু, জানো না কিছু? রাইত কি সুবিধার?? কত জীব জনতু রাইতে ঘুইরা বেড়ায়। জ্বীন ভূতরাও তো থাকে। আর মাছের সাথেই তো তাদের সখ বেশি।' মামা যেন নিশ্চিত জেনেই সব বলছে।

স্ট্রাইক হাতে নিয়ে আরেফিন বলল, 'তা, উনি কিভাবে মারা গেলেন?'

'শুনছি, চাকুর ঘা'য়ে। সারা শরীল জুইরা চাকু মারছে বদ জ্বীনটা।' রাগ প্রকাশ করতে যেন তিনি কটমট করে বললেন।

আরেফিন আমার দিকে তাকালো। কয়েক পলক চুপ থাকার পর জিজ্ঞেস করলো, 'পুলিশ আসছে দেখতে?'

'পুলিশ আসপি ক্যা? কেউ তো আর মাইরা ফেলে নাই। জ্বীন মারছে।' দোকানদার যেন কিছুটা অবাক।

'রক্তবমি করে মারা গেলে তো বুঝতাম পুলিশের দরকার নাই। কিন্তু জ্বীন যে এবার চাকু মারা শুরু করছে। চাকু মারলে তো পুলিশ ধরবেই' আমি হাসতে হাসতে বললাম।

আরেফিন ক্যারাম ছেড়ে আমার কাছে এসে বলল, 'জীবন, চল দেখে আসি। বাইকটা লক কর'
আমি বাইকের ঘাড় লক করে দাঁড়ালাম, আরেফিন দোকানদারকে মোটরসাইকেলটা দেখে রাখতে বলল। দুজনের হাতে নতুন সিগারেট ধরানো। আমরা তো বাসায় সিগারেট খেতে পারি না। তাই বাইরে আসলে একটার পর একটা ধরাতে থাকি।
মাটির রাস্তা ধরে হাঁটছি প্রায় দশ মিনিট। বাইক থাকতেও হেঁটে আসার কোনো যুক্তি আমি পেলাম না। আরেফিন হয়ত তা বুঝতে পেরেছে। তাই সে বলল,

'ওইরকম বাইক নিয়ে গ্রামে ঢুকলে সবাই লাশ ছেড়ে বাইকের দিকেই তাকিয়ে থাকবে।'

২.
গ্রামে ঢুকে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করা লাগলো মরা বাড়ি খুঁজে পেতে। গ্রামের একদম শেষের মাথায় লোকটির বাড়ি। আমরা হাঁটতে থাকলাম, অবশেষে সবার জটলা দেখতে পেলাম। সবাই গোল হয়ে লাশ দেখছে। উঠোনে লাশটা রাখা, সাদা কাফনে ঢাকা। গোসল এখনো হয়নি বলা যায়। উঠোনের পাশেই একটি মাটির ঘর। ঘরের দেউরিতে বসে মাতম করছে কয়েকজন মহিলা। মহিলাদের কান্নার আওয়াজে টেকা দায়। স্বজন হারানোর কষ্টে মানুষ যে কান্না করে তা সবার চোখেই অশ্রু টেনে আনে।

আরেফিন লাশ দেখতে জটলার ভেতরে গেল। আমি উঠোনের কোণে দাঁড়িয়ে রইলাম। স্কুলে থাকতে আরেফিনের গোয়েন্দাগিরির একটা শখ ছিল। যেটা সবারই থাকে৷ তবে ওরটা ভিন্ন রকমের। আমরা যখন তিন গোয়েন্দা বা মাসুদ রানা পড়ে মজা নিতাম। সে এগুলো ছুঁয়েও দেখতো না, তার পছন্দ ফেলুদা ও তার গুরু হোমস!
স্কুলে থাকতে বই ও কলম চোরদের উৎপাত সে বন্ধ করে ছিল। এখন ভার্সিটির শেষ বছরে উঠেছে। না জানি তার স্কুল জীবনের গোয়েন্দা হওয়ার শখটা আবার জাগলো কিনা।

আরেফিন লাশের কাছে না গিয়ে একজন মাঝবয়সী লোকের দিকে এগিয়ে গেল। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর তাকে দেখলাম একদম খাটিয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়াতে। খাটিয়ায় শোয়ানো লাশের শুধু মুখটাই দেখানো হয়। কিন্তু তাকে দেখানোর জন্য বুকের উপরের কাপড়টা খুলে ফেলা হলো। আরেফিন কিছুক্ষণ ঝুকে দেখল। পকেট থেকে নকিয়া হ্যান্ডসেটটি বের করে ছবি তুলতেই সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো। শহরে অনেকের কাছে মাল্টিমিডিয়া সেলফোন থাকলেও গ্রামে এখনো মাল্টিমিডিয়া সেলফোন আসেনি।

আরেফিন আবার লোকটার কাছে গিয়ে কথা বলল। কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফিরে এলো আমার কাছে এবং বলল,' একটা সিগারেট দে তো' আমি প্যাকেট বের করতে যাব এমন সময় বলল, 'না, থাক!'

'লোকটাকে কিভাবে মেরেছে?' আমি জিজ্ঞেস করলাম।

'পুরো শরীরটা দেখতে পারিনি। তবে বুকে দেখলাম বেশ কয়েকটা চাকু মারার আঘাত। চাকু বা ছুড়িটা সাধারণ ছুড়ির মত নয়। সবাই বলল এরকম বিশ-ত্রিশটা আঘাত করেছে জ্বীন!' জ্বীন বলার পর আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালো। মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।

'এ যুগে এসেও মানুষ এসব বিশ্বাস করে?' আমি আসলে অবাক হয়ে গিয়েছি।

'মানুষের বিশ্বাস বড়ই অদ্ভুত ব্যাপার। বিশ্বাস আসে ভয় থেকে। মানুষ যখন বুঝলো আগুন তাদের মেরে ফেলতে পারে, তখনই তারা আগুনের পূজা শুরু করলো আগুনকে খুশী করার জন্য' আরেফিন চারপাশটা ভালো করে লক্ষ্য করছিল, আমিও তাকালাম।

'এখানে কি জ্বীনের ভয় বেশি?'

'হ্যাঁ, তা বলা যায়। আমার এক ধর্ম মামার নেশা ছিল রাতে মাছ মারার। নানা অনেক নিষেধ করেছেন। কিন্তু একদিন সকালে সে রক্ত বমি করে মারা যায়' আরেফিন এক প্রশ্বাসে বলে ফেলল।

'আমরা কি পুলিশে খবর দিব?' আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে বললাম।

'বুঝতেছি না। অনেক হিসেব আছে। পুলিশ আসলেই অনেককে সন্দেহ করবে। গ্রেফতার করবে। টাকা চাইবে ছাড়া পেতে। শেষে দেখবি পুরো গ্রাম পুরুষ ছাড়া। সবার জীবন এলোমেলো হয়ে যাবে?'

'সেটাও একটা বিষয়। কিন্তু পুলিশে তো আমাদের পরিচিত মানুষ আছে। তারা তো এমন করবে না।'

'আমি ইউনিয়ন মেম্বরের সাথে কথা বলেছি। তারা লাশ দাফন করবে। তারা এটা স্বাভাবিক মৃত্যু মনে করে' আরেফিনের মুখে বিরক্তির ছাপ।

'তুই কি মনে করিস?'

'জ্বীন চাকু দিয়ে মারতে যাবে কেন? একবার ভয় দেখালেই তো মানুষ শেষ'

'এখন কি করবি?'

'চল, ঘরটা দেখে আসি'

আমরা উঠোনের জটলা পেরিয়ে একটি লাল মাটির ঘরের পাশে দাঁড়ালাম। একটাই মাটির ঘর। ঘরের দরজামুখে মহিলারা বসে কাঁদছে। ওদিকে না গিয়ে আলাদা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মাঝবয়সী লোকের কাছে গেলাম। আরেফিন এলাকার মেম্বারের সাথে কথা বলে এসেছে, তবুও নতুন কিছু পাবার আশায় আমরা তার সাথে কথা বলা শুরু করলাম।

'চাচা, লোকটার নাম কি?' আরেফিন জিজ্ঞেস করল।

লোকটা আমাদের দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকালো। তারপর বলল-
'আলম। কিন্তু তোমরা কারা বাবা? এইখানে কি করো?'

'আমরা চা খাচ্ছিলাম তিনমাথায়। শুনলাম জ্বীন মানুষ মারছে, তাই দেখতে আসছি'

'ওই কথা আর মুখে আইনো না। বিপদ হবি' লোকটার মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। জ্বীন বা ভূত শুধু আলমকে হত্যা করেনি, হত্যা করেছে এই এলাকার মানুষদের বিশ্বাস, সাহস ও সঠিক চিন্তার করার ক্ষমতাকে।

'শুনলাম মাছ মারতে গেছিলো। তা, কোথায় মাছ মারতে গেছিলো?' আমি বললাম।

'গেরামের পেছনে, মেঘডুম্বুর পুকুরে'

'আগেরজনও কি ওই পুকুরেই মাছ ধরতে গেছিলো?' আরেফিন জিজ্ঞেস করলো।

'না, সে গেছিলো ময়না খালে মাছ মারতে'

'তারেও কি এই ভাবেই মারছিলো জ্বীন?'

'এ্যাকদম এঙ্কা কইরাই' লোকটি যেন নিজের চোখে দেখেছে সেভাবেই হাত দিয়ে ইশারা করল।

'তখন পুলিশ আসছিল?'

'আচ্ছিলো হয়ত, মনে নাই-কা'

লোকটি এবার বিরক্তি নিয়ে তাকানো শুরু করলো। পাছে নানান প্রশ্ন করে, তাই আমরা সরে আসলাম। পাক্কা দুই মিনিট ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো আরেফিন। দৃষ্টি সবার দিকে৷ তারপর আমাকে ইশারা করলো, আমরা গ্রাম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। মহিলাদরে জটলা পার করে ঘরে ঢোকা এখন সম্ভব নয়।

গ্রামের প্রবেশমুখের রাস্তায় দুজন দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালাম। আমি টঙের দিকে তাকালাম, বাইকটা আছেই। আরেফিন সিগারেটে লম্বা টান শেষে আঙুলের টোকা দিয়ে ছাই ফেলে দিয়ে আমাকে বলল,
'এটা যে একটা পরিকল্পিত খুন হতে পারে, সেটা কারো মাথাতেই আসবে না'

'গ্রামের এই গরীব লোককে কে মারতে যাবে? কেন মারতে যাবে? মোটিভ তো দেখি না'

'সবকিছুর ব্যাখ্যা ঐ পুকুর আর খালই দিতে পারবে' আকাশের দিকে ধোঁয়া ছেড়ে বলল আরেফিন।

'যাবি কি ওখানে?' আমি তাকে পরীক্ষা করার জন্য বললাম।

'এত সুন্দর রহস্য, আর যাব না? তোরে কি তালপুকুরের কাহিনিটা বলেছিলাম?' আরেফিন মুচকি হাসলো।

'হ্যাঁ। ভুত ধরতে যাবার কাহিনি? শেষে পালিয়ে রক্ষা?' দুজনই হো হো করে হাসলাম।

'ঠিক! ওখানেও একটা রহস্য ছিল। ভেদ করতে পারিনি৷'

'তাহলে এটা কি ভেদ করতে নামবি?'

'দেখা যাক। চল, বাড়ি যাই। খেতে হবে!'

আরেফিন বাইকে চেপে বসলো। আমি পেছনে বসলাম। সে বাইক টান দিল পাকা রাস্তা ধরে। তিন কিলোমিটার এসে আমরা ডানে মোড় নিলাম। সোজা রাস্তায় আর যাওয়া যাবে না। ওদিকে আরেফিনের নানা'র গ্রাম। আমরা হাইওয়ের দিকে চলতে থাকলাম। বেলা এখন সাড়ে বারোটা।

৩.
এরপর সারাদিন একসাথেই ছিলাম আমরা। ওই ঘটনা নিয়ে আর কোনো কথা হয়নি। কিন্তু আমি বিষয়টা ভুলতে পারিনি। একবার মনে হয়েছিল আরেফিনকে বলি। সে তো একসাথে অনেক চিন্তা করে, কখন যে কোনটা নিয়ে পড়ে থাকে তা বুঝা মুশকিল। তবে বিকেলের আড্ডা শেষে যখন বাইকে করে বাড়িতে ফিরছি, তখন আরেফিন বলল, 'পুলিশ বিষয়টা জানে না। আগেরটাও জানে না'

'আমি তো বিষয়টা নিয়ে পুরো বিকেল ভেবেছি। এটা কিভাবে সম্ভব একটা লোক এভাবে মারা গেল, অথচ কেউ কিছুই করলো না' আমি বললাম।

'চল, বথুয়া ব্রিজে যাই। ওখানে কথা হবে'

পড়ন্ত বিকেল। লাল রক্তিম আভা ছড়িয়ে আছে আকাশে। আমরা সূর্যকে পেছনে ফেলে চলছি। আমাদের ছায়া হালকা হতে শুরু করেছে। ব্রিজের মুখে একটি কড়ই গাছের নিচে আমরা নামলাম। আমি গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম। সে বাইকে বসলো। সিগারেট ধরিয়ে আমাকে দিল। দুই বার কোনো কথা ছাড়াই সে সিগারেট টেনে গেল৷ তারপর আমার পেছনে থাকা মরা নদীর দিকে তাকিয়ে বলল,
'জ্বীন কখনো মানুষকে মারতে পারে না। তাদের ক্ষমতা শুধু ভয় দেখানোতেই৷ এটাও তারা পারে শুধু অদৃশ্যতার কারণে। সাপ, জ্বীন ও পশু এরা মানুষকেই বেশি ভয় পায়। মানুষকে মেরে ফেলা তো দূরের কথা'।

এতটুকু বলে কিছুক্ষণ থামলো। হাতের টোকায় সিগারেটের ছাই ফেলে দিয়ে আবার বলল, 'রক্তবমি কি কারণে হয়, জানিস'?
আমি অবাক হলাম। সে ভাল করেই জানে আমি প্রকৌশলের ছাত্র। তারপরেও জিজ্ঞেস করলো। আমি কথার রেশ না ভেঙে বললাম, 'তোর ভাল জানার কথা। তুই ফার্মাসিস্ট'।

'রক্তবমির প্রধান কারণ, পেপটিক আলসার। কোনো জ্বীন এর পেছনে নাই। প্যানক্রিয়েটিক ডিজিস বা ক্যান্সার আরেকটা কারণ। জ্বরের মতই রক্তবমি একটি উপসর্গ মাত্র কোনো রোগ নয়'।

'তাহলে খাবারের অনিয়ম আর ধূমপানও তো পেপটিক আলসারকে প্রমোট করে'

'একদম ঠিক। গ্রামে এখনো বিড়ি চলে, যার কোনো ফিল্টার নেই। তাই তার ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক। আর যারা রাত জেগে মাছ ধরতে যায়, তারা তাদের নিরাপত্তার জন্যই বিড়ি সবসময় জ্বালিয়ে রাখে'।

'তাহলে তাদের অসুস্থ হবার চান্স বেশি'

'হ্যাঁ। তাই তাদের মিথ হলো, যাদের জ্বীন ধরে, তাদের রক্তবমি হয়ে মারা যায়'।

'তো, এখানে কি ঘটেছে? খুন? হত্যা'?

'তাছাড়া আবার কি? তোর বাড়ির চারপাশের কথা মনে আছে?' আরেফিন আমার দিকে তাকাল।

'না' আমি কিছুটা চমকে গেলাম। আমি খেয়াল করেছিলাম কিন্তু সে নিজে থেকেই বলুক এটাই চাচ্ছিলাম।

'লোকটার বাড়ি গ্রামের উত্তর পাশে একদম শেষ মাথায়। মাত্র একটি থাকার ঘর, তার পশ্চিমে একটি রান্না ঘর। থাকার ঘরটা মাঝারি ধরনের। ঘরের উত্তর দিকে বাঁশের ঝাড় ও জঙ্গল। তারপরে আরও বাড়ি রয়েছে। গোয়াল ঘরটা পূর্ব দিকে। দুইটা গরু আছে। লোকটা মোটামুটি স্বচ্ছল বলা যায়'।

ওর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা যথেষ্ঠ ভাল। দুই মিনিট দাঁড়িয়ে এসবই দেখেছে। আমি কিছু না বলে চুপচাপ শুনছি। ভালই লাগছে। সে আবার শুরু করলো।

'এমন কাউকে দেখলাম না যে, তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। তাই এই বিষয়টা কিছুটা দূর্বল, কিন্তু বাদ দেয়া যাচ্ছে না। লোকজন বলছিল তারা দরজা ভেঙে লোকটাকে বের করে এনেছে। ভেতরে লাশ রেখে খুনী দরজা লাগিয়ে কিভাবে বের হলো? গ্রামের মত জায়গায় এমন করে খুন কেউ করবে, এটা মাথাতেই আসছে না'

'গ্রাম ও শহরের পার্থক্য কিন্তু আমাদের মত গরীব দেশেই বেশি। ধনী দেশগুলোতে কিন্তু ধনীরা গ্রামে থাকে আর চাকুরিজীবীরা শহরে থাকে'! আমি বললাম।

'হ্যাঁ, কিন্তু এতটা সুনিপুণ ভাবে হত্যার চিন্তা কারো মাথায় নিশ্চয় আসবে না?' আরেফিন সিগারেট ফেলে দিলো।

'কাউকে যদি মেরে ফেলার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে গ্রামের লোকজন কি করবে?'

'তাকে গ্রাম ছাড়া করাটাই তো সহজ। কিন্তু এখানে মেরে ফেলা হইছে। আমি নিশ্চিত। এবং এটাও নিশ্চিত ছুড়ির আঘাতে সে মরেনি'

'তাহলে কিভাবে মরছে?' আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম ওর কথা শুনে।

'ছবিটা দেখ' বলেই তার নকিয়া ফোনসেটটা আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি লাশটার ছবি দেখে কিছুই বুঝলাম না।

'চোখের ভ্রু-টা দেখ। একদম লেপ্টে গেছে। কপালের উপর মাথার চুল বসে গেছে। সুতরাং তাকে বালিশ চাপা দেয়া হয়েছিল'

আমি বুঝতে পারছিলাম না, বিশ্বাস করব নাকি করব না। সে বিষয়টা বুঝতে পেরে বলল, 'বালিশের কাপড়ের ভাঁজটা ওর গালের উপর ঝাপ হয়ে ছিল। ছবিতে দেখতে পারবি। আর ঘামের কারণ চুলগুলা ওভাবে হয়ে গেছে।'

আমি ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ও আরেকটি সিগারেট আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি দ্রুত কয়েকটি টান দিলাম। সে আবার বলতে শুরু করলো,

'আমরা যখন ঘুমাই, তখন ঘাড়ের নিচের থাকা বালিশের অংশটা চাপ খেয়ে বসে যায়, ঢালু হয়ে যায়। কিন্তু আমি জানালা দিয়ে দেখেছি, উচু অংশটুকু ঘাড়ের দিকে রাখা ছিল'

'বালিশ চাপা দিয়েই যদি মারবে, তাহলে চাকু দিয়ে খোঁচানোর দরকার কি ছিল'?

'এটাই তো কথা! হয়ত জ্বীনের কাজ বলে প্রচার করতে সুবিধা হত। সবার তো আর রক্তবমি হয় না!'

'তাহলে কি কাল যাবি ওদিকে?'

'এখনই বলতে পারছি না। রহস্যটা কতটুকু টানে সেটাই এখন দেখার বিষয়!'

আমরা ফিরে এলাম বাড়িতে। ওকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে এলাম আমার বাড়িতে। রাতে আর এই বিষয়ে আরেফিনের সাথে কথা হয়নি। আমিও আর এটা নিয়ে ভাবিনি। রাত জেগে বান্ধবীর সাথে কথা বলে ঘুমিয়ে গেছি।
ঘুম ভাঙলো আরেফিনের ফোনে। দেয়ালঘড়িতে দেখি সকাল আটটা বাজে। এত সকালে সে সাধারণত ফোন দেয় না। কারণ সে অনেক রাত জেগে বই পড়ে আর দেরিতে ওঠে। আধো জাগা আধো ঘুম নিয়ে ফোনটা ধরলাম।

'ঘুম কি ভাঙেনি? ইয়াসমিন কি জাগিয়ে দেয় না'? ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ আসলো।

'না, রাতে অনেক গরম ছিল। তাই ঘুমাতে পারিনি'

'বুঝি, বুঝি। ফ্রেশ হয়ে, না খেয়ে আমার নানার বাড়ি চলে আয়। চালের রুটি আর গরুর গোশত খাব'

'ওখানে গেলি কখন?'

'গতকাল রাতে এসেছি। তুই আয়। আর অলসদের ডাকার দরকার নাই'

অলসরা বলতে আমাদের অন্য বন্ধুরা। তারা সব কাজেই হাত লাগিয়ে কোনো কাজেই থাকে না। আরেফিনের নানার বাড়ি শহর থেকে সাত কিলো দূরে৷ গতকাল যে রাস্তায় সিগারেট খেতে গিয়েছিলাম, সেই রাস্তা এই গ্রামের উপর দিয়েও যায়। আমার বুঝতে বাঁকি রইলো না, আরেফিন বিষয়টা নিয়ে পরিস্কার হতে চাইছে। কারণ, আমরা যেখানে একবার সিগারেট খেয়ে আসি, সেখানে আর যাই না আমি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সিরাতাম মুসতাকিমের হিদায়াত হলো ফিকাহ, কোরআন ও হাদিস হলো এর সহায়ক

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:০৮



সূরাঃ ৬ আনআম, ১৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী-লীগের ছায়া দায়িত্ব নিয়ে তারেক জিয়া এখন দেশে

লিখেছেন অপলক , ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



সংবাদের টাইটেল অনেক কিছু বলে দেয়। ভেতরেটা না পড়লেও চলে। বস্তুত: এতদিন ধরে ভারতের গ্রীন সিগনাল পাচ্ছিলেন না, তাই তারেক জিয়া দেশে আসার সময় বারবার পিছাচ্ছিলেন। এখন চুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

×