somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ সেই আলোচিত 'জজ মিয়া' নাটকের ১৪তম বর্ষ পূর্তি

২৬ শে জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে 'জজ মিয়া নাটক' বিচারের নামে প্রহসনের এক কলঙ্কিত ষড়যন্ত্রের নাম। এ নাটকের প্রথম আনুষ্ঠানিক মঞ্চায়ন হয়েছিল ২০০৫ সালের আজকের এই দিনে আদালতে প্রধান আসামী জজ মিয়া নামে এক নীরিহ ব্যক্তির সাজানো জবানবন্দির মাধ্যমে। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে জজ মিয়া নাটকের পটভূমি, আখ্যান, প্রতিক্রিয়া ও পরিসমাপ্তি এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরলাম।

পটভূমি
তৎকালীন জোট (বিএনপি-জামায়াত) সরকারের আমলে সারাদেশে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ শেষে শেখ হাসিনা মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসতে থাকেন। ঠিক এমন সময় শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেড। সেই গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী।


এ ঘটনায় মতিঝিল থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেন। এরপর তদন্তের দায়ভার দেয়া হয় সিআইডির কাছে। পরবর্তীতে সুবিচার বঞ্চিত করতে এবং ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তৎকালীন সরকারের পরিকল্পনায় এ ঘটনার মূলহোতা দাবি করে জজ মিয়া নামের এক সিডি বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সাজানো জবানবন্দি দিতে বলা হয় তাকে। তার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দেয় তৎকালীন সিআইডির কর্মকর্তারা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবন বাঁচাতে সাজানো সাক্ষ্য দিতে রাজি হন তিনি। সিআইডির এক কর্মকর্তা তাকে একটি কাগজে জবানবন্দি লেখে দেন। সেটি মুখস্থ করিয়ে জজ মিয়াকে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত বলে ১৬৪ ধারা আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়ায় সিআইডি। এর বিনিময়ে তার পরিবারকে মাসিক হারে টাকাও দিত তারা। ২০০৬ সালের আগস্টে এই নাটকের পেছনের ঘটনা ফাঁস করে দেন জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুন।

মামলার তদন্ত ও অভিযোগপত্র
২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই হামলার ঘটনায় পুনরায় তদন্ত হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। এরপর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আখন্দ। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ। এর আগের চার্জশিটে ২২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। নতুনভাবে অভিযুক্তদের মধ্যে স্থান পান বিএনপি নেতা তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ উল্লেখযোগ্য। এতে জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়। ফলে এ মামলায় এখন আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯ জনে। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। বাকি আসামিদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন ৩১ জন।

আট বছর পর মামলার বিচার শুরু
২০১২ সালের ২৮ মার্চ গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৫২ জন আসামির বিরুদ্ধেঅভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলার অনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। মামলার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে পরস্পরকে দায়ী করেছেন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেছেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার তদন্ত শেষ করতে সময় লেগেছে অনেক দিন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বারবার সময়ের আবেদন কারণে বিচারকার্য শেষ করতে সময় লেগেছে। এছাড়া যুক্তি উপস্থানে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অনেক সময় নিয়েছেন। বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয় ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর।

২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়: বাবর ও পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড, তারেকের যাবজ্জীবন
২০০৪ সালের ২১শে অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সাথে জড়িত থাকার দায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরিসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এই রায় ঘোষণা করেন। এই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৪৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় মোট আসামি ৪৯ জন, এর মধ্যে কারাগারে রয়েছেন ৩১জন। রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী দিয়েছেন ২২৫ জন মানুষ। এ রায়ের মাধ্যমে আজ থেকে ১৪ বছর আগে যে 'জজ মিয়া নাটক'-এর প্রহসন শুরু হয়েছিল তার পরিসমাপ্তি ঘটে।

কেমন আছেন ‘সেই’ জজ মিয়া


২০০৪ সালের বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে সাজানো নাটকের মূল চরিত্র জজ মিয়া। তিনি এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কী করছেন? ২১ আগস্ট এলে অনেকের মনেই এমন প্রশ্ন নতুন করে মাথাচাড়া দেয়। তার উত্তরে এভাবেই নিজের কথা বলছিলেন জজ মিয়া।সম্প্রতি এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে জজ মিয়া বলেন, তার মা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ , প্রতি সপ্তাহে লাগে চার হাজার টাকার ওষুধ। অসহায় অবস্থায় তিনি নানাভাবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিয়ে পেয়েছেন আশ্বাস, তবে বাস্তবে তার কোনো কিছুই মেলাতে পারেননি। এভাবেই তার কস্টের কথা জানান জজ মিয়া। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মৌচাক এলাকার একটি টিনসেড বাড়িতে দুই রুম নিয়ে বৃদ্ধা মা, ছোট বোন ও ছোট ভাইকে নিয়ে জালাল উদ্দীন ড্রাইভার ওরফে জজ মিয়া বসবাস করছেন। যদিও মাস ৩ আগে তিনি বসবাস করতেন রাজধানীর কদমতলী থানার রায়েরবাগ এলাকায়। তিনি বলেন, আমি বর্তমানে কিস্তিতে একটি পুরনো প্রাইভেটকার কিনে নিজেই ড্রাইভিং করে সংসার চালাই। নামের কারণে আমি সবার কাছে হাসি-তামাশার পাত্র। তাই আমার কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতেও চায় না। বছর দুই আগে চাঁদপুরে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন পরে আমার স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন যখন জানতে পারেন আমিই সেই ‘জজ মিয়া’ তখন আমার স্ত্রীও আমাকে ছেড়ে চলে যায়। তিনি আরো বলেন, সত্যি কোনো দিনই চাপা থাকে না। যারা আমাকে আসামি করেছিল তারাই এখন সত্যিকারের আসামি হয়েছে। আল্লাহ্ তাদের বিচার করেছে।

তথ্যসূত্র:
ইত্তেফাক, প্রথম আলো, বিবিসি, ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৯ রাত ৮:২৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×