দেশ ও জাতি হিসাবে আমাদের অতীতের বেশিরভাগ ঘটনা দুঃখের ও বেদনার। তবে ক্রিকেটের ইতিহাসে কিছু গৌরবময় বিজয়ের স্মৃতি রয়েছে যা আমাদেরকে এখনও রোমাঞ্চিত করে, মাথা তুলে অহংকার করার মতো সাহস জোগায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে আজকের দিনটি (১৮ই জুন) সেরকম দুটি ঐতিহাসিক বিজয়ে গৌরবান্বিত। ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ে আমরা সবাই আনন্দিত। এই আনন্দের সাথে শেয়ার করার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের সে দুটি ঐতিহাসিক বিজয়ের স্মৃতি এখানে তুলে ধরলাম।
১৮ই জুন ২০০৫: অষ্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ঐতিহাসিক বিজয়
২০০৫ সালের এই দিনে লিটল মাস্টার মোহাম্মদ আশরাফুলের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ধরাশায়ী করে একদিনের ক্রিকেটে এক ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছিল। জয়ের জন্য ২৫০ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে খেলার ৪ বল বাকি থাকতে অবিস্মরণীয় জয় তুলে নেয়। ডান হাতি আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান আশরাফুল ১০০ বলে ১০০ রান করার পর কট আউট হয়ে ফিরলে আফতাব ও রফিক জুটি ৬ষ্ঠ উইকেটে ২৩ রান তুলে দলের জয় নিশ্চিত করে। আফতাব ২১ রানে ও রফিক ৯ রানে অপরাজিত থাকেন। জয়সূচক রান হওয়ার সাথে সাথে সোফিয়া গার্ডেনে উপস্থিত কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী এবং সারাদেশে কোটি কোটি ক্রীড়া পাগল মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রীড়ানুরাগীরা মিছিল করে। গভীর রাত পর্যন্ত সারা দেশ থেকে মিছিলের খবর আসে। খেলার শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৭ রানের। গিলেসপির প্রথম বলে আফতাব পুলশটে ছক্কা মেরে স্কোর টাই করেন।
Historic win of Bangladesh vs Australia at Cardiff 2005
১৮ জুন, ২০১৫: ভারতকে উড়িয়ে বাংলাদেশের জয়
অষ্ট্রেলিয়াকে হারাবার ঠিক ১০ বছর পর ২০১৫ সালের এইদিনে অভিষেকে মুস্তাফিজুর রহমান বোলিং তান্ডবে গুড়িয়ে দিয়েছিল ভারতকে। বাংলাদেশ ৫০ ওভারে করে ৩০৭ রান। ভারত ৪৫.৩ ওভারে ২২৮ রানে অল আউট। রোহিত শর্মা ও শেখর ধাওয়ানের উদ্বোধনী জুটি দুর্দান্তভাবে শুরু করলেও মাত্র ৩৩ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট খুইয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে ভারত। উদ্বোধনী দুজনের অবদানে যখন তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিল ভারতের রানের তরী তখনই প্রথম আঘাতটি হানেন তাসকিন আহমেদ। দলীয় ৯৫ রানের মাথায় ৩০ রান করে সাজঘরে ফিরে যান শেখর ধাওয়ান। এর পর বিরাট কোহলিও তার শিকারে পরিণত হন। তিনি মাত্র ১ রান করেই মাঠ ছাড়েন।
অপর দিকে মুস্তাফিজুর রহমান অভিষেকে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন। ব্যক্তিগত ৬৩ রানে রোহিত শর্মা ও ৯ রানে রাহানেকে আউট করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। এর পর দলীয় ১২৮ রানে সাকিবের বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন ধোনি। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট হাতে তামিম (৬০),সাকিব (৫২), সাব্বির (৪১), নাসির (৩৪) ও মাশরাফি (২১) রান করেন। ভারতের হয়ে ৩ টি উইকেট নেন রবীচন্দ্রন অশ্বিন। এছাড়াও দুটি করে উইকেট নেন ভুবনেশ্বর কুমার ও উমেশ যাদব। বৃষ্টির পর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারালেও শেষ পর্যন্ত লড়াকু স্কোর করে টাইগাররা। ৪৯.৪ ওভার খেলে সব কটি উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান করে বাংলাদেশ। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। এর আগে দুই দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত একমাত্র টেস্ট বৃষ্টির কারণে ড্র হয়েছিল।
তথ্য ও ছবি সূত্র:
দৈনিক ইত্তেফাক, ১৯-০৬-২০০৫ প্রিন্ট ভার্সন
দৈনিক সমকাল, ১৯-০৬-২০১৫ প্রিন্ট ভার্সন
www.cricketcountry.com
www.indianexpress.com
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৯ দুপুর ১২:১১